3:30 AM, November 07, 2022
জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন আমরা অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায় এবং আমাদের মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন চলতে যে এই সমস্যা আমার জন্যই কেন আমার সাথে কেন এমনটা হল কেন এইরকম? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের শিখরে নয় আমাদের গভীরে যেতে হবে, একদম শিকড়ের গভীরে। যখন একটা বীজ রোপন করা হয় সেটা রাতারাতি কখনোই বেড়ে ওঠে না, সময় লাগে। সেইরকমই একটা অবস্থা কখনোই হঠাৎ করে আসে না সেটাও ধীরে ধীরেই তৈরি হয়। আমাদের মনে কোন কিছু জানার আগ্রহ প্রবল ভাবে থাকলে তখন আমরা সেটার উত্তর অবশ্যই পেয়ে থাকি সেই রকমই এই প্রশ্নের উত্তর আমি অনেক খোঁজার পরেই পেয়েছি। যদি তুমি পরীক্ষায় ফেল করো সেটা তোমার ভুল না , যদি কেউ তোমার মন ভাঙ্গে সেটাও তোমার ভুল না, যদি তুমি কারো মন ভাঙ্গো সেটাও না, যদি তুমি তোমার রাগ সামলে না রাখতে পারো সেটাও তোমার ভুল না। যদি তুমি তোমার ইমোশনস কন্ট্রোল করতে না জানো সেটাও তোমার ভুল না কোন কিছুই না। তাহলে এখানে এই প্রশ্নটা আসতেই পারে যে ভুল তাহলে কার আমার নয় তাহলে কার? ভুল পরিবেশের।
ভাবতো তুমি দুদিন আগেই জন্মেছো। তোমার কাছে চোখ আছে কিন্তু তুমি জানো না তুমি কি দেখবে, তোমার কান আছে কিন্তু তুমি জানো না তুমি কি শুনবে, তোমার মুখ ও আছে তুমি জানো না তুমি কি বলবে , মাথা ও আছে কিন্তু তুমি জানো না তুমি কি ভাববে। হ্যাঁ তোমার কাছে সবই আছে কিন্তু তুমি জানো না কোনটা কিভাবে ব্যবহার করবে । একটা শিশু হল কাদা মাটির মতো তাকে যেমন ভাবে গড়ে নেওয়া হয় সে সেই রকম ভাবেই তৈরি। কাদামাটির আসবাব যদি দেখতে সুন্দর না হয় তাহলে সেই দোষটা কার? যে গড়েছে তার। ঠিক সেরকমভাবে একটা বাচ্চা কিভাবে তৈরি হবে, কিভাবে বড় হবে, সেটা সে যে পরিবেশে বড় হচ্ছে, যে মানুষটাকে বড় করছে আর যারা তার পরিবেশের আশে পাশে থাকছে তাদের উপর নির্ভর করে। একটা বাচ্চা হল স্পঞ্জ এর মত সে যা দেখে তাই শিখে, তাই শুষে নেয়। সে যদি দেখে কারো উপর চিৎকার করা হচ্ছে সে জানবে সেটাই ঠিক। যদি সে টিভি দেখতে দেখতে খেতে দেখে জানবে সেটাই ঠিক ,যা দেখবে সেটাই শিখবে যা শুনবে যা বুঝবে সেটাই মেনে নেবে।
এটা তোমার ভুল নয় নাকি এটাই তোমার ভুল? কোনটা ঠিক? আমাদের যা কিছু ঘটে জীবনে আমরা কি কোন ভাবেই সেটার জন্য নিজেরা দায়ী হইনা? অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া খুবই সোজা কিন্তু ক'জন পারে নিজের ভুল মেনে নিতে? আচ্ছা একটা উদাহরণ দিই , আমি হয়তো আপেল খেতে পছন্দ করি না তাই আমি আপেল খেতে চাইছি না । আমার মাথার মধ্যে সারাক্ষণ কি চলতে থাকবে "আমি আপেল খাব না ,খাব না"। সেরকমই যদি কোন মানুষের আমাদের বাড়িতে আসা আমরা পছন্দ না করে থাকি বা কোন জিনিস আমার জীবনে ঘটুক সেটা আমরা না চেয়ে থাকি আমরা সব সময় এটাই ভাবতে থাকি সেটা যেন না হয় সেটা জানো না হয়। আমরা সেটা না চেয়েও সেটার উপরেই বেশি জোর দিচ্ছে সেটাই আমাদের মনের মধ্যে চলতে থাকে। আর এভাবেই যেটা চাই সেটা না ভেবে , যেটা চাই না সেটাই ভাবতে থাকি আর সেটাই ঘটে ।
এটা কখনো ভেবে দেখেছি কি আমাদের মধ্যে একটা অভ্যাস কিভাবে গড়ে ওঠে? দৈনন্দিন জীবনে আমরা ঘুম থেকে উঠে এবং রাত্রে ঘুমাতে যাবার আগে অবধি সারাদিনের যা যা গৃহকর্মের কাজ করে থাকি সেগুলিকে আদৌ আমাদের ভেবে করতে হয়?না , হয় না । কারন সেগুলির সঙ্গে আমরা জ্ঞান হওয়া থেকে অভ্যস্ত। কিন্তু আমরা জ্ঞানত অবস্থায় এমন কিছু বলে ফেলি বা করে ফেলি যেগুলো আমরা বুঝেই উঠতে পারি না যে সেগুলি আমরা বলছি বা করছি। ঠিক যেমন আমরা যদি কথায় কথায় বাজে ভাষা প্রয়োগ করি তাহলে না চাইতেও আমরা সেগুলি যেকোনো মুহূর্তে বলে ফেলি । তাই অভ্যাস এমন করা উচিত যেগুলো আমাদের কোনোরকম খারাপ প্রতিচ্ছবি না তৈরি করে ।
আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক উপদেশ মেনে চলার কথা ভাবি , যেমন সত্য কথা বলা , ইতিবাচক মনোভাব রাখা, নিজের ব্যবহার ঠিক রাখা ইত্যাদি । কিন্তু আদেও কি এগুলো আমরা মেনে চলতে পারি ? না, কারণ এগুলো আমাদের সাথে পরিচিত শব্দ না ।
আমাদের মস্তিষ্ক অনেকটা হিমশৈলের মত । যেটুকু অংশ জলের ওপর থাকে সেটুকু অংশ পরিমাণ আমরা নিজের মস্তিষ্ককে চালনা করতে পারি । বাকি যে অংশ আমরা দেখতে পায়না সেই পরিমাণ অংশ আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের চালনা করে । তাহলে বোঝাই যাচ্ছে প্রায় ৯৫% কাজ আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের দিয়ে করায় আর বাকি ৫% আমরা জ্ঞানত অবস্থায় করি । একটি প্রিন্টার যেমন প্রিন্ট করবার সময় আমাদের সচেতন করে না যে আদেও আমরা ঠিক প্রিন্ট করছি কি ভুল ঠিক তেমনি একটি মানুষ এর জন্য ব্যবহার করা শব্দ তার জীবনে তেমনি প্রভাব ফেলে। তাই কিছু বলার আগে অবশ্যই শব্দচয়ন করা উচিত ।
একটি সাধারণ মানুষের মাথা সারাদিনে ৬০ হাজার তথ্য গ্রহণ করতে পারে । কিন্তু যদি আমাদের জিজ্ঞেস করা হয় যে আজ সারাদিনের কি কি ঘটনা আমাদের মনে আছে । আমরা হয়তো ৫% ও বলতে পারবো না । কারণ ৯৫% মস্তিষ্কের গভীরে চলে গিয়ে থাকে আর বাকি আমরা গুরুত্ব দেই না। আমরা যদি গুরুত্ব দিয়ে মনে রাখার চেষ্টা করি তাহলে দৈনন্দিন জীবনের অনেকটা তথ্যই আমরা মনে রাখতে পারবো ।
বাচ্চাদের মস্তিষ্ক একটা খালি কাগজ এর মত । তাতে যা লেখা হবে সেটাই থেকে যাবে । তাদের subconscious mind সেটাই মেনে নিয়ে বড় হবে । এবং যদি তারা ভুল কিছু দেখে বা শেখে সেটা বদলানো খুব ই অসুবিধা হয়ে যায়। ছোট থেকে যে সব রীতি নীতি আমরা শিখে আসি সেগুলি যদি ত্যাগ করতে বলা হয় তাহলে কি পারবো কি না ? যদি উত্তর না হয় , তাহলে কেন নয় ? যে রীতি আমরা এক ভাবে শিখি অন্যেরা হয়তো অন্য ভাবে শেখে । সেক্ষেত্রে শেখার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই । আর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে তোমাকে স্বাগতম , জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে।
জীবনে নতুন কিছু করতে গেলে বা শিখতে গেলে সব চেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে "জ্ঞান" , "শিক্ষা" । তুমি তোমার জীবনের চালক । যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান থাকলে তোমার জীবন তুমি নিজেই চালনা করতে পারবে । অন্য কেউ সেটিকে নিজের আয়ত্বে আনতে পারবে না । তুমি জানবে কোনটি তোমার জন্য ঠিক আর কোনটি নয় ।
"কুসংস্কার" অতি পরিচিত একটি শব্দ । জ্ঞান হওয়া অব্দি আমরা এমন কিছু কিছু অভ্যাস বা বলা ভালো বদভ্যাস এর বসবর্তি হয়ে যায় যে সেগুলি থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে । যেমন - শনিবার হলেই আমার সাথে কিছু খারাপ হবে , কিংবা বিড়াল রাস্তা কাটলেই আমার কাজে বাধা , অথবা কোনো কথা "touch wood" করে না বললে সেটা ফলবে না। এসব জিনিস আমাদের জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা ছাড়া আর কিছুই না । এগুলো অতিক্রম করতে পারলেই অনেকটা সমস্যা আমরা পার করে ফেলতে পারবো ।
ভালোবাসো , নিজেকে ভালোবাসো । কেউ এসে তোমার নিয়ে দু - চার কথা বলে দিলে তোমার কেনো খারাপ লাগে জানো? তারা দু - চার কথা বলার সাহস কথা থেকে পায় জানো? কারণ তুমি নিজেই নিজেকে ভালোবাসো না । নিজে নিজেকে ভালোবাসতে না পারলে অন্যের থেকে সেটা কিভাবে আসা করো ? "নিজেকে নিয়ে আর কি প্রশংসা করবো" এই কথা অনেকেই বলি । কেনো বলি , কারণ আমরা চাই অন্যেরা আমাদের নিয়ে প্রশংসা করুক , ভালো বলুক । অন্যের বলার আগে নিজে নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন ।
ভাবনার খুব শক্তিশালী । তার চেয়েও শক্তিশালী হলো শব্দ। জীবনে কিছু ফর্মুলা অবশ্যই মেনে চলা উচিত । আমাদের ভাবনা + অনুভূতি + কর্ম = ফলাফল । এইভাবে আমরা একটি সাধারণ ফলাফল পেতে পারি । কিন্তু এটাকে আরও ভালোভাবে আমরা কার্যকরী করতে পারি এর সাথে বিচার বিবেচনা জুড়ে দিলে । যখন একটি কাজ আমরা বিচার বিবেচনা+ ভাবনা + অনুভূতি + কর্ম = ফলাফল , এই হিসেবে করবো তখন সেটি সফল ভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব ।
এতক্ষনে আশা করি বুঝতে পারছি , শব্দ , ইতিবাচক মনোভাব , কম কথা বলা , ভাবনা , নিজের জীবন গড়ে তোলা কেনো এবং কিভাবে দরকার । এখন আমরা সক্ষম আমাদের subconscious mind কে আবার ঠিক করে চালনা করতে । ঠিক করে এই কারণেই যে ছোট থেকে যে বিষয় গুলো বসে আছে সেগুলো ঝেড়ে ফেলে নতুন করে ভাবনা গড়ার সময় এসে গেছে । প্রথমেই আমাদের দরকার "মনোভাব " মনোভাব স্থির এবং দৃড় না হলে কোনো কাজ করা সম্ভব না । আর দরকার চেষ্টা । মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে আমাদের চেষ্টা করে আনতে হবে কল্পনা , এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর , নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার । এখনো খুব দেরি হয়ে যায়নি। আজ এই মুহূর্ত থেকে শুরু হোক জীবনের যা কিছু ভুল শুধরে নিয়ে নতুন রূপে নিজেকে তুলে ধরার ।
অবশেষে এই কথা বলার "সিদ্ধান্ত তোমার " । জীবনে আমরা যে অবস্থায় থাকি না কেনো তার জন্য দায়ী আমরা নিজেরাই । সেটা ভালো হোক কিংবা খারাপ । একটা কথা অবশ্যই মনে রাখার , প্রতিটা সমস্যার সমাধান থাকে । আমরা সেটা খুঁজে নিতে অলসতা বোধ করি । যেদিন নিজেরাই নিজের সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে সক্ষম হবো সেদিন আর কোনো সমস্যাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না ।
Affirmations:-
১ :আমি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী , এবং আমার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন ।
২ :নতুন অভ্যাস তৈরির ক্ষেত্রে আমার নিজের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে ।
৩ : আমি একজন পজিটিভ ব্যক্তিত্ব এবং সকলেই আমার সংস্পর্শে থাকতে ভালোবাসে।
৪ : আমি বিশ্বাস করি ব্রহ্মাণ্ড আমার জন্য উপযুক্ত সঙ্গী রেখেছে।
৫ : আমি আমার জীবনের সকল ক্ষেত্রে সফল
৬ : আমি সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার করতে যথেষ্ট দক্ষ
৭ : আমি একজন যার দিকে সম্পদ আকর্ষিত হয়
৮ : টাকা আমার দিকে সহজেই আকর্ষিত হয়
৯ : আমি আমার জীবনে শর্তহীন ভালোবাসা অনুভব করি
১০ : এখন আমি আমার জীবনে উচ্চতম সফলতা ও শান্তির জন্য, স্বজ্ঞানে আমার অবচেতন মনকে নতুন করে রচনা করআর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
4:00 AM, September 01, 2022