You Can Win by Shiv Khera

You Can Win

4:00 AM, September 11, 2023

Self Help

S. Manna


YOU CAN WIN

…SHIV KHERA


আপনার অনেক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে যারা আক্ষরিক অর্থে সারা জীবন ধরে পথভ্রষ্ট হয়েছে বা উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে। তারা স্বাভাবিকভাবে তাদের ভাগ্যে যা আছে তাই-ই মেনে নিয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন আকস্মিকভাবে সাফল্যমন্ডিত হলেও বেশিরভাগ সারা জীবন ধরে হতাশায় ভুগেছে ও অসুখী থেকে গেছে।

এই বই তাদের জন্য, যাদের কাছে একান্তভাবে নিজেদের নিয়োজিত করার দৃঢ় সংকল্প বা কর্মপ্রচেষ্টা রয়েছে, যা অভিষ্ট লাভের জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়।

এই বইটির উদ্দেশ্য হলো আপনার বাকি জীবনের একটি কার্য পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করা।


(১)মনোভাবের গুরুত্ব:-


ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা:-

আপনি কী কখনো চিন্তা করে দেখেছেন কেন কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা দেশ অন্যদের তুলনায় বেশি সফল? এর মধ্যে কোনো দৃঢ় রহস্য নেই। সফল ব্যক্তিরা একটি নির্দিষ্ট ও কাঙ্খিত ফল লাভের জন্য চিন্তা ও কাজ করে। তারা জানে, ফললাভের লক্ষ্যে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ মানুষ। তারা আরো জানে তাকে কীভাবে গড়ে তুলে কাজে লাগাতে হয়। কর্মীর গুণমানের উপর যে কোনো ব্যাক্তি, সংস্থা বা দেশের সাফল্য নির্ভর করে।

একজন লোক মেলায় লাল- নীল- সবুজ- হলুদ ইত্যাদি অনেক রঙের বেলুন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কখনো কখনো তার বিক্রি কমে গেলে সে হিলিয়াম গ্যাসে ভর্তি একটি বেলুন আকাশে উড়িয়ে দিত। বেলুন টিকে আকাশে উড়ে যেতে দেখলে উৎসাহী বাচ্চারা বেলুনওয়ালার কাছে ভিড় করে তার বিক্রি বাড়িয়ে দিত। এভাবেই সারাদিন বেলুন বিক্রি করতো। একবার একটি ছেলে তাকে জিজ্ঞেস করে "কালো রঙের বেলুনও কী আকাশে উড়বে?" বালকটির অত্যধিক আগ্রহ লক্ষ্য করে লোকটি তাকে আশ্বস্ত করে‌ বলে "রংয়ের জন্য বেলুন আকাশে ওড়ে না, ভেতরের গ্যাস বেলুনকে আকাশে ওড়ায়।"

মানুষের জীবনেও এ কথা সত্য। আমাদের ভেতরে কি আছে সেটাই প্রধান। আমাদের ভেতরের যে জিনিসটি আমাদেরকে উপরে উঠতে সাহায্য করে তাহলো, আমাদের মানসিকতা।


দৃষ্টিভঙ্গিই সাফল্যের অবদান:-

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ,শতকরা ৮৫ টি ক্ষেত্রে প্রার্থীরা চাকরি পায় তাদের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির জন্য, আর শতকরা ১৫ টি ক্ষেত্রে পায় তারা অনেক তথ্য ও সংখ্যাতত্ব জানে এবং বেশ চালাক চতুর বলে।

এই বইয়ের আলোচ্য বিষয় হলো শতকরা ৮৫ ভাগ সাফল্য। ইংরেজি ভাষায় "অ্যাটিটিউড" শব্দটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, যার অর্থ হল মনোভাব। ব্যক্তিজীবনে, জীবিকার ক্ষেত্রে, প্রকৃতপক্ষে জীবনের সব ক্ষেত্রেই এই অ্যাটিটিউড বা মনোভাবের বিশেষ গুরুত্ব আছে। কোনো প্রশাসক কী ভালো‌ প্রশাসক হতে পারেন যদি তার উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি না থাকে? ছাত্রসুলভ মনোভাব না থাকলে একজন ছাত্র কী ভাল ছাত্র হতে পারে? পিতা মাতা, শিক্ষক, মালি, কর্মচারী ইত্যাদি প্রত্যেকেরই সব ক্ষেত্রে স্ব-দায়িত্ব পালনের উপযোগী মনোভাব না থাকলে যথাযথ ভাবে তারা কেউই কর্তব্য পালন করতে পারে না। তাই যে জীবিকাই আপনি পছন্দ করুন না কেন, সাফল্যের ভিত্তি হচ্ছে আপনার মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি।


একটি সুসম্পন্ন দৃষ্টিভঙ্গি:-

মানুষ সম্পর্কে একটি সুসম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া উচিত। আমরা পারিবারিক সমস্যা কাজের জায়গায় নিয়ে যাই, কাজের সমস্যা পরিবারের মধ্যে নিয়ে আসি। পারিবারিক সমস্যা মাথায় নিয়ে কাজের জায়গায় গেলে কী হয়? মানসিক চাপ বেড়ে যায়, ফলে উৎপাদনের ঘাটতি ঘটে। অন্যদিকে কাজের সমস্যা ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যায় বিব্রত থাকলে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়ে।

আমরা কী আমাদের মনোভাব দিয়ে জন্মাই, কিংবা জীবনে অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলি? কী কী উপাদান আমাদের মানসিকতা গঠন করে?

প্রধানত তিনটি উপাদান আমাদের মনোভাব গঠন করতে সাহায্য করে। সে তিনটি হল:

‌‌ ১. পরিবেশ

২. অভিজ্ঞতা

৩. শিক্ষা


পরিবেশ:-

পরিবার, শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র, সংবাদ মাধ্যম, পরম্পরা ও সংস্কার,ধর্মীয় উত্তরাধিকার,পরিমণ্ডল ও সামাজিক পরিবেশ এই সমস্ত কিছু নিয়েই পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এই সমস্ত কিছু একটি সাংস্কৃতিক বাতাবরণ সৃষ্টি করে। পরিবার, সংগঠন কিংবা স্বদেশ প্রত্যেকেরই একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক বাতাবরণ রয়েছে।

নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, কোনো কোনো ব্যবসার প্রতিষ্ঠানে বিক্রেতা, তত্ত্বাবধায়ক, ম্যানেজার, মালিক, সকলেই বেশ ভদ্র, আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে দেখা যাবে প্রত্যেকেরই ব্যবহার রুঢ় ও অভদ্রজনক। এক একটি পরিবারের বাচ্চারা ও তাদের বাবা-মা ভদ্র, বিবেচক ও মার্জিত ব্যবহারে অভ্যস্ত; আবার অন্য পরিবারে একে অন্যের সঙ্গে বিশ্রী ভাবে ঝগড়া করে। যেখানে একটি ইতিবাচক কাজের আবহাওয়া আছে সেখানে একজন প্রান্তিক উৎপাদনকারী কর্মীরও উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যায়, আবার নেতিবাচক বাতাবরণে একজন সুদক্ষ কর্মীরও উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।

যেকোনো সংস্থার কর্মধারার আদর্শ উপর থেকে নিচে প্রবাহিত হয়, নিচে থেকে উপরে নয়। মাঝে মাঝে সংস্থার কর্মকর্তাদের পিছন ফিরে তাকিয়ে বিচার করার প্রয়োজন যে তারা সহকর্মীদের জন্য কী ধরনের কাজের আবহাওয়া সৃষ্টি করেছেন। একটি নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে ইতিবাচক কর্মদ্যোম সৃষ্টি করা দুঃসাধ্য। যে বাতাবরনের মধ্যে আমরা বাস করি বা যা আমরা অন্যদের জন্য তৈরি করেছি, তারও মূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তা আছে।


অভিজ্ঞতা:

জীবনে নানা ঘটনার অভিঘাতে এবং নানা মানুষের সঙ্গে সংশ্রবের অভিজ্ঞতায় আমাদের ব্যবহারেরও পরিবর্তন ঘটে। যদি কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে আমাদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হয় তবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হবে ইতিবাচক, আবার অভিজ্ঞতা নেতিবাচক হলে দৃষ্টিভঙ্গিও হবে নেতিবাচক।


শিক্ষা:-

জ্ঞানকে পরিকল্পনামাফিক ও অভিজ্ঞতার নিরিখে প্রয়োগ করলে তা হয় বিজ্ঞতা। বিজ্ঞতা সাফল্য নিশ্চিত করে। শিক্ষায় শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। একজন প্রকৃত শিক্ষকের প্রভাব চিরন্তন। বৃহৎ তরঙ্গ থেকে অজস্র ক্ষুদ্র তরঙ্গভঙ্গের মতো তার প্রভাব সদা বিস্তৃত এবং বস্তুত পক্ষে অপরিমেয়। আমরা তথ্যের ভারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, কিন্তু জ্ঞান অভিজ্ঞতার অভাবে তৃষ্ণার্ত। শিক্ষা কেবল জীবিকা অর্জনের পথ নির্দেশ করে না, কীভাবে জীবন যাপন করতে হয় তারও শিক্ষা দেয়।


ইতিবাচক মনোভাবের সুবিধা:-

একজন মানুষ অসুস্থ না হলেই যেমন তাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলা যায় না, তেমনি নেতিবাচক মনোভাব না থাকলেও কাউকে ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন বলে চিহ্নিত করা যায় না। ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য সহজে নজরে পড়ে। তারা দয়ালু, আত্মবিশ্বাসী, ধৈর্যশীল এবং নিরহংকার। তারা নিজেদের সম্পর্কে এবং অন্যের সম্পর্কেও উচ্চ আশা পোষণ করেন এবং সব কাজেই ইতিবাচক ফল প্রত্যাশা করেন।

এই মনোভাবের সুফল অনেক এবং সহজে তা নজরেও পড়ে। ইতিবাচক মনোভাব উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, সংঘবদ্ধভাবে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করে, সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে, কাজের উৎকর্ষ বাড়ায়, সৌহার্দ্যপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করে, মানসিক চাপ কমায়, কর্মচারী, মালিক ও ক্রেতাদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি করে, সমাজের সহায়ক সদস্য হতে সাহায্য করে, একটি প্রসন্ন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসাবে সমাজে পরিচিত হতে সাহায্য করে ইত্যাদি।


নেতিবাচক মনোভাবের ফলাফল:-

জীবনে অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয় এবং অনেক সময় আমাদের নেতিবাচক মনোভাবই সবচেয়ে বড় বাধা সৃষ্টি করে। এরূপ মনোভাবের ফলে তিক্ততার সৃষ্টি হয়, ক্ষোভের ও অসহিষ্ণুতার সৃষ্টি হয়, জীবন উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে, অসুস্থতার শিকার হতে হয়, মানসিক চাপ বাড়ে ইত্যাদি।


বাল্যকালেই সারা জীবনের জন্য মানস-গঠন সম্পন্ন হয়ে যায়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সেই বছরগুলিতে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে ওঠে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে ঘটনাচক্রে যদি বাল্যকালে নেতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে তবে তা সারা জীবন বহন করে চলতে হবে। এরূপ মনোভাবের পরিবর্তন করা যায়। যে আদর্শগুলি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করে সে সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং ইতিবাচক মনোভাব অর্জন করার আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা সম্ভব।

বয়স্ক ব্যক্তিরা নিজেরাই ইতিবাচক মনোভাব গঠন করতে পারেন। এ দায় নিজেদেরকেই নিতে হবে। অনেক সময় ব্যর্থতার জন্য আমরা একে অপরকে বা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঘটনাকে দায়ী করি। কিন্তু এরূপ না করে একটি বিশেষণধর্মী ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা দরকার। আমাদের কাজের ও ব্যবহারের দায়িত্ব আমাদেরই নেওয়া উচিত।


ক্রমাগত শিক্ষা গ্রহণের মনোভাব তৈরি করা উচিত:-

‌‌ শিক্ষা সম্পর্কে একটি ভুল ধারণার নিরসন দরকার। অনেকে মনে করেন আমরা স্কুল-কলেজে শিক্ষা লাভ করে শিক্ষিত হই। শিক্ষায় তথ্য ,ঘটনাবলী ইত্যাদি জানার খুবই প্রয়োজন, কিন্তু তাতেই শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। আমাদের শিক্ষার সত্য অর্থ জানা দরকার।

বুদ্ধিগত শিক্ষা আমাদের মস্তিষ্ককে উর্বর করে এবং মূল্যবোধের শিক্ষা আমাদের হৃদয় বৃত্তিকে সমৃদ্ধ করে। বস্তুতপক্ষে, যে শিক্ষা আমাদের হৃদয়কে সুশিক্ষিত করে না, সে শিক্ষা বিফল। আমাদের পরিবার, সমাজ ও কর্মস্থলের উপযোগী চরিত্র গঠনের জন্য নীতিবোধ ও নীতি শিক্ষার প্রয়োজন। যে শিক্ষা চরিত্রের সততা, সহমর্মিতা, সাহস, একাগ্রতা ও দায়িত্ববোধের মতো মৌলিক গুণাবলী গঠন করে সেই শিক্ষারই একান্ত প্রয়োজন। আমাদের শুধুই ডিগ্রীর মানদন্ডে মাপা শিক্ষা নয়–আমাদের দরকার মূল্যবোধের শিক্ষা।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও মানুষ সফল হতে পারে, যদি তার মধ্যে চরিত্র, দায়বদ্ধতা, দৃঢ় বিশ্বাস, সৌজন্যবোধ, সাহস-এর মতো গুণাবলী থাকে। দুর্ভাগ্যের কথা অনেকেই জ্ঞানের দিক থেকে চলন্ত বিশ্বকোষ, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে চূড়ান্ত ব্যর্থ।

মেধা হচ্ছে দ্রুত শেখার ক্ষমতা, শিক্ষাকে দ্রুত কাজে লাগানোর দক্ষতাকে বলে সক্ষমতা। যে বিষয়ে শিক্ষা নেওয়া হয়েছে, তাকে কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করার আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমতা যদি থাকে, তবে তাকেই বলে যোগ্যতা। আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে এমন একটি মানসিক অবস্থা যার সাহায্যে দক্ষ মানুষ যোগ্য মানুষ হয়ে ওঠে।


জ্ঞান-ই শক্তি:-

আমরা প্রায়ই শুনি জ্ঞান-ই শক্তি। ঠিক তা নয়। জ্ঞান শক্তির উৎস। জ্ঞান হচ্ছে তথ্যের সামাহার। এই জ্ঞানকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়, যখন তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়। যে মানুষ পড়তে জানে না আর যে পড়তে জেনেও পড়েনা তাদের মধ্যে বিশেষ কোনো তফাৎ নেই। জ্ঞান হলো শক্তির উৎস এবং জ্ঞানের নির্যাস হচ্ছে প্রকৃত শক্তি। শিক্ষা অনেকভাবেই গ্রহণ করা যায়। শিক্ষার অর্থ হল আত্মশক্তি বৃদ্ধি করা, স্থির ভাবে শোনার ও বোঝার ক্ষমতা অর্জন করা, আরও জানার ইচ্ছা অর্জন করা।


যদি আপনি ইতিবাচক মানসিকতা গঠন করতে চান এবং তা স্থায়ী করতে চান তবে সচেতন ভাবে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুশীলন করা দরকার।

(ক) লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন করে ইতিবাচক গুণের খোঁজ করুন।

(খ) কাজ এখনই শেষ করার অভ্যাস আয়ত্ত করুন।

(গ) কৃতজ্ঞ হওয়ার মানসিকতা তৈরি করুন।

(ঘ) ক্রমাগত শিক্ষা গ্রহণের মনোভাব তৈরি করুন।

(ঙ) ইতিবাচক আত্মমর্যাদা বোধ করে তুলুন।

(চ) নেতিবাচক প্রভাব থেকে দূরে থাকুন।

(ছ) যে কাজটি করতে হবে সেই কাজকে ভালবাসতে শিখুন।

(জ) ইতিবাচক ভাবনা দিয়ে দিন শুরু করুন।


(২) সাফল্য:-

সাফল্য কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়। এটি আমাদের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির ফল এবং সেই মনোভাব আমরা নিজেরাই নির্বাচন করি। সুতরাং সফলতা আমাদের নিজেদের নির্বাচনের ওপর নির্ভরশীল, কোনো আকস্মিকতার ওপর নয়। সাফল্য এবং অসাফল্য নিয়ে অনেক গবেষণা রয়েছে। আমরা যখন কোনো ব্যক্তিদের জীবন কাহিনী পড়ি তখন দেখতে পাই যে ইতিহাসের যে যুগেই তারা আবির্ভূত হন না কেন তাদের একই রকমের অনেকগুলি গুণ থাকে। যে গুণাবলী তাদের সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল, সেগুলি চিহ্নিত করতে পারলে এবং যথাযথ অনুসরণ করতে পারলে আমরাও সফল হতে পারি। অনুরূপভাবে সমস্ত অসাফল্যেরও কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে। যদি সেই বৈশিষ্ট্যগুলি এড়িয়ে চলি তাহলে আমরা বিফল হব না। সাফল্যের মধ্যে কোনো রহস্য নেই। সাফল্য কেবলমাত্র কয়েকটি মূল আদর্শকে নিয়মিতভাবে প্রয়োগ করার ফলশ্রুতি। অনেকে মনে করেন সাফল্যের অর্থ ধনবান হওয়া। কারোর নিকট সাফল্যের অর্থ সামাজিক স্বীকৃতি, সুস্বাস্থ্য, সুন্দর পরিবার, সুখ-সন্তুষ্টি এবং সামাজিক শান্তি। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে এর অর্থ বিভিন্ন।


কীভাবে সাফল্যের পরিমাপ করা যায়:-

কোনো কাজ সুসম্পন্ন হলে এবং অভিষ্ঠসিদ্ধি হলে যে অনুভূতি হয়, সেই অনুভূতিই সাফল্যের মাপকাঠি। জীবনে আমাদের অবস্থান দিয়ে সাফল্য বিচার হয় না। সেই অবস্থানে পৌঁছাতে গিয়ে যে সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে হয় সেই বাধা অতিক্রমের ক্ষমতা দিয়েই সাফল্যের পরিমাপ করা হয়। আমরা অপরের তুলনায় কিভাবে কাজ করছি তাই দিয়ে সাফল্য বিচার করা যায় না। আমরা আমাদের শক্তি ও সামর্থ্যের কতটা ব্যবহার করতে পেরেছি তাই দিয়েই সাফল্য নির্ধারিত হয়।

যে সমস্ত গুণাবলী মানুষকে সফল হতে সাহায্য করে:-

আকাঙ্ক্ষা-

সাফল্যের চালিকা শক্তি আসে সিদ্ধি লাভের জ্বলন্ত আকাঙ্ক্ষা থেকে। নেপোলিয়ন হিল লিখেছেন,"মানুষের মন যা কল্পনা করে এবং বিশ্বাস করে, মানুষ তা অর্জন করতেও পারে।" কোনো কাজ সুসম্পন্ন করতে হলে শুরু করতে হয় একটি জ্বলন্ত আকাঙ্ক্ষা দিয়ে।‌ অল্প আগুন যেমন অনেক উত্তাপ দিতে পারে না, তেমনি দুর্বল ইচ্ছা শক্তি কোনো মহৎ সিদ্ধি লাভ করতে পারে না।


অঙ্গীকার-

কোনো কাজ নিষ্পত্তি করার দৃঢ় অঙ্গীকার নির্মাণ করতে হয় দুটি স্তম্ভের ওপর। সেই দুটি হলো সততা এবং বিজ্ঞতা। যদি আপনার আর্থিক ক্ষতি হয় তবু আপনার অঙ্গীকারে দৃঢ় থাকার নামই সততা এবং অভিজ্ঞতা হচ্ছে যেখানে ক্ষতি হবে সেই রকম বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ না হওয়া। সাফল্য ও সমৃদ্ধি আমাদের চিন্তা ও সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতি। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কী কী চিন্তা আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করবে। সাফল্য কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়, এটি আমাদের মনোভাবের ফলশ্রুতি।

খেলায় জয়লাভের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধতা আবশ্যক। জেতার জন্য খেলা এবং না হারার জন্য খেলা– এই দুয়ের মধ্যে একটি বিরাট পার্থক্য আছে। যখন আমরা সকলেই জিততে চাই কিন্তু অনেকেই জেতার জন্য যে মূল্য দিতে হয় তা দিতে প্রস্তুত থাকে না। জেতার জন্য খেলার মধ্যে থাকে অনুপ্রেরণা আর না হারার জন্য খেলার মধ্যে থাকে বেপরোয়াভাব।

কোনো জায়গায় পৌঁছাতে হলে কেবল লক্ষ্যহীনভাবে চললেও হবে না আবার নোঙ্গরে বাধা থাকলেও চলবে না। কখনো অনুকূল বাতাসে পাল তুলে চলতে হবে আবার কখনো বাতাসের বিপরীতে চলতে হবে। যে জাহাজ মহাসমুদ্রে যাত্রা করে তাদের ঝড়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু যে জাহাজ বন্দরে থাকে সেই জাহাজও ধীরে ধীরে মরচে ধরে নষ্ট হয়ে যাবার ঝুঁকি থাকে। এটিই হচ্ছে জয়ের জন্য খেলা এবং না হারার জন্য খেলা-এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য। জয়ী হওয়ার জন্য অঙ্গীকার বদ্ধ হলে তাকে ঝুঁকি নিতেই হবে। যেসব মানুষ জয়ের জন্য খেলে তারা সংকট এবং চাপের মুখে নিজেদের প্রকাশিত করতে পারে, আর যারা না হারার জন্য খেলে তারা জানে না কীভাবে জিততে হয়।


দায়িত্ববোধ:-

চরিত্রবান লোকেরা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নির্ধারিত করেন। দায়িত্ব নেওয়ার অর্থ ঝুঁকি নেওয়া এবং জবাবদিহির দায় নেওয়া। অনেক সময় অস্বস্তিকর। বেশিরভাগ লোকেরাই কোনো দায়িত্ব না নিয়ে স্বস্তিতে জীবনযাপন করতে চান। তারা লক্ষ্যহীনভাবে জীবনে এগিয়ে চলেন এবং জীবনে ভালো কিছুর উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা না করে এমনিই ঘটবে এজন্য অপেক্ষা করেন। দায়িত্ব নিতে হয় বোকার মত নয়, বিচার বিবেচনা করেই। ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব নেবার অর্থ সমস্ত খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া বা কার্যক্রম তৈরি করা। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মনে করেন না যে তাদের বাঁচার ব্যবস্থা করে দিতে পৃথিবী দায়বদ্ধ।


কঠোর পরিশ্রম:-

অভিধানের উপর বসে থাকলে যেমন বানান শেখা যায় না তেমনি কঠোর পরিশ্রম ছাড়া কেউ কোনো কিছু করার ক্ষমতা অর্জন করে না। পেশাদার ব্যক্তিরা তাদের কাজকর্মের মূল বিষয়গুলি আয়ত্ত করেছে বলেই কাজকে সহজে আয়ত্ত করতে পারে। আমরা যা কিছু ভোগ করি তার কারোর না কারোর কঠিন পরিশ্রমের ফল। কিছু কাজ দৃশ্যমান আর কিছু অগোচরেই থেকে যায়। কিন্তু দুই-ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। হাঁস জলের তলায় নিরলস পদচলনা করে চলেছে কিন্তু উপরে সব সময় মসৃণ ও শান্ত -তার পরিশ্রম বোঝা যায় না। কোনো কিছুই সহজে আসে না। ছোট ছোট কাজেও কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় এবং ছোট ছোট কাজ বাগারম্বরের থেকে অনেক ভালো।


কাজ সম্পন্ন করার গৌরব:-

আজকাল একটি নির্দিষ্ট কাজ সুসম্পন্ন করার মধ্যে যে আত্মগরিমা আছে তা সাধারণত নজরে পড়ে না। কোনো কাজই আপনা থেকে সম্পন্ন হয় না। তাকে অনেক পরিশ্রম ও চেষ্টার দ্বারা সম্পন্ন করতে হয়। অনেকে ফাঁকি দিয়ে কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। এটি এড়িয়ে চলাই উচিত। যথোচিত পরিশ্রম ও দক্ষতার দ্বারা কাজটি সম্পন্ন করলে আত্মগৌরব জন্মায়, এটি অন্তরের জিনিস এবং সাফল্যের সমান। আত্মগৌরব কিন্তু অহং বোধ নয়। আত্মগৌরবে আছে কাজ সুসম্পন্ন করার আনন্দ ও বিনয়। কর্মের মান কর্মীর গুণমানের সঙ্গে যুক্ত। অমনোযোগী ও আন্তরিকতাহীন কাজে কোনো সাফল্য আসে না।


সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় সব গুণ কী আমাদের আছে?:-

অনেকে মনে করেন সাফলের জন্য উপযুক্ত গুণাবলী তাদের নেই। তারা সকলেই গড়পরতা লোক এবং অনেক সময় কাজে ব্যর্থ হন। কিন্তু এরকম হওয়া উচিত নয়, সাফল্যের জন্য যা প্রয়োজন সমস্ত গুণাবলীই আমাদের আছে। হয়তো সেই গুণাবলী যেভাবে চর্চা করলে সাফল্যের স্তরে নিয়ে যেতে পারত সেইভাবে চর্চা করা হয়নি। এই গুণগুলি যে আছে তা জানা থাকলে আমাদের কর্মদক্ষতার অনেক উন্নতি ঘটে। যে মুহূর্তে আপনি সেই সম্পদের সন্ধান পাবেন আপনার চিন্তা ও ব্যবহার বদলে যাবে। প্রয়োজন হলো তাকে প্রকাশ্যে এনে যথাযথ রূপে ব্যবহার করা। যেই সমস্ত জিনিসগুলি সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তা হল—ঝুঁকি নিতে অনিচ্ছা; অধ্যবসায়ের অভাব; তাৎক্ষণিক পুরস্কার; সহজ পথের সন্ধান; স্বার্থপরতা ও লোভ; দৃঢ় বিশ্বাসের অভাব; কাজের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে অনিচ্ছা; সুযোগ চিনে‌ নেওয়ার অক্ষমতা; আশঙ্কা; শৃঙ্খলাবোধের অভাব; আত্মমর্যাদা বোধের অভাব ইত্যাদি।


সাফল্যবোধের জন্য জরুরি শিক্ষাক্রম:-

জেতার জন্য খেলবেন, হারার জন্য নয়।

অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন।

উন্নত নৈতিক চরিত্রের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন।

যা অপরের নিকট পান, তার থেকে বেশি দিন।

উদ্দেশ্যহীনভাবে কোনো জিনিসের সন্ধান করবেন না।

দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করুন।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বড় লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন।

সততার বিষয়ে কোনোভাবে আপস করবেন না‌।

নিজের শক্তি যাচাই করে তার ওপর ভরসা রাখুন।


(৩) কর্ম প্রেরণা:-

মানুষ যখন তার কর্মের এবং ব্যবহারের দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি হয় ইতিবাচক। মানুষের বিশ্বাসের মধ্যেই থাকে কর্ম প্রেরণার উৎস। এর অর্থ হল যে কাজ করবে সেই কাজের পদ্ধতি ও ফলাফলের উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে এবং কাজের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এই ক্ষেত্রে কর্মপ্রেরণাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কর্মপ্রেরণা হল সেই মনোভাব যা কর্মে ও কর্ম চিন্তায় উদ্ভূত করে। কর্মপ্রেরণার অর্থ কর্মে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পাওয়া। প্রেরণা মানুষের কর্মদক্ষতাকে উজ্জীবিত ও কর্মচিন্তাকে প্রজ্জ্বলিত করে, তাই কর্মপ্রেরণা শক্তিদায়ী। কর্মপ্রেরণাই জীবনের চালিকাশক্তি। সাফল্যের অদম্য আকাঙ্ক্ষা থেকে কর্মপ্রেরণার জন্ম। সাফল্য ছাড়া জীবনে কোনো গৌরব নেই। কর্মপ্রেরণার চরম শত্রু হচ্ছে আত্মতুষ্টি। আত্মতুষ্টির পরে আসে নৈরাশ্য এবং নৈরাশ্য কর্ম বিমুখ করে, কারণ কোন কাজটি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করার বোধশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।

কর্মপ্রেরণার মূল উপাদানগুলিকে যদি অনুধাবন করা যায় তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্যকেও অনুপ্রাণিত করা যায়। নিজের অন্তরের কর্মপ্রেরণাই চালিকাশক্তি এবং এই প্রেরণাই দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। কর্মপ্রেরণা দুই প্রকার–বাহ্যিক এবং আন্তরিক।

অর্থ, সামাজিক স্বীকৃতি, খ্যাতি কিংবা ভয় এগুলি হল বাহ্যিক কর্ম প্রেরণা। যেমন বাবা মায়ের হাতে মার খাবার ভয়ে কোনো কাজ করা বা কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা; চাকরি থেকে বিতাড়িত হবার ভয়ে কাজ করা, এগুলি হল বাহ্যিক কর্ম প্রেরণার উদাহরণ।

অভ্যন্তরীণ কর্মপ্রেরণা হচ্ছে আমাদের অন্তরের তৃপ্তি। এই সন্তুষ্টি কেবলমাত্র সাফল্য থেকে আসে না, এটা আসে কোনো কাজ সুসম্পন্ন করার চরিতার্থতার অনুভূতি থেকে। কেবলমাত্র উদ্দেশ্য সিদ্ধিতে এই অনুভূতি আসে না। অভ্যন্তরীণ কর্মপ্রেরণা যেহেতু অন্তরের জিনিস সেহেতু এটি একটি স্থায়ী চালিকাশক্তি।

কর্মপ্রেরণাকে চিহ্নিত করা এবং তাকে ক্রমাগত শক্তিশালী করা সাফল্যের পক্ষে প্রয়োজনীয়। লক্ষ্যকে সামনে রেখে দিবারাত্র সেই চিন্তা করাই উচিত।


(৪)অবচেতন মন এবং অভ্যাস:

আমরা সবাই জীবনে সাফল্য লাভের বাসনা করি। কিন্তু আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা অসাফল্যের দিকে নিয়ে যায়। আমরা জয়ের জন্য জন্মাই। কিন্তু এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে জীবনে অসফল হতে হয়। মাঝে মাঝে আমরা এরকম কথা শুনি যে, লোকটি খুব ভাগ্যবান অথবা লোকটি খুব দুর্ভাগা। এরকম ভাগ্য নির্ভরতা ঠিক নয়। যদি বিশ্লেষণ করে দেখেন তাহলে দেখবেন যে, সফল ব্যক্তিরা প্রত্যেক কাজেই বেশ কিছু সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন আর অসফল ব্যক্তিরা প্রত্যেকবারই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছেন। মনে রাখবেন অনুশীলন দ্বারাই মানুষ ত্রুটিহীন হয় না, ত্রুটিহীন অনুশীলনের দ্বারাই ত্রুটিহীন হতে পারে।

পেশাদাররা তাদের কাজের মূল বিষয়গুলি এমনভাবে আয়ত্ত করে যে, কাজ তাদের কাছে সহজ হয়ে যায়। অনেকেই কাজে পদোন্নতির দিকে লক্ষ্য রেখে ভালো কাজ করে; কিন্তু যারা অভ্যাসের বসেই ভালো কাজ করে তারা আরোও বেশি যোগ্য। একটি অভ্যাস তৈরি করা জমি চাষ করার মতোই, এতে সময় লাগে এবং এর জন্য অন্তরের প্রেরণা দরকার।

অনেকদিন ধরে যা আমরা অনুশীলন করি তা আমাদের প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যায় এবং সেটি হয় আমাদের অভ্যাস। মানুষ যতটা না যুক্তিবাদী তার থেকেও বেশি ভাবালু। সততা এবং সর্বাঙ্গিক ন্যায়পরায়ণতা আমাদের বিশ্বাস এবং অনুশীলনের ফলশ্রুতি। আমাদের চিন্তাধারাও আমাদের অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। আমরা যেমন আমাদের অভ্যাস তৈরি করি, তেমনি অভ্যাস আমাদের চরিত্র গঠন করে। প্রকৃতপক্ষে আপনি বোঝার আগেই অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। সেজন্য সঠিক চিন্তা করে ইতিবাচক অভ্যাস তৈরি করা দরকার।

সু-অভ্যাস তৈরি করা:-

আমাদের ব্যবহার আমাদের অভ্যাসের ফলশ্রুতি। অভ্যাসের ফলে আমাদের কিছু কিছু ব্যবহার আপনা আপনিই হয়ে যায়। চরিত্র আমাদের অভ্যাসের যোগফল। যদি কোনো ব্যক্তির ইতিবাচক অভ্যাস থাকে, তার চরিত্রও ইতিবাচক হয়। আবার নেতিবাচক অভ্যাসের ফলে নেতিবাচক চরিত্রের মানুষ হয়। যুক্তি এবং বিচারের অভ্যাস আরও শক্তিশালী। প্রথমে অভ্যাস এত দুর্বল থাকে, যা বোঝা যায় না, কিন্তু ধীরে ধীরে এত দৃঢ় হয়ে যায় যে সে অভ্যাস ত্যাগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সু অভ্যাস তৈরির জন্য দৃঢ় সংকল্প প্রয়োজন।


সচেতন এবং অবচেতন মন:-

মনে রাখবেন আমাদের সচেতন মনের চিন্তা করার ক্ষমতা আছে। সচেতন মন গ্রহণ বা বর্জন করতে পারে। কিন্তু অবচেতন মন কেবলমাত্র গ্রহণ করে। এবং যা গ্রহণ করে তার ভালো মন্দ নিয়ে বাছ-বিচার করে না।

অবচেতন মন একটি বাগানের মত, কী গাছ লাগাচ্ছেন তাতে কিছু যায় আসে না। এ বিষয়ে বাগান নিরপেক্ষ, তার কোনো পছন্দ অপছন্দ নেই। যদি ভালো বীজ লাগান, তাহলে ভালো বাগান পাবেন, আর তা না হলে বাগান জংলা গাছে ভরে উঠবে। মনে রাখবেন ইতিবাচক ও নেতিবাচক চিন্তা একই সময়ে এবং একই সঙ্গে মনকে অধিকার করতে পারে।


ইতিবাচক অভ্যাস তৈরি করা:-

পরিবর্তনের কোন সময়সীমা নেই। আমাদের বয়স যাই হোক না কেন এবং যতদিনের অভ্যাস হোক না কেন, আমরা সচেতনভাবে ব্যবহার পরিবর্তনের পদ্ধতি প্রয়োগ করে তা বদলাতে পারি।

জীবনে সফল ব্যক্তিদের গোপন রহস্য এই যে তারা এমন অভ্যাস তৈরি করে যাতে অসাফ্যলের কোনো স্থান থাকে না। যারা অসফল হয় তারা অনেক জিনিস করতে চায় না। অনেক সময় সফল ব্যক্তিরাও করতে চায় না; কিন্তু অনেক সময় অভ্যাসের বশে করতে থাকে। যেমন অসফল ব্যক্তিরা কঠোর শ্রম ,শৃঙ্খলা বোধ, দায়বদ্ধতা পছন্দ করে না। সফল ব্যক্তিরাও পছন্দ করে না; কিন্তু যেহেতু তাদের অভ্যাস তৈরি হয়েছে, সেগুলি তারা স্বাভাবিকভাবেই করে থাকে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এক ধরনের অভ্যাস এবং তারও পরিবর্তন করা যায়। এখানে বিষয়টি হচ্ছে যে পুরাতন নেতিবাচক অভ্যাসকে নতুন ইতিবাচক অভ্যাসের দ্বারা পরিবর্তিত করা যায়।


সাফল্য নির্ভর করে আমাদের মনসংযোগ ক্ষমতা এবং পরিকল্পনার পুনরাবৃত্তির ওপর। স্বাভাবিক ভাব অনুসরণ করার পদ্ধতি:-

এমন একটি জায়গায় যান যেখানে কেউ বিরক্ত করবে না।

নিজের পরিকল্পনা লিখে ফেলুন।

যা শুরু করেছেন তা শেষ করার জন্য ‌ আত্মশৃঙ্খলা প্রয়োজন। স্বাভাবিক ভাব চরিত্র গঠনে একটি ক্ষমতাশীল যন্ত্র।



(৫)লক্ষ্য নির্ধারণ করা:-

জ্ঞান আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। সেজন্যই আপনার জানা দরকার লক্ষ্য কী?

আমরা যথাযথভাবে লক্ষ্য স্থির করে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করলে সিদ্ধি লাভ করতে পারি না। লক্ষ্য স্থির করে মন সংযোগ করা কঠিন, কিন্তু এই দক্ষতা আমরা অনুশীলনের দ্বারা অর্জন করতে পারি। জীবনের পথে অগ্রসর হতে হলে লক্ষ্যে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন। সু-অভ্যাসের ওপর লক্ষ্য রাখুন, বদ-অভ্যাস এর উপর নয়।

অত্যন্ত সূর্য করোজ্জ্বল দিনেও খুব শক্তিশালী আতস কাঁচ কাগজে আগুন জ্বালাতে পারবে না, যদি কাঁচটি সবসময় নাড়ানো হয়। কিন্তু যদি লক্ষ্য স্থির করে আতস কাঁচটিকে এক জায়গায় ধরে রাখা হয়, তাহলে কাগজে আগুন জ্বলে উঠবে। মনঃসংযোগেরও একই রকম ক্ষমতা।

বেশি সংখ্যায় মানুষ লক্ষ্য স্থির করে না।এর অনেক কারণ আছে।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল–

একটি নিরাশবাদী মনোভাব

ব্যর্থতার ভয়

উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাব

প্রত্যাখ্যানের ভয়

লক্ষ্য স্থির করার বিষয়ে জ্ঞানের অভাব


আপনি যদি কোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন যে জীবনের প্রধান লক্ষ্য কী, তাহলে অনেক ব্যক্তিই সম্ভবত অস্পষ্ট জবাব দেবে; যেমন, "আমি সফল হতে চাই, সুখী হতে চাই এবং সচ্ছল জীবনযাত্রা চাই" এবং এই রকম কিছু। এগুলি ইচ্ছা মাত্র, কোনোটিই নির্দিষ্ট লক্ষ্য নয়। লক্ষ্যের নিম্নলিখিত গুণগুলি থাকবে–

সুনির্দিষ্ট

লক্ষ্য হবে পরিমাণ যোগ্য

লক্ষ্য অবশ্যই সাধন যোগ্য হবে

বাস্তবানুরাগ

সময়সীমা


যার কোনো লক্ষ্য নেই সে কখনোই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। লক্ষ্য উঁচু না রাখা একটি বড় ভুল। যারা সফল হতে চান, তারা লক্ষ্যের দিকে নজর রাখেন আর যারা হেরে যান তারা সবসময় লক্ষ্য সাধনের বাধাকেই বড় করে দেখেন।

আমাদের লক্ষ্যকে এমন উঁচুতে নিবদ্ধ করা উচিত যাতে আমরা লক্ষ্য সাধনে যথেষ্ট হই অবাস্তব বলে হতাশার সৃষ্টি যেন না হয়।


জীবনের উদ্দেশ্য:-

অনেক রকমের আকাঙ্ক্ষা আছে। সাফল্যের আকাঙ্ক্ষা, আমোদ প্রমোদ বিসর্জন দিয়ে কর্তব্য পালনের আকাঙ্ক্ষা, উদ্দেশ্য পূরণ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। জীবনকে যা অর্থপূর্ণ করে তোলে তার জন্য মৃত্যুবরণও করা যেতে পারে।

জীবনে লক্ষ্য কী? যদি জীবনের উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে উদ্দেশ্য সিদ্ধির আবেগ ও থাকবে। সুতরাং আগে একটি উদ্দেশ্য স্থির করুন, তারপর আবেগ ও অধ্যাবসায় নিয়ে লক্ষ্যের পথে অগ্রসর হন। যত তাড়াতাড়ি জীবনের উদ্দেশ্য ঠিক করা যায় ততই ভালো। দেখা যায় যে, জীবনে উদ্দেশ্য স্থায়ী করতে গিয়ে যে অন্তহীন অনুসন্ধান করতে হয় তাতেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা কেবল ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের, সংস্থার এমনকি দেশেরও। একবার আমাদের উদ্দেশ্য এবং মূল্যবোধ স্পষ্ট হয়ে গেলে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের মধ্যে একটি নৈতিক ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া যায়।


কল্পনাশ্রিত দূরদৃষ্টি:-

মানুষ কাজে উৎকর্ষতা লাভ করতে পারে না কেন? এর বড় কারণ হলো কল্পনাপ্রসূত দৃষ্টির অভাব অর্থাৎ সীমিত দৃষ্টি। যা সম্ভাব্য তার থেকেও বড় স্বপ্ন দেখা প্রয়োজন।

উদ্দেশ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা, নির্দিষ্ট সুনিশ্চিত যাত্রা পথ এবং উৎসাহ নিয়ে জীবনের পথে অগ্রসর হন। অসফল ব্যক্তির কাছ থেকে নয়, সফল ব্যক্তির কাছ থেকে উপদেশ নিন। তিনিই আপনাকে বলবেন কীভাবে সফল হতে হয়।

মনে রাখবেন বিজয়ীরা ভিন্ন কাজ করেন না তারা একই কাজ ভিন্নভাবে করেন। "You Can Win" আপনার শ্রেষ্ঠ সাফল্যের মনোভাব তৈরির সহায়ক হোক।


সমাপ্ত


(উপরিউক্ত অংশটি SHIV KHERA -র লেখা "YOU CAN WIN" -এর সারসংক্ষেপ। আপনি চাইলে পুরো বইটি পড়তে পারেন)।


ধন্যবাদ













Buy You Can Win from


Share You Can Win


Featured Summaries