WHO WILL CRY WHEN YOU DIE

……ROBIN SHARMA

১) আপনার লক্ষ্য আবিস্কার করুন:-

আপনার লক্ষ্য আবিষ্কার করার অর্থ এই নয় যে আপনার এখন যে চাকরিটি আছে তা ছেড়ে দিতে হবে। এর সহজ অর্থ হল আপনাকে আপনার কাজের মধ্যে আরও বেশি মনোযোগ আনতে হবে এবং আপনি যে জিনিসগুলি ভালো করেন সেগুলিতে ফোকাস করতে হবে। প্রতিটি মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছে বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে। আর সেই উদ্দেশ্য পূরণে আমরা কিছু বিশেষ গুণও পেয়েছি। সেই গুনকে চেনা এবং বিকাশের মাধ্যমে আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ করা উচিত।

অনেকই লেখক কে প্রশ্ন করেন কীভাবে জীবন যাপন করবেন? তাই লেখক বলেছেন,এই পৃথিবীতে আসার লক্ষ্য চিহ্নিত করুন এবং এটি নিয়ে কাজ করুন। গান্ধীজীর বলেছেন "জীবনে যে পরিবর্তন আনতে চান, আগে নিজের মধ্যে সেই পরিবর্তন আনুন। জীবনও একই ভাবে বদলে যাবে।"

২) প্রতিদিন একজন অপরিচিত ব্যক্তির প্রতি সদয় হন:-

আপনি যদি সারাদিনে একজন ব্যক্তি কেও হাসাতে পারেন অথবা কোনো অপরিচিত ব্যক্তির মেজাজ উজ্জ্বল করেন, তাহলে ধরে নিন আপনার দিনটি সার্থক হয়েছে।

৩) আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন:-

লেখক বলেছেন, আমরা সব সময় নেতিবাচক বিষয়ের ওপর ফোকাস করি। খারাপ পরিস্থিতিতেও কীভাবে আমরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারি তা আমরা দেখি না। আমরা দেখি না নেতিবাচক পরিস্থিতিতেও কীভাবে ইতিবাচক জিনিসগুলি দেখতে হয়। আসলে সমস্যাটা ততটা বড় নয় যতটা আমরা চিন্তা করে বড় করি। আমরা যদি দেখি তাহলে আমাদের পৃথিবী এই মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশ। আমরা এই মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র জীব এবং আমাদের সমস্যা তার চেয়েও ছোটো। আমরা এই পৃথিবীতে খুব অল্প সময়ের জন্য এসেছি। তাই আমাদের জীবন এবং আমাদের সময়কে পূর্ণভাবে উপভোগ করে কাটানো উচিত। একজনকে সুখে বাঁচতে হলে ইতিবাচক জিনিস খুঁজে নিয়ে সুখী হওয়া উচিত।

৪) কঠিন প্রেম অনুশীলন করুন:-

লেখক স্বশৃঙ্খলার অভ্যাসকে "কঠিন প্রেম" বলেছেন।স্বশৃঙ্খলা ব্যতীত আপনি স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবেন না। স্বশৃঙ্খলা এমন একটি গুন, যার দ্বারা একজন ব্যক্তি তার সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শেখে। নিজের কাজকে প্রাধান্য দেয় এবং সেই জিনিসগুলি সঠিকভাবে করতে, মানুষের সাথে সঠিক আচরণ করতে এবং ইতিবাচক চিন্তা রাখতে শেখে। আমরা যখন নিজেদের নিয়ে একটু কঠোর হই ,জীবন আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত, অভ্যাস আমাদের জীবন গঠন করে। যখন আমরা সহজ পছন্দের পরিবর্তে কিছু কঠিন পছন্দ করি, যা আমাদের ভালোর জন্য এবং এটির দীর্ঘমেয়াদে আমাদের আরো ভালো ফলাফল দেয়। এই অভ্যাসের কারণেই সব মহান মানুষ মহান হয়েছেন।

৫) একটি জার্নাল তৈরি করুন:-

একটি জার্নাল এবং ডায়েরির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমরা প্রতিদিনের জিনিস ডায়েরিতে লিখি। জার্নালে প্রতিদিনের বিষয়গুলি কেবল লেখাই হয় না, সেগুলোকে বিশ্লেষণও করা হয়– সারাদিনে কী করলেন, কী ঠিকঠাক করলেন আর কী করলেন না। এর ফলে আমরা অনেক কিছু শিখি এবং কম ভুল করতে থাকি। এজন্য লেখকরা বলেন যে, আমাদের প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিটের জন্য একটি জার্নাল লেখা উচিত।

৬) সততার বিকাশ:-

আসল সমস্যা হল আপনি যখন আপনার কথা রাখেন না তখন আপনি বিশ্বাস যোগ্যতা হারান। বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে আপনি বিশ্বাসের বন্ধন ভেঙে দেন। এবং বিশ্বাসের বন্ধন ভেঙে শেষ পর্যন্ত ভাঙা সম্পর্কের স্ট্রিং তৈরি করেন।

সততার বিকাশ করতে আপনি এক সপ্তাহের মধ্যে কতগুলি ছোট অসত্য বলেছেন তার নিরীক্ষণ করতে শুরু করুন। আপনি যখন কাউকে প্রতিশ্রুতি দেন যে আপনি কিছু করবেন, তা করুন।"সব কথা এবং কোনো পদক্ষেপ নেই"--এরূপ হওয়ার পরিবর্তে আপনার কথার একজন ব্যক্তি হন।

৭) আপনার অতীতকে সম্মান করুন:-

সচেতনতা এবং জ্ঞানার্জনের সম্পূর্ণ নতুন স্তরে ওঠার জন্য আপনি আপনার অতীত থেকে যে পাঠগুলি শিখেছেন তা ব্যবহার করুন। এবং বুঝুন যে আপনি যদি অন্যদের চেয়ে বেশি ব্যর্থ হন তবে অন্যদের তুলনায় সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকার খুব ভালো সুযোগ রয়েছে।

৮) আপনার দিন ভালোভাবে শুরু করুন:-

আপনি যেভাবে আপনার দিনটি শুরু করেন তা নির্ধারণ করে যে আপনি কীভাবে আপনার দিনটি যাপন করবেন। আপনি যদি ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে এটি নিশ্চিত করার জন্য বুদ্ধি এবং আত্মশৃঙ্খলা রাখেন, আপনি কেবলমাত্র সবচেয়ে বিশুদ্ধ চিন্তা ভাবনা করেন এবং শুধুমাত্র সর্বোত্তম কর্মগুলি করেন, দেখবেন যে আপনার দিনগুলি ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে বেশি উদ্ভাসিত হবে। একটি বিস্ময়কর উপায়।

৯) আপনার কাজকে প্রাধান্য দিন:-

অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে না বলতে শিখুন, ফলে আপনাকে সেই জিনিস গুলিতে উৎসর্গ করার জন্য আরো সময় দেবে যা আপনার জীবনযাত্রা সত্যিকার অর্থে উন্নিত করার ক্ষমতা রাখে এবং যে উত্তরাধিকারটি আপনি ছেড়ে যেতে চান তা রেখে যেতে আপনার হৃদয় সহায়তা করে।

বহু বছর আগে একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি রাজার জন্য তলোয়ার তৈরি করতেন। ৯০ বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও তিনি খুব ভালো তরবারি তৈরি করতেন। তাই রাজা একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি তোমার কাজে এত পারদর্শী কিভাবে? তোমার কোনো বিশেষ গুন আছে? উত্তরে সেই বৃদ্ধ ব্যক্তি বলেন,"আমার বয়স ২১ বছর থেকে আমি এই তরকারি ধারালো করার কাজে নিয়োজিত। আমি আমার পূর্ণ মনোযোগ শুধু আমার কাজে দেই। তলোয়ার নয় এমন কিছু আমি দেখি না। এই কারণে আজও আমি আমার কাজে এত পারদর্শী।"

এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে আমাদের প্রধান কাজ গুলি বেছে নেওয়া উচিত এবং সেগুলিতেই সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া উচিত। সফল ব্যক্তিদের এটাই বিশেষ গুণ যে তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দেয়। আমরা যখন আমাদের অগ্রাধিকার জানিনা তখন আমরা এভাবে সময় নষ্ট করি এবং তারপরে হতাশা তৈরি হয়। সেই জন্য আপনার লক্ষ্য জানতে এবং তা পূরণ করতে প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজের একটি তালিকা তৈরি করুন এবং এতে ঐক্যবদ্ধ হন।

১০) একটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন নিন:-

নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং আপনার গভীরতম অংশকে পুষ্ট করার জন্য একটি সাপ্তাহিক ছুটির জন্য পরিকল্পনা করুন। জীবনের সহজ আনন্দে ফিরে আসার জন্য, আপনার দিনগুলি ব্যস্ত হয়ে ওঠার সাথে সাথে আপনি যে আনন্দ গুলি ছেড়ে দিয়েছিলেন সেগুলি ফিরে পাওয়ার জন্য সাপ্তাহিক শান্তির একটি পরিকল্পনা করুন।

১১) উদ্বেগ বিরতির সময়সূচী:-

চিন্তা করার জন্য আপনার নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা উচিত, প্রতি সন্ধ্যায় ৩০ মিনিট। এই দুশ্চিন্তার অধিবেশন চলাকালীন আপনি আপনার সমস্যায় ভুগতে পারেন এবং আপনার অসুবিধা গুলি নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। কিন্তু এর সময়কাল শেষ হওয়ার পরে আপনাকে অবশ্যই আপনার সমস্যাগুলিকে পেছনে ফেলে আরও উৎপাদনশীল কিছু করার জন্য নিজেকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

১২) নিরব থাকতে শিখুন:-

দিনে কয়েক মিনিটের জন্যেও একাকিত্বের অভিজ্ঞতা আপনাকে আপনার সর্বোচ্চ জীবনের অগ্রাধিকারের ওপর কেন্দ্রীভূত করে রাখবে এবং আমাদের অনেকের জীবনে যে অবহেলা ঘটে তা এড়িয়ে যেতে সাহায্য করবে।

১৩) তাড়াতাড়ি উঠুন:-

তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা একটি উপহার যা আপনি নিজেকে দিতে পারেন। অল্প কিছু শৃঙ্খলা আপনার জীবনকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে যেমন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করা। সকালের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিশেষ কিছু আছে। যদি বুদ্ধিদীপ্ততার সাথে ব্যয় করা হয় তবে আপনার বাকি দিনটি একটি দুর্দান্ত উপায়ে উন্মোচিত হবে।

১৪) আপনার সমস্যাগুলিকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখুন:-

জীবনে আশা সমস্যার কারণে আমরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি সেদিকে আমরা সব সময় মনোযোগ দেই। কিন্তু আমরা এই জিনিসগুলি ভুলে যাই যে এই একই কষ্ট আমাদের কত কিছু শিখিয়েছে। আসলে সফলতার যাত্রা শুরু হয় ব্যর্থতা দিয়ে। ব্যর্থতা আমাদের সফল করে তোলে এবং দুঃখ আমাদের জ্ঞানী করে তোলে।

সহজ পরিস্থিতিতে আমরা জীবনে ভালো হয়ে উঠি না। তবে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার পরই জীবনে আরো ভালো পরিবর্তন ঘটে। তাই আপনার কষ্টগুলোকে আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত যা আপনাকে সফলতা ও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।

১৫) আরো হাসুন:-

প্রতিদিনের হাসি আমাদের মেজাজ উন্নত করে, সৃজনশীলতাকে উন্নিত করে এবং আমাদের আরো শক্তি দেয়‌। আধুনিক মনোবিজ্ঞানের জনক উইলিয়াম জেমস বলেছেন-"We don't laugh because we are happy.We are happy because we laugh"

১৬) আপনার ঘড়ি ছাড়া একটি দিন কাটান:-

ঘড়ির কাঁটার উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা এবং আপনি যা করতেন চাচ্ছেন তার পরিকল্পনা করার পরিবর্তে কেবল মুহূর্তের জন্য বেঁচে থাকুন এবং আপনার যা মনে হয় তাই করুন।

১৭) আরো ঝুঁকি নিন:-

"জীবন সংখ্যার খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়–আপনি যত বেশি ঝুঁকি নেবেন, তত বেশি পুরস্কার পাবেন"। প্রাচুর্যের জীবনের আসল রহস্য হল নিরাপত্তার খোঁজে আপনার দিন কাটানো বন্ধ করা এবং সুযোগের পেছনে আপনার সময় ব্যয় করা শুরু করা।

১৮) টাকা আপনার আশীর্বাদ:-

আমরা যখন টাকা খরচ করে কোনো মুড়ি দোকানের জিনিস কিনি, তখন আমাদের সেই লোকেদের কাছে প্রার্থনা করা উচিত যাদের কাছে টাকা যাচ্ছে। কারণ কৃষক কঠোর পরিশ্রম করে ফসল তোলে, দোকানদাররা আমাদের কাছে নিয়ে আসে এবং তারপর আমরা সহজেই তা কিনতে পারি। একইভাবে আমরা যখন শিশুদের শিক্ষার জন্য ফি পরিশোধ করি, আমাদের খুশি হওয়া উচিত যে আমাদের সন্তানরা ভালো শিক্ষা পাচ্ছে, ভালো সেবা পাচ্ছে।

টাকাগুলো কোনো না কোনো ভাবে আমাদের কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু আমরা যখন কাউকে টাকা দেই, তার বিনিময়ে আমরা যে সেবা পাচ্ছি তার জন্য প্রার্থনা করা উচিত।

"যে আমাদের কাছ থেকে যায় সে ফিরে আসে"

১৯) যোগ্য জিনিসের ওপর ফোকাস করুন:-

সময় হলো আপনার সবচেয়ে মূল্যবান পণ্য। তবুও বেশিরভাগ মানুষ জীবনে এমন ভাবে বাস করেন যেন তাদের কাছে পৃথিবীর সব সময় আছে। জিনিসগুলি সম্পন্ন করার আসল রহস্য হল কোন জিনিসগুলি পূর্বাবস্থায় রেখে দেওয়া দরকার তা জানা। একবার আপনি আপনার দিনের ঘণ্টাগুলি শুধুমাত্র সেই উচ্চ উত্তেজক ক্রিয়াকলাপ এবং অগ্রাধিকার গুলোতে ব্যয় করা শুরু করলে, তা আপনার জীবনের লক্ষ্য এবং উত্তরাধিকারিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সবকিছু বদলে যাবে।

২০) ধন্যবাদ নোট লিখুন:-

সহজতম অঙ্গভঙ্গি যা গভীর পরিণতি করে তাহল ধন্যবাদ লেখার হারিয়ে যাওয়া শিল্প–ধন্যবাদ নোট লিখুন।

২১) একজন ভালো শ্রোতা হন:-

কেন ভগবান আমাদের দুটি কান এবং একটি মুখ দিয়েছেন? কারণ আমরা যতটা কথা বলি তার দেখুন শোনা উচিত। যখন আমরা অন্যদের কথা শুনি এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারি, তখন তাদের সাথে আমাদের বন্ধন ভালো এবং গভীর হয়। প্রত্যেকে অন্যের সাথে ভালো সম্পর্ক এবং ভালোবাসা রাখতে চায়। তার জন্য প্রথমে তাকে একজন ভালো শ্রোতা হতে হবে।

আমরা যখন অন্যের কথা শুনবো, বুঝতে পারবো, তখনই অন্যরা আমাদের পছন্দ করবে। এটি আবার একটি ভালো যোগাযোগের দিকে পরিচালিত করবে এবং আমরা অনেক ভালো জিনিসও শিখতে পারবো।

২২) আপনার সমস্যার তালিকা করুন:-

মন আমাদের পরম বন্ধুর পাশাপাশি শত্রু। তিনি ভুলে যান আমাদের যা মনে রাখা উচিত এবং যা ভুলে যাওয়া উচিত তা মনে রাখেন। এই কারণে লেখক বলেছেন আপনার সমস্ত সমস্যাগুলোকে কাগজে লিখুন। এর কারণে আপনি হালকা বোধ করবেন এবং সেই সমস্যাগুলি সঠিকভাবে বুঝে সমাধান করতে সক্ষম হবেন। অনেক সফল মানুষ এই কৌশলটি ব্যবহার করেন। ব্রুস লি বলেছেন যে, যখন তিনি তাঁর সমস্যাগুলি লেখেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে তাদের মধ্যে চিন্তা করার মত কিছু নেই। আর কিছু সমস্যা নিয়ে কিছুই করা যায় না, আর বাকি সমস্যাগুলোর সমাধান স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হয়ে যায়।

২৩) কর্ম অনুশীলন করুন:-

জ্ঞান থাকা ভালো জিনিস তবে এটি ব্যবহার না করা পর্যন্ত এটি কোনো কাজে আসে না। তাই লেখক রবিন শর্মা জ্ঞান কে প্রকৃত শক্তি বলেন না, পদক্ষেপ গ্রহণকে প্রকৃত শক্তি বলেন। বড় বড় কথা বলা, স্বপ্ন দেখা আপনাকে ভালো জীবনে নিয়ে যাবে না। সঠিক এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হলে জীবনে বড় পরিবর্তন ঘটে। যা আরামদায়ক তা পদক্ষেপ নয়,যা প্রয়োজন তা হল কর্ম, যা একজন ব্যক্তিকে আরো ভালো ও সফল করে তোলে।

২৪) আপনার সন্তানদের উপহার হিসেবে দেখুন:-

আপনি আপনার সন্তানদের সবচেয়ে বড় যে উপহার দিতে পারেন তা হল আপনার সময়। এবং সবচেয়ে বড় উপহার যা আপনি নিজেকে দিতে পারেন তা হল সন্তান কি তা সত্তিকার অর্থে দেখা এবং বাচ্চাদের সঙ্গে জীবন উপভোগ করা।

২৯) মনে রাখবেন সচেতনতা পরিবর্তনের আগে:-

আপনার অজ্ঞাত কোনো দুর্বলতা আপনি দূর করতে পারবেন না। একটি নেতিবাচক অভ্যাস দূর করার প্রথম পদক্ষেপ হল এটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

একবার আপনি যে আচরণটি পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন সে সম্পর্কে সচেতনতা বিকাশ করলে, আপনি এটিকে আরো সহায়ক কোনো কিছুর সঙ্গে পরিবর্তন করতে পারবেন।

৩০) নিজেকে শান্ত রাখুন:-

আপনার মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করার একটি চমৎকার উপায় হল আপনাকে বিরক্ত করছে এমন কাউকে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে ১০০ পর্যন্ত গণনা করুন‌।

৩১) আপনার চঞ্চল মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন:-

লেখক রবীন শর্মা বলেছেন, জীবনকে সঠিকভাবে বাঁচতে হলে প্রতিটি মুহূর্তে বেঁচে থাকতে হয়।আর এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা এই মুহূর্তে বেঁচে থাকি। কিন্তু আমাদের মন সারাক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। বাঁদরের মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লাফিয়ে বেড়াতে থাকে। একইভাবে আমরা সব সময় ভবিষ্যতের কথা ভাবতে থাকি। যেমন অফিসে যাওয়ার সময় রাস্তার দৃশ্য উপভোগ করার বদলে অফিসে কী হবে, বস কী বলবেন, এই সমস্ত কিছুই সবাই ভেবে চলে। তারা ভাবতে থাকে আজ খাবারের জন্য কী তৈরি হবে বা শিশুরা স্কুলে কী করবে ইত্যাদি।

আজকে এই মুহূর্তে এই বিচরণকারী মনকে কীভাবে ধরে রাখা যায় তা ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। অর্থাৎ যে কোনো একটি বই আমাদের পড়া উচিত। আর সেই বই পড়তে গিয়ে যখন মনটা ঘুরপাক খায়, তখনই বইতে একটা দাগ ফেলুন। যতবার আপনার মন ঘুরছে ততবার চিহ্নিত করতে থাকুন। এর থেকে আমরা বুঝতে পারব আমাদের মনোযোগ কতটা কম এবং আমরা ধীরে ধীরে তা সংশোধন করতে থাকবো। একইভাবে আমরা বর্তমান মুহূর্তে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকতে শিখব। জীবন থেকে সর্বোত্তম পেতে আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিনের, প্রতিটি ঘন্টায়, প্রতিটি মিনিটে সম্পূর্ণ উপস্থিত এবং সচেতন হতে হবে। বর্তমান মুহুর্তের সচেতনতা এবং মানসিক ফোকাসের প্রাচুর্য বিকাশ করলে আপনি কেবল আপনার জীবনে খুব বেশি শান্ত বোধই করবেন না, আপনি আপনার মনের সম্ভাবনার পূর্ণতাকেও আনলক করবেন।

৩২) Heroic Books-এর লাইব্রেরী তৈরি করুন:-

কিছু বীরক্তপূর্ণ বই রয়েছে যা আপনাকে আরও ইচ্ছাকৃতভাবে এবং সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকার জ্ঞান এবং অনুপ্রেরণা দেয়। আপনি যদি সেগুলি পড়েন এবং তাদের পৃষ্ঠাগুলির মধ্যে থাকা পাঠগুলিতে কাজ করেন, তাহলে আপনি আপনার পরিস্থিতিকে গভীরভাবে উন্নত করতে পারবেন। যেমন–

*LETTERS FROM A STOIC–SENECA

*THE MESSAGE OF A MASTER,

JOHN MC DONALD

*MEDITATIONS, MARCUS

AURELIUS

*THE AUTOBIOGRAPHY OF

BENJAMIN FRANKLIN

etc…

৩৩) আপনার প্রতিভার বিকাশ করুন:-

কেবল বিদ্যমান এবং সত্যিকারের বেঁচে থাকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। হাজার হাজার বছর আগে প্রত্যেকেরই অপরিসীম ক্ষমতা ছিল। কিন্তু তাদের কেউ কেউ তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। তাই ঈশ্বর এই শক্তিকে কোথাও লুকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।তাই ঈশ্বরের উপদেষ্টা বললেন যে, আপনি মাটির ভেতরে গভীর গর্তে এটিকে পুঁতে দিন। এতে ঈশ্বর উত্তর দিলেন,কেউ গভীর খনন করে খুঁজে পেয়ে যাবে। ঈশ্বরের উপদেষ্টা আবার বলেন, সমুদ্রের গভীরে ফেলতে। ঈশ্বর বলেন যে কেউ গভীরভাবে ডুব দিয়ে এটি অর্জন করে নেবে। উপদেষ্টা আবার পরামর্শ দেন, এটাকে উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় বসিয়ে দিন। ঈশ্বর প্রত্যাখ্যান করলেন এবং বললেন যে কেউ এটাকে উঁচুতে আরোহন করে খুঁজে পেয়ে যাবে। অনেক চিন্তাভাবনার পর, ঈশ্বর প্রতিটি মানুষের মনে এটি গোপন করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ মানুষ এই অসীম শক্তিকে সর্বত্র খুঁজে পাবে কিন্তু তার মনে নয়। এই গল্পের তাৎপর্য হলো প্রতিটি মানুষের মধ্যে অসীম শক্তি আছে কিন্তু তা লুকিয়ে আছে। এমন কিছু অনন্য গুণ রয়েছে যা কেবল তার জীবনই নয়, অন্যের জীবনকেও উন্নত করতে পারবে। আপনার সেই গুন কে চিনুন এবং এটি দিয়ে কাজ করুন।

৩৪) একটি সংবাদে দ্রুত যান:-

আপনি কীভাবে সংবাদপত্র পড়ছেন সেই সম্পর্কে আরও সচেতন হন। এটিকে আপনার সময় অতিবাহিত করার জন্য অজুহাত না করে আপনার জ্ঞান অর্জন করার জন্য এবং আপনার মস্তিষ্কে আরো অনেক তথ্য সরবরাহ করার জন্য ব্যবহার করুন।

"সংবাদের আসক্তি" থেকে নিজেকে মুক্ত করার একটি সর্বোত্তম উপায় যা আমাদের মধ্যে অনেকেই ভুগছে তা হল সাত দিনের খবর দ্রুত চালিয়ে যাওয়া। পরের সপ্তাহের জন্য সংবাদপত্রে একটি নেতিবাচক খবরও পড়বেন না বা টেলিভিশনে একটি নেতিবাচক খবরও দেখবেন না। আপনি দুটো জিনিস লক্ষ্য করবেন। প্রথমত, আপনি সত্যিই অনেক তথ্য মিস করবেন না। আপনি এখনও আপনার অফিসের চারপাশ এবং বাড়িতে আপনার মুখোমুখি হওয়া কথোপকথন গুলি থেকে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গল্পগুলি শুনতে পাবেন। দ্বিতীয়ত, আপনি অনেক বেশি শান্ত এবং নির্মল বোধ করবেন। সেই সাথে, আপনি দেখতে পাবেন যে সাতদিনের সংবাদ দ্রুত এমন জিনিস গুলি করার জন্য আরও একটি সুবিধা দেয় যা সত্যিই আপনার জীবনের মান উন্নত করবে।

৩৫) লক্ষ্য নির্ধারণ সম্পর্কে গুরুতর হন:-

আপনাকে নিয়োজিত এবং অনুপ্রাণিত করে এমন লক্ষ্য নির্বাচন করা হল জীবনের প্রতি আপনার ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির স্তরকে বাড়ানোর এবং আপনি আপনার দিনগুলিতে যে শক্তি আনেন তা বাড়ানোর অন্যতম সেরা উপায়। তাই বড় লক্ষ্য স্থির করুন।

৩৬) ক্ষমা অনুশীলন করুন:-

যে আপনার সাথে অন্যায় করেছে তাকে ক্ষমা করা আসলে নিঃস্বার্থের চেয়ে একটি স্বার্থপর কাজ। শত্রুতা এবং ঘৃণাকে ছেড়ে দেওয়া, যা আপনি আপনার ভেতরে বোতলজাত হতে দিয়েছেন, তা আসলে এমন কিছু যা আপনি অন্য ব্যক্তির উপকারের পরিবর্তে নিজের জন্য করেন। মার্ক টোয়েন বলেছেন,"ক্ষমা হলো আত্মা এবং ব্যক্তিগত সাহসের একটি মহান কাজ। এটি আপনার জীবনের মান উন্নত করার সেরা উপায় গুলির মধ্যে একটি।"

৩৭) একটি মিনি ছুটি নিন:-

যদিও আপনি প্রতি সপ্তাহে একটি বড় ছুটিতে যেতে পারবেন না, আপনি অবশ্যই একটি ছোট ছুটিতে যেতে পারেন। একটি মিনি ছুটি শুরু হয় আপনার অফিসের দরজা বন্ধ করে, সমস্ত কল বন্ধ রাখা এবং আপনার চেয়ারে বিশ্রাম নেওয়ার মাধ্যমে। তারপর আপনার চোখ বন্ধ করুন এবং গভীর শ্বাস নেওয়া শুরু করুন।

একবার আপনি গভীরভাবে শান্তি অনুভব করলে, কল্পনা করতে শুরু করুন যে আপনি আপনার প্রিয় অবকাশ স্থলে আছেন। স্পষ্টভাবে রংগুলি দেখুন, শব্দগুলি শুনুন, অনুভূতিগুলো অনুভব করুন, যা এই বিশেষ স্থানটি উদ্রেক করে। এই মানসিক পালানোর মাত্র কয়েক মিনিটের পরে, আপনি পুনরুজ্জীবিত হবেন এবং সামনের বাকিদিনের জন্য প্রস্তুত হবেন।

৩৮) একজন স্বেচ্ছাসেবক হন:-

আপনার থেকে কম যাদের আছে তাদের সেবা করার জন্য স্বেচ্ছায় আপনার সময় উপহার দেওয়া আপনার জীবনে বিদ্যমান প্রাচুর্যের নিয়মিত ভিত্তিতে নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়ার একটি চমৎকার উপায়। স্বেচ্ছাসেবক আপনাকে অন্যদের সাহায্য করার এবং যারা আপনাকে সাহায্য করেছে তাদের ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ দেয়।

৩৯) প্রতিদিন গান শুনুন:-

সংগীত আপনার মেজাজ উত্তোলন করতে পারে, আপনার মুখে হাসি ফিরিয়ে আনতে পারে এবং আপনার জীবন যাত্রার মান অপরিমীয়ভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। এমনকি কয়েক মিনিটের সঙ্গীত শোনা আপনার মেজাজ পরিচালনা করার এবং আপনার সেরা থাকার একটি সহজ কিন্তু ব্যতিক্রমী শক্তিশালী উপায়।

৪০) একটি উত্তরাধিকার বিবৃতি লিখুন:-

লেখক উত্তরাধিকার লেখার ওপর জোর দেন, এখন থেকে লিখতে শুরু করুন ,দশ বছর পরে নয়। আপনি আপনার প্রিয়জনদের জন্য কী রেখে যাবেন, আপনার মধ্যে কী গুণ রয়েছে যা আপনি তাদের দিতে চান, সেগুলি লিখে রাখুন। একটি ডাইরি বা জার্নাল লিখুন, যাতে আপনি চলে যাওয়ার পরও তারা আপনার কাছ থেকে শিখতে পারে। আপনি যা বলতে বা শেখাতে চান, আজ থেকেই সেই উত্তরাধিকার তৈরি করা শুরু করুন। যাতে বছরের পর বছর আপনার নিজের এবং অন্যরা আপনার কাছ থেকে শিখতে পারে।

৪১) ধ্যান অনুশীলন করুন:-

আমরা এক কোলাহলে পূর্ণ জায়গায় বাস করি, যেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক শব্দ শোনা যায়। এমন মুহূর্তে অনেক কিছুই আমাদের মনে ছুটতে থাকে এবং আমরা আমাদের কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারি না। এজন্য লেখক বলেছেন ধ্যান অনুশীলন করতে। প্রতিদিন কুড়ি মিনিটের ধ্যান আপনার পুরো দিনটিকে সুন্দর করে তুলবে।

আপনি আপনার কাজে আরো মনোযোগী হতে পারবেন, আপনি আপনার সম্পর্ক উন্নত করতে সক্ষম হবেন, আপনি একা থাকা সত্ত্বেও সুখী হতে শিখতে পারবেন। কারণ ধ্যান আপনাকে ভেতর থেকে শান্ত করতে শুরু করবে।

৪৩) অভিযোগ করা বন্ধ করুন এবং জীবন যাপন শুরু করুন:-

আপনি যদি পরিপূর্ণ সুখী না হন যা আপনি হতে পারেন, তার জন্য পিতা-মাতা বা অর্থনীতি বা আপনার বসকে দোষ দেওয়া বন্ধ করুন এবং আপনার পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিন। এটি হবে আপনার জীবনকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে দেখার প্রথম ধাপ এবং জীবন যাপনের একটি ভালো উপায়ের সূচনা।

আপনি যে চিন্তাগুলিকে আপনার মনে প্রবেশ করতে দেবেন, আপনি আপনার দিনগুলিতে যে মনোভাব নিয়ে আসবেন এবং আপনি যেভাবে আপনার সময়ের কয়েক ঘন্টা ব্যয় করবেন সে সম্পর্কে আরও বিজ্ঞ পছন্দ করুন। অভিযোগ করা বন্ধ করুন এবং জীবন যাপন শুরু করুন।

৪৪) আপনার মূল্যবৃদ্ধি করুন:-

নতুন অর্থনীতিতে আপনি এখন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন কতটা পরিশ্রম করেন তার দ্বারা নয় বরং আপনার চারপাশের বিশ্বে আপনি কতটা মূল্য যোগ করেন তার দ্বারা আপনাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। চিন্তা করুন, আপনি যদি বর্তমানে ঘন্টায় ২০ বলার বেতন পান, তবে এই অর্থ আপনাকে দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র এই কারণে নয় যে আপনি সেই ৬০ মিনিটের জন্য আপনার ডেস্কে উপস্থিত ছিলেন বরং আপনি সেই ৬০ মিনিটের মধ্যে ২০ ডলার মূল্যের অনুভূত মূল্য যোগ করেছেন। সুতরাং, আপনি যে পুরস্কার পাবেন তা আপনি কতক্ষণ কাজ করেন তার ওপর নয় বরং আপনি কতটা মূল্য যোগ করেন তার দ্বারা নির্ধারিত হয়।

তাই আপনার কাজে আরো বেশি অর্থ প্রদান করতে হলে আপনাকে অবশ্যই আরো মূল্য যোগ করতে হবে। এবং বিশ্বের মান যোগ করা শুরু করার সর্বোত্তম উপায় হল আরো মূল্যবান ব্যক্তি হওয়া শুরু করা। এমন দক্ষতা অর্জন করুন যা অন্য কারোর নেই, বই পড়ুন যা অন্য কেউ পড়ছে না,চিন্তাভাবনা যা অন্য কেউ ভাবছে না, অথবা এটিকে অন্যভাবে বলতে গেলে, আপনি যদি সেই ব্যক্তিটি থাকেন তবে আপনি যা চান তা আপনার কাছে থাকতে পারে না। জীবন থেকে আরও কিছু পেতে হলেই জীবনে আরও বেশি হতে হবে।

৪৫) গোঁড়ামিমুক্ত হন:-

একটি সমৃদ্ধ এবং আরো ফলপ্রসু জীবন যাপন করার জন্য, আপনার নিজের দৌড় চালানো অপরিহার্য। আপনার স্বতন্ত্রতার মূল্যে সামাজিক চাপে থাকা বন্ধ করুন।

আপনি যখন বিশ্বের সবচেয়ে আলোকিত এবং কার্যকর ব্যক্তিদের জীবন অধ্যয়ন করবেন, তখন আপনি দেখতে পাবেন যে তারা তাদের সম্পর্কে অন্য লোকেরা কী ভাবছে তা নিয়ে পরোয়া করেননি।

জনমতকে তাদের ক্রিয়াকলাপের নির্দেশ দেওয়ার পরিবর্তে, তাদের হৃদয়কে তাদের চালিত করতে দেওয়ার সাহস ছিল। এবং তারা তাদের সবচেয়ে স্বপ্নের বাইরে সাফল্য খুঁজে পেয়েছে।

৪৬) একটি গোলকার্ড বহন করুন:-

আপনার সাথে একটি লিখিত গোলকার্ড বহন করুন। যেমন সূর্যয় আলো অনেক জায়গায় পড়ে তাই এর শক্তি জানা যায় না। কিন্তু যখন এর আলো একটি ম্যাগনিফাইং গ্লাসের সাহায্যে এক জায়গায় ফোকাস করা হয়, তখন এটি যে কোন কিছুকে পুড়িয়ে ফেলতে পারে। একইভাবে মানুষের ভেতরে অনেক ক্ষমতা আছে। কিন্তু তারা সব সময় তাদের মনোযোগকে অনেক বিষয়ে ভাগ করে রাখে। আর এই কারণে আমরা আমাদের আসল লক্ষ্য পূরণ করতে পারি না। এজন্য লেখক বলেন যে, আমাদের সাথে একটি কার্ড রাখা উচিত যাতে আমাদের লক্ষ্য লেখা উচিত। যাতে আমরা সর্বদা আমাদের লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা করি এবং এটি নিয়ে কাজ করি। সফল ব্যক্তিদের এটি একটি বিশেষ গুণ যে তারা সর্বদা তাদের লক্ষ্যের দিকে মনোযোগ দেন। নিজেকে বিভ্রান্তি থেকে দূরে রাখুন এবং সেই জিনিসগুলির দিকে আপনার মনোযোগ রাখুন যার লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়।

৪৭) আপনার জীবনের সি.ই.ও হয়ে উঠুন:-

সামনের সপ্তাহ গুলিতে আরো সক্রিয় হতে নিজেকে আপনার ভাগ্যের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, আপনার জীবনের সি.ই.ও হিসাবে দেখতে শুরু করুন। আপনি যদি কিছু করতে চান, ভাগ্যের জন্য অপেক্ষা না করে আপনার পথ দেখার জন্য এটি সম্পূর্ণ করার পদক্ষেপ নিন। নিজেকে আপনার জীবনের সি.ই.ও হিসাবে দেখা আপনার বিশ্বকে বোঝার উপায়ে এটি মৌলিক পরিবর্তন তৈরি করতে পারে। একজন যাত্রী হিসেবে জীবনের মধ্য দিয়ে যাত্রা করার পরিবর্তে, জাহাজের ক্যাপ্টেন হয়ে উঠুন, পরিবর্তনশীল জোয়ারের বাতিক প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে আপনি যেদিকে যেতে চান সেদিকে নেতৃত্ব দিন।

৪৮) নম্র হন:-

মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত বৈশিষ্ট্য গুলির মধ্যে একটি হলো নম্রতা। নম্রতার অনুশীলন দেখায় যে আপনি অন্যদের সম্মান করেন এবং আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের এখন ও অনেক কিছু শেখার বাকি আছে। এটি আপনার আশেপাশের লোকদের কাছে একটি সংকেত পাঠায় যে আপনি তাদের জ্ঞানের উপহার গ্রহণ করতে এবং তাদের যা বলতে চান তা শোনার জন্য উন্মুক্ত।

৪৯) মনে রাখবেন যে, চিত্ত বিনোদন অবশ্যই পুনঃসৃষ্টি জড়িত:-

বিনোদন একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিনোদন আপনাকে পুনর্জীবিত করতে হবে। বিনোদন আপনাকে পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং আপনাকে জীবিত করতে হবে। প্রকৃত বিনোদন আপনাকে আশাবাদ এবং শক্তির নতুন অনুভূতি দিয়ে পূর্ণ করবে। আপনার অভ্যন্তরীণ জীবনকে পুনরুজ্জীবিত করার সময় সত্যিকারের বিনোদন আপনাকে আপনার মধ্যে সর্বোচ্চ এবং সেরাটির সাথে সংযুক্ত করবে।

৫০) কম ঘুমান:-

ঘুম একটি ওষুধের মত, এক সময় যদি খুব বেশি গ্রহণ করেন তবে এটি আপনাকে অসহায় করে তুলবে। আপনি সময়, জীবনশক্তি এবং সুযোগ গুলি হারাবেন।

আমাদের বেশিরভাগই প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি ঘুমায়। আমরা নিজেদেরকে বলি যে আমাদের সর্বোত্তম ভাবে কাজ করার জন্য কভারের নিচে অন্তত আটটি ঘন্টা থাকতে হবে।

ঘুমে ঘন্টার সংখ্যাটা মুখ্য নয়, বরং আপনার শরীর যে পরিমাণ পুনর্নবীকরণ করে তা গুরুত্বপূর্ণ। বিছানায় কম সময় থাকার চেষ্টা করুন তবে তা যেন সমৃদ্ধ এবং গভীর ঘুম হয়।

৫১) আপনি যা করতে পারবেন না তা নিয়ে চিন্তা করবেন না:-

আপনি যা করতে পারবেন না সেগুলি শনাক্ত করুন এবং তারপর সেই উদ্বেগ গুলিকে ছেড়ে দিন যা আপনি কিছুই করতে পারবেন না, সেগুলি আপনার শক্তির সম্পূর্ণ অপচয়। আপনি ৯৪% সমস্যা দূর করতে পারেন যা আপনাকে জর্জরিত করেছে।

৫২) আপনার জীবনের গল্প পুনরায় লিখুন:-

সময় সম্পর্কে সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিসগুলির মধ্যে একটি হল যে আপনি এটিকে আগে থেকে নষ্ট করতে পারবেন না। আপনি অতীতে কতটা সময় নষ্ট করেছেন তা কোনো ব্যাপার না, পরের ঘন্টাটি হবে নিখুঁত।

অতীতে আপনার সাথে যা ঘটেছে তা কোনো ব্যাপার না, আপনার ভবিষ্যৎ হবে নিষ্কলঙ্ক। উপলব্ধি করুন যে প্রতিটি ভোর একটি সম্পূর্ণ নতুন জীবন শুরু করার জন্য উপযুক্ত সুযোগ নিয়ে আসে। আপনি যদি তাই বেছে নেন, তাহলে আগামীকাল এমন দিন হতে পারে যেদিন আপনি আগে ঘুম থেকে উঠতে শুরু করবেন, বেশি পড়া শুরু করবেন, ব্যায়াম করবেন, ভালো খাবেন এবং কম চিন্তা করবেন।

কেউ আপনাকে আপনার জার্নাল খুলতে এবং একটি ফাঁকা পৃষ্ঠায় আপনার জীবনের গল্প পুনরায় লিখতে বাধা দিচ্ছে না। এই মুহূর্তে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে আপনি কীভাবে এটি প্রকাশ করতে চান, কেন্দ্রীয় অক্ষরগুলি পরিবর্তন করতে এবং একটি নতুন সমাপ্তি তৈরি করতে চান। একমাত্র প্রশ্ন হল আপনি কী তা করতে চান? মনে রাখবেন, আপনি সর্বদা যে ব্যক্তি হতে চান তা হয়ে উঠতে কখনোই দেরি করবেন না।

৫৩) আপনার শান্তির জায়গা খুঁজুন:-

প্রত্যেকেরই একটি অভয়ারণ্য বা একটি "শান্তি স্থান" প্রয়োজন যেখানে তারা শান্ত এবং স্থির থাকতে পারে। এটি এমন একটি স্থান হবে যেখানে আপনি আপনার সময়, শক্তি এবং মনোযোগের দাবি রাখে এমন দৈনন্দিন কার্যকলাপের ক্রাশ থেকে আশ্রয় নিতে পারেন। আপনার অভয়ারণ্য অভিনব হতে হবে না। একটি অব্যবহৃত বেডরুম বা একটি অ্যাপার্টমেন্টের কোণের টেবিলে কিছু তাজা কাটা ফুল সুন্দর ভাবে কাজ করবে। এমনকি আপনার প্রিয় পার্কে একটি কাঠের বেঞ্চ আপনার শান্তির জায়গা হিসেবে কাজ করতে পারে।

৫৪) আপনার কাজকে ভালোবাসুন:-

দীর্ঘ সুখী জীবনের একটি নিরবিচ্ছিন্ন রহস্য হল আপনার কাজকে ভালোবাসা। ইতিহাসের সবচেয়ে সন্তুষ্ট ব্যক্তিদের জীবনের মধ্য দিয়ে চলমান সোনার সুতোটি হল, যে তারা সবাই বেঁচে থাকার জন্য যা করেছে তা তারা পছন্দ করেছিল।

আপনি যখন আপনার কাজকে ভালোবাসেন, তখন আপনি আবিষ্কার করেন যে আপনাকে আপনার জীবনে আর কোনদিন কাজ করতে হবে না। আপনার কাজ খেলা হবে এবং ঘন্টা যত তাড়াতাড়ি তারা আসে দূরে স্থলিত হবে।

৫৫) নিঃস্বার্থভাবে পরিবেশন করুন:-

সমস্ত মহান নেতা, চিন্তাবিদ এবং মানবতাবাদীরা নিঃস্বার্থ জীবনের জন্য স্বার্থপর জীবন পরিত্যাগ করেছেন এবং তা করতে গিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত সমস্ত সুখ, প্রাচুর্য এবং তৃপ্তি পেয়েছেন। তারা সবাই বুঝতে পেরেছে যে মানবতার গুরুত্বপূর্ণ সত্য–আপনি সাফল্য অনুসরণ করতে পারবেন না, সাফল্য আসে। এটি মানুষের সেবা করার জন্য এবং বিশ্বের মূল্য যোগ করার জন্য ব্যয় করা একটি জীবনের অনিচ্ছাকৃত কিন্তু অনিবার্য উপপণ্য।

৫৬) সম্পূর্ণভাবে বাঁচুন যাতে আপনি সুখী মরতে পারেন:-

বেশিরভাগ মানুষ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জীবন কী তা আবিষ্কার করতে পারে না।আমরা যখন অল্প বয়সী থাকি, তখন আমরা আমাদের দিনগুলিকে সামাজিক প্রত্যাশার সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করে কাটাই। আমরা জীবনের বড় আনন্দের পেছনে ছুটতে এতটাই ব্যস্ত যে ছোটগুলোকে মিস করি, বৃষ্টির দিনে আমাদের বাচ্চাদের সাথে পার্কে খালি পায়ে নাচ বা গোলাপের বাগান করা বা সূর্য উঠতে দেখা। আমরা এমন এক যুগে বাস করি যেখানে আমরা সর্বোচ্চ পর্বত জয় করেছি কিন্তু এখনো নিজেদের আয়ত্ত করতে পারিনি। আমাদের উঁচু দালান আছে কিন্তু মেজাজ খাটো, সম্পদ বেশি কিন্তু সুখ কম, পূর্ণ মন কিন্তু চাকরিজীবী জীবন।

জীবনের অর্থ এবং এর মধ্যে আপনাকে যে মূল্যবান ভূমিকা পালন করতে হবে তা উপলব্ধি করার জন্য আপনি আপনার মৃত্যু শয্যায় থাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। সুখ এবং গভীর পরিপূর্ণ জীবন আসে যখন আপনি নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেন, আপনার আত্মার একেবারে মূল থেকে, আপনার সর্বোচ্চ মানবিক প্রতিভাকে এমন একটি উদ্দেশ্যে ব্যয় করার জন্য যা অন্যদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। যখন সমস্ত বিশৃঙ্খলা আপনার জীবন থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে তখন এর প্রকৃত অর্থ স্পষ্ট হয়ে উঠবে, নিজের চেয়ে বেশি কিছুর জন্য বেঁচে থাকা। সহজ ভাবে বলা ,জীবনের উদ্দেশ্য হলো উদ্দেশ্য পূর্ণ জীবন।লেখক আপনার জ্ঞান, সুখ এবং পরিপূর্ণতায় ভরা একটি মহান জীবন কামনা করেছেন।

সমাপ্ত

(উপরিউক্ত অংশটি Robin Sharma-র লেখা "WHO WILL CRY WHEN YOU DIE"-এর সারসংক্ষেপ। আপনি চাইলে পুরো বইটি পড়তে পারেন)।

ধন্যবাদ