THE RICHEST MAN IN BABYLON

…GEORGE S . CLASON

ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টালেই বোঝা যায়, ব্যাবিলনের থেকে উজ্জ্বল শহর আর চোখে পড়ে না। তার নাম শুনেই এর সম্পত্তি, ঐশ্বর্যের ভান্ডার সম্পর্কে একটা ধারণা করা যায়। সোনা ও রত্নের ভান্ডার ছিল এই শহর। এমন উজ্জ্বল শহরের ছবি দেখলে সাধারণত আমাদের মনে হতে পারে কোনো বিলাস বহুল ক্ষেত্রেই এই শহরের অবস্থান, চারিদিকে জঙ্গলে ঘেরা এই শহর খনিজ পদার্থের ভান্ডার বলেও মনে হতে পারে, কিন্তু এমনটা সত্যি নয়। ইউফ্রেটিস নদীর ধারে একটা সমতল ও বন্ধ্যা ভূমি ছিল। সেখানে কোনো জঙ্গল ছিল না, ছিল না কোনো খাদ্য, ইমারত বানানোর জন্য না ছিল কোনো পাথর। এর আশেপাশে কোনো উন্নত বাণিজ্যিক ঘাঁটিও ছিল না। ফসল ফলানোর জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টি পর্যন্ত হতো না সেখানে।

সামান্যতম উপায় থাকলেও মানুষ নিজের চেষ্টায় কতটা উন্নতি করতে পারে ব্যাবিলনের মানুষ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এই শহরের সমস্ত উপকরণ মানুষ নিজের হাতে গড়ে তুলেছিল।

ব্যাবিলনের মানুষের কাছে প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে ছিল শুধু বন্ধ্যা জমি আর নদীর জল। সেই সময়তেও সেখানকার ইঞ্জিনিয়াররা দেখিয়ে দিয়েছিল যে তারা কতটা পারদর্শী। তারা নদীর গতিপথে বাঁধ রচনা করে, খাল কেটে সেই জল ভেতরে ঢুকিয়ে নদীর গতিপথ বদলে দিয়েছিল। ফলে খালের জল বন্ধ্যা জমির মধ্যে ঢুকতে শুরু করে এবং বৃদ্ধি পায় জমির উর্বরতা শক্তি। পৃথিবীর ইতিহাসে ইঞ্জিনিয়ারদের সর্বপ্রথম কয়েকটা সফলতার মধ্যে এটিকে অন্যতম বলে মনে করা হয়।

সৌভাগ্যবশত, ব্যাবিলনের মাটিতে এমন কিছু রাজা রাজত্ব করেছিলেন, যাঁরা কোনোদিন যুদ্ধ বা লুঠ করার মত বিষয়গুলিকে প্রশ্রয় দেননি। তা বলে তাঁরা কোনোদিন যুদ্ধ করেননি এমনটা নয়, তাঁরাও বহু যুদ্ধ করেছিলেন। সেই সময় ব্যাবিলনের সভ্যতার কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর বহু রাজা ধন-সম্পত্তির আকর্ষণে সেই ভূমিকে আক্রমণ করে, যার ফলে নিজেদের সম্পত্তি বাঁচানোর জন্য তাঁদের যুদ্ধ করতে হয়। তাঁরা নিজেদের বুদ্ধি, পৌরুষ এবং ন্যায়পরায়নতার জন্য ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে আছেন। তবে ব্যাবিলনের মাটিতে এমন কোনো লোভী রাজা জন্মাননি, যিনি কিনা নিজের দেশের মানুষের কাছে নিজের বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য অহংকারের বশবর্তী হয়ে অন্যের দেশ আক্রমণ করেছেন বা সেই রাজ্য অধিকার করার চেষ্টা করেছেন।

এখন আর শহর হিসেবে ব্যাবিলনকে খুঁজে পাওয়া যায় না। যে মানুষরা তাদের শক্তি এবং বুদ্ধির জোরে এই সভ্যতা গড়ে তুলেছিল, তারা যাওয়ার পর এই সভ্যতা পুনরায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এখন পৃথিবীর ম্যাপ এর দিকে তাকালে আপনারা বুঝতে পারবেন, বর্তমানে এই শহর এশিয়াতে সুয়েজ খাল থেকে ৬০০ মাইল দূরে পূর্বতে পার্শিয়ান উপত্যকার উত্তরে অবস্থিত।

কোনো এক সময় ইউফ্রেটিস উপত্যকা, সবুজে ভরা জনবহুল অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল, আজ সেই ক্ষেত্র পুনরায় বন্ধ্যা জমিতে পরিণত হয়েছে। এখন আর উর্বর জমির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না, বিরাট শহর কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে, সেখানকার ধন-সম্পত্তি কোথায় যেন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখানে কী পাওয়া যেতে পারে তা জানার ইচ্ছায় সেখানকার মাটি খুঁড়ে দেখেন। সেখানে যা যা পাওয়া যায় তা দেখে প্রত্নতত্ত্ববিদরা বুঝতে পারেন, সেই পাহাড়ের তলায় চাপা পড়ে আছে প্রাচীন শহর। একে শহরের কবর বলতে পারেন।

শহরটি ছিল ব্যাবিলন। কুড়িটা শতাব্দি ধরে এই শহরের উপর চলেছে মরুভূমির ধুলোর ঝড়। সমৃদ্ধির শহর এখন ধুলোর শহরে পরিণত হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে মানুষ এর নাম পর্যন্ত জানতো না। প্রত্নতত্ত্ববিদদের চেষ্টায় মাটি খুঁড়ে প্রাচীন মন্দির, রাস্তাঘাট ও শহরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার পর মানুষ সেই সভ্যতার কথা জানতে পারে, দৃষ্টি পড়ে সেই শহরের দিকে।

বেশ কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, এই উপত্যকায় গড়ে ওঠা ব্যাবিলনসহ অন্যান্য শহর গুলি পৃথিবীর সর্বাধিক প্রাচীন সভ্যতা, যা প্রায় ৮০০০ সাল প্রাচীন বলে মনে করা হচ্ছে। ৮০০০ বছর পূর্বে যারা ব্যাবিলনে বাস করতেন তারা ছিলেন সুশিক্ষিত এবং সুবুদ্ধি সম্পন্ন।

হেরোডেটাস ছিলেন একজন গ্রিক ঐতিহাসিক ও পর্যটক‌। তিনি ব্যাবিলনে গিয়েছিলেন, বাইরের মানুষ বলতে একমাত্র তিনি সেখানে বাস করতেন। তাঁর লেখার থেকে সেখানকার শহরের বিস্তৃত বিবরণ জানা যায়, সেখানকার ঐতিহ্য সম্পর্কেও জানতে পারি আমরা। তিনি সেখানকার জমির উর্বরতা, সেখানে উৎপন্ন গম এবং অন্যান্য ফসলের কথাও জানিয়েছেন তাঁর বর্ণনায়।

আজ আর ব্যাবিলনের সেই ঐশ্বর্য নেই ঠিকই কিন্তু সেখানকার জ্ঞান আজও আমাদের কাছে সুরক্ষিতভাবেই আছে। এর জন্য তাঁর দেওয়া তথ্যগুলি আমাদের কাছে মহামূল্যবান বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি ভেজা মাটির টালির ওপর সমস্ত তথ্য লিখে গিয়েছেন এবং সেগুলি যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তার জন্য আগুনে পুড়িয়ে সেই টালিগুলিকে শক্তপোক্ত করে তোলা হয়েছিল। এই টালিগুলি মাটির ট্যাবলেট নামেই পরিচিত। এই মাটির ট্যাবলেট গুলো থেকে আমরা সেই সময়কার মানুষদের সম্পর্কে অনেক গভীরভাবে জানতে পেরেছি।

যেই মানুষটি সোনা চেয়েছিল:-

একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন সভ্যতার মতো ধন-সম্পদ ও মহিমা থাকা সত্ত্বেও, ব্যাবিলন ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত একটি দেশ। যেখানে একদিকে প্রচুর সম্পদের লোক ছিল, সেখানে বানসিরের মতো লোকও ছিল। বানসির, একজন রথ নির্মাতা, যে সারাদিন পরিশ্রম করে প্রতিদিনের খাবার জোগাড়ের জন্য এবং যা উপার্জন করে তা দিয়েই বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। বানসিরের শৈশবকালের এক বন্ধু ছিলেন কোব্বি, যিনি ছিলেন একজন সঙ্গীত শিল্পী। তিনি শালীন উপায়ের মানুষও ছিলেন এবং তার লায়ারের স্ট্রিং বাজিয়ে জীবিকা অর্জন করতেন। গ্রীষ্মের এক বিকেলে উভয় বন্ধুই উঠোনে বসে দাসদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, যারা উতরাই থেকে ছাগলের চামড়ায় জল আনছিল, তাদের পিঠে ভারী বোঝা নিয়ে রাজার ঝুলন্ত বাগানে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা ভাবতেন যে, তারা এই ক্রীতদাসদের থেকে আলাদা ছিলেন কিনা। উভয় বন্ধুই ক্রীতদাসদের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়েছিলেন যে, কেন তাদেরকে আর্থিক দুর্দশার শৃঙ্খলিত জীবন যাপন করতে হবে। তারা ভাবছিলেন যে এমন কোনো গোপনীয়তা আছে যা ধনী লোকেরা জানেন এবং তারা তাদের জীবনকে উন্নত করার জন্য এটি শিখতে চায়। উভয় বন্ধু, বানসির এবং কোব্বি, একসাথে সম্পদের গোপনীয়তা খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাদেরই এক পুরনো বন্ধু, অরকদের কাছে পরামর্শ নেওয়ার কথা ভাবেন, যিনি ছিলেন ব্যাবিলনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।

ব্যাবিলনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি:-

প্রাচীন ব্যাবিলনে এক ধনী ব্যক্তি বাস করতেন, তাঁর নাম ছিল অরকদ। তিনি তাঁর ধন-সম্পত্তির জন্য চারিদিকে খুবই বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। সেই সাথে তিনি তাঁর উদারতার জন্যও জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সংস্থাকে মন ভরে দান করতেন। নিজের পরিবারের বিষয়েও তিনি ছিলেন খুবই উদার। খরচের ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই উদার অর্থাৎ হাত খুলে খরচ করতেন। কিন্তু এত খরচ করার পরও প্রতিবছর তার সম্পত্তি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেত।

তার কিছু পুরোনো বন্ধু তার কাছে এসে বলেন,"অরকদ, তুমি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান। এখন তুমি ব্যাবিলনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি আর আমরা নিজেদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ করে চলেছি। তুমি সবচেয়ে ভালো পোশাক পড়তে পারো, এমন খাবার খেতে পারো, যা আমরা কখনো চোখেই দেখিনি। অথচ আমরা পরিবারের লোকদের সাধারণ পোশাক দেই পড়ার জন্য, যা জোটে তাই খেতে হয়, এর মধ্যেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়।"

"কিন্তু কোনো একটা সময় আমরা সমান ছিলাম। আমরা একই শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেছি। পড়াশোনা বা খেলাধুলায় তুমি যে আমাদের থেকে অনেক ভালো ছেলে, এমনটাও না। তখন তুমি আমাদের থেকে অনেক সম্মানজনক নাগরিক ছিলে, এমনটাও নয়। যতদূর জানি, তুমি যে আমাদের থেকে বেশি পরিশ্রম করেছ, এমনটাও কখনো হয়নি। তাহলে এমন কী হলো, কোন সৌভাগ্যের জোরে তুমি সব পেয়ে গেলে? আর আমাদের দিকে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখল না।"

তখন অরকদ একটু ধমকের সুরে বলেন,"যৌবন থেকে এখনো পর্যন্ত তোমরা ডাল রুটি খেয়ে দিন কাটাচ্ছো, কারণ কীভাবে অর্থ রোজগার করতে হয় তোমরা এখনো পর্যন্ত সেই নিয়ম জানতে পারোনি, শিখতেও পারোনি। কীভাবে সম্পত্তি করতে হয় সেই নিয়ম আয়ত্ত করতে পারোনি।"

"সৌভাগ্য এমন এক দেবী, যিনি কোনোদিন কারোর কাছে অচল থাকেন না। সর্বদা কোনো একজনের ভালো করে চলেছেন, এমনটা কখনোই হয় না। অন্যদিকে যাদের কপালে পরিশ্রম ছাড়াই সোনার বৃষ্টি হয়, তিনি তাদের ধ্বংস করতেও পিছপা হন না। যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে জানেনা, তাদের খরচের পরিমাণ এতটাই বাড়িয়ে দেন যে, তারা কোনো চিন্তা-ভাবনা না করেই খরচ করতে থাকে, তাদের ভেতরে এমন ইচ্ছা জন্ম দেন, যা তারা চেষ্টা করলেও পূরণ করতে পারে না। কিন্তু অন্যদের ওপর তিনি কৃপা দেখান, ফলে তারা কৃপণ হয়ে যায় এবং নিজেদের সম্পত্তি সঞ্চিত করতে থাকে, খরচের নামেই ভয় পায় তারা, কারণ তারা ভাবে যদি আবার রোজগার করতে না পারে। তাদের মনে চুরি ডাকাতির ভয় থেকে যায়, তারা নিজেদেরকে দুঃখ ও একাকিত্বের মধ্যে ঠেলে দেয়।"

এমন অনেক মানুষ আছে যাদের সোনা উপার্জন করতে হয় না, তারা আপনার থেকেই পেয়ে যায়, তা তাদের সম্পত্তির সাথে যুক্ত হয়ে তাদের আরো সমৃদ্ধশালী করে তোলে। সারা জীবন আনন্দ ও সন্তুষ্টির মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেয় তারা।

তার বন্ধুদের প্রশ্ন ছিল তিনি কীভাবে এত সম্পত্তির মালিক হলেন, তখন তিনি বলেন, যখন তিনি যুবক ছিলেন, নিজেকে দেখেন এবং কোন জিনিসগুলো তাকে আনন্দ দিতে পারে সেই দিকে নজর দেন। যে জিনিসগুলি তাকে আনন্দ ও সন্তুষ্টি দিতে পারতো, সেই জিনিসগুলির শক্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। আসলে অর্থ হলো একটা শক্তি, অর্থের দ্বারা অনেক কিছু পাওয়া বা করা সম্ভব। মানুষ নিজের ঘর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস দিয়ে সাজাতে পারে; মানুষ ইচ্ছা করলে সমুদ্র যাত্রা করতে পারে; স্বর্ণকাটার সোনা ও পাথরের উপর পালিশ করে যে গয়নাগুলি বানায়, মানুষ ইচ্ছা করলেই সেগুলি পড়তে পারে; মানুষ ভগবানের জন্য বড় বড় মন্দির তৈরি করতে পারে; মানুষ দূর দেশের খাদ্যের আনন্দ উপভোগ করতে পারে; যার সাহায্যে ইন্দ্রিয়ের সুখ লাভ করা যায়, যার থেকে আত্মা সন্তুষ্টি লাভ করে, মানুষ এমন সমস্ত কাজ করতে সক্ষম। যখন তিনি এই বিষয়গুলি অনুভব করেন, তখন ঠিক করেন, পৃথিবীতে ভালো বলতে যা কিছু আছে সবকিছু তিনি উপভোগ করবেন। যারা দূর থেকে শুধু চোখ দিয়ে বিভিন্ন রকম জিনিস দেখেন, আর অন্যরা উপভোগ করছে দেখে যাদের মনে হিংসার জন্ম হয়, এমন মানুষ তিনি হতে চাননি। তিনিও একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যার কোনো উত্তরাধিকার ছিল না। তিনিও প্রতিদিনের রুটি রোজগারের জন্য বছরের পর বছর মজুরি উপার্জনকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং তার সীমিত উপায়ে জীবন যাপন করতেন। একবার তার একজন ক্লায়েন্ট, আলগামিস তাকে রাতারাতি সম্পন্ন করার জন্য একটি কাজ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যদি সময়ের মধ্যে কাজটা সম্পন্ন হয় তাহলে উনি দুটো তামার পয়সা দেবেন। কিন্তু তিনি সময় মতো তা করে উঠতে পারেননি। তার আর্থিক হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মরিয়া হয়ে তিনি আলগামিসের বুদ্ধি চান কীভাবে তিনিও ধনী হতে পারেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে তাকে সম্পদের গোপনীয়তা দেওয়া হলে তিনি রাতারাতি কাজ করবেন। অরকদ প্রকল্পটি শেষ করার জন্য সারারাত কাজ করেন এবং অবশেষে যখন ভোরবেলায় আলগামিস আসেন তখন তিনি অরকদের কাজ দেখে মুগ্ধ হন এবং তাকে তার সম্পদের গোপন কথা বলেন যা ছিল,---"আপনি যা উপার্জন করেন তার একটি অংশ আপনার জন্য রাখুন", যার অর্থ ছিল– আপনি যা উপার্জন করেন তা থেকে প্রথমে নিজেকে পরিশোধ করুন –কমপক্ষে 10 শতাংশ। অরকদকে এই পরামর্শ দিয়ে তিনি চলে যান।

আলগামিস এক বছর পর অরকদের কাছে ফিরে আসেন। অরকদ চিৎকার করে বলেছিলেন যে তিনি ঠিক পরামর্শ মত কাজ করেছেন এবং প্রতি মাসে তিনি যা উপার্জন করেছেন তার 10 শতাংশ সঞ্চয় করেছেন। আলগামিস জিজ্ঞাসা করেন যে, তিনি এই অর্থ দিয়ে আলাদা করে কী করেছেন। যার জন্য অরকদ বলেছিলেন যে, তিনি ইঁট প্রস্তুতকারকে একটি পুরো বছরের সঞ্চয় দিয়েছেন যিনি তাকে ব্যাবিলনে বিক্রি করার জন্য বিদেশি জমি থেকে মূল্যবান ভান্ডার দেবেন এবং তারা উভয়ই লাভ থেকে উপকৃত হবেন। আলগামিস বলেন যে এটি করে অরকদ সম্পদের গাছটি উপড়ে ফেলেছে যেটি সে সবে রোপন করেছিল। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে, একজনের তাদের থেকেই পরামর্শ নেওয়া উচিত যারা তাদের নিজে নিজের কারুশিল্পে সক্ষম–মূল্যবান পাথর সম্পর্কে একজন ইট প্রস্তুতকারক কী জানবে।

অরকদ শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং আবার এক বছরের জন্য চেষ্টা করেন এবং কিছু অর্থ সঞ্চয় করেন, এবং এবার তিনি তা শিল্ড প্রস্তুতকারীকে দেন যিনি তামা কেনার জন্য তার কাছ থেকে টাকা ধার করেন এবং প্রতি তিন মাস অন্তর থাকে সুদ দেন। আলগামিস অরকদকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি এই সুদের আয় দিয়ে কী করেছেন এবং অরকদ বলেছিলেন যে তিনি অর্থটি ভালো পোশাক এবং খাবার কেনার জন্য ব্যবহার করেছেন এবং তা তার ইচ্ছার জন্য ব্যয় করেছেন। আলগামিস তাকে আবার পরামর্শ দিয়েছিলেন যে সে তার সঞ্চয়ের বীজগুলিকে আরো বড় হওয়ার আগেই মেরে ফেলেছে। তিনি বলেছিলেন যে তাকে প্রথমে তার আয়ের পর্যাপ্ত বীজ তৈরি করতে হবে এবং সেগুলোর একটি সেনাবাহিনী তৈরি করতে হবে এবং তারপরেই তিনি সর্বোত্তম ভোজসভায় আহার করার পরেও তাকে আয়ের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না। অরকদ এই পরামর্শ গ্রহণ করেন।

অরকদ তার আয় বৃদ্ধি করতে থাকেন। কয়েক বছর পরে আলগামিস তার কাছে আসেন এবং প্রস্তাব দেন যে তিনি যদি তার সম্পত্তির অংশীদার হিসেবে তাকে যোগ দিতে খুশি হন। অরকদ তার প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং তার সম্পত্তি বৃদ্ধি করেন এবং আলগামিসের মৃত্যুর পর আলগামিসের সম্পদ ও সম্পত্তির একটি অংশের আইনী উত্তরাধিকারী হন।

শূন্য মানিব্যাগের সাতটি চিকিৎসা:-

‌ অরকদকে ব্যাবিলনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে তার সম্প্রদায়ের মধ্যে ভালোভাবে সম্মান করা হয়েছিল, তাই একবার রাজা তাকে তার সহদেশিদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান যে, কীভাবে সম্পদ সংগ্রহ করা যায় এবং তাদের বর্তমান উপায়ের বাইরে একটি জীবনের স্বপ্ন দেখার সাহস করা যায়। অরকদ বিনীতভাবে সম্মত হন এবং বিভিন্ন পেশা ও কারুশিল্পের ১০০ জন দেশবাসীকে ডাকা হয়। তাদের সাত দিনের জন্য অরকদের সাথে দেখা করতে হয় এবং এর ফলে প্রতিদিন সম্পদ সম্পর্কে একটি মূল্যবান পাঠ শিখতে হয়।

এই সাত দিনে অরকদ ১০০ জন পুরুষের সাথে নিজের ব্যক্তিগত জীবনগঠন এবং সম্পদ তৈরি সম্পর্কে বেশ কিছু উপাখ্যান নিম্নলিখিত সাতটি উপায়ে প্রকাশ করেছেন:-

১) সর্বদা প্রথমে নিজেকে অর্ধ প্রদান করতে শুরু করুন অর্থাৎ আপনি যা উপার্জন করেন তার অন্তত দশ শতাংশ। অন্য কথায়, আপনার উপায় এর মধ্যে বাস করুন এবং আপনি যা তৈরি করেন তার ৯০% বা তার কম ব্যয় করুন।

২) আপনার ইচ্ছা এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। আপনি যদি বিচক্ষণতার সাথে ব্যায় করেন তবে আপনি আপনার ধারণার চেয়ে বেশি সঞ্চয় করতে পারবেন।

৩) বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনার সঞ্চয়কে বহুগুণ করতে শিখুন। লাভের পরিমাণকে পুনরায় বিনিয়োগ করুন এবং চক্রবৃদ্ধি ফল ভোগ করুন। আপনার ভাগ্য দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

৪) আপনার মূলধন রক্ষা এবং সংরক্ষণ করুন। শুধুমাত্র তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন যারা উপদেশ দেওয়ার যোগ্য এবং বিনিয়োগে প্রলুব্ধ হবেন না, যা আপনি বোঝেন না।

৫) আপনার ভাড়া কে মালিকানায় রূপান্তরিত করুন, যা আপনার পরিবারকে মালিকানাধীন বাড়ির শারীরবৃত্তীয় আনন্দ দেয় এবং আপনার মাথার উপর ছাদ এবং নিজের সম্পত্তির মালিক হওয়ার আরাম।

৬) আয়ের একটি সেকেন্ডারি উৎস তৈরি করুন, যা আপনি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় বা ছুটিতে থাকা অবস্থায় বা মারা গেলেও আপনার সেবা করবে।

৭) শিখুন এবং আরো দক্ষতা অর্জন করুন। আপনার ক্ষেত্রে আরো ভালো হয়ে উঠুন এবং আপনার জ্ঞান এবং দক্ষতার ভিত্তিতে উচ্চতর আয় করুন।

যারা এই অধিগ্রহণের সহজ নিয়ম গুলি বোঝেন তাদের জন্য অর্থ প্রচুর।

১. আপনার পার্স মোটা তাজা করতে শুরু করুন।

২. আপনার ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করুন।

৩. আপনার স্বর্ণকে বহুগুণ করুন।

৪. ক্ষতি থেকে আপনার ধন-সম্পদ রক্ষা করুন‌।

৫. আপনার বাসস্থানে একটি লাভজনক বিনিয়োগ করুন।

৬. একটি ভবিষ্যৎ আয়বিমা করুন।

৭. আপনার উপার্জন করার ক্ষমতা বাড়ান।

সৌভাগ্যের দেবী:-

বানসির, কোব্বি এবং অন্যান্য বন্ধুরা অরকদের গল্প শোনেন এবং বলেন যে তিনি আলগামিসের সম্পদ এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে ভাগ্যবান হয়েছেন। কিন্তু অরকদ বলেন, এখানে কেবল ভাগ্যের কারণ ছিল না। এই সৌভাগ্যের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য তিনি প্রথমে ধৈর্য ধরে বছরের পর বছর তার উপার্জনের ১০% নিজের জন্য আলাদা করে রেখেছিলেন, এমনকি পথে মূল্যবান আর্থিক পাঠ শেখার জন্য পুরো বছরের সঞ্চয় হারাতেও হয়েছিল। এই সব কিছুই আলগামিসকে বিশ্বাস করিয়েছিল যে অরকদ তার আস্থা এবং অংশীদারিত্বের যোগ্য ছিল এবং তাই ভাগ্য অরকদের পক্ষে পরিণত হয়েছিল। তিনি কেবল দুর্ঘটনাক্রমে ভাগ্যবান হননি, তবে ভাগ্যবান হওয়ার জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন।

অরকদ গ্রুপকে ব্যাখ্যা করতে থাকেন, ভাগ্য সম্পর্কে তার মতামত এবং কীভাবে সৌভাগ্যের দেবীকে তাদের জীবনে আমন্ত্রণ জানানো যায়। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, ভাগ্য জুয়ার টেবিল বা রেসিং ট্র্যাক এর প্রস্তাব নয় যেখানে পুরুষরা বিশাল ভাগ্য তৈরি করে। ভাগ্য এমন পুরুষদেরকেই দেওয়া হয় যারা একটি মহৎ সুযোগের সাথে উপস্থাপিত হলে কীভাবে কাজ করতে হয় তা জানেন। তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন যে "সৌভাগ্যের দেবী" বিলম্বকারীদের পছন্দ করেন না এবং সেই জন্য যে পুরুষরা সুযোগ পেলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন তারা খুব কাছাকাছি এসেও সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হন।

স্বর্ণের পাঁচটি আইন:-

বইটি নোমাসিরের গল্পের সাথে চলতে থাকে, যিনি ছিলেন অরকদের পুত্র এবং যাকে তার আইনী উত্তরাধিকার হিসেবে অরকদের সমস্ত ভাগ্য হস্তান্তর করার কথা ছিল। যাই হোক, অরকদ নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে নোমাসির এই দায়িত্বটি সামলাতে এবং তার ভাগ্যের যত্ন নিতে সক্ষম হবে কিনা। তাই তিনি নোমাসির কে দুটি মূল্যবান উপহার দেন–স্বর্ণের একটি ব্যাগ এবং একটি মাটির ট্যাবলেট যার মধ্যে "স্বর্ণের পাঁচটি আইন" খোদাই করা ছিল এবং তাকে একটি বিদেশি ভূমিতে নিজের সত্ত্বা খুঁজে বের করার জন্য যাত্রা করতে বলেন। যদি নোমাসির একজন মহীয়সী ব্যক্তি হিসাবে ফিরে আসতে সক্ষম হন এবং তার ভাগ্যবৃদ্ধি করেন তবে তিনি অরকদের সম্পদের একজন যোগ্য উত্তরাধিকারী হবেন।

নোমাসির তার পিতার কাছ থেকে উভয় উপহার গ্রহণ করেন এবং একটি বিদেশী ভূমি, নিনেভের দিকে যাত্রার জন্য পা রাখেন, যেটি তখন একটি ক্রমবর্ধমান শহর ছিল। বেশিরভাগ পুরুষের মতো, নোমাসির প্রথমে তার স্বর্ণের ব্যাগ ব্যবহার করা বেছে নেন এবং একাধিক খারাপ লেনদেনের মধ্যে পড়েন। যার ফলে তিনি খুব দ্রুত তার স্বর্ণ হারান। তিনি একদল বণিকের দ্বারা প্রতারিত হন, যারা তাকে ঘোড়ার দৌড়ে বাজি ধরতে প্রলুব্ধ করে এবং তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তার সোনা রাতারাতি বৃদ্ধি পাবে। নোমাসির ঘোড়ার ওপর তার অর্ধেক সোনার বাজি হারান এবং পরে বুঝতে পারেন বণিকরা দুর্বৃত্ত। নোমাসির তার সহযাত্রীর পরামর্শে তার সমস্ত পণ্যদ্রব্য সহ একটি দোকান কেনার জন্য তার সোনার একটি বড় অংশ হারান, যিনি ব্যবসায়িক উদ্যোগে অংশীদারিত্বের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু নোমাসিরকে প্রথমে দোকানটি কেনার জন্য বিনিয়োগে জোর দিয়েছিলেন এবং পরে তিনি ব্যবসা পরিচালনায় বিনিয়োগ করবেন। এবারও নোমাসির তার অবশিষ্ট স্বর্ণের সাথে অন্য একজনকে বিশ্বাস করেন এবং পরে বুঝতে পারেন যে তিনি এই উদ্যোগে তার অংশ বিনিয়োগ করবেন না এবং শেষ পর্যন্ত নোমাসিরকে একটি উল্লেখযোগ্য লোকসানে দোকানটি বিক্রি করতে হয়।

নোমাসিরকে তার পিতার থেকে পাওয়া সোনার ব্যাগটি পরিচালনার এই তিক্ত অভিজ্ঞতা তাকে দুঃখ ও দুর্দশার পথে নিয়ে যায়। বিদেশের মাটিতে বেঁচে থাকার জন্য তাকে তার ঘোড়া এবং ক্রীতদাস বিক্রি করতে হয়। অবশেষে তিনি তার পিতার দেওয়া অন্য উপহারটি খোলার সিদ্ধান্ত নেন, সিল্কের কাপড়ে মাটির ট্যাবলেটটি, যাতে সোনার পাঁচটি আইন লেখা ছিল। আইন গুলি নিম্নরূপ:-

১) স্বর্ণ আনন্দের সাথে এবং ক্রমবর্ধমান পরিমাণে যে কোনো ব্যক্তির কাছে আসে যে তার আয়ের এক দশমাংশের কম না দিয়ে তার ভবিষ্যতের এবং তার পরিবারের জন্য একটি সম্পত্তি তৈরি করবে।

২) স্বর্ণ অধ্যবসায় এবং তৃপ্তির সাথে সেই জ্ঞানী মালিকের জন্য পরিশ্রম করে যে এটির জন্য লাভজনক কর্মসংস্থান খুঁজে পায়। এমনকি ক্ষেতের পালের মত সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

৩) স্বর্ণ সাবধানে মালিকের সুরক্ষায় আঁকড়ে থাকে যে এটি পরিচালনার ক্ষেত্রে জ্ঞানী পুরুষদের পরামর্শে এটিকে বিনিয়োগ করে।

৪) স্বর্ণ সেই ব্যক্তির কাছ থেকে সরে যায় যে ব্যক্তি এটিকে এমন ব্যবসায় বা উদ্দেশ্য গুলিতে

বিনিয়োগ করে যার সাথে সে পরিচিত নয় বা যা এর সংরক্ষণে দক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা অনুমোদিত নয়।

৫) স্বর্ণ সেই ব্যক্তিকে পলায়ন করে, যে এটিকে অসম্ভব উপার্জনে বাধ্য করবে বা যে কৌশলী এবং ষড়যন্ত্রকারীদের লোভনীয় পরামর্শ অনুসরণ করে বা যে বিনিয়োগে তার নিজের অনভিজ্ঞতা এবং রোমান্টিক ইচ্ছার জন্য এটিকে বিশ্বাস করে।

স্বর্ণের এই পাঁচটি আইন ব্যবহার করে নোমাসির তার ব্যক্তিগত ভাগ্য পুনঃনির্মাণ শুরু করেছিলেন। তিনি একটি প্রাচীর নির্মাণের জন্য কাজ করা দাসদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন এবং তিনি যা উপার্জন করতে শুরু করেন তার ১/১০ ভাগ সঞ্চয় করে রাখেন। তার স্বপ্ন ছিল দশ বছরের আগেই পর্যাপ্ত সোনা সংগ্রহ করা কারণ তাকে তার ভাগ্যের সঠিক উত্তরাধিকারী হিসেবে তার পিতার কাছে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।

বেশ কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর একদিন তার সুপারভাইজার তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং নোমাসিরের বিচক্ষণ পছন্দ এবং মিতব্যয়ী জীবন যাপনের প্রশংসা করেন। নোমাসির বলেন যে, তিনি তার পিতার দেওয়া পর্যাপ্ত সোনা জমা করার জন্য সঞ্চয় করছেন। তার তত্ত্বাবধায়ক তাকে তামাতে বিনিয়োগ করার জন্য বিজ্ঞ পরামর্শ দেন কারণ প্রাচীরের কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে রাজা রাজকীয় ফটক তৈরি করার আদেশ দেবেন এবং রাজকীয় ফটকগুলি তৈরি করার জন্য সমস্ত নিনেভেতে এত তামা পাওয়া যাবে না। এমন সময় নোমাসির রাজার কাছে তার তামা বিক্রি করতে পারে এবং লেনদেনের বিনিময় একটি সুন্দর মূল্য পেতে পারে। নোমাসির তার বিজ্ঞ পরামর্শে বিনিয়োগ করেন এবং এই উদ্যোগ থেকে উল্লেখযোগ্য লাভ করেন। তারপরে, তিনি অনুরূপ উদ্যোক্তা পুঁজিপতিদের একটি গ্রুপে যোগদান করেন, যারা অভিজ্ঞতার সাথে এবং সুযোগের সতর্কতার সাথে বিবেচনা করার পরে বিনিয়োগ করেন।

১০ বছর কেটে যায় এবং নোমাসির অবশেষে ব্যাবিলনে তার পিতা অরকদের কাছে ফিরে আসেন এবং তার পিতাকে তার অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করেন। সোনার ব্যাগটি পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি লজ্জিত হয়েছিলেন এবং তার ভুল স্বীকার করেন, তবে মাটির ট্যাবলেটে "স্বর্ণের পাঁচটি নিয়ম" হিসাবে খোদিত অমূল্য জ্ঞানের মাধ্যমে তিনি যে সোনা জমা করেছিলেন তা ভাগ করে নিতে তিনি নম্র হয়েছিলেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে যে উপহারগুলি নিয়েছিলেন তার বিনিময়ে তিনি তিন ব্যাগ সোনা দেন–একটি তাকে উপহার দেওয়া সোনার ব্যাগের বিনিময়ে এবং অন্য দুইটি মাটির ট্যাবলেটের বিনিময়ে। অরকদ তার ছেলের জন্য গর্বিত হন এবং নোমাসিরকে তার যোগ্য আইনগত উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেন।

ব্যাবিলনের স্বর্ণের ঋণদাতা:-

বইটি ব্যাবিলনের স্বর্ণের ঋণদাতার গল্প নিয়ে চলতে থাকে। যিনি ব্যাবিলনের জনগণকে সোনা ধার দেওয়ার সময় তার অমূল্য অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তার কাছে ব্যাবিলনের শিল্ড নির্মাতা সোনা ধার দেওয়ার ব্যাপারে তার বিজ্ঞ পরামর্শ গ্রহণ করতে পৌঁছেছিল। শিল্ড প্রস্তুতকারক সম্প্রতি তার নিপুন কাজের জন্য রাজার কাছ থেকে ৫০ পিস সোনা পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং তার বোন তাকে একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরু করার জন্য তার স্বামীকে সোনা দিতে বলেন। শিল্ড নির্মাতা অনিশ্চিত ছিলেন তার সমস্ত স্বর্ণ তিনি দেবেন কিনা এবং সোনার ঋণদাতার পরামর্শ চাইতে যান।

সোনার ঋণদাতা শিল্ড প্রস্তুতকারকে একটি গল্প শোনালেন। তিনি বলেন, ব্যাবিলনে একজন কৃষক ছিল, যে পশুরা যা বলে তা শুনতে পেত। তার একটা বলদ ছিল, যেটা সারাদিন মাঠে লাঙ্গল চালাত আর একটা গাধা ছিল যেটা তার ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা হতো। একদিন তিনি বলদ এবং গাধার মধ্যে কথোপকথন শুনতে পান। বলদটি গাধাকে বলছিল, কীভাবে তাকে সূর্যের প্রচন্ড তাপে সারাদিন মাঠে কাজ করতে হয় এবং গাধাটিকে কেবল একবার কৃষকের মালামাল বহন করতে হয়েছিল যখন সে ভ্রমণ করেছিল এবং বাকি সময়গুলিতে শুধু উঠোনে দাঁড়িয়ে সারাদিন ঘাস খায় অথচ বলদ মাঠে পরিশ্রম করে। গাধাটি তাকে পরের দিন সকালে মাটিতে শুয়ে অসুস্থ আচরণ করার পরামর্শ দেয়, যাতে তাকে কঠোর পরিশ্রম থেকে রক্ষা করা যায়। বলদ গাধার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে এবং ঠিক যেমন পরিকল্পনা করেছিল তাই হয়। যাই হোক কৃষক আদেশ দিলেন যে, লাঙ্গল চালিয়ে যেতে হবে এবং সে গাধাটিকে লাঙ্গলের সাথে বেঁধে প্রচন্ড রোদে পুরো ক্ষেতে লাঙ্গল দেয়। সন্ধ্যায় বলদ ও গাধার যখন আবার দেখা হয় এবং বলদ বিশ্রামের জন্য গাধাকে ধন্যবাদ জানায় এবং গাধাটি অত্যন্ত ক্লান্ত এবং ক্ষিপ্ত অবস্থায় বলদকে বলে তাকে অবশ্যই অলস হওয়া বন্ধ করতে হবে। সেদিনের পর থেকে তারা আর কথা বলেনি। শিল্ড নির্মাতা এই গল্পের নৈতিকতা জানতে আগ্রহী ছিলেন। গল্পের নৈতিকথায় স্বর্ণ ঋণদাতা বলেন, যদি একজনকে অন্যদের সাহায্য করার জন্য বেছে নিতে হয় তবে তাকে এমনভাবে সাহায্য করতে শিখতে হবে যাতে তাদের নিজের মাথায় তাদের বোঝা না নিতে হয়।

স্বর্ণ ঋণদাতা আরো বেশ কয়েকটি গল্প শেয়ার করেছেন যে কীভাবে অযৌক্তিক ধার দেওয়া ভাগ্যের ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং বিচক্ষণতার মাধ্যমে কঠিন ভাবে অর্জিত হয়। শিল্ড নির্মাতা এই গল্পের মাধ্যমে একটি মূল্যবান পাঠ শেখেন।

ব্যাবিলনের প্রাচীর:-

বইটি ব্যাবিলনের রাজকীয় সেনাবাহিনীর একজন অভিজ্ঞ বানজারের গল্প নিয়ে চলতে থাকে, যিনি ব্যাবিলনের শক্তিশালী প্রাচীরের উত্তরণের রাজকীয় প্রহরী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ব্যাবিলন, তার প্রচুর সম্পদ এবং সোনা সহ আক্রমণের প্রবণ ছিল। ব্যাবিলনের শক্তিশালী প্রাচীরগুলি সর্বদা এটিকে অবাঞ্ছিত অতিথিদের থেকে রক্ষা করেছিল। বইটিতে এমন একটি আক্রমণের বিবরণ দেওয়া হয়েছে যেখানে একটি সেনাবাহিনী একবার ব্যাবিলনীয় প্রাচীর কে গর্ভধারণের চেষ্টা করেছিল। একটি আক্রমণ যা কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিল। শক্তিশালী সৈন্যরা তাদের সমস্ত শক্তি ও ক্রোধের সাথে দেয়ালে ধাক্কা দেয়। বানজার জানেন যে দেওয়ালগুলি শক্তিশালী ছিল এবং ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাবিলনকে অনেক আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিল। তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে আশ্বস্ত করেন। অবশেষে তিন সপ্তাহ পাঁচ দিন পরে যখন সেনাবাহিনী দেওয়াল ভাঙতে পারেনি তখন পিছু হটে যায়। এই গল্পের শিক্ষা হল সুরক্ষা। প্রাচীন রাজ্যে রাজারা বিশাল দুর্গ, উঁচু দুর্গ এবং দুর্ভেদ্য প্রাচীর তৈরি করেছিলেন যা আজকের সময়ে সুরক্ষা বীমা, এবং আর্থিক নিরাপত্তার আকারে আসে। একজনকে তাদের আর্থিক জীবন স্থিতিশীল রাখতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং ঝুঁকি থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা তৈরি করতে হবে।

বইটি ক্রীতদাসদের বিভিন্ন দৃষ্টান্তের সাথে আরও এগিয়ে গেছে, যা ব্যাবিলনের মাটির ট্যাবলেট গুলিতে স্পষ্ট ভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা রেকর্ড হওয়ার ৪০০০ বছরেরও বেশি সময় পরে আবিষ্কার করা হয়েছিল। এগুলি ছিল ক্রীতদাসদের গল্প, যারা কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক আর্থিক নীতি অনুসরণ করে আর্থিক স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার দিকে তাদের পথ প্রশস্ত করেছিল, যেমন বইটিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

বইটিতে ব্যাখ্যা করা আর্থিক নীতিগুলি পুরোনো এবং নিরবধি। তারা হাজার হাজার বছর আগে ব্যাবিলনের মত পুরোনো একটি সমৃদ্ধ সভ্যতায় ভালোভাবে কাজ করেছে এবং আজও ভালো ধারণ করছে। বইটি ব্যক্তিগত অর্থের মূল বিষয়গুলি থেকে শুরু করতে এবং আর্থিক সাফল্য এবং সম্পদের দিকে তাদের কাজ করতে ইচ্ছুক যে কারো জন্য একটি দুর্দান্ত দৃষ্টান্ত। এটি অর্থের মধ্যে বসবাস করার জন্য একজনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়, প্রয়োজন না হলে ঋণ এড়িয়ে চলুন, আরো ১০% সঞ্চয় করুন, বিজ্ঞ পরামর্শের অধীনে বিনিয়োগ করুন এবং সম্পদ বৃদ্ধি করুন। বইটি ব্যক্তিগত অর্থের মূল বিষয়গুলি শিখতে ইচ্ছুক যে কারো জন্য একটি ভালো সূচনা।

সমাপ্ত

(উপরিউক্ত অংশটি GEORGE S. CLASON -র লেখা "THE RICHEST MAN IN BABYLON" -এর সারসংক্ষেপ। আপনি চাইলে পুরো বইটি পড়তে পারেন)।

ধন্যবাদ