Zero to One: Notes on Startups, Or How to Build the Future Book by Blake Masters and Peter Thiel

Zero to One

4:00 AM, December 09, 2024

Business & Finance

S. Manna


ZERO TO ONE

PETER THIEL



প্রতিটি উদ্যোগের সফলতা একবারই আসে। পরবর্তীতে বিল গেটস আসবে কিন্তু সে অপারেটিং সিস্টেম বানাবে না। ল্যারি পেজ বা সার্জে ব্রিন কিন্তু এই সার্চ ইঞ্জিন বানাবে না। পরবর্তীতে মার্ক জুকারবাগ কিন্তু একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বানাবে না। আপনি যদি এদেরকে অনুকরণ করেন, তবে আপনি এদের থেকে কিছুই শিখছেন না। পরবর্তীতে মার্ক জুকারবার্গ কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বানাবে না। আসলে পরবর্তীতে কোনো জুকারবার্গ আসবেনা। যখন বিশ্বের এক নম্বর কোটিপতি রূপে বিল গেটস ছিলেন তখন অনেকেই জানতে চেয়েছেন এর পরের বিল গেটস কে আসবে? আসলেই কী বিল গেটস এসেছে? না। এসেছে জেফ বেজোস, ল্যারি পেজ, সার্জ ব্রিন, মার্ক জুকারবার্গ। তাহলে পরবর্তীতে কে আসবে? হয়তো আপনি। হয়তো আপনি এমন কোনো উদ্যোগ নিয়ে হাজির হবেন যা কেবল দেশের সমস্যাই সমাধান করবে না; বরং সারা বিশ্বের সমস্যা সমাধান করবে। বিশ্বকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে।


বিশ্বের সফল ব্যক্তিদেরকে আপনি দেখবেন, তাদের উদ্যোগ ও পদ্ধতি গুলো থেকে শিখবেন; আর নিজের পর্যবেক্ষণে ব্যবহার করবেন। এমন কোনো বুদ্ধি বা ধারণা সেই পদ্ধতির সাথে যোগ করুন যা আপনার উদ্যোগকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে। তবে অবশ্যই প্রথমে আপনার উদ্যোগটিকে স্থানীয় কোনো সমস্যা সমাধান করতে হবে। যেমন বিল গেটস, তিনি তার এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুর সাথে মিলে অপারেটিং সিস্টেম নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তার কারণ ছিল তখনকার দিনে কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম ছিল না। এজন্য প্রচুর সময় ব্যয় হত। তাই এই সমস্যার সমাধানে বিল গেটস অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে এগিয়ে আসেন। তারপর জুকারবার্গ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছিলেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ করার দরকার হয়ে পড়ে। জুকারবার্গ একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে আসেন, স্থানীয় সমস্যার সমাধান হয়। তারপর জুকারবার্গ সারা বিশ্বে এই উদ্যোগকে প্রণোদনা দেন।


এখনো যদি আপনি তাদেরকে কেবল অনুকরণই করে যান তবে আপনি তাদের কাছ থেকে কিছুই শিখছেন না। অবশ্যই নতুন কিছু সৃষ্টি করার চেয়ে অনুকরণ করা সহজ। ইতিমধ্যে আমরা যে উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি সেই জিনিসটা নিয়ে কাজ করাই হল ১ থেকে ‘ম’তে গমন (ম মানে মৃত)। যখনই আমরা নতুন কিছু সৃষ্টি করব, উদ্ভাবন করব তখন এটা হবে ০ থেকে ১-এ গমন।


আমেরিকার কিছু কোম্পানি যেমন উইন্ডোজ, গুগল, ফেসবুক সহ অন্যান্য বড় বড় কোম্পানি যদি নতুন কিছু সৃষ্টি করতে না পারে তবে আজকে তারা যতই মুনাফা করুক না কেন ভবিষ্যতে ব্যর্থ হবেই। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে যে ব্যবসা পেয়েছি এখনো যদি সেই ব্যবসার পুরাতন রাস্তা গুলোকে ঘষামাজা করি, ঝকঝকে করি তবে কী লাভ? নতুন কিছু সৃষ্টি না করলে যে কী হতে পারে তার প্রমাণ ২০০৮ সালের ব্যবসায়িক বিপর্যয়। আজকের সবচেয়ে ভালো পেশা বা রাস্তা আপনাকে ভবিষ্যতের অচল অবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো রাস্তা বা পেশা হচ্ছে নতুন রাস্তা এবং সেই পেশা, যেখানে এখনো কেউ প্রবেশ করেনি। নিজের কাছে প্রশ্ন করুন, “এমন কোন কোন মূল্যবান কাজ আছে যা এখনো কেউ করে দেখাচ্ছে না?”



ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ:


ভবিষ্যৎ কী? সহজ ভাবে বললে, ভবিষ্যৎ হচ্ছে একমাত্র সময় যা আসবে। কিন্তু ভবিষ্যতকে আজকের অবস্থান থেকে আলাদা, স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ করবে কীভাবে? যা এখনো ঘটেনি, তাইতো। যা নতুন, যা আগে কেউ দেখেনি। যা আপনার থেকে ভিন্ন। তাহলে এটাই যদি হয় তবে আমাদের সমাজ যদি আগামী ১০০ বছর পর্যন্ত এমনই থাকে কোনো পরিবর্তন না হয় তবে আমরা ভবিষ্যৎ থেকে ১০০ বছর দূরে থাকবো। আর যদি আগামী এক যুগের মধ্যে পরিবর্তন ঘটে, তাহলে বলতে হয় ভবিষ্যৎ আমাদের হাতের মুঠোয়। আসলে কেউই বলতে পারে না যে ভবিষ্যত কখন আসবে। আমরা অন্তত দুইটা জিনিস সম্পর্কে জানি। এক: এটি ভিন্ন কিছু নিয়ে আসবে এবং দুই: এটার মূল বা শিকড় আজকের বিশ্বেই অবস্থিত। বেশিরভাগ বৈপরীত্য মূলক প্রশ্নেরই ভিন্ন ভিন্ন উত্তর থাকে। এটা একটি জিনিসকে দেখার বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ দেয়। যখন আমরা ভালো উত্তর গুলো খুঁজে পাবো তখন আমরা ভবিষ্যতের ঠিক ততটাই কাছে চলে যাব।


. উন্নয়নের ভবিষ্যৎ


আমরা যখনই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করি তখনই আমরা অগ্রগতি ও উন্নতির চিন্তা করি। অগ্রগতি হবে এটা সত্য। অগ্রগতির দুইটি ধরন আছে। একটি ধরন হচ্ছে অনুভূমিক অগ্রগতির বিস্তার বা সম্প্রসারণ। এর মানে হল যে জিনিসের চাহিদা আছে, যা দরকার তার কেবল নকল করা। একে বলা হয় ১ থেকে ম-তে গমন। অনুভূমিক অগ্রগতি বোঝা খুব সহজ। কারণ এটা কেমন হবে তা আমরা আগে থেকেই জানি। সরলরেখা যে সোজা হবে তা তো আগে থেকে অনুমান করা যায়।

তবে অগ্রগতির দ্বিতীয় ধরনটি একটু ভিন্ন। এটি হচ্ছে উলম্ব বা প্রগাঢ় অগ্রগতি। মানে নতুন কিছু উদ্ভাবন করা–একে বলে ০ থেকে ১-এ গমন, শিকড় থেকে শিখরে। এই উলম্ব অগ্রগতিকে চিন্তা করা, একটু কঠিন। কারণ এটা এমন কিছু যা কেউ আগে করেনি। যদি আপনি একটি টাইপরাইটার নেন এবং আরো ১০০ টি টাইপরাইটার নির্মাণ করেন তবে এটা হবে অনুভূমিক অগ্রগতি। আর আপনি যদি একটি টাইপ রাইটার নেন এবং একটি ওয়ার্ড প্রসেসর নির্মাণ করেন তবে এটা হবে উলম্ব অগ্রগতি।


অনুভূমিক অগ্রগতি হচ্ছে বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেশন। বিশ্বায়নে যেমনটি হয়, বিশ্বের কোথাও একটি পদ্ধতি বা ব্যবস্থা যদি সেই জায়গার সমস্যা সমাধান করতে পারে তবে ধরে নেওয়া হয় যে সেই পদ্ধতি বা ব্যবস্থা সারা বিশ্বেও কাজ করবে। বিশ্বায়নের একটি উদাহরণ হল চীন; তাদের আগামী কুড়ি বছরের পরিকল্পনা হচ্ছে আজকের আমেরিকার মত হবে। চীন এই পরিকল্পনা নিয়ে খুব দ্রুত এবং সরাসরি এগিয়ে চলছে, সবকিছু নকল করে যাচ্ছে, যা কিছু উন্নয়নশীল বিশ্বের দরকার তাও নকল করে যাচ্ছে: উনিশ শতকে রেল ব্যবস্থা, বিশ শতকের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, এমনকি পুরো এক শহরের নকল করে ফেলেছে। এতে হয়তো তারা কয়েকটা বাদ দিয়ে উপরে উঠছে–ল্যান্ড লাইন বাদ দিয়ে ওয়্যারলেসে চলে গেছে। আপাতত দৃষ্টিতে এটা দেখতে যেমনই হোক না কেন–তারা কিন্তু সবকিছু নকলই করে যাচ্ছে।


উলম্ব বা প্রগাঢ় অগ্রগতি হচ্ছে প্রযুক্তি। এটি একটি শব্দ যা বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। ০ থেকে ১-এ যে অগ্রগতি তা হচ্ছে প্রযুক্তি। তথ্য ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির যে অসামান্য অবদান গড়ে উঠেছে তার কারণ সিলিকন ভ্যালি। সিলিকন ভ্যালির মূলধন হচ্ছে “প্রযুক্তি”। প্রযুক্তি বলতে যে কম্পিউটারের মধ্যে আটকে থাকতে হবে তা নয়। প্রযুক্তি মানে কোনো জিনিস বা কোনো কাজ করার জন্য নতুন ও উত্তম পন্থা সৃষ্টি করা।


বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তি অগ্রগতিরই ভিন্ন ভিন্ন দিক সেহেতু উভয়ই ঘটা সম্ভব। আবার যে কোনো একটি ঘটতে পারে অথবা কোনোটিই ঘটবে না এমনও হতে পারে। আজকের বিশ্বায়নের যুগে আগামী দশক কেমন হবে তা অনুমান করা খুব সহজ হয়ে পড়েছে। সামনে কেবল একই রকম জিনিস দেখা যাচ্ছে। এমনকি অনেকেই বলে যে প্রযুক্তির ইতিহাসও শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন কী করার! বর্তমানে বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত। এক উন্নত দেশ, যারা সবকিছু উদ্ভাবন করে ফেলেছে। আর এক উন্নয়নশীল দেশ, যারা উন্নত দেশ থেকে প্রযুক্তি নকল করার ধান্দায় আছে বা অপেক্ষায় আছে এই পথে কবে কীভাবে উন্নতি করবে।

কিন্তু উন্নতি করার জন্য এটাই যে একমাত্র পথ তা সত্য নয়। উন্নতি করার জন্য এই পথ যথেষ্ট নয়। অনেকেই মনে করে বিশ্বায়ন দিয়ে পৃথিবীকে সংজ্ঞায়িত করা হবে, বেঁধে ফেলা হবে। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ হচ্ছে বিশ্বায়ন। হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এই ধরনের বৈপরীত্য মূলক প্রশ্নের লেখক উত্তর দিয়েছেন, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বিশ্বায়ন, আসলে তা সত্য নয়। সত্য হচ্ছে ঠিক এর বিপরীত। বিশ্বায়নের চেয়ে প্রযুক্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং দরকারি। প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ছাড়া যদি চীনারা তাদের জ্বালানি উৎপাদন দ্বিগুণ করে, তবে এর সাথে সাথে তারা বায়ু দূষণও দ্বিগুণ করবে। শীত প্রধান দেশে ঘরকে উষ্ণ রাখার জন্য আগুন জ্বালিয়ে রাখা হয় এবং চিমনি ব্যবহার করা হয় ধোঁয়া যাওয়ার জন্য। এখন এজন্য কী গ্রীষ্মপ্রধান দেশেও ঘরের ভেতর আগুন জ্বালাতে হবে? প্রযুক্তি দরকার। কিন্তু তা নিজ নিজ স্থান, কাল ও পরিবেশ বিবেচনায় উদ্ভাবন করতে হবে, নকল নয়।


আপনি দেখবেন যে ইতিহাসে কখনো নতুন প্রযুক্তি আপনা আপনি উদয় হয়নি। আমাদের আদি পুরুষদের অবস্থা ছিল স্থিতিশীল। সভ্যতার শুরুতে তারা কেবল অন্যদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়াকেই সাফল্য বলে চিহ্নিত করত। তারা সম্পদ আহরণের নতুন নতুন উৎস খুব কমই আবিষ্কার করেছে। তারপর হঠাৎ আধুনিক বিশ্বে এসে তারা নানাবিধ নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে সভ্যতার মোড় ঘুরিয়ে দিল। ১৭৬০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বাষ্প ইঞ্জিন থেকে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসরে উদ্ভাবন ঘটল। ফলাফল, আমরা পূর্বের যে কোনো সমাজ থেকে বেশি সম্পদশালী হয়ে উঠলাম।


আমাদের বাবা দাদারা আশা করেছিল যে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। তারা সপ্তাহে চারদিন কাজ করার আশা করত, জ্বালানি শক্তি খুব সস্তা হবে এবং চাঁদে ছুটি কাটানোর আশা করত। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। স্মার্টফোন আমাদেরকে বিভ্রান্ত করে রেখেছে। এমনকি আমাদের চারপাশের জিনিসগুলো যে পুরোনো হয়ে গেছে সেটা পর্যন্ত আমরা ভুলে গেছি। কেবল কম্পিউটার ও তথ্য যোগাযোগের কিছু উন্নতি হয়েছে। তারমানে এই নয় যে আমাদের অভিভাবকরা একটি উত্তম ভবিষ্যৎ অনুমান করতে পারেনি–ভুলটা হয়েছে–তারা আশা করেছে সবকিছু আপনা আপনি হবে। নিজে থেকে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু হয় না, করে দেখাতে হয়। আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তির সৃষ্টি করা যা একুশ শতককে বিংশ শতকের চেয়ে আরো শান্তিপ্রিয় ও সমৃদ্ধ করবে। নতুন নতুন প্রযুক্তি সৃষ্টি করা মানে কেবল কম্পিউটারের নতুন সফটওয়্যার বা এন্ড্রয়েড-এর নতুন অ্যাপ সৃষ্টি করা নয়। যে কোনো ক্ষেত্রে: কৃষি ক্ষেত্রে, পোশাক শিল্পে,বিক্রয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে, আর্থিক ক্ষেত্রে বা আপনার নিজের গ্রামে এমন কোনো নতুন উদ্যোগ যা জনগণের জন্য উপকারী সেবা সম্পন্ন করবে।


. নতুন উদ্যোগের চিন্তা


নতুন প্রযুক্তি আসবে নতুন নতুন উদ্যোগ থেকে, নতুন কোনো কাজে ঝুঁকি নেওয়া থেকে। আজকের বড় বড় রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রয়েল সোসাইটি পর্যন্ত একদিন ছোট্ট একদল লোক গ্রহণ করেছিল, যা বিশ্বকে পরিবর্তন করে আরো উন্নত করার তাগিদা থেকে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কোনো নতুন জিনিস উদ্ভাবন করা কঠিন, আর যদি আপনি নিজে করতে যান সেটা আরও কঠিন। আমলাতান্ত্রিক কাঠামো সর্বদাই ধীরে চলে, আর যেখানেই একটু ঝুঁকি দেখেছে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ে। আবার একজন ব্যক্তি মেধাবী হলে একটি কাজ চমৎকারভাবে করতে পারে কিন্তু সম্পূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো তার পক্ষে কঠিন। ঠিক এই জায়গায় একজন উদ্যোক্তার আগমন। একজন উদ্যোক্তা যে নীতির উপর কাজ করে তা হচ্ছে কাজ করতে গেলে আপনাকে অন্যদের সহযোগিতা নিতে হবে, কিন্তু আপনাকে দলটিকে ছোট করে রাখতে হবে যাতে আপনি নিজে কাজ করার সুযোগ পান ও কাজ করেন।


একটি উদ্যোগ হচ্ছে একটি ভিন্ন ভবিষ্যৎ নির্মাণ করার পরিকল্পনার উপর অনেক লোকজনের বিশ্বাস তৈরি করা। একটি নতুন কোম্পানির সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে নতুন ধরনের চিন্তা। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে এটা গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট কাজে কিন্তু আপনাকে চিন্তা করার সুযোগ দেয়। এই বইটি হচ্ছে আপনি যখন একটি নতুন জিনিস নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন তখন ব্যবসাটিতে সফল হতে কি কি প্রশ্ন ও উত্তর জানতে হবে তা নিয়ে। প্রশ্ন করলে নতুন নতুন বুদ্ধি পাওয়া যায় এবং ব্যবসাটিকে তার আরম্ভ স্থল থেকে পুনরায় চিন্তা করা যায়।


যেকোনো সফল প্রতিষ্ঠানই আলাদা:


“মূল্যবান এমন কোন কোম্পানি কেউ সৃষ্টি করছে না?” প্রশ্নটি যতটা সহজ মনে হয় আসলে ততটা সহজ নয়। কারণ অভিনব কোনো কোম্পানি সৃষ্টি করলেই হবে না, সেটাকে মুনাফা জনক প্রতিষ্ঠানেও পরিণত করতে হবে। আপনার প্রতিষ্ঠান অনেক সেবা দিতে পারে কিন্তু নিজের জন্য যথেষ্ট মুনাফা না-ও অর্জন করতে পারে। সমস্যার সমাধান করা বা সেবা প্রদান করাই যথেষ্ট নয়–আপনার নিজের বেঁচে থাকতে হলেও কিছু মুনাফা অর্জন করতে হবে।

এর মানে ব্যবসা অনেক বড় হলেও ব্যবসায় মন্দা ঘটতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আকাশ পথের ব্যবসা। এই পথে বহু কোম্পানি আছে যারা লাখো যাত্রীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আয় করছে। কিন্তু ২০১২ সালে দেখা যায়, গড়ে প্রতি যাত্রীর ভাড়া ১৪৫০০ টাকা অথচ একজন যাত্রী থেকে যাত্রা প্রতি মুনাফা হচ্ছে মাত্র ৩০ টাকা। এটাকে এবার গুগল-এর সাথে তুলনা করা যাক। গুগল বিমান কোম্পানিগুলোর থেকে অনেক কম সেবা দিয়েছে। কিন্তু তার লাভের অংক বেশ বড়। গুগল ২০১২ সালে বিমান কোম্পানিগুলোর ১৬ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে ৫০০০ কোটি টাকা আয় করেছে, কিন্তু গুগল সেই আয় থেকে ২১% মুনাফা অর্জন করেছে। যা বিমান কোম্পানি গুলোর মুনাফার ১০০ গুণ বেশি। আর এখন তো গুগল যা টাকা আয় করে তা সমস্ত ইউএস বিমান কোম্পানিগুলোর থেকে তিনগুণ বেশি।


আকাশ পথের এই বিমান কোম্পানিগুলো একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে। আর গুগল ব্যবসা করে একা। অর্থনীতিতে এই পদ্ধতির একটি নাম রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে পূর্ণ প্রতিযোগিতা বাজার এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে একচেটিয়া বাজার।


অর্থনীতিতে পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজার ব্যবস্থাকে একই সাথে আদর্শ বাজার ও ত্রুটিযুক্ত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থাকে আদর্শ ধরা হয়। প্রতিটি কোম্পানি ঠিক একই পণ্য একই বাজারে বিক্রি করে যাচ্ছে। কোনো বৈচিত্র্য নেই। যেহেতু কোনো প্রতিষ্ঠানেরই এমন কোনো মহাবল বা শক্তিশালী বল নেই যা সমগ্র বাজারেকে প্রভাবিত করতে পারে তখন একটি কোম্পানিকে বাজারদরেই বিক্রি করতে হবে। এ কাজ করতে সে বাধ্য। অর্থ আয় করতে হলে কী করতে হবে? বাজারে নতুন কোম্পানি খুলবে, যোগান বাড়বে, দাম কমবে এবং মুনাফা কমে যাবে। যদিও সবাই তখন আপনার কোম্পানিকেই বিবেচনায় প্রথমে রাখবে। যদি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বাজারে প্রবেশ করে তবে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং পণ্যের দাম একটি টেকসই জায়গায় এসে স্থির হয়ে যাবে। এ ধরনের পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে দীর্ঘ মেয়াদে কোনো কোম্পানিই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে না।


পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারের বিপরীত হচ্ছে একচেটিয়া বাজার। যেখানে পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারের একটি কোম্পানি বাজার দরে জিনিস বেচতে বাধ্য, সেখানে একচেটিয়া ব্যবস্থার একটি কোম্পানি তার বাজার। তাই সে নিজেই নিজের দাম ঠিক করতে পারে। যেহেতু তার কোনো প্রতিযোগী নেই, সেহেতু সে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য তৈরি করতে পারে এবং দাম ঠিক করে নিজের মুনাফা বৃদ্ধি করতে পারে। একচেটিয়া বলতে এমন কোনো কোম্পানি, যে প্রতিষ্ঠান তার পণ্য ও কাজে এতই দক্ষ, এতই অগ্রসর যে তার আশেপাশের কোনো কোম্পানি এমন পণ্য ও সেবা গ্রাহকদের দিতে পারেনা। এ ধরনের কোম্পানির সবথেকে ভালো উদাহরণ হচ্ছে গুগল; যেটা শিকড় থেকে শিখরে উঠেছে, মানে ০ থেকে ১-এ উঠেছে। এটি মাইক্রোসফট বা ইয়াহুর সাথে সেই ২০০০ সাল থেকে কোনো প্রতিযোগিতা করেনি। কিছু খোঁজার ব্যাপারে গুগল অনন্য এক কোম্পানি: মাইক্রোসফট ও ইয়াহু থেকে পুরোপুরি আলাদা, নতুন জায়গার সৃষ্টি করেছে।


পুঁজিবাদ ও প্রতিযোগিতা দুইটি বিপরীতমুখী। পুঁজিবাদের সূচনা ঘটে পুঁজি সংগ্রহ থেকে। আর পূর্ণ প্রতিযোগিতায় সব মুনাফা তো প্রতিযোগিতা করতে করতেই চলে যায়। তাই এ থেকে উদ্যোক্তাদের জন্য শিক্ষাটা খুবই পরিষ্কার: যদি আপনি দীর্ঘ মেয়াদী ও টেকসই সেবা দিতে চান এবং নিজের জন্য মুনাফা অর্জন করতে চান তবে কখনোই একই ধরনের ব্যবসা করবেন না বা একই ধরনের কোম্পানি সৃষ্টি করবেন না।


বিশ্ব আসলে কতটা একচেটিয়া? কতটা পূর্ণ প্রতিযোগিতার? এটা বলা কঠিন। কারন আমরা এই ব্যাপার গুলো নিয়ে অনেক বেশি বিভ্রান্ত। বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মনে হয় সব ব্যবসা প্রায় একই রকম। তখন মনে হয় এদের মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য। প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা আরো বেশি জটিল। আসলে পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও একচেটিয়া বাজারের মধ্যে বিস্তর ফারাক। আজ বেশিরভাগ ব্যবসা গুলো যা চিন্তা করা হয় তা থেকে বহুদূরে। উভয় ধরনের কোম্পানিগুলো সত্যকে লুকানোর চেষ্টা করে এবং স্বপক্ষে প্রচার করে থাকে। তারা যা নয় তাই তারা প্রচার করে।


একচেটিয়ারা নিজেদের রক্ষার জন্য মিথ্যা বলে। তারা জানে তাদের আস্ফালন বা বেশি বাড়াবাড়ি তাদের ব্যবসার ক্ষতি করবে। যেসব কোম্পানি একচেটিয়া নয়, পুর্ণ প্রতিযোগিতা মূলক বাজারের কোম্পানি, তারা তাদের অবস্থান তুলে ধরে একটি বিপরীত মিথ্যা কথা বলে: “আমরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করি”।


একচেটিয়া ব্যবসা ভেতর থেকে ব্যবসায়ীদের জন্য ভালই। কিন্তু বাইরের অবস্থা কি? যেহেতু টাকা সব গ্রাহকের পকেট থেকেই আসে তাহলে সমাজের ওপরই একচেটিয়া মুনাফার প্রভাব কী? মুনাফা বলেন আর টাকাই আসে তো সেই গ্রাহকের পকেট থেকেই। একচেটিয়ারা তখনই খারাপ হয়ে ওঠে যখন বাজারের কোনো পরিবর্তন ঘটে না, পুরোপুরি স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করে। বাজার যদি স্থিতিশীল হয় তবে একচেটিয়া ব্যবসায়ীরা কেবল ভাড়া সংগ্রহকে পরিণত হয় আর আপনার কাছে যদি এমন পণ্য থাকে যা বাজারে আর কারো কাছে নেই তবে আপনি ইচ্ছামত দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন, লোকজন আপনার কাছ থেকে কিনতে বাধ্য।


আজকের বিশ্ব ছোট নয়। পুরো বিশ্বই এক বাজারে পরিণত হয়েছে। প্রগতিশীল বাজারের সবচেয়ে ভালো লক্ষণ হচ্ছে এখানে আপনি নতুন ও আরো ভালো জিনিস উদ্ভাবন করতে পারবেন। নতুন এক ব্যবসায়িক প্রজন্ম সৃষ্টি হচ্ছে যারা গ্রাহকদের আরো নিত্য নতুন সেবা দিতে প্রস্তুত।


সৃজনশীল একচেটিয়ারা কেবল সমাজের জন্য মঙ্গলজনকই নয়; বড় সমাজকে আরো উত্তমরূপে সৃষ্টি করতে তারা শক্তিশালী ইঞ্জিন রূপে কাজ করে। একচেটিয়ারাই উন্নয়নকে বেগবান করে। কারণ তাদের মুনাফা। তারা বছরের পর বছর, এমনকি যুগ যুগ ধরেও এই মুনাফা পেতে থাকে। এমন নিশ্চিত মুনাফা তাদেরকে অভিনব কিছু সৃষ্টির প্রতি উৎসাহিত করে। তাদের মুনাফা তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে ও সেই পরিকল্পনার পেছনে বিনিয়োগ করতে সাহস যোগায় যা পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কোম্পানিগুলো কখনো স্বপ্নেও দেখতে পারে না। এজন্যই একচেটিয়া কোম্পানিগুলো যেকোনো ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী গবেষণা প্রকল্পে হাত দিতে পারে।

এখন প্রশ্ন জানতে পারি, তাহলে অর্থনীতিবিদরা পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের জন্য এত আগ্রহী কেন? কেন তারা প্রতিযোগিতাকে একটি আদর্শ অবস্থা মনে করে? এটি আসলে ইতিহাসের ধ্বংসাবশেষ। অর্থনীতিবিদরা তাদের চিন্তা চেতনা ও গাণিতিক সূত্রগুলো ধার করেছে ১৯ শতকের পদার্থবিদদের কাছ থেকে। তারা মানুষ ও ব্যবসাকে পারস্পরিক পরিবর্তনশীল পরমাণু হিসেবে ধরেছে। যেমন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মিলে পানি হয়। আবার পানি থেকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পাওয়া যায়। কিন্তু মানুষ ও ব্যবসা কেবল রূপ পরিবর্তনই করে না, তারা অনন্য, সৃজনশীল। ব্যক্তি মানুষ ও ব্যবসা থেকে অভিনব কিছু সৃষ্টি করতে পারে। অর্থনীতির তত্ত্বের বাইরে বাস্তব জগতের চিত্র হচ্ছে: প্রতিটি সফল ব্যবসার সাফল্যের কারণ হচ্ছে তারা এমন কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারছে যা অন্যরা পারেনা। এজন্যই একচেটিয়া ব্যবসা কোনো বিকার তথ্য নয় বা কোনো ব্যতিক্রমী কিছুও নয়। একচেটিয়া হচ্ছে প্রতিটি সফল ব্যবসার অন্যতম শর্ত।


প্রতিযোগিতার মূলনীতি:


সৃজনশীল একচেটিয়া মানে অভিনব কিছু তৈরি করা, নতুন কোনো পণ্য, যা লোকজনের জন্য উপকারী সেবা সম্পন্ন করে। আর প্রতিযোগিতা মানে কারো জন্য কোনো মুনাফা নেই, পদে পদে কোনো পার্থক্য নেই এবং বেঁচে থাকার জন্য পুরো এক সংগ্রাম করতে হয়। তাহলে এরকম অবস্থার পরেও কেন লোকজন প্রতিযোগিতাকে ভালো মনে করে? উত্তরটি হচ্ছে, এটি কেবল একটি অর্থনৈতিক মতবাদ। সাধারণ লোকজন ও কোম্পানি গুলোর জন্য এটি ঝামেলার নয়; বরং এটা তার চেয়েও বেশি কিছু। প্রতিযোগিতা হচ্ছে একটি চিন্তা রীতি, ভাবাদর্শ- যা আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে এবং আমাদের চিন্তাকে বিকৃত করেছে। আমরা প্রতিযোগিতার কথা প্রচার করেছি, এটার প্রয়োজনীয়তা খুঁজে বের করেছি এবং এর বিধি নিষেধকে আইনত বিধিবদ্ধ করেছি, এতে করে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ফাঁদে ফেলেছি–যদিও আমরা জানি যে, আমরা যতবেশি প্রতিযোগিতা করব তত কম আমরা পাব। এটা খুব সহজ সরল একটি সত্য তবুও আমরা নিজেদের এমনভাবে প্রশিক্ষিত করেছি যাতে এই সত্যকে উপেক্ষিত করা যায়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতো পুরোপুরি প্রতিযোগিতার প্রতিফলন এবং সেই দিকেই ছাত্রদের ঠেলে দিচ্ছে।


ব্যবসায়িক জগতে এটি বেশি কাজে দেয়। একটি কোম্পানির অভ্যন্তরে কর্মচারীরা পদন্নতির জন্য একে অপরের সাথে টেক্কা দেয়, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে। তারপর আবার সেই কোম্পানি বাজারের অন্যান্য কোম্পানির সাথে রেষারেষি করে। এই ধরনের নাটকীয়তা সব মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। প্রকৃতপক্ষে কি দরকার লোকজন তা ভুলে গিয়ে কেবল প্রতিপক্ষের দিকেই মনোনিবেশ করে।

একজন উদ্যোক্তা যখন প্রথম উদ্যোগ নেয় তখন তার চিন্তা থাকে জনগণের জন্য উপকারী সেবা সম্পন্ন করা। দ্বিতীয়তঃ নিজের জন্য মুনাফা অর্জন করা। সে একটি সাধারণ সমস্যা নেয় এবং সেই সমস্যার সেরা সমাধান নিয়ে গ্রাহকদের সামনে উপস্থিত হয়। ধীরে ধীরে যখন তার প্রতিষ্ঠান বড় হতে থাকে তখন তার মনোযোগ “জনগণের জন্য উপকারী সেবা সম্পন্ন করা” থেকে সরে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর পড়ে। অভিনব কিছু সৃষ্টি করা, উন্নত পণ্য তৈরি করার বদলে তখন তার চিন্তা থাকে প্রতিদ্বন্দ্বীরা কী করছে, তারা কী পণ্য তৈরি করছে তা দেখা। ঠিক এই জায়গা থেকেই প্রতিষ্ঠানের অবনতি আরম্ভ হয়। রেষারেষির ফলে আমরা আমাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য থেকে সরে যাই এবং অদ্ভুত ও মারাত্মক ভুল করে বসি।


অর্থকে অনুসরণ করুন:


টাকায় টাকা আনে। “যার কাছে আছে তার কাছে আরো আসবে এবং সেই প্রচুর পরিমাণে পাবে। যার কাছে নেই, তার কাছে যা আছে তাও নিয়ে নেওয়া হবে।” এটাই জীবনের চরম সত্য। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ঠিক এই ব্যাপারটি উপলব্ধি করেছেন যখন তিনি বলেছেন, “বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য হচ্ছে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ”। চক্রবৃদ্ধি হারে যদি উন্নতি করা যায় তবে ব্যাপারটি নিশ্চয়ই তত মন্দ নয়। তবে সত্যি হচ্ছে এই কথাগুলো যে আইনস্টাইন বলেছেন তার কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। এগুলো অপ্রমাণিত বক্তব্য। কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে আইনস্টাইনের কাজকর্ম ও প্রচেষ্টা, তিনি পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পরও মানুষকে নতুন নতুন জিনিস শেখার ও বোঝার উপায় দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে চক্রবৃদ্ধি হারে উন্নতি। আইনস্টাইন ও শেক্সপিয়ারের মতো মানুষ অমর হয়ে থাকেন, তাঁদের বক্তব্যের নতুন নতুন ব্যাখ্যা আবিস্কার হয়। এটা থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, জীবনের ছোট ছোট কর্মও কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।


একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যেকোনো কোম্পানির শুরুতে বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করতে চায়। এজন্য তারা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ধনী লোকজন থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করে। একত্র করে এবং কোনো একটি প্রযুক্তিগত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে যাতে তার বিশ্বাস আছে যে কোম্পানিটি আরও মুনাফা জনক হয়ে উঠবে। একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণত মুনাফা করে যদি কোম্পানিটি আরও বড় হয়ে ওঠে বা শেয়ার বাজারে যায়। অবশ্য সব বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যে শেয়ারবাজারে প্রবেশের মতো কোম্পানি পায় তা নয়। অনেকেই ব্যর্থ হয়। এজন্য প্রথম প্রথম এসব প্রতিষ্ঠান একটু আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। তবে সব বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানই আশা করে তার বিনিয়োগকারী কোম্পানি কিছু বছর পরে চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা করবে এবং তার আশানুরূপ লক্ষ্যে পৌঁছাবে।

প্রত্যেক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানই জানে তার কাজ হচ্ছে সফল হবে এমন একটি কোম্পানি খুঁজে বার করা। অবশ্য অনেক ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীও এই ব্যাপারটি ভাসা ভাসা ভাবে জানে। তারা জানে প্রতিটি কোম্পানি একটি অপরটির থেকে ভিন্ন। তবে তারা এই ভিন্নতাকে ঠিকভাবে উপলব্ধি করে না। সফল বিনিয়োগকারীরা খুব অল্প সংখ্যক নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে যেগুলোর উপর তাদের অগাধ আস্থা যে এগুলো জনগণের জন্য উপকারী সেবা সম্পন্ন করবে এবং তাদের জন্য মুনাফা বয়ে আনবে। যদি আপনি বিভিন্ন দিকে নিজের মনোযোগ নষ্ট না করে খুব নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির দিকে মনোযোগ দেন যাদের আসলেই কিছু ব্যক্তিগত মূল্য আছে, তাহলে আপনি প্রথমেই অনেক ব্যর্থ কোম্পানিকে এড়িয়ে যেতে পারেন।


ক্ষমতা নীতি বলতে একটি কোম্পানি ভবিষ্যতে যে পরিমাণ মুনাফা অর্জন করার ক্ষমতা রাখে তাকে বোঝানো হয়েছে। যে কোনো বিনিয়োগই‌ ভবিষ্যতে মুনাফা করতে পারে বা ব্যর্থ হতে পারে। তার মুনাফা করার ক্ষমতাকে ক্ষমতা নীতি বলে। ক্ষমতা নীতি কেবল বিনিয়োগকারীদের জন্যই কাজে লাগেনা; বরং এটা প্রত্যেকের জন্যই কাজে লাগে। কারণ আমরা প্রত্যেকেই একজন বিনিয়োগকারী। আর একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ–তার মূল্যবান সময় বিনিয়োগ করে উদ্যোগের প্রতি কাজ করা। তাই প্রত্যেক উদ্যোক্তার একদম শুরু থেকেই চিন্তা করা উচিত যে, তার উদ্যোগটি কী সফল হতে যাচ্ছে? তার উদ্যোগটি কী জনগণের জন্য উপকারী কোনো সেবা সম্পন্ন করবে? প্রত্যেক উদ্যোক্তাই অবিচ্ছিন্নভাবে একজন বিনিয়োগকারী। সুতরাং যখনই আপনি কোনো পেশা চয়ন করবেন তখন চিন্তা করে নেবেন ঠিক এই কাজটি আজকে থেকে একযুগ পরে একটি মূল্যবান সম্পদে পরিণত হবে।


সবাই বলে যে বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করা ভালো। এমনকি বড় বড় ক্যাপিটাল কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাই করে। কিন্তু যেসব বিনিয়োগকারী ক্ষমতা নীতি বোঝে তারা খুব অল্পসংখ্যক প্রকল্পে তাদের বিনিয়োগ সীমিত রাখে। তবে প্রচলিত রীতিমতে অনেকেই বিভিন্ন দিকে বিনিয়োগ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

কিন্তু জীবনতো আর বিভিন্ন দিকে বিনিয়োগ করার বিষয় নয়; না এটা একজন উদ্যোক্তার জন্য; না এটা কোনো স্বতন্ত্র ব্যক্তির জন্য। একজন উদ্যোক্তা কখনো নিজেকে বিভিন্ন দিকে বিনিয়োগ করতে পারে না। আপনি কখনোই একই সাথে একই সময়ে গোটা দশেক কোম্পানি চালাতে পারেন না। ১০ দিকে ১০ টি কোম্পানি চলছে আর আপনি বসে বসে চিন্তা করছেন যেকোনো একটি থেকে মুনাফা আসলেই চলবে। এটা হবার নয়। একই ব্যাপারটি জীবনের জন্যও সত্য। আপনি একই সাথে গোটা দশেক সুযোগ নিয়ে বসে থাকতে পারেন না।


এই বিশ্বে প্রতিটি উদ্যোগের জন্যই জায়গা আছে। তবে তার মানে এই নয় আপনার মেধা থাকলে আপনাকে একটি কোম্পানি খুলে বসে থাকতে হবে। যদিও আজকাল অনেকেই তাদের নিজেদের একটি করে কোম্পানি খুলে কাজ শুরু করেছে। যারা ক্ষমতা নীতি বোঝে তারা এটাও বোঝে যে কোম্পানী না খুলেও একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগের সাথে থাকলে তারা আরো বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারবে। তারা সম্ভাবনাময় উদ্যোগের সাথে থেকেও নিজেদের ও অন্যদের এগিয়ে নিয়ে যায়। ক্ষমতা নীতি থেকে এটা খুব ভালো বোঝা যায়। আপনি যদি আপনার একটি কোম্পানি বা উদ্যোগ নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করেন তবে আপনি শতভাগ সেই কোম্পানির সাফল্যের অধিকারী। আর যদি কোম্পানি ব্যর্থ হয় তবে কিন্তু আপনি একাই সেই শতভাগ ব্যর্থতার অধিকারী।


আপনি যদি নিজের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই ক্ষমতা নীতি উপলব্ধি করা উচিত এবং সে অনুযায়ী কোম্পানির চালানো উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে–একটি নির্দিষ্ট বাজার অন্য সব বাজারের চেয়ে উত্তম। ক্ষমতা নীতির জন্য সময় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে সবসময়ই এটা চিন্তা করে বের করতে হবে, এই যে আমার এত চেষ্টা, আমার এত পরিশ্রম এটা আসলে ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।



যদি আপনি উদ্যোগ নেন তবে কি লোকজন এই ব্যাপারে এগিয়ে আসবে?



আমাদের এই পৃথিবী হচ্ছে বিশাল এক বাজার। যদিও মনে হয় চারিদিকে শুধু কেনাবেচা চলছে, তবুও ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করার আছে।

আমরা যখন স্বপ্ন দেখি তখন নিশ্চয়ই বণ্টন বা বিলি ব্যবস্থা নিয়ে এমন কোনো চিত্র দেখি না। আমি একটা কিছু সৃষ্টি করলাম আর তা নিয়ে সাফল্য অর্জন করলাম। ঠিক আছে। তবে এটা স্বপ্ন পর্যন্তই ঠিক আছে। বাস্তবে সৃষ্টি ও সাফল্যের মধ্যে একটা সিঁড়ি আছে। এই সিঁড়ির নাম বণ্টন বা বিলি ব্যবস্থাপনা। এখানে কোনো লিফ্ট নেই । আপনাকে সিঁড়ি বেয়েই উপরে উঠতে হবে। যদিও আমরা বাস্তব জীবনে এই বণ্টন ব্যবস্থাপনাকে খুব একটা গুরুত্ব দেইনা। একটু চিন্তা করে দেখুন তো — একটি পণ্য বিক্রয় করতে পারাটাই কী সব নয়? একটি পণ্য সৃষ্টি করলাম। তারপর এটাকে ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেবে কে? বণ্টন ব্যবস্থাপনা।


. সৃষ্টিকারী বনাম বিক্রয়কর্মী:


বিজ্ঞাপন থেকে প্রতি বছর কত রাজস্ব পাওয়া যায় সেটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বার্ষিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।এই প্রতিবেদনে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ১২ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। আর জানা যায় এই খাতে ৬ লাখেরও বেশি লোক কাজ করে। কিন্তু বিক্রয় খাত এরচেয়েও বড়। বিক্রয় খাত থেকে আসে প্রতিবছর ৩৬ লাখ কোটি টাকার মতো এবং এই খাতে ৩২ লাখ লোক কাজ করে।


সিলিকন ভ্যালিতে অনেক ইঞ্জিনিয়ার বিজ্ঞাপন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রয়ের ব্যাপারে সন্দিহান। কারণ তারা মনে করে এগুলো ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বা অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু বিজ্ঞাপনের দরকার আছে। কারণ এতে কাজ হয়। এটা যেমন ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর কাজ করে তেমনি আপনার ওপরও কাজ করে। আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন আপনি একজন অসাধারণ ব্যক্তি, আপনার পছন্দ গুলো অনন্য। বিজ্ঞাপন তো কেবল অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে, আপনাকে নয়। যদিও আমরা বিজ্ঞাপন ও বিক্রয়ের কৌশল দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রভাবিত হচ্ছি তবুও আমরা একটি মিথ্যা আত্মবিশ্বাস দ্বারা নিজের স্বাধীনতাকে বজায় রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু আরেকটি বিবেচনার বিষয় হচ্ছে, বিজ্ঞাপন এমন এক জিনিস যে, এটা আপনাকে সাথে সাথেই ক্রয় করতে উদ্বুদ্ধ করবেনা বরং এটা আপনাকে পরবর্তী কোনো এক সময় ক্রয় করতে প্রভাবিত করবে। যে এই ব্যাপারটি ধরতে পারে না সে আরও বেশি ধোঁকা খায়।


. বিক্রয়ের ব্যাপারটাই একটি গোপন বিষয়:


প্রতিটি বিক্রয় কর্মীই মূলত একজন অভিনেতা। তাদের বিষয় হচ্ছে প্ররোচনা। এইজন্যে বিক্রয় কর্মীদেরকে দোষারোপ করা হয়, নিন্দা করা হয়। আমরা মূলত সেই বিক্রয় কর্মীকেই খারাপ বলি যে আচরণগতভাবে অভদ্র এবং গ্রাহকের চাহিদা না জেনে তার পণ্যটি গ্রাহককে ধরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু এর বাইরেও বিক্রয় কর্মীদের একটি বড় চিত্র রয়েছে। কিছু বিক্রয় কর্মী আছে অনভিজ্ঞ, কিছু দক্ষ এবং কিছু আছে গুরু পর্যায়ের। যদি আপনি এমন মহাগুরু পর্যায়ের কোনো বিক্রয় কর্মীর দেখা না পেয়ে থাকেন তার মানে এই নয় যে আপনার সাথে তার সাক্ষাৎ হয়নি; বরং তার সাথে সাক্ষাৎ হলেও আপনি ধরতে পারেননি। তাদের বিক্রয়ের ব্যাপারটি এমন সুন্দরভাবে সেলাই করা থাকে যে, শার্ট গায়ে দিয়েছেন কিন্তু সেলাই দেখতে পাচ্ছেন না। বিক্রয়ের ব্যাপারটা ঠিক অভিনয়ের মতো। অভিনয় যেমন ধরা না গেলে, গোপন থাকলে খুব ভালো হয়। বিক্রয় ব্যাপারটি তেমনই।

ইঞ্জিনিয়াররা মনে করে একটি পণ্যকে খুব ভালোভাবে তৈরি করব যাতে করে এটা নিজে নিজেই বিক্রি হবে। কিন্তু বাস্তবে কী কোনো পণ্য নিজে নিজেই বিক্রি হয়? নিশ্চয়ই না। আর কেউ যদি বলেও যে পণ্য নিজে নিজেই বিক্রি হয় তবে সে হয় মিথ্যা কথা বলছে বা অন্যকে ধোঁকা দিচ্ছে অথবা সে নিজেই ধোঁকার মধ্যে রয়েছে। সবচেয়ে ভালো পণ্য হলেও যে বিক্রয় বেশি হবে তা নয়; সবচেয়ে উত্তম বন্টন ব্যবস্থা থাকতে হবে। আপনি যদি বিশেষ কোনো জিনিস, যা জনগণের জন্য উপকারী সেবা সম্পন্ন করতে পারে এমন জিনিস সৃষ্টি করে থাকেন বা উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হন তবে আপনার উচিত এর বন্টন ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করা। বন্টন ব্যবস্থাপনা ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা পণ্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি নতুন কিছু উদ্ভাবন করে থাকেন কিন্তু আপনি এটা বিক্রয়ের একটি কার্যকর পথ উদ্ভাবন করতে পারেননি তবে আপনার কপালে শনি আছে। আপনার পণ্য বা উদ্যোগ যত ভালই হোক না কেন একটি উত্তম বন্টন ব্যবস্থাপনা ছাড়া এটা ব্যর্থ।


বিক্রয় ও বন্টন ব্যবস্থাপনা নিজেই একটি একচেটিয়া ব্যবসা দাঁড় করাতে সক্ষম। এটা যে কোনো পণ্য বিক্রয়ের জন্য সত্য। কিন্তু এর বিপরীতটি অসত্য–একচেটিয়া ব্যবসাই যে একটি ভালো দক্ষ বিক্রয় ও বন্টন ব্যবস্থাপনার সৃষ্টি করতে পারে একথা সত্য নয়। আপনার পণ্য যত ভালই হোক না কেন—যদি লোকজনের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণেও এটা সক্ষম হয় এবং গ্রাহক যদি পছন্দ করে তবুও আপনার উচিত এই পরিস্থিতিকে একটি শক্তিশালী বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎসাহ দেওয়া।

একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনার দুইটি দিক রয়েছে। এক হচ্ছে বর্তমান একজন গ্রাহক থেকে গড়ে আপনি যে আয় করেন। আর দুই হচ্ছে নতুন একজন গ্রাহক খুঁজতেই যে ব্যয় হয়। এই ব্যয় যেন আয়ের চেয়ে বেশি না হয় সেই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।


. মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন


বাজারে যাতে আপনার পণ্যটি তার ব্যবহারকারীদের হাতে সুন্দর ও সহজ ভাবে পৌঁছে দেওয়া যায় সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ঠিকভাবে বাজারজাতকরণ এবং বিজ্ঞাপন একটি বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে আপনাকে অবহিত থাকতে হবে। সেটি হচ্ছে সাধারণত কম দামি পণ্য এবং যেই পণ্যের ভালো কোনো বিপণন ব্যবস্থা নেই সেটির জন্যও বাজারজাতকরণ ও বিজ্ঞাপন ভালো কাজে দেয়। যেকোনো উদ্যোগের জন্য বিজ্ঞাপন কাজে দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। বিজ্ঞাপন তখনই কাজে লাগবে যখন আপনার হাতে গ্রাহক থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে আপনার পণ্য গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাবে। গ্রাহককে কেবল আজকে কোনরকমে একটি পণ্য ধরিয়ে দিলেই হবে না। তার সাথে ভবিষ্যতেও সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। প্রতি উদ্যোক্তাই চায় তার উদ্যোগকে বড় করে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেখানো হোক। কিন্তু বড় করে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করতে গেলে যে খরচ হয় তা অনেকটা খাজনার যে বাজনা বেশির মতো ঘটনায় পরিণত হয়। একজন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই এ ধরনের বড় করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার লোভ সামলাতে হবে। যে কোনো অভিনব উদ্যোগকে প্রথম প্রথম গ্রহণ করতে একটু দ্বিধা হয়। এটাই স্বাভাবিক।


একটি পণ্য তখনই অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশি বেশি ব্যবহার করা হয় যখন এর ভিতরগত জিনিস তার ব্যবহারকারীদেরকে উৎসাহিত করে, যখন ব্যবহারকারীরা উৎসাহী হয়ে তার বন্ধু-বান্ধব কেও জিনিসটি ব্যবহারের জন্য জানায়। ঠিক এভাবেই ফেসবুক ও পেপল এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিবারই‌ যখন একজন ব্যক্তি তার বন্ধুদের সাথে ব্যাপারটি শেয়ার করে বা অন্যকে টাকা পাঠায় তখনই সে স্বাভাবিকভাবে নতুন নতুন আরো লোককে এই নেটওয়ার্কের সাথে সম্পৃক্ত করে। এটা কেবল সস্তাই নয়—খুব দ্রুত কাজও করে। যদি একজন নতুন গ্রাহক অন্য এক বা একাধিক নতুন গ্রাহকের সাথে সেবাটি নিয়ে আলাপ করে এবং সে সেই সেবাটি ব্যবহার করে, তবেই ব্যাপারটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মত চালু হয়ে যাবে।

এই ধরনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় পণ্য বিক্রয়ের জন্য আপনাকে যতটা দ্রুত সম্ভব কাজ করতে হবে। ইউটিউবে কোনো একটি হাসির ভিডিও বা ইন্টারনেটের কোনো একটি সংবাদ ঠিক এভাবেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। একজনের হয়তো একটি বিড়াল ছানা দেখে বেশ চমৎকার লেগেছে। সে তার বন্ধুদের সাথে এটি শেয়ার করলো। তার বন্ধুরা শেয়ার করল অন্যদের সাথে। এভাবে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ব্যাপারটি জনপ্রিয় হয়ে গেল।


প্রতিটি ব্যবসারই একটি ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি, ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা থাকে। কিন্তু প্রতিদিনের বিপণন ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই বিপণন ব্যবস্থা একটি সূচকীয় সূত্র মেনে চলে। অনেক উদ্যোগতাই মনে করে কিছু বিক্রয় কর্মী নিয়োগ দিলেই হয়, কয়েকটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলাম, আর পণ্যের মোড়কটি একটু রংচঙে করে দিলাম, তাতেই পণ্য বিক্রয় হয়ে যাবে। আসলে কি তাই! বেশিরভাগ ব্যবসাতে দেখা যায় তাদের বিপণন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পণ্য যে খারাপ তা নয়, কিন্তু একটি দুর্বল বিক্রয় ব্যবস্থাপনার জন্য প্রায়ই দেখা যায় পণ্য চলে না।

আপনি যদি কেবল একটি ভাল বিক্রয় ব্যবস্থাপনার লাইন ধরতে পারেন তবে আপনার আর ব্যবসার কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু আপনি যদি অনেকগুলোর দিকে হাত বাড়ান এবং কোনোদিক ধরতে না পারেন, তবে আপনি শেষ।


. প্রত্যেকেই কিছু না কিছু বিক্রয় করছে


বিপণন ব্যবস্থা ও বিক্রয় কর্মী, এই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেগুলোতে আমাদের নজর দেওয়া উচিত। অনেকে অবশ্য মনে করতে পারে যে, এই দুইটির আবার কি দরকার। বিশেষ করে কম্পিউটার ক্ষেত্রে যারা আছে তারা বিপণন ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয় কর্মী এই দুইটিকে এড়িয়ে চলে। আমরা সকলেই হয়তো চিন্তা করি বিক্রয়ের কলাকৌশল গুলো আমাদের ওপর খাটে না। আসলে কি তাই! প্রত্যেকের কাছেই কিছু না কিছু বিক্রয়ের জন্য আছে এবং সে অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে তা বিক্রয়ের জন্য। আপনি একজন কর্মচারী হতে পারেন, প্রতিষ্ঠাতা হতে পারেন অথবা হতে পারেন একজন বিনিয়োগকারী – কোনো ব্যাপার না। আপনি কিছু না কিছু বিক্রয় করে চলেছেন। যদি আপনার কোম্পানি মানে আপনি ও আপনার কম্পিউটারও হয় তবুও আপনার জন্য এটা সত্য। চারিদিক ঘুরে দেখুন। আর যদি কোনো বিক্রয় কর্মী না দেখেন তবে মনে রাখবেন—অন্য কেউ নয় আপনি নিজেই বিক্রয় কর্মী।



মানুষ ও যন্ত্র:


একটি কোম্পানি যখন উন্নতি করার মাধ্যমে স্থিতিশীল হয় তখন তা আরও বড় বড় উন্নতির দিকে নিশ্চিত মনে লক্ষ্য স্থির করতে পারে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির কথা ধরতে পারি। তথ্যপ্রযুক্তি এত দ্রুত উন্নতি করেছে যে, এটা প্রযুক্তির সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। আজকে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ বিশ্বের যে কোনো তথ্য খুঁজে পেতে সক্ষম, তাও আবার ছোট্ট একটি যন্ত্রের সাহায্যে যা অনায়াসে একজনের পকেটে রাখা সম্ভব। আজকে প্রত্যেকের হাতে রয়েছে স্মার্টফোন, যার হিসাব নিকাশ করার দক্ষতা চাঁদে যাওয়ার সময় নভোচারীরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করেছে তারচেয়ে হাজার গুণ বেশি। কম্পিউটার ইতিমধ্যে অনেক কাজকর্মে মানুষকে ছড়িয়ে গেছে।


প্রায় ১৫ বছর আগে আমেরিকার শ্রমিকরা উদ্বিগ্ন ছিল যে, মেক্সিকোর কম বেতন ধারি শ্রমিকরা তাদের বদলে কাজ করবে। এটা ঘটা সম্ভব ছিল। কারণ মানুষ মানুষকে হঠাতে পারে, একে অন্যের পরিবর্তে কাজ করতে পারে। আমেরিকানরা প্রযুক্তিতে ভয় পায়। কারণ তারা একে বিশ্বায়ন হিসেবে দেখছে। তাদের মধ্যে লোকজন চাকরির জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে, কিন্তু কম্পিউটার কারো সাথে প্রতিযোগিতা করে না।


. প্রযুক্তি মানে অসম্পূর্ণতা দূরীকরণ:


একজন মানব শ্রমিকের সাথে আরেকজন মানুষ শ্রমিকের প্রতিযোগিতা হলে সময়ের মূল্য হ্রাস পায়। এখন একটু চিন্তা করুন একজন মানুষ শ্রমিকের বিপরীতে কম্পিউটার থাকলে কী হবে? এখন যদি আমরা যোগানের দিক থেকে চিন্তা করি তবে দেখব যে দুটি শ্রমজীবী মানুষ একে অপর থেকে ভিন্ন, কিন্তু কম্পিউটার ও মানুষ তত্ত্বগতভাবে একে অপর থেকে ভিন্ন। মানুষ ও যন্ত্র প্রকৃতিগত ভাবেই একে অপর থেকে ভিন্ন। মানুষের মধ্যে ইচ্ছা বলে একটি জিনিস আছে–আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিকল্পনার সৃষ্টি করতে পারি এবং জটিল পরিস্থিতিতেও সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। আমরা অবশ্য পাহাড়সম তথ্য থেকে কিছু বের করতে বা প্রক্রিয়াজাত করতে ততটা দক্ষ নই। আর কম্পিউটার ঠিক এই ব্যাপারটির বিপরীত। কম্পিউটার পাহাড়সম তথ্য থেকে কিছু বের করতে বা অনুসন্ধান করতে খুবই দক্ষ, কিন্তু এটা আবার মৌলিক কিছু বিচার বিবেচনা করতে অপারগ যা যেকোনো মানুষের জন্যই সহজসাধ্য।


আসলে মানুষ ও যন্ত্রকে এক করে দেখা হয় তাদের কাজের ফলাফলের ভিত্তিতে। কাজ মানুষকে দিয়ে করালে যে ফলাফল পাওয়া যায়, সেই একই কাজ কম্পিউটার করলে হয়তো আরও বেশি ফলাফল পাওয়া যায়। এদিক থেকে কম্পিউটার এগিয়ে আছে। কিন্তু কম্পিউটার দিয়ে তো ব্যবসা হয় না। কম্পিউটার মূলত সহায়তাকারী একটি যন্ত্র।


. কম্পিউটার বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি


কোনো কিছুর অসম্পূর্ণতা দূর করা একটি বিরাট কাজ। কিন্তু আমরা অসম্পূর্ণতা দূর করার যে সুযোগ আছে বা কোনো কিছুর অসম্পূর্ণতা দূর করেও যে বিরাট এক ব্যবসা সৃষ্টি করা সম্ভব তা বুঝিনা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গবেষকরা গবেষণা করে যাচ্ছে। গবেষকদের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন নির্দিষ্ট বিষয়ক গবেষণা পত্র প্রকাশ করা। গবেষণা পত্র প্রকাশ করাটা একটি সম্মানেরও বিষয়। আর কম্পিউটার গবেষকদের মূল কাজ হচ্ছে মানুষের পরিশ্রম হ্রাস করা এবং এমন এমন প্রোগ্রাম রচনা করা যা কাজকর্মকে আরো দ্রুত ও সুচারু ভাবে সম্পন্ন করবে।


কম্পিউটার বিজ্ঞানের ক্রমধারাটি একটু বিবেচনা করুন। যন্ত্রবিদ্যা বা যন্ত্রকে কাজ করতে শেখানো পূর্বে একটি কল্পনার বিষয় ছিল। সেখান থেকে আমরা আজকে অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। আজকে আমরা বিশ্বাস করি যে, কম্পিউটার নামক এই যন্ত্রটিকে যেকোনো কাজ শেখানো সম্ভব। একে যত তথ্য দেওয়া যায় এটা তত বেশি দক্ষ ভাবে কাজ করতে সক্ষম। আপনারা যারা গুগল অথবা ইউটিউব ব্যবহার করেছেন, প্রায়ই দেখেন যে, তারা যা সার্চ করে ঠিক সেই সম্পর্কিত অন্যান্য বাক্য, শব্দ বা তথ্যও দেখায়। আপনি যত বেশি সময় এখানে থাকবেন তাদের পরামর্শ গুলো আপনার জন্য তত বেশি যথার্থ হবে। গুগল ট্রান্সলেটর বা অনুবাদকও ঠিক একই কাজ করে। যদিও এটি ৮০ ভাষায় অনুবাদ করতে সক্ষম, তার মানে এই নয় যে, সফটওয়ারটি মানুষের ভাষা বোঝে; বরঞ্চ এটি পাহাড়সম তথ্যকে বিশ্লেষণ করে, পরিসংখ্যান দেখে সবচেয়ে কাছাকাছি শব্দটির প্রস্তাব করতে পারে।

আমরা যত বেশি নতুন নতুন পথে কম্পিউটারকে ব্যবহার করব, তত বেশি সামনে এগিয়ে যাব। কম্পিউটার যে আমাদেরকে কেবল আরো দক্ষ ভাবে কাজ করতে সহায়তা করবে তাই নয়, আমরা পূর্বে যা কল্পনাও করিনি এমন কাজ সাধন করতেও সহযোগিতা করবে।


প্রতিষ্ঠাতাদের বৈশিষ্ট্য:-


লেখক যখন তার বন্ধুদের সাথে পেপল শুরু করেন তখন তাঁরা ছিলেন ছয়জন। এদের মধ্যেকার চারজনই তাদের ছোটবেলায় বিদ্যালয়ে বোমা বানিয়েছিল। আর এদের মধ্যে পাঁচজনই ছিল মাত্র ২৩ বছর বয়সী বা তারচেয়েও কম বয়সী। চারজনই আমেরিকার ভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণ করেছে। ছয়জনই ছিল একটু খামখেয়ালী স্বভাবের। 

যেহেতু অনেক প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যেই অসাধারণ গুণাবলীর উপস্থিতি পাওয়া যায়, সেহেতু আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন তারা আসলে জন্মগতভাবেই এমন কোনো দুর্লভ গুণাবলী নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে যা সাধারণ লোকজনের মধ্যে নেই। সাধারণত আমরা মনে করি ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলীর মানুষদের একত্রিত করলে কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলী একই সাথে থাকতে পারে না। কেউ একই সাথে একই সময়ে ধনী ও গরীব হতে পারেনা। ঠিক এই জিনিসটাই প্রতিষ্ঠাতাদের সাথে ঘটে; যেকোনো উদ্যোগের

সি.ই.ও নগদ টাকায় গরীব হতে পারে কিন্তু কাগজে কলমে কোটিপতি হতে পারে। তারা আসলে সাধারণ ও অসাধারণ, বোকামি ও বুদ্ধিমত্তার মধ্যে দোদুল্যমান।


সকল উদ্যোক্তারা প্রায় সবাই একই সাথে অন্তর্ভুক্ত বহির্মুখী। তারা যখন সাফল্য অর্জন করে, তখন তারা একসাথে নাম ও বদনাম দুই অর্জন করে। আপনি যখন তাদেরকে ব্যবচ্ছেদ করবেন তখন দেখবেন তারা স্বাভাবিক গুণের ঠিক উল্টোটাই ধারণ করে।


কোথা থেকেই বিস্ময়কর ও বিচিত্র গুণাবলীর আগমন ঘটেছে? হয়তো সফল উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই গুণাবলী জন্মগতভাবে বিদ্যমান; নয়তো তারা তাদের আশেপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে গ্রহণ করেছে। তবে এটাও সত্য যে, প্রতিষ্ঠাতাদেরকে যেরকম বিস্ময়কর রূপে দেখা হয় তারা মূলত ততটা না। হয়তো তারা তাদের নির্দিষ্ট কিছু গুণাবলীকে অসাধারণভাবে বিকশিত করেছে। অথবা অন্যরা তাদেরকে বাড়িয়ে তুলেছে। এগুলো যদি একই সময়ে ঘটে তবে ব্যাপারটি একটি শক্তিশালী ব্যাপারে পরিণত হয়। যে শক্তি, যে বল একজন ব্যক্তিকে শিকড় থেকে শিখরে উঠাতে সক্ষম।


পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিরা মূলত প্রতিষ্ঠাতা। তারা যে কেবল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে তাই নয়; বরং তারা নিজেদেরকেও প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে যারা খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, তারা সকলেই নিজেদেরকে একটি ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যেমন ধরুন লেডি গাগা। তিনি বেশ পরিচিত একজন মার্কিন পপ শিল্পী। বেশ প্রভাবশালীও বটে। তার আসল নামটি কিন্তু এখন আর গোপন নয়, তবে তা কেউই জানেও না, আর জানতে চায়ও না। তিনি এমন বিচিত্র পোশাক পরে যা দেখলে দুর্বল হার্ট বিশিষ্ট যে কেউ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আপনার কি মনে হয় গাগা জন্ম থেকেই এমন। ভূতের মত মাথায় শিং নিয়ে কেউ জন্ম নেয় না। সেক্ষেত্রে এমন সাজের কারণ কী? কে নিজেকে এমন ভাবে বানাতে চায়? হয়তো সফল কেউই স্বাভাবিক নয়।


সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নিজের ক্ষমতা নিয়ে অহংকার করবেন না। প্রতিষ্ঠাতারা অবশ্যই মূল্যবান। তারা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা যে কেবল অসাধারণ কিছু করেছে তাই নয়; বরং তারা মহান কারণ তারা তাদের কোম্পানির প্রত্যেক স্বতন্ত্র ব্যক্তির ভিতর থেকে উৎকৃষ্ট কাজটি বের করে আনে। প্রতিষ্ঠাতারা নিজেদের সাথে সাথে অন্যদের ভেতর থেকে উত্তম কাজটি বের করে আনে। এখানেই প্রতিষ্ঠাতাদের কৃতিত্ব। তবে বিপদও আছে। যে প্রতিষ্ঠাতা কাজকর্মের দক্ষতা নিয়ে অতিমাত্রায় বুঁদ হয়ে থাকে সে তার মন মস্তিষ্কের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আবার এর বিপরীতও আছে। যে প্রতিষ্ঠাতা কোনো গোপনীয়তা বা রহস্যকে পাত্তা দেয় না তার সাথেও ঠিক একই বিপত্তি ঘটে।


স্থিরতা নাকি অসাধারণত্ব:-


ভবিষ্যৎ তাই যা আমরা গঠন করব, পরিকল্পনা করে সৃষ্টি করবো। যদি সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী উদ্যোক্তারাও আগামী ২০-৩০ বছর পর কি হবে তা পরিকল্পনা করতে না পারে, তাহলে আমরা আমাদের অদূর ভবিষ্যৎ নিয়ে কী কিছু বলতে পারব? সেটা আমরা ঠিক নির্দিষ্ট করে বলতে পারছিনা। আমাদের পূর্বপুরুষরা ইতিহাসকে দেখেছেন একটি শেষ না হওয়া পথ হিসেবে। আমরা ভালো ও মন্দ, অগ্রগতি ও অবনতি বা উন্নতি ও ধ্বংস এই ধরনের একটি চক্রাকার পথে এগিয়ে যাবো। এই পথচলা কখনো শেষ হবে না। এই মতবাদকে বলা হয় পৌন:পুনিক উত্থান পতন। অনেকটা তরঙ্গের মতো। একবার উপরে উঠে , আবার পতন ঘটে। তবে সম্প্রতি লোকজনের মধ্যে এই মতকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস সঞ্চার হয়েছে। যদিও আমরা এখনো সন্দেহের মধ্যে আছি যে আমরা যে পথ চয়ন করেছি তার স্থায়িত্ব দীর্ঘ হবে কিনা।


আমরা সাধারণত আমাদের সন্দেহকে দমন করি। যত রকম সন্দেহই থাকুক না কেন, কাজ করে যেতে হবে। কারণ কাজ করলেই তো তার ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। আরেকটি মতবাদ হচ্ছে “ মালভূমি তত্ত্ব”। এটি একটি প্রথাগত মতবাদ। এটার সাধারণ বক্তব্য হচ্ছে পুরো বিশ্ব এক জায়গায় মিলিত হবে এবং উন্নতির ঊর্ধদিকে এগিয়ে যাবে। অনেকটা আজকের ধনী দেশ গুলো যেমন জীবনযাপন করছে, সমগ্র বিশ্বও সেদিকে এগিয়ে যাবে। এরকম হলে এটা সহজেই বলা যায় যে, আমাদের ভবিষ্যত দেখতে অনেকটা আজকের মতই হবে।


আরেকটি হচ্ছে ধ্বংসাত্মক মতবাদ সম্পর্কে। এটার নাম হচ্ছে বিলুপ্তি তত্ত্ব। আমাদের আধুনিক সমাজে যে ধরণের অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি করা হচ্ছে তাতে একথা বলা খুব সহজ যে,এই মরণাস্ত্রগুলো দিয়ে পুরো মানব সভ্যতাকেই ধুয়েমুছে ফেলা যাবে। বিশ্বে যদি কোনো বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে তবে তা আমাদের সারাবিশ্বের মানুষের জন্য একটি মহাপ্লাবন বয়ে আনবে। এই ধরনের বিপর্যয় থেকে আমাদের রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আমাদের বর্তমান বিশ্বে যে পরিমাণ পারমানবিক বোমা আছে তাও বিশ্বকে কয়েকবার ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এই ধরনের অতিমাত্রায় বিধ্বংসী বিস্ফোরক মানবজাতির জন্য হুমকি স্বরূপ।


আরেকটি মতবাদ হচ্ছে উড্ডয়ন। আরো উন্নত কোনো ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এটা এমন এক ধরনের পরিবর্তন বা অগ্রগতি অন্য যেকোনো ধরণ থেকে ভিন্ন। আজকের বিশ্ব সমাজ যে পরিমান তথ্য প্রবাহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা দেখে ভবিষ্যৎ খারাপ হবে ও আবার পুনরায় ভালো হবে, এই ধরনের পৌনঃপুনিক চিত্রের চেয়ে বিশ্বের ধ্বংস ঘটার সম্ভাবনা বেশি। আর ধ্বংস যদি অনিবার্য হয় তাহলে তো মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করাটাই বৃথা।


যদি আমার ভবিষ্যৎকে কেবল সময় হিসেবে বিবেচনা করি যে, আজকে ২০১৮, তারপর ২১১৮ আসবে, তাহলে আমরা আসলে কোনও ভবিষ্যতেরই আশা রাখি না। আমরা ঠিক আজকের জিনিসগুলোর পুনরাবৃত্তি দেখতে থাকবো।


আমাদের কাজ হচ্ছে এমন কোনো অসাধারণ পথ খোঁজা যাতে নতুন নতুন জিনিস সৃষ্টি করা যায়, যাতে ভবিষ্যতের এমন এমন পথ নির্মাণ করা যায় যাকে কেবল ভিন্নই নয়, উন্নতও বটে। ০ থেকে ১-এ গমন, শিকড় থেকে শিখরে অভিযান। সবচেয়ে দরকারি জিনিস বা যদি বলি প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নিজের জন্য চিন্তা করা। একমাত্র যখন আমরা আমাদের বিশ্বকে একদম নতুন করে দেখব, একদম সতেজ ভাব ও বিস্ময় নিয়ে দেখব, যেমন আমাদের পূর্বপুরুষরা দেখেছিলেন, একমাত্র তখনই আমরা এটাকে পুনরায় সৃষ্টি করতে পারবো এবং ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে পারব।



সমাপ্ত


উপরিউক্ত অংশটি PETER THIEL -র লেখা “ZERO TO ONE”-এর সারসংক্ষেপ। আপনি চাইলে পুরো বইটি পড়তে পারেন)।


ধন্যবাদ

ধন্যবাদ


Buy Zero to One from


Share Zero to One


Featured Summaries