TRADING IN THE ZONE

…MARK DOUGLAS

ট্রেডিং ইন দ্য জোন হল আমরা যখন ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তখন যে চ্যালেঞ্জ গুলির মুখোমুখি হয় সেগুলিকে গভীরভাবে দেখা। নবজাতকদের কাছে একমাত্র চ্যালেঞ্জ হল অর্থ উপার্জনের উপায় খুঁজে বের করা। যখন নবজাতক শেখে যে, দালালদের পরামর্শ, টিপস এবং ক্রয় বা বিক্রয়কে‌ ন্যায়সঙ্গত করার অন্যান্য উপায়গুলি ধারাবাহিকভাবে কাজ করে না, তখন সে আবিষ্কার করে যে তাকে হয় একটি নির্ভরযোগ্য ট্রেডিং কৌশল তৈরি করতে হবে বা একটি ক্রয় করতে হবে। এরপরে ট্রেডিং সহজ হওয়া উচিত, তাই না? আপনাকে যা করতে হবে তা হল নিয়মগুলি অনুসরণ করুন এবং অর্থ উপার্জন শুরু করুন।

নতুনরা আবিষ্কার করে যে ট্রেডিং সবচেয়ে হতাশাসনক অভিজ্ঞতার মধ্যে পরিণত হতে পারে, যা তারা কখনো সম্মুখীন হবে। এই অভিজ্ঞতাটি প্রায়শই এই পরিসংখ্যানের দিকে নিয়ে যায় যে, ৯৫% ভবিষ্যত ব্যবসায়ীরা ট্রেড করার প্রথম বছরের মধ্যে তাদের সমস্ত অর্থ হারায়। স্টক ব্যবসায়ীরা সাধারণত একই ফলাফলের সম্মুখীন হয়, এই কারণে পন্ডিতরা সর্বদা এই বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে যে বেশিরভাগ স্টক ব্যবসায়ীরা একটি সাধারণ ক্রয় এবং বিনিয়োগের পরিস্থিতি সম্পাদন করতে ব্যর্থ হয়।

যে কোনো ব্যবসায়ীর লক্ষ্য হল নিয়মিতভাবে মুনাফা অর্জন করা, তবুও খুব কম লোকই সত্যিকার অর্থে ব্যবসায়ী হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে অর্থ উপার্জন করে। ক্রমাগত সফল যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষুদ্র শতাংশের জন্য কী দায়ী? নির্ধারক ফ্যাক্টর হল মনস্তাত্ত্বিক-ধারাবাহিক বিজয়ীরা অন্য সবার থেকে আলাদা ভাবে চিন্তা করে।

মার্ক ডগলাস ১৯৭৮ সালে ব্যবসা শুরু করেন। সেই সময় তিনি মিসিগানের ডেট্রয়েটের শহরতলিতে একটি বাণিজ্যিক দুর্ঘটনা বীমা সংস্থা পরিচালনা করতেন। তাঁর একটি সফল কর্মজীবন ছিল এবং তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি সহজেই সেই সাফল্যকে ট্রেডিংয়ে স্থানান্তর করতে পারেন। ১৯৮১ সাল নাগাদ তিনি একটি চাকরি করার সময় কার্যকর ভাবে বাণিজ্য করতে ওনার অক্ষমতার জন্য সম্পূর্ণ বিরক্ত ছিলেন, তাই তিনি শিকাগোতে চলে আসেন এবং শিকাগো বোর্ড অফ ট্রেডে মেরিল লিঞ্জের সাথে ব্রোকার হিসেবে একটি চাকরি পান। শিকাগোতে যাওয়ার ৯ মাসের মধ্যে তিনি তার মালিকানাধীন প্রায় সব কিছুই হারিয়ে ফেলেন। ব্যবসায়িক ক্রিয়া-কলাপ এবং অত্যধিক লাইফ স্টাইল উভয়ই ছিল ওনার ক্ষতির মূল কারণ। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি প্রথমদিকের অভিজ্ঞতা থেকে নিজের সম্পর্কে এবং ব্যবসায় মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা সম্পর্কে প্রচুর পরিমাণে জ্ঞান অর্জন করেছেন। লেখক ১৭ বছর ধরে ব্যবসার পিছনে মনস্তাত্ত্বিক গতিশীলতা খুঁজে বের করেছেন যাতে তিনি সফলতার সঠিক নীতিগুলি শেখানোর জন্য কার্যকর পদ্ধতি তৈরি করতে পারেন। তিনি যা আবিষ্কার করেছেন তা হল, সবচেয়ে মৌলিক স্তরে আমাদের চিন্তা করার পদ্ধতিতে সমস্যা রয়েছে। আমাদের মন যেভাবে কাজ করে তার মধ্যে এমন কিছু অন্তর্নিহিত রয়েছে যা বাজার দ্বারা দেখানো বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে খুব ভালোভাবে খাপ খায় না।

যে সমস্ত ব্যবসায়ীদের নিজেদের ব্যবসার প্রতি আস্থা আছে, তারা বিনা দ্বিধায় যা করতে হবে তা করতে নিজেদের বিশ্বাস করে এবং সফল হয়। তারা বাজারের অনিয়মিত আচরণকে ভয় পায় না। তারা এমন তথ্যের ওপর ফোকাস করতে শেখে, যা তাদের ভয়কে শক্তিশালী করে এমন তথ্যের উপর ফোকাস করার পরিবর্তে তাদের লাভ করার সুযোগ খুঁজে পেতে সহায়তা করে। অর্থ উপার্জনের জন্য পরবর্তীতে কী ঘটতে চলেছে তা জানার প্রয়োজন নেই, যে কোনো কিছু ঘটতে পারে, প্রতিটি মুহূর্ত অনন্য, যার প্রতিটি প্রান্ত এবং ফলাফল একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। বাণিজ্য হয় কাজ করবে না হয় করবে না। যাই হোক না কেন আপনি পরবর্তী প্রান্তটি প্রদর্শিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন এবং বারবার প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে যান।

ট্রেডিং ইন দ্য জোন আপনার ট্রেডিংয়ে ধারাবাহিক বিজয়ী হওয়ার জন্য একটি গুরুতর মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি উপস্থাপন করে। লেখক কোনো ট্রেডিং সিস্টেম অফার করেন না; একজন লাভজনক ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপায়ে কীভাবে চিন্তা করতে হয় তা দেখাতে তিনি আরো বেশি আগ্রহী। আপনার আত্মবিশ্বাস যত বেশি হবে আপনার ব্যবসা চালানো তত সহজ হবে। এই বইটি আপনার নিজের সম্পর্কে এবং ট্রেডিংয়ের প্রকৃতি সম্পর্কে আপনার প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি বোঝার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

সাফল্যের রাস্তা: মৌলিক, প্রযুক্তিগত, নাকি মানসিক বিশ্লেষণ?

মৌলিক বিশ্লেষণ:-

মৌলিক বিশ্লেষণ হল গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে বিনিয়োগের মূল্য নির্ণয় করার একটি পদ্ধতি। এই মডেল গুলি একাধিক পরিবর্তনকে বিবেচনা করে, যা সেই নির্দিষ্ট বিনিয়োগের জন্য সরবরাহ এবং চাহিদার আপেক্ষিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে সুদের হার, প্রতিযোগী, আবহাওয়ার ধরন, কর্মসংস্থানের হার এবং স্টক বা বন্ড ইস্যুকারী কোম্পানির আর্থিক বিবৃতি। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে ডগলাস বলেছেন, আপনি ভবিষ্যতে কোন সময়ে দাম কেমন হবে তার একটি যুক্তিসঙ্গত পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হতে পারেন‌। যদি তথ্য প্রস্তাব করে যে দাম বাড়বে, তাহলে বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমান হতে পারে। কিন্তু যদি তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে দাম কমে যাবে, তাহলে আপনার সম্ভবত বিনিয়োগ এড়ানো উচিত।

ডগলাসের মতে, এই ধরনের বিশ্লেষণের একটি ত্রুটি হল যে, এটি অন্যান্য ব্যবসায়ীদের অপ্রত্যাশিত উপায়ে দামকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা বিবেচনা করে না। ব্যবসায়ীরা প্রায়শই আবেগের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়, যুক্তি নয় এবং এই অযৌক্তিক ট্রেডিং কার্যকলাপ নাটকীয় ভাবে দামকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হতে পারে এবং ভিত্তিহীন গুজবের উপর ভিত্তি করে একটি কোম্পানির স্টক বিক্রি বন্ধ করে দিতে পারে যে কোম্পানির অত্যন্ত সফল সি.ই.ও পদত্যাগ করতে চলেছেন, যার ফলে সেই কোম্পানির স্টক গুলোর মূল্য হ্রাস পেতে পারে। এইভাবে মৌলিক বিশ্লেষণ সরবরাহ এবং চাহিদার কারণের উপর ভিত্তি করে স্পষ্ট এবং বাধ্যতামূলক মূল্য ভবিষ্যদ্বাণী তৈরি করতে পারে, তবে এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি স্বতন্ত্র ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক কার্যকলাপের কারণে সম্পূর্ণরূপে ভুল হতে পারে।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ:-

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ প্রায় এতদিন ধরে চলে আসছে যতদিন বিনিময়ের আকারে সংগঠিত বাজার রয়েছে। ট্রেডিং সম্প্রদায় ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে বা ১৯৮০ দশকের শুরু পর্যন্ত অর্থ উপার্জনের জন্য একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণকে গ্রহণ করেনি। যে কোনো দিন, সপ্তাহ বা মাসে একটি সীমিত সংখ্যক ব্যবসায়ী বাজারে অংশগ্রহণ করে। এই ব্যবসায়ীদের অনেকেই অর্থ উপার্জনের প্রয়াসে একই জমিতে বারবার বিনিয়োগ করে। অন্য কথায়, ব্যক্তিরা আচরণের ধরন তৈরি করে এবং ব্যক্তিদের একটি দল সামঞ্জস্যপূর্ণ ভিত্তিতে একে অপরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে সমষ্টিগত আচরণের ধরন তৈরি করে। এই আচরণের ধরন গুলি পর্যবেক্ষণ যোগ্য এবং পরিমাপ যোগ্য এবং তারা পরিসংখ্যানগত নির্ভরযোগ্যতার সাথে নিজেদের পুনরাবৃত্তি করে।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ হল এমন একটি পদ্ধতি যা এই সম্মিলিত আচরণকে শনাক্তযোগ্য প্যাটার্নে সংগঠিত করে। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ আপনাকে পূর্ববর্তী মুহূর্তে বাজারে যে ধরনের নিদর্শন তৈরি করেছে তার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে কি ঘটতে পারে তা অনুমান করতে আপনাকে বাজারের মনে প্রবেশ করতে দেয়। ভবিষ্যৎ মূল্যের গতিবিধি প্রজেক্ট করার একটি পদ্ধতি হিসাবে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ একটি সম্পূর্ণ মৌলিক পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতর হতে দেখা গেছে। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ একজন ব্যবসায়ীকে একটি গাণিতিক মডেল দ্বারা নির্ধারিত যৌক্তিক এবং যুক্তিসঙ্গতার উপর ভিত্তি করে বাজারে কী করা উচিত তার ওপর ফোকাস করার পরিবর্তে অতীতে কী করেছে তার সাথে বাজার এখন কী করছে তার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে সাহায্য করে।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য বাজারকে একটি অফুরন্ত প্রবাহের সুযোগে পরিণত করে।

মানসিক বিশ্লেষণ:-

যদি প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এত ভালো কাজ করে, তাহলে কেন বেশি সংখ্যক ট্রেডিং সম্প্রদায় তাদের লক্ষ্য বাজারের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ থেকে নিজেদের মানসিক বিশ্লেষনের দিকে সরিয়ে নেবে? একবার আপনি নিদর্শন গুলি শনাক্ত করতে এবং বাজার পড়তে শিখলে, আপনি অর্থ উপার্জনের সীমাহীন সুযোগ খুঁজে পান। কিন্তু আপনি ইতিমধ্যেই জানেন যে, বাজার সম্পর্কে আপনি যা বোঝেন এবং সেই জ্ঞানকে সামঞ্জস্যপূর্ণ লাভে বা ক্রমাগতভাবে ক্রমবর্ধমান বক্ররেখায় রূপান্তরিত করার ক্ষমতার মধ্যে একটি বিশাল ব্যবধানও থাকতে পারে। বাজারে কিছু ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা( আপনি যে সমস্ত অর্থ উপার্জন করতে পারতেন সে সম্পর্কে চিন্তা করা) এবং প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায় প্রবেশ করা এবং এর বাইরে যাওয়ার বাস্তবতার মধ্যে একটু বড় পার্থক্য রয়েছে।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ অর্থ উপার্জনের একমাত্র উপায়, এটা নিশ্চিত নয়। অনেক লোক আছে যারা এটির সাথে ভালো কাজ করে না। সফল ব্যবসায়ী এবং অসফল ব্যবসায়ীদের মধ্যে পার্থক্য হল ট্রেডিংয়ের প্রতি তাদের মনোভাব–-এটা মানসিক।

একজন ব্যবসায়ী যে বাজারে গ্রাউন্ডেড সে বুঝতে পারে যে সে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। একটি বাণিজ্য কার্যকর না হলে তিনি বিরক্ত হন না, তবে পিছনে না তাকিয়ে পরেরটিতে চলে যান। গড়ব্যবসায়ীর একটি অস্বাস্থ্যকর মানসিকতা আছে এবং তারা ট্রেডিং থেকে বৈধতা চায়। বাণিজ্য সম্পর্কে সঠিক হওয়ার জন্য তারা নিজের ওপর খুব বেশি চাপ দেয়, যা তার হারানো অবস্থান ধরে রাখে এবং বিজয়ীদের থেকে অসময়ে মুনাফা নিয়ে যায়। এটি শেষ পর্যন্ত তার জন্য জয়ের চেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হয়।

লেখক মানসিক বিশ্লেষণ বা ট্রেডিং সাইকোলজির দিকে পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি, ক্ষতি এবং বাজারের অনিশ্চয়তার প্রতি তাদের নিজস্ব মানসিক বাধা এবং মনোভাব বুঝতে উৎসাহিত করেছেন। এই মনস্তাত্ত্বিক বাধা অতিক্রম করা ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ঝুঁকি গ্রহণের ধারণাটিকে ট্রেডিংয়ে একটি মৌলিক দক্ষতা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে তারা এড়িয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ব্যবসায় অন্তর্নিহিত অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকি গ্রহণ করুন। ভয় ছাড়াই ঝুঁকি গ্রহণ করার ক্ষমতাকে ট্রেডিং সাফল্যের মূল উপাদান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

লেখক বাজারের তথ্য সম্পর্কে তাদের উপলব্ধি এবং বিনা দ্বিধায় কাজ করার ক্ষমতার ওপর ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস এবং মনোভাবের প্রভাবকে আন্ডারস্কোর করেছেন। উদ্দেশ্যমূলক এবং আত্মবিশ্বাসী ট্রেডিংয়ের জন্য সঠিক মানসিকতার বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ীদের আস্থা এবং সতর্কতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদিও ভয় দূর করা গুরুত্বপূর্ণ, ট্রেডিংয়ে বেপরোয়াতা এড়ানোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। লেখক পরামর্শ দিয়েছেন যে একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার সাথে সাথে ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং অভিযোজন জড়িত। ব্যবসায়ীদের তাদের ফলাফল উন্নত করার জন্য ট্রেডিং সম্পর্কে তাদের বিদ্যমান বিশ্বাস এবং মনোভাব পরিবর্তন করার জন্য উন্মুক্ত হতে হবে।

লেনদেনের লোভ এবং বিপদ:-

এই অধ্যায়ে লেখক ব্যাখ্যা করেছেন যে, লোকেরা ভুল কারণে ট্রেডিং ব্যবসায় আসে। আমরা সবাই স্বাধীনতা পছন্দ করি। সবাই নায়ক হতে চায়। প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব নিয়ম পছন্দ করে। ট্রেডার হওয়ার পর অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয় না। যখন একটি ট্রেড নেওয়া হয় তখন অগণিত সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও ব্যবসায়ীরা এখনো অর্থ হারান। তার মানসিক সম্পদ পুরোপুরি বিকশিত হয় না।

কোনো ব্যবসা যদি আমাদের মনের বিরুদ্ধে যায় তাহলে মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে, কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখাই একজন ভালো ব্যবসায়ীর পরিচয়। লেখক বলেছেন যে, বাজার সর্বদা অগণিত সুযোগ তৈরি করে রাখে, ব্যবসায়ীকে কেবল তাদের সদ্ব্যবহার করতে হয়।

একটি ছোট শিশুর মত যে সবকিছু উপভোগ করতে জানে এবং চাপে পড়ে না। যাইহোক না কেন শিশু সব বিষয় কৌতুহলী থাকে। ট্রেডিংয়ে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে, মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। লোকসান ঠেকাতে শৃঙ্খলা দরকার। বাজার মানসিক গঠন প্রদান করে না। আগের দিনের ওপেনিং এর দাম একই হতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনি যদি ব্ল্যাকজ্যাক খেলার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনাকে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি কতটা ঝুঁকি নিচ্ছেন।

ট্রেডিং পরিবেশে কার্যকর ভাবে কাজ করার জন্য, আমাদের আচরণকে নির্দেশিত করার জন্য আমাদের নিয়ম এবং সীমানা প্রয়োজন। এটি ট্রেডিংয়ের একটি সাধারণ সত্য যে, আমাদের নিজেদের জন্য প্রচুর ক্ষতি করার সম্ভাবনা বিদ্যমান–যা আমরা ভাবতে পারি তার অনুপাতের বাইরে হতে পারে। এমন অনেক ধরনের ট্রেড আছে যেখানে ক্ষতির ঝুঁকি সীমাহীন। নিজেদের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রোধ করার জন্য, আমাদের বিশেষ মানসিক শৃঙ্খলা এবং একটি দৃষ্টিভঙ্গির আকারে একটি অভ্যন্তরীণ কাঠামো তৈরি করতে হবে, যা আমাদের আচরণকে নির্দেশ করে, যাতে আমরা সর্বদা আমাদের নিজেদের সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করি। এই কাঠামোটি আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে বিদ্যমান থাকতে হবে, কারণ বাজার এটি প্রদান করে না। বাজারগুলি আচরণের নির্দেশগুলির আকারে কাঠামো প্রদান করে যা নির্দেশ করে যে কখন কেনা বা বিক্রি করার সুযোগ বিদ্যমান। প্রতিটি ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার আচরণকে গাইড করার জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়ম নেই। বাজার একটি স্রোতের মত, যা অবিরাম গতিতে থাকে। এটি শুরু, থামানো বা অপেক্ষা করে না। বাজার বন্ধ থাকলেও দাম এখনো গতিশীল। কোনো নিয়ম নেই যে একদিনের খোলার মূল্য আগের দিনের বন্ধের মূল্যের সমান হতে হবে।

ট্রেডিংয়ে কেউ আপনাকে আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে না যে আপনার ঝুঁকি কি। প্রকৃতপক্ষে আমাদের যা রয়েছে তা হল, একটি সীমাহীন পরিবেশ, যেখানে কার্যত যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো কিছু ঘটতে পারে। ঝুঁকি আগে থেকেই সংজ্ঞায়িত করা আপনাকে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বাধ্য করবে যে প্রতিটি বাণিজ্যের একটি সম্ভাব্য ফলাফল রয়েছে, যার অর্থ এটি একটি ক্ষতিকারক হতে পারে।

সমস্ত জুয়া খেলার সূচনা, মাঝামাঝি এবং শেষ নির্দিষ্ট করা থাকে, যা খেলার ফলাফল নির্ধারণ করে। একবার আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনি অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন, আপনি সময়কালের জন্য আপনার মন পরিবর্তন করতে পারবেন না, এটি ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে সত্য নয়। ট্রেডিংয়ে দামগুলি স্থির গতিতে থাকে, যতক্ষণ না আপনি সিদ্ধান্ত নেন ততক্ষণ কিছুই শুরু হয় না। এটি যতক্ষণ আপনি চান ততক্ষণ স্থায়ী হয় এবং আপনি এটি শেষ না করা পর্যন্ত এটি শেষ হয় না। ট্রেডিংয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নেই, বাজার আপনাকে বাণিজ্য থেকে বের করে দেবে না।

ট্রেডিংয়ের অনেক দ্বন্দ্বের মধ্যে একটি হল এটি একই সাথে একটি উপহার এবং অভিশাপ দেয়। উপহারটি হল, সম্ভবত আমাদের জীবনে প্রথমবারের মতো আমরা যা করি তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছি। অভিশাপ হল যে আমাদের আচরণ পরিচালনা বা গঠন করার জন্য কোনো বাহ্যিক নিয়ম বা সীমানা নেই। ট্রেডিং পরিবেশের সীমাহীন বৈশিষ্ট্য গুলির জন্য প্রয়োজন আমরা কিছুটা সংযম এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের সাথে কাজ করি, অন্তত যদি আমরা ধারাবাহিক সাফল্যের কিছু পরিমাপ তৈরি করতে চাই। আমাদের আচরণকে গাইড করার জন্য আমাদের যে কাঠামো দরকার তা আপনার মনের মধ্যে উদ্ভূত হতে হবে, স্বাধীন ইচ্ছার একটি সচেতন কাজ হিসাবে। অনেক সমস্যার শুরু এখান থেকেই হয়। আপনি যা কিছু করেন তার উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। ট্রেডিং এর সমস্যা কী?---

১) ট্রেডিংয়ে কোনো নিয়ম তৈরি করবেন না কারণ সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।

২) দায়িত্ব নিতে ব্যর্থতা

৩)এলোমেলো পুরস্কারের আসক্তি।

দায়িত্ব গ্রহণ:-

লেখক মার্ক ডগলাস এই অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করেছেন যে ট্রেডিং একটি দায়িত্ব এবং সেই দায়িত্ব গ্রহণ করাও একটি দায়িত্ব। ব্যবসায়ী দায়িত্ব গ্রহণ করা এত সহজ নয়, দায়িত্ব একজন মায়ের মত তার অসুস্থ সন্তানের যত্ন নেওয়া।

প্রতিটি ট্রেডারকে বুঝতে হবে আপনার সাফল্যের জন্য আপনি কতটা দায়ী এবং কতটা নন। এই আদর্শ আপনাকে সফল ট্রেডারের ক্যাটাগরিতে নিয়ে যাবে। ট্রেডিং একটি শিল্প আপনাকে দায়িত্ব নিয়েই সেই শিল্প শিখতে হবে।

ট্রেডিং করার ভয় চলে গেলে ভুল কমে যায়। ট্রেডিংয়ে আপনাকে একজন সফল ট্রেডারের মতো ভাবতে হবে। নতুন অনেক কিছু শিখতে হবে। অসাবধানতা ও ভয়ের কারণে আমরা যে ভুলগুলো করি তা বন্ধ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় প্রত্যাশা বাদ দিয়ে ট্রেডিং করতে হবে। একজন ভালো ব্যবসায়ী ক্রমাগত জয়ের ফলে আসা উচ্ছ্বাস এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের নেতিবাচক প্রভাব গুলিকে প্রতিরোধ করার জন্য একটি মানসিকতা তৈরি করে।

ট্রেডিং অর্থ উপার্জনের একটি ভালো মাধ্যম, কিন্তু প্রশ্ন হল আপনি যখন ট্রেডিংয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন তখন আপনি কেমন অনুভব করেন। আপনার যদি কম দক্ষতা থাকে তবে এটি যথেষ্ট হবে, শুধুমাত্র একটি বিজয়ী মনোভাব সব সময় থাকা উচিত। কখনো ভয়ের কারণে ভালো ব্যবসা নষ্ট হয়ে যায়, আবার অতিরিক্ত লোভের কারণে খারাপ ব্যবসা নষ্ট হয়ে যায়। নতুন ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়।

যখন একজন ব্যবসায়ী বিজয়ী হয়, তখন তারা ভুল করে এবং অতিরিক্ত বাণিজ্য করে, নিয়ম লঙ্ঘন করে বা কেবল প্রতারণার মতো মনে করে এবং তাদের অর্থ হারায়। দশ শতাংশ ব্যবসায়ী সব সময় জয়ী হয়। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ীদের সর্বদা লোকসান হয়। তারা সব সময় বাজারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বাকি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ীরা অর্থ উপার্জন করে কিন্তু সেই অর্থ বজায় রাখার দক্ষতা তাদের নেই। কিছু ব্যবসায়ী ক্রমাগত অর্থ উপার্জন করে কিন্তু বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

আপনি তখনই জিতবেন যখন আপনি আত্মবিশ্বাস এবং ধৈর্যের মধ্যে একটি সুস্থ ভারসাম্য বজায় রাখবেন। ব্যবসায় ভুলের সাথে বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই, বাজার সব সময় তার নিজস্ব গতিতে চলে। সেই গতি ব্যবসায়ীকে আত্মস্থ করতে হবে। আপনি নিজের ফলাফলের জন্য দায়ী না হলে আপনি নতুন কিছু শিখতে পারবেন না। আপনার বৃদ্ধি বা পরিবর্তন হবে না। আমরা যখনই হেরে যাই তখন আমরা বাজারকে দায়ি করি। আমরা আমাদের দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেড়াই। বাজার সব সময় কিছু করেনা। বাজার আমাদের সব সময় সুযোগ দেয় কিন্তু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটি কাজে লাগায় না।

বিজয়ী মনোভাব গড়ে তোলাই ব্যবসায়ীদের সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রতিটি ব্যবসায়ী তার নিজের জয় এবং ক্ষতির জন্য দায়ী, শেয়ার বাজার নয়। লেখক এই অধ্যায়ের শেষে বলেছেন বাজারের সাথে লড়াই করতে নেই। বাজারের সাথে লড়াই করা নিজের সাথে লড়াই করার মতো। ব্যবসায়ী সাফল্যের প্রথম ধাপ হল দায়িত্ব নেওয়া। আপনার কর্মের দায় স্বীকার করতে হবে।

উপলব্ধির গতিশীলতা:-

এই বইটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য গুলির মধ্যে একটি মূল উদ্দেশ্য হল, আপনাকে শেয়ার বাজার সম্পর্কে ভুল ধারণা এবং অপ্রয়োজনীয় ভয় থেকে দূরে রাখা। বাজার অপ্রয়োজনীয় বা ট্রেডিংয়ের জন্য উপযোগী এমন কোনো তথ্য তৈরি করে না। পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবসায়িক যাত্রায় সাফল্য এবং ব্যর্থতার জন্য দায়ী। ট্রেডিংয়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য মানসিক ক্ষমতা নিয়ে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ।

সফল ব্যবসায়ীরা বাজারকে ভয় পায় না। তাদের জন্য ট্রেডিংয়ে কোনো ঝুঁকি নেই। একজন ব্যবসায়ীর মানসিকতা নিয়ে বাজারে প্রবেশ করা একজন ব্যবসায়ীর উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। শেয়ারবাজারে সফল হতে প্রতিটি ব্যবসায়ীকে তার মন থেকে ক্ষতিকারক চিন্তা দূর করতে হবে। একটি সরল এবং সহজ মানসিকতার পরিবর্তন ট্রেডিংয়ে দুর্দান্ত সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।

ট্রেডিংয়ের জন্য সব সময় সুযোগ সন্ধান করা উচিত। মনের বিশ্লেষণ থেকে বেরিয়ে এসে মানসিক বিশ্লেষণে মনোনিবেশ করা উচিত।

প্রতিটি চার্টের জন্য ব্যবসায়ীক পদ্ধতি ভিন্ন হওয়া উচিত। চার্ট একই কিন্তু আপনার দৃষ্টিভঙ্গি এটি পরিবর্তন করে। চার্টে লুকানো সুযোগগুলি বোঝার জন্য ব্যবসায়ীকে তার চিন্তা-ভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা চার্টটি তাদের পছন্দমত দেখেন। এই মানসিকতার জন্য ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা অতীত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করি, তবে শেয়ার বাজার প্রতিদিন নতুন হয়। ভালো ব্যবসায়ীরা অতীত এবং ভবিষ্যৎ থেকে দূরে সিদ্ধান্ত নেয় এবং শুধুমাত্র বর্তমান তথ্যতে ফোকাস করে। সুযোগের উপর ফোকাস করতে শেখার জন্য একজন ব্যবসায়ীর বিপদ জানা বা বোঝার প্রয়োজন নেই।। বাজারের অবস্থা দেখে একজন ব্যবসায়ী ভয় পেয়ে গেলে কী করবেন? লেখক এর জন্য কিছু প্রশ্ন করেছেন:-

বাজার এখন যে তথ্য দিচ্ছে তা কী বিপজ্জনক? এটা কী আপনার মনের অবস্থার প্রভাব নয়? যদি আপনার শেষ দুই বা তিনটি ট্রেড ভুল হয়ে যায় এবং আপনার সামনে কিছু ভালো সুযোগ থাকে, আপনি কী সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন? আপনি কী এটি অনুমান করেন যে এই বাণিজ্যটিও ভুল হতে পারে এবং সেই অনুমানের কারণে আপনি একটি ভালো বাণিজ্যের সুযোগ হারাবেন?

ট্রেডিং ইন দ্য জোন-এ লেখক ব্যাখ্যা করেছেন যে ব্যবসায়ীরা সফল হচ্ছেনা কারণ তারা অদক্ষ চিন্তাভাবনা করছেন।

বাজারের মনোভাব:-

লেখক এই অধ্যায় আমাদের বাজারের মনোভাব সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে কোনো ব্যবসায়ীর ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে তার নিকটতম দুই বা তিনটি ট্রেডের ফলাফলের ওপর। বিপরীতে, একজন সফল ব্যবসায়ী তার আগের ব্যবসা দ্বারা প্রভাবিত হয় না,সে ভুল হোক বা সঠিক।

সফল ট্রেডারদের কোনো বিশেষ গুণ থাকে না, তাদের শুধু ট্রেডিং সাইকোলজি থাকে। সফল ব্যবসায়ীরা কোনো ভয় বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ছাড়াই ট্রেড করে। তারা বুঝতে পারে বাজার তাদের বাণিজ্যের জন্য কি আমন্ত্রণ দিচ্ছে। বর্তমান সুযোগের দিকে মনোনিবেশ করে, ট্রেডিংয়ের জোনে বাস করে।

তারা তাৎক্ষণিক লাভ-লোকসানের চিন্তা করে না। যাই ঘটুক না কেন, সন্দেহ বা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, নির্বিশেষে তারা তাদের কাজ চালিয়ে যায়। বাজারে পাওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে তারা নিজেদের প্রস্তুত রাখে। আমরা সুযোগকে চিনতে পারিনা, আমরা কেবল সুযোগ গুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ করতে পারি।

ওয়ারেন বাফে বলেছেন যে কেউ যদি ব্যবসায় উদ্ভূত প্রশ্নগুলির সমাধান করতে না শেখে তবে প্রশ্নগুলি এড়িয়ে চলতে শিখতে হবে। এর জন্য বুদ্ধিমান হওয়ার দরকার নেই।

চার্লি মুঙ্গের বলেছেন যে বুদ্ধিমান হওয়ার চেয়ে পাগল না হওয়ার চেষ্টা করা ভালো, এর অনেক দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা রয়েছে।

ট্রেড করার জন্য যদি বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় তবে এর জন্য ভালো ধারণা থাকা উচিত। ট্রেড করার জন্য সময় এবং স্থানের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। বাজারে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। বাজারে মুনাফা অর্জনের দুটি উপায় রয়েছে:

১) হয় কম কিনুন, বেশি বিক্রি করুন।

২) উচ্চ বিক্রি এবং কম কিনুন।

ট্রেডিং এর তিনটি ভুল:-

১) ঝুঁকি সংজ্ঞায়িত না করা।

২) নিজের ক্ষতি না কমানো।

৩) সঠিক সময়ে মুনাফা বুকিং না করা।

বাজারে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। মূল্যকে প্রভাবিত করে এমন লুকানো শক্তিগুলি আবিষ্কার করতে হবে। আমরা যদি আমাদের মনে বিশ্বাস স্থাপন করি যে, পৃথিবীতে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে, তবে তা আমাদের মনকে সম্ভাবনার কথা ভাবতে বাধ্য করবে। আপনার ট্রেডিংয়ের ব্যবসা সব সময় ট্রেডিং জোনেই থাকবে।

ট্রেডিং-এর অন্য দিক: সম্ভাব্য বিবেচনা করা:-

জুয়া এমন একটি খেলা যার অগণিত সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু জুয়া এবং ব্যবসার মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। জুয়ার আস্তানার মত বাজারও আমাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে তথ্য সরবরাহ করে। উভয়ের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল আমাদের অর্থ আমাদের সাথে নিয়ে যাওয়া এবং তা করার সময় উভয়ই আমাদের অর্থ উপার্জনের সুযোগ প্রদান করে। এটি ব্যবসার অন্য দিক। আপনার ক্রমাগত সাফল্য আপনার সঠিক বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। জ্ঞান, উপলব্ধি এবং মনোভাবের মাধ্যমে ফলাফল অর্জন করা হয়। জুয়ার বিপরীতে, আমরা ট্রেডিংয়ে সঠিক ভবিষ্যৎ বাণী করতে পারি না। আমাদের এই ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্যাটার্ন জানা উচিত। যে খেলাই হোক না কেন সেই খেলাতেই আমাদের পড়াশোনা করা উচিত। শুধু পড়াশোনা করতে হবে এরপরে কী হতে পারে?

আমাদের সঠিক সম্ভাবনা গুলি বেছে নিতে হবে। কিন্তু দুটি কারণে সম্ভাবনা গুলি বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে–

১) আমরা যে চাক্ষুষ প্রভাব দেখি তা অনিশ্চিত এবং সম্ভবত স্কেলে খুব সূক্ষ্ম।

২) আমরা যে ফলাফল পেতে চাইছি তাতে আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে।

ভালো ট্রেডিং ফলাফলের জন্য সমস্ত সূচকগুলি দেখে, সুক্ষ ভাবনাগুলিকে স্বীকৃতি দিয়ে এবং ঝুঁকিগুলি পরিচালনা করার পরে ট্রেড করা উচিত। বাজারে একটি ভালো বাণিজ্যের জন্য আমাদের নিখুঁত সময় শনাক্ত করার শিল্প থাকা উচিত,যেখানে আমরা লাভ পেতে পারি।

সমস্ত সূচকের সংকেত সর্বদা সঠিক হোক বা না হোক, ট্রেডিংয়ের মানসিকতা সব সময় সঠিক হওয়া উচিত। প্রতিটি ব্যবসায় মানসিকতার পরিবর্তন করা উচিত নয়। বিশ্বাস, মূল্যায়ন এবং দায়িত্বের ভিত্তিতে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বাজারে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে, এজন্য একটি উপযুক্ত টার্গেট থাকা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ট্রেডের সময় এবং সূক্ষ্ম বিষয়গুলো জানা অপরিহার্য। যদি বাজারে কোনো সুযোগ কাজ না করে তবে দুটি মানসিক সূচক সবসময় ব্যবহার করা উচিত: লোভের কারণে খুব বেশি লেনদেন না করা এবং ভয়ের কারণে ভালো ট্রিট মিস না করা।

সেরা ব্যবসায়ীরা অতীত এবং ভবিষ্যৎ ভুলে বর্তমানে বাস করে। তারা ব্যবসায়ী ঝুঁকিতে বিশ্বাস করে, কতটা লাভ করবে তাতে নয়। ট্রেডিংয়ে টাকা ছাড়া আর কিছুই ঝুঁকির মধ্যে নেই, তাই লেখক বলেছেন যে বাজার আমাদের যা কিছু দেয় আমাদের তা পুরোপুরি গ্রহণ করতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে। অতীতের ভুল ব্যবসার কথা চিন্তা করে বর্তমানের ভালো ব্যবসা গুলোকে মিস করবেন না; শুধুমাত্র সূক্ষ্ম কারণ ও পরিণতি গুলোকে ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে ভয় তাড়ানোর জন্য।

আগ্রহের সাথে কাজ করা:-

এই অধ্যায়ে লেখক আগ্রহ, প্রকৃতি, গুণাবলী এবং আগ্রহের সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। লেখক বলেছেন যে, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের সাহায্যে ব্যবসায়ীরা দামের ওঠানামা সম্পর্কে জানতে পারে। বাজারের প্রতিটি মুহূর্ত সর্বদা প্রতিটি ব্যবসায়ীকে তার সামর্থ্যের ভিত্তিতে কিছু করার সুযোগ দেয়।

ব্যবসায়ীদের বর্তমান মুহুর্তে ফোকাস করা উচিত এবং নিজেদের মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে প্রতিমুহূর্তে সব সময় সুযোগ থাকে। আমাদের ভয় আমাদের পদক্ষেপ নিতে বাধা দেয়। আমরা ভয় পাচ্ছি কারন আমরা বাজারকে শুধুমাত্র গাণিতিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখি। আমাদের ভুল ধারণার কারণে আমরা ভুল করি এবং সুযোগের বাইরে কাজ করি। আমরা বাজারের বাস্তবতা উপেক্ষা করি। বাজারের প্রতিটি মুহূর্ত অনন্য। আমরা সবাই জানি যে এই মনোভাব ব্যবসায়ীর জন্য মারাত্মক। বাজারে যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে এবং সেই ঘটনার জন্য মনকে প্রস্তুত করতে হবে। আমরা যা জানি তার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি ঘটনাকে দেখতে হবে না। বর্তমানের মধ্যে বাস করুন। ব্যবসায়ীকে বাজারের বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।

মার্কেটিং এর পাঁচটি মৌলিক সত্য এবং দক্ষতা কী কী?

১) বাজারে সব সময় অজানা শক্তি কাজ করে, তাই বাজারের অবস্থা পরিবর্তন সাপেক্ষ।

২) বাজারে অর্থ উপার্জনের জন্য আপনাকে সর্বদা কী ঘটতে চলেছে তা জানার দরকার নেই। লাভ এবং ক্ষতি: এটি ট্রেডের ক্রম। পরবর্তী ২০টি ট্রেডের মধ্যে ১২টি ট্রেড বিজয়ী হবে এবং ৮টি ট্রেড লস হবে। কখন কোন অর্ডার আসবে জানার দরকার নেই। সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

৩) ট্রেডিং এর ফলাফল সংজ্ঞায়িত কারণগুলি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত থাকে।

৪) ট্রেডারের সাফল্য হল ব্যবসায়ীর মধ্যে এমন কিছু যা অন্য কারো চেয়ে সম্ভাব্য ফলাফলের কাছাকাছি।

৫) বাজারের প্রতিটি মুহূর্ত অনন্য।

ব্যবসায়ীকে বাজারের মনস্তত্ত্ব পুরোপুরি বুঝতে হবে। একজন ব্যবসায়ী তার ভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে যদি সে প্রতিটি বাণিজ্যে ঝুঁকি গ্রহণ করে। এটি থেকে একটি শক্তি উদ্ভূত হবে যা সুযোগের প্রভাবে বর্তমান মুহূর্তের সুযোগগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুমতি দেবে।। ট্রেডিং জোনের সেরা অবস্থানে সহজেই প্রবেশ করুন।

ট্রেডিংয়ের ওপর আপনার বিশ্বাসের প্রভাব:-

এই অধ্যায়ে লেখক ব্যবসার ওপর তার বিশ্বাসের প্রভাব ব্যাখ্যা করেছেন। নিজের সম্পর্কে জানার জন্য আপনাকে প্রথমে আপনার বিশ্বাস পরীক্ষা করতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থ দেখা উচিত। আমাদের স্বার্থ আমাদের চিন্তার পথ দেখায়। ট্রেড করার সময় অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী এবং অতি উৎসাহী হওয়া ট্রেডিংয়ের জন্য মারাত্মক। আপনার চিন্তা ভারসাম্যপূর্ণ এবং বর্তমান সময়ের সাথে সম্পর্কিত হওয়া উচিত অন্যথায় আপনি ট্রেডিংয়ে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। বিশ্বাস আমাদের জীবনকে আবৃত করে। বিশ্বাস আমাদের মানসিক পরিবেশে বিশুদ্ধভাবে কাজ করে।

আমাদের অভিজ্ঞতা আমাদের অবচেতন মন থেকে জীবিত হয় এবং সেখান থেকেই ধীরে ধীরে আমাদের বিশ্বাস জন্ম নেয়। আমরা যা মনে রাখি না, তাও আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে।

মার্ক ডগলাস বলেছেন যে, আমাদের স্ব-মূল্যায়ন করতে হবে কারণ এটিও ট্রেডিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেডিং সম্পদ সঞ্চয় করার অনেক সুযোগ প্রদান করে। নেতিবাচক এবং ইতিবাচক চিন্তা চিহ্নিত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।সমাজ বিশ্বাস করে যে নির্দিষ্ট উপায় অর্থ উপার্জন করা ভুল। আপনি যদি আপনার বিবেক সম্পর্কে সচেতন হন তবে এই অনুভূতিগুলি আপনাকে বিরক্ত করবে না। আমাদের বিশ্বাস আমাদের ব্যবসায় এগিয়ে নিয়ে যায়। একটি শক্তি যা যেকোনো শক্তির বিরোধিতা করতে পারে। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারি।

ব্যবসায়ীর মতাদর্শ:-

মার্ক ডগলাস এই অধ্যায়ে ব্যবসায়ীর মতাদর্শ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন। ট্রেডিং সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন কাজ যেখানে ব্যবসায়ীরা ক্রমাগত সফল হওয়ার জন্য চেষ্টা করে। ট্রেড করা কঠিন কারণ আমরা জানিনা ট্রেড নেওয়ার পর কি হবে। লেখক ট্রেডিং ভালোভাবে বিকাশের তিনটি ধাপ ব্যাখ্যা করেছেন:- ১) যান্ত্রিক পর্যায়

২) ব্যক্তির আনুগত্য পর্যায়

৩) সহজ অবস্থা

যান্ত্রিক পর্যায়ে সীমাহীন পরিবেশে কাজ করার জন্য আমাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। আপস ছাড়া ট্রেড করতে শিখুন।আরো সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে আপনার মস্তিষ্ক ব্যবহার করুন।আপনার ট্রেডিং স্থিতিশীলতায় আত্মবিশ্বাস তৈরি করুন।

আনুগত্য পর্যায়ে আপনার ভুলগুলি সংশোধন করার জন্য স্ব-মূল্যায়ন করুন। আপনার সংবেদনশীলতার দায়িত্ব নিন।

সহজ অবস্থায় ব্যবসায়ীকে তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বানিজ্য করতে শিখতে হয়। এটা মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়ার মতো।

লেখক বলেছেন এই তিনটি পর্যায়ে আপনি ট্রেডিং পদ্ধতিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। প্রতিটি ভয় বেরিয়ে আসার আগে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে তা ভাববেন না। ভালো সময় সহ ট্রেডিংয়ে প্রবেশ করুন, সময়সীমা সেট করুন এবং আপনি যেটাতে লাভ দেখেন তা লক করুন, এটা একটি অনিশ্চিত ট্রেড। ঝুঁকির অনুপাত ৩:১ রাখুন। ভয় না পেয়ে ঝুঁকি গ্রহণ করুন। একজন ব্যবসায়ীর আবেগ বিকাশ করুন, সর্বদা ট্রেড জোনে ব্যবসা করুন।

সমাপ্ত

(উপরিউক্ত অংশটি MARK DOUGLAS -র লেখা "TRADING IN THE ZONE" -এর সারসংক্ষেপ। আপনি চাইলে পুরো বইটি পড়তে পারেন)।

ধন্যবাদ