The Power of Your Subconscious Mind

—--- Dr. Joseph Murphy

লেখক পরিচিতি:-

ড. জোসেফ মারফি একজন আইরিশ লেখক (জন্ম ১৮৯৮, ২০ মে- মৃত্যু ১৯৮১,১৬ ডিসেম্বর)। তাঁর বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মনোবিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জনের পর তিনি বেশিরভাগ সময় প্রাচ্যের ধর্ম অধ্যয়ন করতে কাটিয়েছেন।

কুড়ি বছর বয়সে তিনি আমেরিকা চলে আসেন এবং নিউ ইয়র্কে ফার্মাসিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন।

১৯৪০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় মারফি লস্ট এঞ্জেলেসে গিয়ে রিলিজিয়াস সায়েন্স-এর প্রতিষ্ঠাতা আর্নেস্ট হোমসের সঙ্গে পরিচিত হন এবং পরে এই বিষয়ে শিক্ষা দিতে শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে তাকে লস এঞ্জেলেসে ডিভাইন চার্চের যাজক পদে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। সেখানে তিনি দেশের অন্যতম বৃহৎ "নিউ থট" সমাবেশ গড়ে তোলেন। পরবর্তী দশকে মারফি বিয়ে করেন এবং সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং লেখালেখি শুরু করেন। আত্ম উন্নয়নমূলক প্রচুর বেস্ট সেলার বই তিনি রচনা করেছেন, যা বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের উপকার করেছে।

এই বইটি কীভাবে আপনার জীবনে মিরাকেল ঘটাতে পারে–

বিশ্বজুড়ে নারী পুরুষের জীবনে মিরাকেল বা অলৌকিক ঘটনা ঘটেই চলেছে। আপনার জীবনেও মিরাকেল ঘটবে-যখন আপনি নিজের অবচেতন মনের জাদুকরি শক্তিগুলো ব্যবহার করবেন। এই বইটি লেখা হয়েছে আপনার অভ্যাসগত চিন্তাভাবনা, চিত্রকল্পরাশির গঠন, ফ্যাশন শেখাতে এবং আপনার নিয়তি গঠন করার জন্য।

আপনি কী এই প্রশ্নগুলোর জবাব জানেন?-

কেন একজন মানুষ মনে দুঃখ নিয়ে থাকে এবং অপরজন থাকে সুখী? একজন কেন হাসিখুশি, সমৃদ্ধশালী এবং অপরজন কেন চিন্তাক্লিষ্ট ও গরীব? একজন কেন থাকে ভীত ও চিন্তিত অথচ অপরজনের মনে থাকে আস্থা এবং আত্মবিশ্বাস? কেন একজন ব্যক্তি বাস করে সুন্দর, বিলাসবহুল বাড়িতে কিন্তু অপরজনকে থাকতে হয় বস্তিতে, যাপন করতে হয়‌ দারিদ্রক্লিস্ট জীবন?

কেন একজন জীবনে প্রভুত সাফল্য অর্জন করে এবং অন্যজন শুধু ব্যর্থই হয়? কেন একজন তথাকথিত অনিরাময়যোগ্য অসুখ থেকে সেরে ওঠে কিন্তু অপরজন সারে না? কেন এত ভালো ভালো দয়ালু ,ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদের শরীর এবং মনের নির্যাতন ভোগ করে চলে? অথচ দুশ্চরিত্র এবং পাপিষ্ঠ লোকজন ভোগ করে চমৎকার স্বাস্থ্য, অর্জন করে সাফল্য এবং সমৃদ্ধি?

আপনার চেতন এবং অবচেতন মনে এসব প্রশ্নের জবাব কী আছে? নিশ্চয়ই আছে।

মিরাকেল ঘটানো শক্তি বিমুক্ত করা

ব্যক্তিগত রোগ মুক্তি হতে পারে আমাদের অবচেতন মনের শক্তির সবচেয়ে বড় প্রমাণ। অনেক বছর আগে মারফি ওনার অবচেতন মনের শক্তি প্রয়োগ করে একটি মারাত্মক রোগ থেকে নিজেকে সারিয়ে তোলেন এবং এখন তিনি দিব্যি সুস্থ।

তখন যে কৌশল অবলম্বন করে তিনি সুস্থ হয়েছিলেন তা তিনি এই বইতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন এটি অন্যকেও মুক্ত হতে সাহায্য করবে কারণ আমাদের সকলের অবচেতন মনের মধ্যেই রয়েছে একই অসীম রোগ সারানোর ক্ষমতা।

ফলপ্রসু প্রার্থনায় ঘটে আশ্চর্য ঘটনা:

বৈজ্ঞানিক প্রার্থনা হল সচেতন এবং অবচেতন মনের উদ্দেশ্যভাবে সাজানো মিথস্ক্রিয়া, যা বৈজ্ঞানিকভাবে একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের জন্য কাজ করে। এই বইটি আপনাকে শেখাবে কীভাবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে আপনি আপনার ভেতরের অসীম ক্ষমতাকে জাগিয়ে তুলবেন।জীবনের কাছে যা চাইবেন তা পাবার জন্য আপনাকে যোগ্য করে তুলবে। আপনি একটি সুখী, সমৃদ্ধ এবং পরিপূর্ণ জীবনের আকাঙ্ক্ষা করেন। এই মিরাক্কেল ঘটানো শক্তিটি ব্যবহার শুরু করুন এবং দেখুন কত মসৃণ হয়ে যাচ্ছে আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো, ব্যবসায়িক সমস্যা গুলো সমাধান করতে পারছেন, পারিবারিক সম্পর্কের সুর ফিরে আসছে।

এই বইয়ের বিশেষ দিক:-

এই বইয়ের বিশেষ দিক হলো এটি একদমই সহজ সরল একটি বই। এতে আপনি সহজ সব কলাকৌশল এবং ফর্মুলা পাবেন যা সহজেই আপনার দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাতে পারবেন। এই বইয়ের বিশেষ অধ্যায় গুলো আপনাকে আকর্ষণ করবে কারণ এগুলো ব্যাখ্যা দেবে আপনি যা-ই প্রার্থনা করেন কেন তার বিপরীতটি আপনার কপালে জোটে। অবচেতন মনের উপর ছাপ ফেলার বিভিন্ন উপায় এবং সঠিক জবাব লাভ এই বইটিকে অসাধারণ মূল্যবান একটি গ্রন্থে পরিণত করেছে।

আপনি কী বিশ্বাস করেন?

একজনের প্রার্থনার মাধ্যমে জবাব প্রাপ্তি ঘটবে বলেও লোকে বিশ্বাস করে না। প্রার্থনার জবাব মিলে তখনই যখন একজনের অবচেতন মন তার মনছবি কিংবা চিন্তায় সাড়া দেয়। বিশ্বাসের এই বিধি হল বিশ্বজুড়ে সকল ধর্মের গোপন ক্রিয়াশীল নীতি। এটাই হলো তাদের মনস্তাত্ত্বিক সত্যের লুকায়িত কারণ।

জীবনের বিধি হল বিশ্বাসের বিধান। বিশ্বাসকে সংক্ষেপে আপনার মনের ভাবনা বলা যায়। একজন লোক যা চিন্তা করে ,অনুভব করে এবং বিশ্বাস করে, তার মন,শরীর এবং পারিপার্শ্বিকতার অবস্থাও তেমনটাই হয়ে থাকে। একটি কৌশল, একটি নিয়ম বা পদ্ধতি গড়ে ওঠে আপনি কী করছেন, এবং কেন করছেন তার ওপর ভিত্তি করে। এটি আপনার জীবনের সকল ভালো ভালো জিনিসের অবচেতন মূর্খ প্রকাশে সাহায্য করে। প্রার্থনার জবাব মিলে, তা হল আপনার হৃদয়ের আকাঙ্খার উপলব্ধি।

অধ্যায় ১

আপনার ভেতরকার কোষাগার

আপনার নাগালের মধ্যেই রয়েছে অসীম সম্পদ। এগুলো পেতে আপনাকে কেবল আপনার মনের চোখ খুলতে হবে এবং আপনার ভেতরে যে বিরাট কোষাগার রয়েছে তা লক্ষ্য করতে হবে। বেশিরভাগ লোকই তাদের সম্ভাবনাকে রুদ্ধ করে রাখে কারণ তারা নিজেদের মধ্যেকার অসীমাহীন ভালোবাসার এই ডাক্তার সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। আপনি যা-ই চান সেটা বের করে নিয়ে আসুন।

চুম্বকায়িত এক খন্ড লোহা দিয়ে তার নিজের ওজনের 12 গুণ বেশি ভার তোলা যায়। কিন্তু এই লোহাকে চুম্বকশূন্য করুন, ওদের একটি পালক পর্যন্ত তুলতে পারবেন না। একইভাবে দুই ধরনের লোক আছে। একদম লোক চুম্বাকায়িত যারা আত্মবিশ্বাস এবং আস্থায় ভরপুর, এরা জানে এদের জন্মই হয়েছে সাফল্য এবং বিজয় অর্জন করার জন্য। অন্যদিকে রয়েছে চুম্বক শূন্য একদল লোক এবং এটাই দলে ভারী। মন জুড়ে ভয় এবং শঙ্কা রয়েছে। কোনো সুযোগ এলে এরা প্রথমে আশঙ্কা প্রকাশ করে, 'যদি আমি ব্যর্থ হই। যদি আমার অর্থ লোকসান যায় লোকে তো আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে'। এই ধরনের মানুষ জীবনে বেশিদূর যেতে পারে না। সামনে যাওয়ার ভয় কাজ করে বলেই এরা যেখানে আছে সেখানেই থেকে যায়।

আপনি যখন কালের গোপনীয়তা আবিষ্কার করে তা ব্যবহার করতে শিখবেন তখন নিজেও হয়ে উঠবেন একজন চুম্বকায়িত মানুষ।

কালের প্রধান গোপনীয়তা:-

ধরুন কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে কালের প্রধান গোপনীয়তা কি, আপনি কি জবাব দেবেন? পারমাণবিক শক্তি? কৃষ্ণ গহ্বর? না, এগুলোর কোনোটিই নয়। তাহলে প্রধান রহস্য বা গোপনীয়তাটি কি? এটির সন্ধান মিলবে কোথায়? একে বুঝতে শিখে কিভাবে কাজে লাগানো যাবে?

জবাবটি অতি সরল। এর রহস্য বা গোপনীয়তা হল আপনার অবচেতন মনের অসাধারণ মিরাকেল ঘটানো শক্তি। এই জায়গাটিতেই মানুষ সবার শেষে উঁকি দেয়, এ কারণে এর সন্ধানও লাভ করে খুব কম সংখ্যক লোক।

আপনার অবচেতন মনের দুর্দান্ত শক্তি:-

আপনার অবচেতন মনের লুকানো শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ এবং তাকে মুক্ত করার উপায়টি আপনি যখন একবার শিখে যাবেন, আপনার জীবনে চলে আসবে আরো বেশি ক্ষমতা, আরো ধন-সম্পদ, আরও সুস্বাস্থ্য, আরো সুখ এবং আরো আনন্দ। এ শক্তি আপনাকে অর্জন করতে হবে না। এ তো আপনার কাছেই আছে। তবে এটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখতে হবে। এটিকে আপনার অবশ্যই বুঝতে হবে, যাতে জীবনের সকল ক্ষেত্রে একে কাজে লাগাতে পারেন।

আপনার অবচেতন মনের গভীরে বাস করে সীমাহীন জ্ঞান, অপরিসীম শক্তি এবং যা যা প্রয়োজন তার অফুরন্ত সরবরাহ। এটি অপেক্ষা করছে আপনার উন্নয়নের জন্যই। আপনার মনের গভীরে এগুলোর সুপ্ত শক্তি চিনতে পারলে তারা আকার গঠন করে আত্মপ্রকাশ করবে।

আপনি যদি খোলা মনের মানুষ হন, আপনার অবচেতন মনের অসীম জ্ঞান বুদ্ধি আপনার জন্য সবকিছু অবারিত করে দিতে পারবে। যখন যে মুহূর্তেই চান না কেন নতুন নতুন চিন্তা এবং কৌশল পাবেন, নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারবেন, নতুন ধরনের কাজ করতে সক্ষম হবেন। আপনার অবচেতন মনের অসীম জ্ঞান আপনাকে নতুন ধরনের জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশের সুযোগ করে দেবে।

আপনার ভেতরকার পৃথিবীর চিন্তা-চেতনা, অনুভব, শক্তি, আলো, প্রেম এবং সৌন্দর্য আবিষ্কার করার অধিকার আপনার রয়েছে। অদৃশ্য হলেও এর শক্তি বিশাল। আপনার অবচেতন মনের মাঝেই পেয়ে যাবেন সকল সমস্যার সমাধান। একবার যখন এই লুকানো ক্ষমতা বের করার উপায় শিখে যাবেন, শক্তির অধিকারী হয়ে উঠবেন এবং পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় জ্ঞান, যার সাহায্যে আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন সামনে অভিষ্ট লক্ষ্য সিদ্ধিতে।

অবচেতন মনের শক্তি একেবারে ভঙ্গুর মানুষকে উপরে তুলে দিয়েছে। তাদেরকে আবার করে তুলেছে সম্পূর্ণ, অপরিহার্য এবং শক্তিমান। আপনার অবচেতন মনে একটি আশ্চর্য আরোগ্য সহায়ক শক্তি রয়েছে যার সাহায্যে বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করা যায়, ভগ্নহৃদয় জোড়া লাগানো যায়। এ আপনার মনের কারাগারের দরজা খুলে দিয়ে আপনাকে স্বাধীন করে দেবে। সকল প্রকার বস্তুগত এবং শারীরিক বন্ধন থেকে আপনাকে মুক্ত করবে।

কর্মপদ্ধতির ভিত্তির প্রয়োজনীয়তা:-

প্রচেষ্টার যেকোনো ক্ষেত্রে উন্নতি করতে চাইলে একটি প্রথম পদক্ষেপ খুবই দরকার। আপনাকে কর্ম পদ্ধতির একটি ভিত বা বুনিয়াদ অবশ্যই আবিষ্কার করতে হবে যার আবেদন সর্বজনীন। আপনার অবচেতন মনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে দক্ষ হয়ে ওঠার আগে আপনাকে অবশ্যই এর নীতি নিয়ম গুলো বুঝতে হবে। আপনি নির্দিষ্ট এবং বিশেষ যেসব উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সুসম্পন্ন করতে চাইছেন তাতে এই শক্তিগুলি প্রয়োগ করতে পারবেন।

বহুদিন মারফি রসায়ন পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শুরুর দিকে ট্রেনিংয়ে তিনি জানেন হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু এবং অক্সিজেনের একটি পরমাণু একত্রিত করলে পানি উৎপাদিত হয়–মাঝে মাঝে নয় ,সর্বদাই। আপনি যদি অক্সিজেনের একটি পরমাণু, এবং হাইড্রোজেনের একটি পরমাণু মিশ্রিত করেন তাহলে বিষাক্ত গ্যাস কার্বন মনোক্সাইড উৎপাদিত হবে। আপনি যদি আরেকটি অক্সিজেনের পরমাণু যোগ করেন তাহলে পাবেন কার্বন ডি অক্সাইড, এই গ্যাসটি প্রাণীকুলের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং উদ্ভিদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। রসায়ন, পদার্থ এবং গণিতের যেসব নিয়ম নীতি রয়েছে তা আপনার অবচেতন মনের নিয়ম নীতির মতই কাজ করে। আপনি আপনার অবচেতন মনের শক্তি ব্যবহার করতে চাইলে আপনার অবশ্যই এর নিয়ম নীতি জানতে হবে।

সাধারণ যেসব নিয়ম-নীতি রয়েছে সেগুলো জেনে নিন। পানি তার নিজস্ব ধারায় বয়ে চলে। এটি একটি সর্বজনীন নিয়ম। অথবা নিয়ম মেনে নিন, ধাতুব দ্রব্য উত্তপ্ত হলে আকারে বৃদ্ধি পায়। আপনি একখণ্ড ইস্পাত গরম করুন, এটি আকারে বেড়ে যাবে। এই ইস্পাত চীন, ইংল্যান্ড, ভারত কিংবা মহাশূন্যের যে কোন স্টেশনেই পাওয়া যাক না কেন।

আপনার প্রার্থনার জবাব মিলছে কারণ আপনার অবচেতন মন হলো নিয়ম-নীতি এবং এই নিয়ম-নীতি দ্বারা কাজ করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিদ্যুতের নিয়ম হলো একটি উচ্চতর থেকে নিম্নতর বিভাগে কাজ করে। আপনি যখন একটি বিদ্যুৎ বাতি জ্বালান কিংবা ইলেকট্রিক স্টোভে রান্না করেন তখন বিদ্যুতের নিয়ম নীতি বদলে ফেলেন না। আপনি কেবল নিয়মটি ব্যবহার করছেন। প্রকৃতির সঙ্গে সহযোগিতা করার মাধ্যমে আপনি দারুন সব আবিষ্কার করতে পারবেন যা বহুভাবে মানবতার মঙ্গল বয়ে আনবে।

আপনার অবচেতন মন হল মূল তত্ত্ব। বিশ্বাসের আইন অনুসারে কাজ করে। আপনার মনের নিয়ম কানুন গুলোই হল বিশ্বাস-এর আইন। এর অর্থ যেভাবে আপনার মন কাজ করে তা বিশ্বাস করা, বিশ্বাসের ওপর বিশ্বাস রাখা। মনের বিশ্বাস মানে আপনার মনের চিন্তাভাবনা, আর কিছু নয়।

আপনার অবচেতন মন যে সব অভিজ্ঞতা, ঘটনা, অবস্থা এবং কর্ম উৎপাদন করে তা আপনার চিন্তা ভাবনারই প্রতিক্রিয়া মাত্র। মনে রাখবেন নিজের মনের ওপর বিশ্বাস রাখলেই কেবল ফল পাবেন। ভুয়ো বিশ্বাস থেকে সরে আসুন। ভুয়ো মতবাদ, কুসংস্কার এবং ভয় যা আমাদের মানবজাতির জন্য মহামারীর স্বরূপ তা কখনোই গ্রহণ করবেন না। বিশ্বাস করুন ঈশ্বরের বিধানে এবং জীবনের সত্যগুলোকে, যা কখনো বদলায় না।

মনের দ্বৈততা:-

আপনার মন একটি তবে ওই একটি মনই দুটি আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আপনার মনের দুটি কার্যক্রম একটি থেকে অপরটি আলাদা। প্রতিটির রয়েছে নিজস্ব এবং পৃথক গুণ এবং শক্তি।

মনের দুটি কর্মকে স্বতন্ত্র করতে নানা নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সচেতন এবং অবচেতন মন, ঘুমন্ত এবং জাগ্রত মন, মানুষ এবং নারী হৃদয় এবং আরো কত কি।

এই বইতে আগা গড়া "সচেতন" এবং "অবচেতন" শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়েছে আপনার মনের দ্বৈত প্রবৃত্তি বোঝাতে। আপনাকে আপনার মনের দ্বৈত প্রবৃত্তি চিনতে এবং বুঝতে হবে।

সচেতন এবং অবচেতন মন:-

আপনার মনের দুটি ফাংশন বুঝবার চমৎকার একটি উপায় হল মনকে একটি বাগান ভেবে নিন। আপনি সেই বাগানের মালি। আপনি আপনার মনে সারাদিন ধরেই চিন্তার বীজ রোপন করে চলেছেন।

কল্পনা করুন আপনার অবচেতন মন এক ফালি উর্বর জমি যাতে সব রকম বীজ,ভালো হোক বা মন্দই হোক, রোপণ করা যাবে। আপনি যদি কাঁটা গাছ লাগান, তাতে ক আঙুর ফলবে? আপনি বুনো উদ্ভিদের বীজ রোপন করলে নিশ্চয়ই ডুমুর পাবেন না? প্রতিটি চিন্তাই হল একটি কারণ এবং প্রতিটি পরিবেশ হলো একটি প্রভাব। এ কারণে আপনার চিন্তাভাবনা গুলোর দায়-দায়িত্ব আপনার নিজের নেওয়া জরুরী। আপনি আকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন।

এখন থেকে শান্তি, সুখ, সঠিক কার্যক্রম এবং সমৃদ্ধির বীজ রোপন করতে শুরু করুন। এই গুণগুলোর কথা চুপচাপ এবং দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ভাবুন। আপনার মনের বাগানে এই চমৎকার চিন্তাগুলোর বীজ রোপন করুন, যাতে সোনালী ফসল তুলতে পারেন।

আপনার মন যখন সঠিকভাবে চিন্তা করবে, অবচেতন মনে সঞ্চিত চিন্তাভাবনা গুলো যদি হয় গঠনমূলক, শান্তিময়, আপনার অবচেতন মনের জাদুকরী কর্মশক্তি সাড়া দিতে থাকবে। এটি চমৎকার পরিবেশ নিয়ে আসবে।যখন আপনি আপনার চিন্তার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করবেন, আপনি তখন আপনার অবচেতন মনের শক্তি প্রয়োগ করে যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।

আপনি যখন একবার আপনার সচেতন ও অবচেতন মনের মিথোস্ক্রিয়ার সত্যটি শিখতে পারবেন, গোটা জীবনটাই বদলে যাবে। আপনি বাইরের পরিবেশ বদলাতে চাইলে অবশ্যই এর উৎস পরিবর্তন করতে হবে। জীবনের সমস্ত বিশৃঙ্খলা, বিভ্রান্তি, শূন্যতা এবং সীমাবদ্ধতা দূর করতে চাইলে এর উৎস বা কারণ অবশ্যই দূর করতে হবে। আপনি উৎস বা কারণ দূর করুন, আপনি ফলটা বদলে দিতে পারবেন।

আমরা সবাই অপরিসীম সম্পদের এক অতল সাগরে বাস করি। আপনার অবচেতন মন আপনার চেতন চিন্তাভাবনার প্রতি অনেক সংবেদনশীল। এই চেতনযুক্ত চিন্তা ভাবনা গুলো একটি ছাঁচ তৈরি করে যার ভেতর থেকে অবচেতন মনের অসীম জ্ঞান, বুদ্ধি এবং শক্তি প্রবাহিত হয়। এই ছাঁচটিকে আরো ইতিবাচক দিকে গঠন দিন। আপনার শক্তিগুলো পুনর্নির্দেশ হয়ে আপনার আরো অনেক বেশি উপকার করবে।

আপনি যখন কর্তৃত্ব নিয়ে কথা বলবেন তখন যা ঘটবে, দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। আপনার মন ভরে উঠবে শান্তিতে। অবচেতন মন চেতন মনের দাস মাত্র। একে বলা হয় সাবকনসাস বা সাবজেক্টিভ।

অপূর্ব পার্থক্য এবং কার্যক্রমের ধরন বা পদ্ধতি:-

সচেতন মন হলো একটি জাহাজের চালক বা ক্যাপ্টেন এর মত। ক্যাপ্টেন যা নির্দেশ দেন ইঞ্জিন রুমের মানুষজন তা অনুসরণ করেন। ইঞ্জিন রুমের মানুষজন জানে না তারা কোথায় যাচ্ছে; শুধু আদেশ পালন করে। লোকেরা তার হুকুম মেনে চলে কারণ তিনি দায়িত্বে রয়েছেন।

ক্যাপ্টেন জাহাজের প্রভু এবং তার সিদ্ধান্ত মেনে চলা হয়। একইভাবে আপনার চেতন মন তেমনি আপনার জাহাজ অর্থাৎ আপনার শরীর, আপনার পরিবেশ, আপনার কর্মকান্ড ইত্যাদি সবকিছুর প্রভু। আপনি আপনার অবচেতন মনকে যা হুকুম করবেন তাই সে মেনে নেবে আর এই হুকুম দেবে চেতন মন, যা সে বিশ্বাস করে তার উপর ভিত্তি করে।

আপনি যদি বারবার নিজেকে শোনাতে থাকেন "আমি এটা কিনতে পারবো না" আপনার অবচেতন মন কিন্তু তাই মেনে নেবে। আপনি যতক্ষণ বলতে থাকবেন ওই গাড়িটি কেনার ক্ষমতা আপনার নেই বা ওই বাড়িটি কেনার মুরোদ আপনার নেই, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন আপনার অবচেতন মন আপনার এই নির্দেশ গুলোই মেনে নেবে।

যে কথাগুলি আপনি মনে রাখবেন:-

(১) রত্ন ভান্ডারটি আপনার ভেতরেই রয়েছে। আপনার মন যা চায় তার জবাবের জন্য ভেতরে তাকান।

(২) যুগে যুগে খ্যাতিমান মানুষদের গোপনীয়তা ছিল তাদের অবচেতন মনের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ক্ষমতা নিঃসরণ। আপনিও একই কাজ করতে পারবেন।

(৩) আপনার অবচেতন মনেই রয়েছে সকল সমস্যার জবাব। আপনি ঘুমোতে যাওয়ার আগে যদি অবচেতন মনকে বলেন"আমি ভোর ছটায় ঘুম থেকে উঠতে চাই",ঠিক ছটার সময় আপনার ঘুম ভেঙে যাবে।

(৪) আপনার অবচেতন মন আপনার শরীরের সংগঠন এবং আপনাকে সে সুস্থ করে তুলতে পারে। প্রতি রাতে ঘুমাবার সময় নিজেকে ঘুম পাড়ানি ঘুমের মতো শুনিয়ে দিন আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চান, আপনার বিশ্বস্ত ভৃত্য অবচেতন মন আপনার আদেশ পালন করবে।

(৫) প্রতিটি চিন্তার পেছনে থাকে একটি কারণ এবং প্রতিটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা হলো একটি ফলাফল।

(৬) আপনি যদি এটি চমৎকার বই বা নাটক লিখতে চান, অথবা দর্শকদের সামনে সুন্দর বক্তৃতা দিতে চান, চিন্তাটি আপনার অবচেতন মনকে শোনান, সে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী সাড়া দেবে।

(৭) জাহাজের ক্যাপ্টেন এর মত আপনার অবচেতন মনকেও সঠিক হুকুমটি দিতে হবে। মনে রাখবেন আপনার অবচেতন মন আপনার সকল অভিজ্ঞতার নিয়ন্ত্রক এবং পরিচালক।

(৮) কখনো এমন কথা বলবেন না যে "আমি এটা পারবো না"। আপনার অবচেতন মন কিন্তু তাই ধরে নিয়ে বসে থাকবে। দৃঢ়ভাবে বলুন"আমি আমার অবচেতন মনের শক্তি দিয়ে সকল জিনিস করতে পারি"।

(৯) জীবনের আইন হলো বিশ্বাসের কানুন। একটি বিশ্বাস হল আপনার মনের চিন্তা। নিজেকে সমৃদ্ধশালী, অনুপ্রাণিত, শক্তিশালী এবং সুস্থ করতে আপনার অবচেতন মনের শক্তিতে বিশ্বাস রাখুন।

(১০) চিন্তাভাবনা গুলোতে পরিবর্তন আনুন এবং বদলে ফেলুন আপনার নিয়তি।

অধ্যায়-২

আপনার মন কীভাবে কাজ করে

আপনার মন আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এটি সব সময় আপনার সঙ্গে আছে তবে এর অত্যাশ্বর্য শক্তির অধিকারী তখনই হতে পারবেন যখন এটিকে ব্যবহার করতে শিখবেন। মনের দুটি মাত্রা রয়েছে–একটি হলো চেতন বা বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন, উন্নতি হল অবচেতন বা অবিচার বুদ্ধি সম্পন্ন। আপনি আপনার চেতন মন নিয়ে চিন্তা করেন এবং আপনি যা ভাবতে অভ্যস্ত তা আপনার অবচেতন মনের কাছে পৌঁছে যায় এবং আপনার চিন্তার প্রকৃতি অনুযায়ী তা পরিবেশ সৃষ্টি করে। আপনি যদি সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করতে থাকেন মনের শান্তি এবং সুস্বাস্থ্যের একটি শরীরের অধিকারী অবশ্যই হতে পারবেন। আপনি যদি মানসিকভাবে কোন কিছু পারেন বলে দাবি করতে থাকেন, আপনার অবচেতন মন এটি মেনে নেবে এবং আপনাকে তা পাইয়েও দেবে। যা করতে হবে তা হলো আপনার অবচেতন মন আপনার আইডিয়া যেন গ্রহণ করে তার ব্যবস্থা করা। আর একবার তা ঘটলে, আপনার অবচেতন মনের আইন আপনার কাঙ্খিত স্বাস্থ্য, শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে। আপনি আদেশ দিন, আপনার অবচেতন মন বিশ্বস্ততার সঙ্গে এই আইডিয়াটি পুনঃউৎপাদিত করবে।

মনো বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন আপনার অবচেতন মনে যখন চিন্তাগুলো চলে যায়, মস্তিষ্কের কোষে তার একটা ছাপ পড়ে। আপনার অবচেতন মন যত দ্রুত একটি আইডিয়া গ্রহন‌ করে,তাৎক্ষণিকভাবে এটিকে কাজে লাগায়। আইডিয়াটি দিয়ে কাজ করতে গিয়ে আপনার সারা জীবনের সঞ্চিত জ্ঞান কাজে লাগায়, যাতে উদ্দেশ্য পূরণ হয়।

সচেতন ও অবচেতন মনের পার্থক্য:-

এ কথাটি অবশ্যই মনে রাখবেন যে সচেতন এবং অবচেতন কিন্তু দুটি ভিন্ন মন নয়। একটি মনের ভেতরের কর্মকাণ্ডের দুটি বলয়। আপনার সচেতন মন হলো রিজনিং মাইন্ড বা যুক্তিবৃত্তির মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার মন। সচেতন মনের সাহায্যে আপনি আপনার সকল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

আপনার সচেতন মন যা বিশ্বাস করে বা ছাপ রেখে দেয় আপনার অবচেতন মন তাই গ্রহণ করে। আপনার অবচেতন মন আপনার সচেতন মনের সঙ্গে কখনো তর্ক করতে যায় না, কোন ব্যাখাও চায়না। আপনার অবচেতন মন হলো একফালি মাটির মতো যেখানে ভালো ,খারাপ সবরকম বীজ-ই রোপন করা যায়। আপনার চিন্তাভাবনা গুলো হলো সক্রিয়: এই হল বীজ। নেতিবাচক, ধ্বংসাত্মক চিন্তা ক্রমাগত করতে থাকলে তা অবচেতন মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণা:-

মনোবিজ্ঞানী সহ অন্যান্যরা অসংখ্য গবেষণা বা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন। এসব গবেষণায় এটি পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে যে কোনো রিজনিং প্রসেসের জন্য প্রয়োজনীয় নির্বাচন বা তুলনা অবচেতন মন করে না। আপনার অবচেতন মন যে কোনো পরামর্শ মেনে নেবে, তা ভুয়া হলেও। একবার কোনো সাজেশন মেনে নিলে সে পরামর্শটি প্রকৃতি অনুযায়ী সাড়া দেবে।

অবজেক্টিভ ও সাবজেক্টিভ মাইন্ড:-

আপনার সচেতন মনকে মাঝে মাঝে অবজেক্টিভ মাইন্ড বলেও সম্মোধন করা হয় কারণ এটি বাহ্যিক বস্তু নিয়ে কাজ করে। অবজেক্টিভ মাইন্ড বস্তুগত দুনিয়া নিয়ে সচেতন। এটি আপনার পঞ্চইন্দ্রিয় নিয়ে কাজ করে। আপনার পরিবেশের সঙ্গে যোগাযোগে আপনার পরিচালক হিসেবে কাজ করে অবজেক্টিভ মাইন্ড। আপনি আপনার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করেন। দেখা, অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার মাধ্যমে আপনার অবজেক্টিভ মাইন্ড সবকিছু শেখে।

আপনার অবচেতন মনকে প্রায় সাব্জেক্টিভ মাইন্ড বলা হয়। আপনার সাবজেক্টিভ মাইন্ড এর পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন তবে শারীরিকভাবে নয়। অন্তর জ্ঞান দ্বারা আপনার সাবজেক্টিভ মন সবকিছু উপলব্ধি করে। এটি হলো আপনার আবেগের আসন এবং স্মৃতির স্টোর হাউস। অবজেক্টিভ মাইন্ড যখন ঘুমন্ত বা সুপ্ত অবস্থায় থাকে, এর বুদ্ধিমত্তা তখন নিজেকে জানান দেয়।

দর্শন করার প্রাকৃতিক অঙ্গ ব্যবহার না করেই সাবজেক্টিভ মাইন্ড সবকিছু দেখতে পায়। এটি যে কোনো জায়গায় যে কোনো কিছু দেখতে পায় এবং শুনতে পায়। আপনার সাবজেক্টিভ মাইন্ড আপনার শরীর ছেড়ে দূর দেশে চলে যেতে পারে এবং সত্যি ব্যাখ্যাটি নিয়ে আবার ফিরেও আসতে পারে। আপনার সাবজেক্টিভ মনের সাহায্যে অন্যের চিন্তা-চেতনার কথাও জানতে পারবেন। একবার যদি আমরা অবজেক্টিভ এবং সাবজেক্টিভ মাইন্ডের মিথোস্ক্রিয়া বুঝতে পারি, প্রার্থনার প্রকৃত কলা আরো ভালোভাবে বুঝে নিতে পারব।

অবচেতন মন আপনার সচেতন মনের মতো ব্যাখ্যা দিতে পারেনা:-

কোন কিছুর নিয়ে তর্ক বা বিরুদ্ধ যুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা নেই আপনার অবচেতন মনের। আপনি তাকে ভুল তথ্য দিলে ওটাই সে সত্য বলে ধরে নেবে এবং ওই তথ্যটি সঠিক বলে প্রতীয়মান করতে তখন সে কাজ করবে। আপনি যদি আপনার অবচেতন মন কে ভুল কিংবা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন, তবে আপনার উচিত সেগুলো সংশোধন করা। আর এই কাজটি করা সম্ভব বারবার অবচেতন মনকে গঠনমূলক, গোছানো চিন্তাভাবনা প্রেরণ করার মাধ্যমে। এগুলো বারংবার বলা হতে থাকলে আপনার অবচেতন মন তা গ্রহণ করবে। এভাবে আপনি নতুন,স্বাস্থ্যবান চিন্তা চেতনা এবং জীবন গঠন করতে পারবেন।

আপনার সচেতন মনের নিয়মিত অভ্যাসগত চিন্তা ভাবনা গুলো আপনার অবচেতন মনের গভীরে অভ্যাসে পরিণত হয়। আপনার অভ্যাসগত চিন্তা যদি হয় গোছানো, শান্তিময় এবং গঠনমূলক, আপনার অবচেতন মনও সুবিন্যস্ত, শান্তিময় এবং গঠনমূলক পরিবেশ তৈরি করে সাড়া দেবে। আপনি যদি ভয়, দুশ্চিন্তা এবং অন্যান্য বিধ্বংস চিন্তা ভাবনার কারণে প্রার্থনা করতে ভুলে যান, তাহলে এর ওষুধ হল আপনার অবচেতন মনের শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া, তার জন্য স্বাধীনতা, সুখ ও সুস্বাস্থ্যের ডিক্রি জারি করা। আপনার সৃজনশীল অবচেতন মন তখন আপনার জন্য স্বাধীনতা এবং সুখ নিয়ে আসবে।

পরামর্শের দারুণ ক্ষমতা:-

আপনার সচেতন মন হলো "ফটকের পাহারাদার"। এর অন্যতম কাজ হলো অবচেতন মনকে ভুয়া ইম্প্রেশন থেকে রক্ষা করা। আপনার অবচেতন মন পরামর্শের বিষয়ে খুবই সংবেদনশীল।

আপনি তো জানেনই, অবচেতন মন কোনো তুলনা কিংবা প্রতিতুলনা বা বৈষম্য করতে পারে না। ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম এবং নিজে নিজে ভাবতেও অক্ষম। এটি শুধু আপনার সচেতন মনের দেওয়া ইম্প্রেশনের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়। এ নানান কাজ থেকে কিছু বাছাই করতেও জানে না। শুধু তাকে যা দেওয়া হয় তাই গ্রহণ করে।

পরামর্শদানে অনেক ক্ষমতা আছে। ধরুন আপনি একটি জাহাজে উঠেছেন এবং জাহাজটি ডানে বামে দোলা খাচ্ছে। আপনি ভীতু চেহারার কোন ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বললেন"আপনাকে দেখে খুব অসুস্থ মনে হচ্ছে, আপনার মুখটা সবুজ লাগছে, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনার বমি বমি ভাব হচ্ছে"। এবং আপনি তাকে কেবিনে নিয়ে যান। যাত্রীর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আপনি বমি ভাব সম্পর্কে যে পরামর্শ দেন তাতে তার ভয় ও আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। কেবিনে যাওয়ার পর আপনার নেতিবাচক পরামর্শকে তিনি সঠিক হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তা সত্য হয়ে যায়।

একই পরামর্শের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া:-

একই পরামর্শে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। ধরা যাক, আপনি কোনো যাত্রীর পরিবর্তে কোনো জাহাজের নাবিক কে গিয়ে একই পরামর্শ দিলেন। তিনি আপনার কৌতুক দেখে হাসবেন নাকি আপনাকে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে বলবেন সেটা নাবিকের ব্যাপার। আপনার পরামর্শ তার ওপর প্রভাব ফেলেনি, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন সমুদ্রযাত্রায় তিনি কখনোই অসুস্থ হবেন না। এই কারণে তিনি ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করবেন না, বিপরীতে আত্মবিশ্বাস সামনে আসবে। পরামর্শ হলো একজনের মনে কিছু স্থাপন করার কাজ। এটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া যার দ্বারা এতে প্রস্তাবিত ধারণা গ্রহণ করা হয় বা কর্মে অনুবাদ করা হয়। সচেতন মনের ইচ্ছা ছাড়া কোন পরামর্শই অবচেতন মনে ছাপ ফেলতে পারেনা। আপনার সচেতন মন সেই পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা রাখে।

আমাদের সকলের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ ভয়, বিশ্বাস, মতামত রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসগুলি আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরামর্শের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। এর শক্তি এই সত্য থেকে উদ্ভূত হয় যে যদি আপনি এটিকে মানসিকভাবে গ্রহণ করেন, তবে আপনার অবচেতন শক্তিগুলি পরামর্শের প্রকৃতি অনুসারে কাজ করবে।

দার্শনিক এবং যুক্তিবিদরা প্রাচীন গ্রিক সময় থেকে যুক্তিবিদ্যা অধ্যয়ন করেছেন,যাকে সিলোলিজম বলা হয়। সিলোলিজম এর মধ্যে মস্তিষ্ক একটি ব্যবহারিক প্রসঙ্গে তর্ক করে। এর অর্থ হল আপনার সচেতন মন যে মূল ভিত্তি কে সত্য বলে বিশ্বাস করে, তা নির্ধারণ করে আপনার অবচেতন মন উপসংহারে পৌঁছাবে। প্রশ্ন বা সমস্যা কি তা বিবেচ্য নয়, যদি ভিত্তি সত্য হয়, তাহলে উপসংহার টি সত্য হতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ-

. প্রতিটি গুণ প্রশংসনীয়

. দয়া একটি গুণ

. তাই দয়া প্রশংসনীয়

প্রথম বাক্যটিকে প্রধান ভিত্তি বলা হয়

এবং সঠিক ভিত্তি থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত আসে।

অবচেতন মন বিতর্ক করে না:-

অবচেতন মন খুব বুদ্ধিমান। এর কাছে সব প্রশ্নের উত্তর থাকে। কিন্তু সেই সম্পর্কে অবচেতন মন নিজেই অজ্ঞাত। এটি আপনার সাথে তর্ক করে না বা উত্তরও দেয় না। যখন আপনি নেতিবাচক চিন্তা করছেন তার প্রভাবই অবচেতন মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। আপনি আসলে নিজের সুস্থতার পথকে অবরুদ্ধ করছেন। আপনি আপনার জীবনে সীমাবদ্ধতা ও হতাশা তৈরি করছেন। আপনি যখন আপনার সচেতন মনে বাধা, প্রতিবন্ধকতা এবং বিলম্বের কথা কল্পনা করেন তখন আপনি আপনার অবচেতন মনের বুদ্ধিমত্তা এবং প্রজ্ঞার সুবিধা নিতে সক্ষম হন না। আপনি আসলে বিশ্বাস করেন যে আপনার অবচেতন মন আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এর ফলে আপনার মানসিক অসুস্থতা ও স্নায়বিক প্রবণতা দেখা দেয়। আপনার ইচ্ছেকে সত্য করতে এবং হতাশা কাটিয়ে উঠতে দিনে কয়েকবার দৃঢ়ভাবে বলুন–"সীমাহীন বুদ্ধিমত্তা আমাকে এই ইচ্ছাটি দিয়েছে এবং এটি আমাকে এটাকে বাস্তব করার জন্য আদর্শ পরিকল্পনার দিকে পরিচালিত করে এবং প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি বলে। আমি জানি যে আমার অবচেতনের এক গভীর উপলব্ধি ও প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং আমি আমার মনে যা অনুভব করি এবং দাবি করি তা বাইরে প্রকাশিত হয়। ভারসাম্য এবং সমতা সর্বত্র রয়েছে"।

আপনি যদি বলেন"কোন পথ বাকি নেই","এই বিভ্রান্তি থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই","আমি বাধা প্রাপ্ত এবং অবরুদ্ধ হচ্ছি", তাহলে আপনি আপনার অবচেতন মন থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাবেন না। আপনি যদি চান আপনার অবচেতন মন আপনার জন্য কাজ করুক, তাহলে আপনাকে এর সহযোগিতা পাবার জন্য অনুরোধ করতে হবে। এটা সব সময় আপনার জন্য কাজ করে।

আপনার অবচেতনের নিজস্ব বুদ্ধি আছে, তবে এটি আপনার চিন্তাভাবনা এবং চিত্রগুলির নিদর্শন গ্রহণ করে। কিন্তু এটি আশা করবে যে আপনি আপনার সচেতন মনে একটি সত্যসিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে আপনার অবচেতন মনের উত্তর আছে।

যে কথাগুলো মনে রাখবেন:-

(১) ভালো ভাবলে ভালো হবে, খারাপ ভাবলে খারাপ হবে, আপনি সারাদিন যা ভাবছেন তা হয়ে উঠবেন।

(২) আপনার অবচেতন মন আপনার সাথে তর্ক করেনা। এটি নিরবে আপনার সচেতন মনের আদেশ পালন করে।

(৩) আপনার নির্বাচন করার ক্ষমতা আছে। স্বাস্থ্য এবং সুখ চয়ন করুন।

(৪) আপনার সচেতন মন হল"দারোয়ান"। এর প্রধান কাজ হল আপনার অবচেতন মনকে মিথ্যা ইম্প্রেশন থেকে রক্ষা করা। বিশ্বাস করুন যে ভালো কিছু ঘটতে পারে এবং এখন ঘটছে। আপনার পছন্দ করার ক্ষমতা আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি। সুখ এবং প্রাচুর্য চয়ন করুন।

(৫) অন্যদের পরামর্শ এবং বাণী আপনাকে আঘাত করার কোনো ক্ষমতা রাখেনা। একমাত্র শক্তি আছে আপনার নিজের চিন্তায়। আপনি অন্যদের ধারণা বা পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করতে এবং ভালো ধারণার জাহির করতে পারেন, কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবেন তার চয়ন করার ক্ষমতা আপনার আছে।

(৬) আপনার কথায় মনোযোগ দিন। প্রতিটি অলস শব্দের জন্য আপনাকে হিসাব করতে হবে। আপনার অবচেতন মন কৌতুক বোঝেনা। এটি নেতিবাচক জিনিসগুলোকেই বাস্তবে পরিণত করবে।

(৭) আপনার মস্তিষ্ক খারাপ না। প্রকৃতির কোন শক্তি মন্দ নয়। এটা নির্ভর করে আপনি কীভাবে প্রকৃতির শক্তি ব্যবহার করেন তার ওপর। সর্বত্র সমস্ত লোককে আশীর্বাদ, নিরাময় এবং অনুপ্রাণিত করতে আপনার মস্তিষ্ক ব্যবহার করুন।

(৮) কখনো বলবেন না"আমি পারবো না"। এই বাক্যের জায়গায় পরবর্তী প্রদত্ত বাক্যটি রেখে এই ভয় কাটিয়ে উঠুন,"আমি আমার অবচেতন মনের শক্তি দিয়ে সমস্ত কাজ করতে পারি।"

(৯) ভয়,অজ্ঞতা এবং কুসংস্কার এর পরিবর্তে চিরন্তন সত্য এবং জীবন-নীতির দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা শুরু করুন। অন্যদেরকে আপনার জন্য চিন্তা করার অনুমতি দেবেন না। আপনার নিজের চিন্তা চয়ন করুন এবং আপনার নিজের সিদ্ধান্ত নিন।

(১০) আপনি আপনার অবচেতন মন এবং ভাগ্যের অধিনায়কের মালিক। আপনার নির্বাচন করার ক্ষমতা রয়েছে। স্বাস্থ্য নির্বাচন করুন,সুখ চয়ন করুন।

(১১) আপনার সচেতন মন যাকে সত্য বলে বিশ্বাস করুক না কেন আপনার অবচেতন মন তাই গ্রহণ করবে এবং এটিকে বাস্তবে পরিণত করবে। শুভকামনা, ঐশরিক নির্দেশনা, সঠিক কর্ম এবং জীবনের সমস্ত আশীর্বাদে বিশ্বাস করুন।

অধ্যায়-৩

আপনার অবচেতন মনের অলৌকিক শক্তি

আপনার অবচেতন মনের শক্তি অতুলনীয় এবং সীমাহীন। অবচেতন মন আপনাকে অনুপ্রাণিত করে এবং গাইড করে। এটি স্মৃতির ভান্ডার থেকে ছবি ও দৃশ্য বের করে। অবচেতন মন যে প্রক্রিয়াগুলি করে তা বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরও বোধগম্যের বাইরে। আপনার অবচেতন মন শরীরের সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। অবচেতন মন সব সমস্যার উত্তর জানে।

অবচেতন মন কখনো ঘুমায় না, বিশ্রাম নেয় না।

আপনি আপনার অবচেতন মনের অলৌকিক শক্তি জানতে পারবেন যদি আপনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে বলেন যে আপনি নির্দিষ্ট কিছু অর্জন করতে চান। আপনি জেনে অবাক এবং খুশি হবেন যে এর পরে আপনার মধ্যে এমন এক শক্তি সক্রিয় হবে, আপনাকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের দিকে নিয়ে যাবে।এখানে শক্তি এবং প্রজ্ঞার এমন একটি উৎস রয়েছে, যা সর্বশক্তিমানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখে।

আপনার অবচেতন মন আপনার আদর্শ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং পরোপকারী আকাঙ্ক্ষার উৎস। আপনার অবচেতন মন আপনার সময় এবং স্থানের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এটি আপনাকে সমস্ত ব্যথা এবং যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আপনার মধ্যে এমন এক শক্তি এবং প্রজ্ঞা রয়েছে যা আপনার বুদ্ধির বাইরে এবং আপনি এর অলৌকিকতায় বিস্মিত হতে পারেন। সমস্ত অভিজ্ঞতা আপনাকে অবচেতন মনের অলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত করবে এবং আপনাকে সুখী করবে।

আপনার অবচেতন মন আপনার জীবনের বই:-

আপনি যে চিন্তা, বিশ্বাস, মতামত আপনার অবচেতন মনে লিখেন, সেগুলি পরিস্থিতি এবং ঘটনার আকারে প্রকাশ পায়। আপনি ভেতরের যা লিখবেন, বাইরে তাই অনুভব করবেন। আপনার জীবনের দুটি দিক আছে, বাস্তববাদী এবং কল্পনাপ্রবন; দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য; চিন্তা ও প্রকাশ।

আপনার চিন্তা আপনার সেরিব্রাল কর্টেক্স-এ একটি স্নায়ু প্রবণতা হিসেবে ভ্রমণ করে, যা আপনার সচেতন এবং যুক্তিবাদী মনের অংশ। যখন আপনার সচেতন বা বাস্তববাদী মন ধারণাটিকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে, তখন এটি মস্তিষ্কের অন্য অংশে ভ্রমণ করে, যেখানে এটি বাস্তবে পরিণত হয় এবং একটি পরিস্থিতির রূপ নেয়।

আগেই বলা হয়েছে অবচেতন মন তর্ক করে না। এটি আপনার সচেতন মনের উপসংহার বা সিদ্ধান্তগুলি কে চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করে। এই কারণে আপনি সর্বদা আপনার জীবনের বই লিখছেন, কারণ আপনার চিন্তাগুলি শেষ পর্যন্ত আপনার অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়। আমেরিকান দার্শনিক ওয়াল্ডো এমারসন বলেছিলেন "মানুষ সারাদিন যা চিন্তা করে তাই হয়ে ওঠে।"

অবচেতনের উপর যা ছাপ পড়ে তা-ই প্রকাশিত হয়:-

পৃথিবীতে এত দুর্দশা এবং বিশৃঙ্খলা রয়েছে কারণ বেশিরভাগ মানুষ তাদের সচেতন এবং অবচেতন মনের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারে না। যখন এই দুটি মিলেমিশে থাকে এবং আনন্দদায়ক সাদৃশ্য থাকে, তখন আপনি সুখ, স্বাস্থ্য এবং শান্তি পান। যখন সচেতন এবং অবচেতন মন সাদৃশ্য এবং শান্তিতে কাজ করে, তখন কোনো রোগ বা সংঘাত থাকে না।

অন্য কথায়, আপনি আপনার অবচেতন মনে যে ছাপ রেখে যান তা প্রকাশ করা হয়। আপনি ব্যক্তিগতভাবে যা সত্য বলে বিশ্বাস করেন তা পরিস্থিতি, অভিজ্ঞতা এবং ঘটনার আকারে প্রকাশ পায়। গতি এবং আবেগের মধ্যে একটি ভারসাম্য থাকতে হবে। এই জীবনের মহান নিয়ম।

আপনি প্রকৃতি জুড়ে কর্ম এবং প্রতিক্রিয়া, স্থিতিশীলতা এবং গতির এই নিয়ম খুঁজে পাবেন। সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য তখনই হবে যখন এ দুটির মধ্যে ভারসাম্য থাকবে। আপনি পৃথিবীতে আছেন যাতে জীবনের নীতি আপনার মধ্যে একটি ছন্দময় পদ্ধতিতে এবং সাদৃশ্যে প্রবাহিত হতে পারে। অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অভিব্যক্তি সমান হতে হবে। অপূর্ণ ইচ্ছাই আপনার সমস্ত হতাশার কারণ।

আপনার যদি নেতিবাচক, ধ্বংসাত্মক এবং খারাপ চিন্তা থাকে তবে এই চিন্তাগুলি ধ্বংসাত্মক অনুভূতি তৈরি করে। এই অনুভূতিগুলো কোনো না কোনো উপায় খুঁজে বের করবে এবং কোনো না কোনোভাবে প্রকাশ পাবে।যেহেতু এই অভিব্যক্তির প্রকৃতি নেতিবাচক, তাই এটি প্রায়ই আলসার, হৃদরোগ, চাপ এবং উদ্বেগের আকারে প্রকাশ পায়।

আপনার নিজের সম্পর্কে আপনার চিন্তা বা অনুভুতি কী? আপনার সত্তার প্রতিটি অংশ সেই চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। আপনার জীবনশক্তি, শরীর, আর্থিক অবস্থা, বন্ধু এবং সামাজিক অবস্থান আপনার নিজের সম্পর্কে আপনার চিন্তার প্রতিফলন। এর প্রকৃত অর্থ হলো যে আপনি আপনার অবচেতন মনের মধ্যে যে ছাপ রেখে গেছেন তা আপনার জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে বাহ্যিকভাবে প্রকাশিত হয়।

আমরা নেতিবাচক চিন্তা দিয়ে নিজেদের ক্ষতি করি। আপনি এই নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করেননি। আপনি যদি আপনার অবচেতন মনকে জীবনদানকারী চিন্তাভাবনা দেন, তবে এর মধ্যে থাকা সমস্ত নেতিবাচক চিন্তা দূর হতে শুরু করবে। এই কাজটি ক্রমাগত করলে পুরো অতীত মুছে যাবে এবং অবচেতন মন তা ভুলে যাবে।

অবচেতন মন কীভাবে শরীরের সমস্ত কাজ নিয়ন্ত্রণ করে:--

আপনি জেগে থাকুন বা ঘুমিয়ে থাকুন আপনার অবচেতন মনের নিরলস শক্তি আপনার শরীরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে আপনার সচেতন মন থেকে কোন রকমের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। আপনার অবচেতন মন আপনার শরীরের সমস্ত আশ্চর্যজনক জটিল ফাংশনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে, আপনার পাচন প্রক্রিয়া এবং গ্রন্থি ক্ষরণ ছাড়াও। একইভাবে, আপনার সচেতন মন শরীরকে চালাতে পারেনা, তবে এটি অবশ্যই তার সঠিক কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। আপনি যখন শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিভ্রান্ত বোধ করেন, তখন আপনি যা করতে পারেন তা হল চিন্তা প্রক্রিয়া বন্ধ করা অথবা শিথিল করা। শান্তি, সম্প্রীতি এবং ঐশ্বরিক আইন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করুন। এতে করে দেখবেন আপনার শরীরের পুরো কার্যকারিতা আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আপনার অবচেতন মন থেকে কর্তৃত্ব এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুন। এটি আপনার আদেশ অনুসরণ করে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

কীভাবে অবচেতন মনকে দিয়ে কাজ করাবেন:-

প্রথমে একটি বিষয় বুঝতে হবে যে আপনার অবচেতন মন সবসময় কাজ করে চলেছে। দিনরাত ২৪ ঘন্টা সক্রিয় সে, আপনি কাজ করুন আর নাই করুন। অবচেতন মন আপনার শরীরের নির্মাতা, তবে আপনি সেই অভ্যন্তরীণ নিরব প্রক্রিয়াটি দেখতে বা শুনতে পাচ্ছেন না। আপনার কাজ আপনার সচেতন মনকে নিয়ে,অবচেতন কে নিয়ে নয়। আপনার সচেতন মনকে ব্যস্ত রাখুন সেরা প্রাপ্তির প্রত্যাশা নিয়ে এবং নিশ্চিত করুন যে আপনার অভ্যাসগত চিন্তা ভাবনাগুলো সুন্দর এবং সত্যের ওপর গড়ে ওঠে। সচেতন মনের দিকে নজর দিন, জানবেন আপনার অবচেতন মন কিন্তু সব সময় আপনার অভ্যাসগত চিন্তাধারা অনুযায়ী তা প্রকাশ করছে।

দাবি করুন আপনার অবচেতন মনের রোগ উপশমকারী প্রক্রিয়া আপনার ভেতর দিয়ে সমন্বয়, সুস্বাস্থ্য, শান্তি, আনন্দ এবং প্রাচুর্য নিয়ে বয়ে চলেছে। এটিকে জীবিত বুদ্ধিমত্তা বলে ভাবুন। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন এটি আপনার ভেতর দিয়ে ক্রমাগত বয়ে চলেছে এবং আপনাকে করে তুলছে প্রাণবন্ত, অনুপ্রাণিত ও সমৃদ্ধশালী। আপনি যা বিশ্বাস করেন সে সেভাবেই কাজ করবে।

যেভাবে একজন অন্ধ মানুষ অবচেতন মনের সাহায্যে দৃষ্টি ফিরে পেলেন–

পৃথিবীর অন্যতম সেরা হিলিং মন্দির টি রয়েছে দক্ষিণ ফ্রান্সের লুরদেসে। ওখানে অলৌকিকভাবে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন মাদাম বিত্তে। ওনার দুচোখই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে লুরদেসে ভর্তি হওয়ার পর দৃষ্টি শক্তি ফিরে পান। মন্দিরের জলে চোখ ধুয়ে মাদাম বিত্তে তার হারানো দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাননি। তাকে সুস্থ করে তুলেছিল তার অবচেতন মনের শক্তি, যা তার বিশ্বাসের প্রতি সাড়া দিয়েছিল। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন আবার চোখে দেখতে পাবেন এবং তাই পেয়েছেন। বিশ্বাস হল অবচেতন মনের একটি চিন্তা। এর অর্থ হল কোন কিছু সত্য বলে মেনে নেওয়া।এই চিন্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাজ করে।

যে কথাগুলো মনে রাখবেন:-

(১) আপনার অবচেতন মন আপনার দেহের সমস্ত প্রধান প্রক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এবং সমস্ত সমস্যার সমাধান তার জানা।

(২) ঘুমাবার আগে আপনার অবচেতন মনের কাছে একটি বিশেষ প্রার্থনা করবেন এবং নিজের ক্ষেত্রে তার মিরাকেল ঘটানো ক্ষমতার প্রমাণ পাবেন।

(৩) অবচেতন মনের ওপর যে ছাপ-ই আপনি রাখুন না কেন তা কিন্তু আপনার অভিজ্ঞতা এবং নানান ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশিত হবে। আপনার সচেতন মনের সকল প্রকার চিন্তার বিষয়ে সতর্ক থাকুন।

(৪) কর্মের ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া সর্বজনীন। আপনার চিন্তাই হচ্ছে আপনার কর্ম এবং প্রতিক্রিয়া হলো আপনার চিন্তার প্রতি অবচেতন মনের স্বয়ংক্রিয় সাড়া। কাজেই সাবধানে চিন্তাভাবনা করুন।

(৫) হতাশা আসে আকাঙ্ক্ষার অপ্রাপ্তি থেকে। আপনি যদি বাধা বিঘ্ন, দুশ্চিন্তার মধ্যে বসবাস করেন, আপনার অবচেতন মন সেভাবেই সাড়া দেবে। আপনি নিজেই নিজের ভালো পথ রুদ্ধ করবেন।

(৬) আপনি যদি সচেতন ভাবে বিশ্বাস করেন যে অবচেতন মন আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত সবকিছুই পাইয়ে দেবে, তাহলে অবশ্যই তা পাবেন।

(৭) আপনার অবচেতন মনকে সুস্বাস্থ্য, শান্তি এবং সমন্বয়ের কথা বলুন, আপনার শরীরের সকল কর্মকান্ড আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

(৮) সেরা জিনিসটি পাবার প্রত্যাশায় সচেতন মনকে ব্যস্ত রাখুন, অবচেতন মন আপনার অভ্যাসগত চিন্তাভাবনার বিশ্বস্ততার সঙ্গে পুনরুৎপাদন করবে।

(৯) আপনার সমস্যার আনন্দময় সমাধানের কথা ভাবুন। আপনি যা কল্পনা করবেন তা-ই আপনার অবচেতন মন গ্রহণ করবে।

অধ্যায়-৪

প্রাচীন সময় মানসিক নিরাময়

যুগ যুগ ধরে প্রতিটি মহাদেশের মানুষ, আবহাওয়া এবং সংস্কৃতি সহজাতভাবে জ্ঞাত যে কোথাও রোগ মুক্তির একটি শক্তির বাস রয়েছে যা কোন মানুষের শরীরের ক্ষমতা এবং কার্যক্রম ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক দক্ষতা এবং সুস্বাস্থ্য দিতে সক্ষম। তারা বিশ্বাস করে এই অদ্ভুত শক্তিটি বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে যাচনা করা যায় এবং যদি যথাযথভাবে এর জন্য প্রার্থনা করা যায় তাহলে মানুষের দুঃখ কষ্টের উপশম হবে।

পৃথিবীর পূর্বকালীন সময়ে গোপনে মানুষের ভালো কিংবা মন্দ করার ক্ষমতা, তার মধ্যে অসুস্থ মানুষের রোগ মুক্তিও রয়েছে, এসবের অধিকারী ছিলেন ধর্ম যাজক, যাজিকা এবং ধর্মপ্রাণ লোকজন। তাঁরা দাবি করতেন এ ক্ষমতা তাঁরা সরাসরি পেয়েছে ঈশ্বরের কাছ থেকে তার মধ্যে অসুস্থ মানুষকে রোগ মুক্ত করার শক্তিও রয়েছে। রোগ নিরাময়ের এসব পদ্ধতি নানান জায়গায় নানান রকম ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেবতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা এবং বলিদান করা হতো।

প্রাচীন মন্দিরে ধর্ম গুরুরা তাঁদের রোগীদেরকে হিপ্নোটিক সাজেশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। রোগীদেরকে বলা হতো দেবতারা ঘুমের মধ্যে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাদেরকে সুস্থ করে তুলবেন।

প্রাচীনকালের মানুষ অবচেতন মনের অবিশ্বাস্য শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে নানান পদ্ধতি অবলম্বন করত এবং রোগ নিরাময়ে তারা এই শক্তি ব্যবহার করত। তারা জানত এই পদ্ধতিতে কাজ হয় তবে বুঝতে পারত না কীভাবে এবং কেন এ কাজ করে। এখন আমরা দেখতে পাই তারা অবচেতন মনকে জোরালো পরামর্শ দিত।

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, বেসরকারি রোগ নিরাময় কারীরা সেখানে দারুন সব ফল লাভ করেছে। রোগ নিরাময় ঘটেছে কারণ অসুস্থ মানুষের অন্ধ বিশ্বাস তার অবচেতন মনে বসবাস করা নিরাময় ক্ষমতাকে মুক্ত করে দেয়। নিরাময়ীকারী যত অদ্ভুত এবং বিচিত্র সব ওষুধ তৈরি করে রোগীদের মনে ততই এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হতে থাকে যেগুলো রোগ নিরাময় আরও বেশি শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। তাদের মানসিক অবস্থা স্বাস্থ্য বিষয়ক এসব পরামর্শ সচেতন এবং অবচেতন মনে গ্রহণ সহজতর করে তলে।

বাইবেলে অবচেতন মনের ক্ষমতার ব্যবহার:-

"তুমি যাহা আকাঙ্ক্ষা করো, প্রার্থনার সময় যদি তুমি বিশ্বাস করো যে তুমি উহা পাবে, তবে অবশ্যই পাবে"

যীশাস বিশ্বাসের ওপর জোর দিতেন। বাইবেলে বিশ্বাসকে বর্ণনা করা হয়েছে চিন্তার একটি পথ হিসেবে, মনের একটি ভঙ্গি, একটি অভ্যন্তরী নিশ্চয়তা, সেই আইডিয়াকে বোঝা যা আপনার সচেতন মন পুরোপুরিভাবে গ্রহণ করবে এবং আপনার অবচেতন মনে তা অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তৈরি করবে স্পষ্টতা। বিশ্বাস হলো এক কথায় তা সত্য বলে গ্রহণ করা যা আপনার ব্যাখ্যা এবং অনুভূতি অস্বীকার করে।

যীশাসের কাছে অসুস্থ মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য আসত, তারা রোগ মুক্ত হতো মূলত তাদের নিজেদের বিশ্বাসের কারণে এবং অবচেতন মনের নিরাময়যোগ্য ক্ষমতাটি বুঝতে পারতো বলে। যীশাস যাই আদেশ করতেন না কেন মন থেকে বিশ্বাস করতেন তা সত্যি। তিনি যা আদেশ করতেন তা রোগীদের অবচিতেন মনের প্রতি আবেদন ছিল, সেসঙ্গে তার সচেতনতা, অনুভূতি এবং সম্পূর্ণ বিশ্বাসের প্রতি সাড়া দিত অবচেতন মন, কারণ তিনি কর্তৃত্বের সাথে কথাগুলো বলতেন।

একটি সর্বজনীন নিরাময় নীতি:-

এ কথা সবাই জানে নিরাময় করার যেসব স্কুল রয়েছে সেগুলো প্রত্যেকেই তাদের রোগ মুক্ত রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করে রেখে দেয়। আপনার এ কথা মনে হতে পারে যে কোনো বিশেষ অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ রয়েছে এবং প্রক্রিয়া আছে যা সবার ক্ষেত্রেই কমন। সত্যি তা আছে। সেই প্রত্যঙ্গটি হলো অবচেতন মন এবং নিরাময় প্রক্রিয়াটি হল বিশ্বাস।

বিস্তৃত বিভিন্ন তত্ত্ব:-

বিভিন্ন ধর্মমতাবলম্বী গ্রুপ বিভিন্নভাবে রোগ নিরাময়ের তথ্য দিয়ে থাকে। নিরাময়ের নানান ভ্যারাইটি রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক ফ্রাঞ্জ অ্যান্টন মেসমার প্যারিসের ডাক্তারি করতেন। তিনি আবিষ্কার করেন অসুস্থ শরীরে চুম্বক ছুঁয়ে অলৌকিকভাবে রোগ মুক্তি ঘটানো যায়। তিনি কাঁচ এবং ধাতব ব্যবহার করেও অনেককে সুস্থ করেছেন। পরে তিনি রোগীর গায়ে হাত রেখেই তাদেরকে সরিয়ে তোলেন। তিনি বলেন তাঁর হাত থেকে কিছু চৌম্বকীয় উপাদান রোগীর দেহে প্রবেশ করে এবং রোগী সুস্থ হয়ে যায়। এটার নামকরণ তিনি করেছিলেন মিসমেরিজম। এখন আমরা জানি এটি আসলে সম্মোহন। রোগ নিরাময়ের একটি শক্তি আছে, তা হল অবচেতন মন। আপনার যা ইচ্ছা মতবাদ পছন্দ করতে পারেন, তবে আপনার ভেতরে যদি বিশ্বাস থাকে তবে কেবল ফল পাবেন।

রোগ নিরাময়ের রিভিউ:-

১. নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিবেন আপনার রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রয়েছে আপনার অবচেতন মনের মধ্যে ই।

২. বিশ্বাস হলো জমিতে রোপন করা বীজের মত। বীজটিকে আপনার মনে রোপন করুন, প্রত্যাশার জল ঢেলে একে উর্বর করে তুলুন, এটি উৎপাদনক্ষম হয়ে উঠবে।

৩. রোগ নিরাময়ের একটি মাত্র উপায় আছে আর তা হলো বিশ্বাস। রোগ মুক্তির একটি মাত্র শক্তি রয়েছে তা হলো আপনার অবচেতন মন।

৪. আপনার বিশ্বাসের বিষয়বস্তু সত্য হোক বা মিথ্যা, আপনি অবশ্যই ফল পাবেন। আপনার অবচেতন মন আপনার চিন্তায় সারা দেবে। বিশ্বাসকে আপনার মনে চিন্তা হিসেবে স্থান দিন, সেটুকুই যথেষ্ট।

অধ্যায়-৫

আধুনিককালে মানসিক নিরাময়

কী নিরাময় করে? এই নিরাময় শক্তিটি কোথায় এবং কী করে এটি বাস্তবে ব্যবহার করা যায়? আমাদের সবার মনের প্রধান প্রশ্ন এগুলো। এইসব প্রশ্নের জবাব হলো: এই নিরাময় শক্তিটি হলো প্রতিটি মানুষের অবচেতন মন। এবং একজন অসুস্থ মানুষের পরিবর্তিত মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি এই রোগ নিরাময় শক্তিটি রিলিজ করে দেয়। রোগনিরাময়ের নিয়ম নীতিগুলো আপনার অবচেতন মনের মধ্যে বাস করে, আপনি বা অন্য কারো দ্বারা এটি যথার্থভাবে পরিচালিত হলে এ আপনার মন এবং শরীর থেকে সমস্ত রোগ মুক্তি ঘটাতে পারে।

আধুনিক মানসিক নিরাময়ের ভিত সেই সত্যের উপর গড়ে উঠেছে, যা আপনার অবচেতন মনের অসীম বুদ্ধিমত্তা এবং ক্ষমতা আপনার বিশ্বাস অনুসারে সাড়া দেয়। তারা অবচেতন মনের কাছে তাদের আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছে গুলোকে তুলে ধরেন। তারা জানেন তাদের বুদ্ধিমান মন তাদের প্রয়োজন অনুসারে সাড়া দেবে।

বিশ্বাসের আইন:-

পৃথিবীর সকল ধর্মই গড়ে উঠেছে বিশ্বাসের ওপর এবং এ বিশ্বাস নানান ভাবে ব্যাখ্যা করা চলে।জীবনের আইন ই হলো বিশ্বাস করা। বিশ্বাস হলো আপনার মনের একটি চিন্তা যা আপনার অবচেতন মনের ক্ষমতা আপনার চিন্তার অভ্যাস অনুযায়ী জীবনের সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেয়। আপনাকে বুঝতে হবে বাইবেল যখন বিশ্বাসের কথা বলে এটি কোনো পূজা, অনুষ্ঠান কিংবা ফর্মুলার প্রতি আপনার বিশ্বাসের কথা বলে না। এ নিজের বিশ্বাসের কথা বলে। আপনার মনের বিশ্বাস হলো আপনার মনের চিন্তাভাবনা।

এমন কিছু বিশ্বাস করা উচিত নয় যা আপনাকে আঘাত করে কিংবা ক্ষতি করতে পারে। আপনার সমস্ত অভিজ্ঞতা, আপনার সকল কাজকর্ম এবং জীবনের যা কিছুই ঘটেছে সবই কিন্তু আপনার নিজের চিন্তার প্রতিফলন ও প্রতিক্রিয়া।

প্রেয়ার থেরাপি হলো বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালিত সচেতন ও অবচেতন মনের একত্রিত ফাংশন। এইটি মনের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পরিচালিত হয়। প্রেয়ার থেরাপিতে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে আপনি কী করছেন এবং কেন করছেন। প্রেয়ার থেরাপি কে মাঝে মাঝে মানসিক চিকিৎসাও বলা হয়। আরেকটি টার্ম হল সায়েন্টিফিক থেরাপি।

প্রেয়ার থেরাপিতে আপনি সচেতন ভাবে একটি নির্দিষ্ট আইডিয়া বাছাই করেন, একটি মানসিক ছবি দেখেন অথবা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান তার পরিকল্পনা করেন। আপনি বুঝতে পারেন মানসিক ছবি আপনার অবচেতন মনে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা আপনার আছে। আপনি যদি আপনার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন, আপনার প্রার্থনার জবাব মিলবে।

আপনি আপনার অবচেতন মনে থাকা নিরাময় শক্তির প্রতি নজর দিন। এ অপরিসীম ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তার কথা স্মরণ করিয়ে দিন নিজেকে, মনে করুন এটি যে কোন পরিস্থিতিতে নিরাময় করার সামর্থ্য রাখে। আপনি নিরাময় শক্তিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন। মন থেকে সমস্ত সমস্যার চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন, আবার প্রার্থনা করুন। প্রার্থনাকালীন মনে কোনোভাবেই নেতিবাচক কোন চিন্তার ঠাঁই দেবেন না। এই মনোভঙ্গি সচেতন ও অবচেতন মনের বৈরিতামুক্ত ঐক্য এনে দেবে, যা নিরাময় শক্তিকে প্রকাশ করবে।

মনোজগত বিশ্বাস এবং এর অর্থ:-

অবচেতন মন যে কোন মানুষের সচেতন মনের নিয়ন্ত্রণ মেনে চলে। আপনার বাস্তব বিশ্বাস যাই হোক না কেন সেটা অনুসরণ করে চলে, যদি আপনি ইতিবাচক ভাবে বিশ্বাস উৎপাদন করাতে পারেন, আপনার অবচেতন মন সাজেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং আপনার মনের ইচ্ছা পূরণ করবে।

মানসিক উপশমের যে বিশ্বাস প্রয়োজন তা হল সম্পূর্ণই মনোজত বিশ্বাস। এটি পেতে হলে সচেতন মনের বিপরীত ধারায় অবসান আনতে হবে।

মানুষের একটি সৃজনশীল মন আছে। মনের সৃজনশীল আইন আপনার জন্য কাজ করে। আপনার যা করতে হবে তা হলো আপনার মনের ভেতরে স্বাস্থ্য এবং সমন্বয়ের একটি অভ্যন্তরীণ উপলব্ধি উৎপন্ন করা। এটি নিজে থেকেই সারা দেবে। এই অভ্যন্তরীণ উপলব্ধি কাজ করে অবচেতন মনের ভেতরে।

অবচেতন মনের কাইনেটিক একশন:-

লেখকের এক মনোবিজ্ঞানী বন্ধু বলেছিলেন,সে ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার অনকোলজিস্ট তাকে বলেছিলেন এই চিকিৎসা হবে যন্ত্রণাদায়ক এবং বিপদজনক। তবে তার সঙ্গে একমত হওয়ার আগে ওনার বন্ধু ভিন্ন একটি চেষ্টা নেয়। সে প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে মনে বলতে থাকেন"আমার শরীরে প্রতিটি কোষ, নার্ভ, টিস্যু এবং প্রত্যঙ্গ এখন সজীব স্বাস্থ্যবান ও যথাযথ অবস্থায় রয়েছে। আমার শরীর, স্বাস্থ্য খুব ভালো আছে।"

‌ লেখকও আপনাদের পরামর্শ দিয়েছেন অসুস্থতার কথা একদমই মুখে আনবেন না, বিশেষ করে ঘুমানোর সময়। কারণ বারবার অসুখের কথা বললে অসুখ আপনাকে পেয়ে বসবে। আপনি এতে আপনার কাইনেটিক অ্যাকশনকেই বাধাগ্রস্ত করছেন যেটি কিনা আপনার অবচেতন মনে রোগ নিরাময় ক্ষমতা ও শক্তি নির্গত করে চলে।। বরং মনকে পূর্ণ করুন জীবনের সত্য দিয়ে এবং এগিয়ে চলুন ভালবাসার আলোর পথে।

অধ্যায়-৬

আপনি আপনার প্রার্থনার জবাব দিতে চাইলে অবশ্যই যথাযথ কৌশল এবং পদ্ধতি দিয়ে শুরু করতে হবে। আপনার প্রার্থনার জবাব আসে বৈজ্ঞানিক উপায়ে। প্রার্থনা হল একটি আইডিয়ার সূত্রবদ্ধ বিবৃতি যা পূরণ হবে বলে আমরা আকাঙ্ক্ষা করি। প্রার্থনা হল আত্মার ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষা। আপনার আকাঙ্খাই প্রার্থনা। এটি আসে আপনার গভীরতম প্রয়োজন থেকে। এটি আপনি জীবনে যা চান তা প্রকাশ করে দেয়।

অবচেতনে নিষিদ্ধ করার জন্য পাসিং-ওভার টেকনিক:-

ফলপ্রসূ প্রার্থনার রহস্য হলো আকাঙ্ক্ষিত ফলাফল অবচেতন মনে পরিপূরিত করা। এর জন্য অন্যতম সহজ যে রাস্তাটি রয়েছে তাকে বলে পাসিং ওভার টেকনিক। এর মধ্যে রয়েছে সচেতন মন যে অনুরোধ করে তা অপচেতন মনকে গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা।

আপনি জানেন আপনার মনের গভীরে রয়েছে অসীম বুদ্ধিমত্তা এবং সীমাহীন ক্ষমতা। আপনি যা চান তা শুধু শান্তভাবে চিন্তা করতে থাকুন, কল্পনায় দেখুন এই মুহূর্ত থেকেই আপনার আকাঙ্ক্ষিত জিনিসটি আপনার কাছে আসতে শুরু করেছে। সরল এবং গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে কৌশলটি ব্যবহার করুন, নিশ্চয়ই ফল পাবেন।

সত্যিকারের প্রার্থনার বিজ্ঞান ও কলা:-

'বিজ্ঞান' মানে জ্ঞানের একটি শরীর যা সমন্বিত, গোছানো এবং প্রণালীবদ্ধ। এই জ্ঞানের শরীরটি জীবনের মৌলিক নিয়ম নীতি নিয়ে কাজ করে। এটি একটি কৌশল এবং প্রক্রিয়া বর্ণনা করে যা আপনার জীবনে এবং অন্যদের জীবনে, যারা এগুলো বিশ্বস্ততার সাথে কাজে লাগায় তাদের ক্ষেত্রে প্রতিপাদন করা যায়। কলা হলো আপনার কৌশল বা প্রক্রিয়া এবং এর পেছনের বিজ্ঞানটি হল আপনার মানসিক ছবি অর্থাৎ চিন্তার প্রতি আপনার সৃজনশীল মনের সুনির্দিষ্ট সাড়া।

"চাও, তোমাকে ইহা দেওয়া হইবে; সন্ধান করো, তুমি ইহা পাইবে; কড়া নাড়ো এবং ইহা তোমার জন্য উন্মুক্ত হইয়া যাইবে।"

……বাইবেলের এই শ্লোক পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে আপনি কিছু চাইলে তা পাবেন। এটি মানসিক এবং আধ্যাত্মিক নিয়মের সুস্পষ্টতা শেখাচ্ছে। আপনার সচেতন মনের চিন্তা থেকে সবসময়ই অবচেতন মনের অসীম বুদ্ধিমত্তার একটি সরাসরি সাড়া রয়েছে।

কিছু পেতে হলে তার চাওয়ার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। সত্যিকারের প্রার্থনার কলা ও বিজ্ঞান এর মূল ভিত্তি হলো আপনার জ্ঞান এবং পূর্ণ আত্মবিশ্বাস, যা আপনার চেতন মনের মুভমেন্টে আপনার অবচেতন মন থেকে একটি নিশ্চিত সাড়া পাবে, যার মধ্যে রয়েছে সীমাহীন জ্ঞান ও ক্ষমতা।

প্রত্যক্ষ করার কৌশল:-

কোনো আইডিয়া যথাযথভাবে প্রকাশ করার জন্য সবচেয়ে সহজ এবং পরিষ্কার রাস্তা হল একে প্রত্যক্ষ করা, মনের চোখে এমন ভাবে একে বসিয়ে দেওয়া যেন এটি জীবিত। বাইরের পৃথিবীতে যার অস্তিত্ব রয়েছে তা আপনি খালি চোখেই দেখতে পাচ্ছেন। একইভাবে মনের চোখে আপনি দেখতে পাবেন আপনার অদৃশ্য মনোজগত। আপনি আপনার কল্পনায় যা গঠন করবেন তা আপনার শরীরের যে কোন অংশের মতোই বাস্তব। আপনি যদি আপনার মনের ছবির প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন, একদিন তা আপনার বস্তুগত জগতে এসে ধরা দেবে। চিন্তার এই প্রক্রিয়া আপনার মনে চাপ ফেলে। এই ছাপ গুলো অবশেষে ফ্যাক্টস এবং অভিজ্ঞতা হিসেবে আপনার জীবনে প্রতিয়মান হয়।

বদুইনটেকনিক:-

ফ্রান্সের রুশো ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক চার্লস বদুইন। নিউ ন্যান্সি স্কুল অফ হিলিং এর তিনি ছিলেন একজন সাইকো থেরাপিস্ট এবং রিসার্চ ডিরেক্টর। তিনি আবিষ্কার করেন অবচেতন মনকে প্রভাবিত করার সেরা উপায় হল নিদ্রালু একটি অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করা। এতে আপনার আইডিয়াটি চমৎকারভাবে অবচেতন মনের মধ্যে চলে যেতে পারবে।

স্লিপিং টেকনিক:-

আপনি যখন ঘুমঘুম, তন্দ্রালু একটি অবস্থায় প্রবেশ করেন, শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি একেবারে তলানিতে নেমে আসে। তন্দ্রালু অবস্থায় অবচেতন মন একদম ডুবে যায়। এ অবস্থায় নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা, যার চেষ্টা তাকে আপনার অবচেতন মন থেকে আকাঙ্ক্ষা দূরীকরণ এবং কোন কিছু গ্রহণই বাধা প্রদান, সেটির আর কোনো উপস্থিতি থাকে না।

ধরুন আপনি কোন বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে চাইছেন। তখন অনুমান করুন আপনি আরাম করে বসে আছেন, শিথিল এবং স্থির হয়ে আছে শরীর। সেই অবস্থায় আপনি বারবার বলতে থাকুন"আমি এই অভ্যাস থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে গিয়েছি, আমার মনে বিরাজ করছে নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি ও শৃঙ্খলা।" এ শব্দগুলো ধীরে ধীরে, শান্তভাবে এবং আবেগ নিয়ে প্রতিদিন সকাল ও রাতে পাঁচ থেকে দশ মিনিট করে বলতে থাকুন। যতবার শব্দগুলো আবেগ দিয়ে বলবেন, এর মানসিক মূল্য ততই বৃদ্ধি পাবে। নেতিবাচক অভ্যাসটি যখনই পুনরাবৃত্তি করার আগ্রহ দেখাবে, এই ফর্মুলাটি জোরে জোরে নিজেকে বারবার শোনাবেন। এর অর্থ হল আপনি এটি আপনার অবচেতন মনে আইডিয়া হিসেবে প্রবেশ করাচ্ছেন এবং এর ফলও পাবেন।

"ধন্যবাদ" পদ্ধতি:-

ধন্যবাদ এবং প্রশংসা জ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা আমাদের অনুরোধগুলো ঈশ্বরকে জানাতে পারি। এতে আশ্চর্য ফল পাওয়া যায়।

বৈজ্ঞানিক সত্য দিয়ে নিজেই নিজের সেবা করুন:-

(১) একজন মেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে একটি চমৎকার জীবন গড়ে তোলার কৌশল ব্যবহার করুন।

(২) আপনার প্রার্থনাই হলো আপনার আকাঙ্ক্ষা।এখনই আপনার আকাঙ্ক্ষার চিত্রটি পূর্ণ করুন এবং অনুভব করুন এর বাস্তবতা। আপনার প্রার্থনার জবাব পাবার আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।

(৩) আপনার মনের গোপন স্টুডিওতে যে চিন্তা-ভাবনা গুলো লুকিয়ে আছে তার সাহায্যে আপনি পেতে পারেন সুস্বাস্থ্য, সাফল্য এবং সুখ।

(৪) বৈজ্ঞানিক উপায়ে গবেষণা করুন এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রমাণ করুন যে আপনার সচেতন মনে সবসময় অবচেতন মনের অপরিসীম বুদ্ধিমত্তা সরাসরি সাড়া আসে।

(৫) অনেক কথা যায় যে বলা কোনো কথা না বলে। মানসিক ছবিটিও ঠিক তাই। হাজার কথা না বলে শুধু একটি মানসিক ছবি দিয়ে সবকিছু ফুটিয়ে তোলা যায়। আপনার মনের বিশ্বাসই আপনার অবচেতন মনে যে কোনো ছবি ফুটিয়ে তুলবে।

(৬) প্রার্থনার সময় মনের মধ্যে জোর করে কিছু ঢুকানোর চেষ্টা করবেন না।

(৭) মনে রাখবেন কৃতজ্ঞ হৃদয় জগতের সব কিছুই পেয়ে যায়।

(৮) আপনি দৃঢ়ভাবে কিছু বিশ্বাস করুন, প্রার্থনার জবাব মিলবেই।

(৯) ঈশ্বরের প্রেম ও মহিমার কথা ভেবে সুখ, স্বাস্থ্য এবং শান্তির ঢেউ তৈরি করুন

(১০) আপনি যা আদেশ করবেন এবং অনুভব করবেন তার বাস্তবায়ন ঘটবেই। আপনি আদেশ করুন আপনি সুস্বাস্থ্য, শান্তি এবং প্রাচুর্য পাবেন, পেয়ে যাবেন।

অধ্যায়-৭

অবচেতন মনের প্রবণতা জীবনমুখী

আমাদের মানসিক জীবনের ৯০ ভাগ জুড়ে রয়েছে অবচেতন মন। আপনি এই দুর্দান্ত ক্ষমতাটি প্রয়োগে ব্যর্থ হলে নিজেই নিজের জীবনকে অতি ক্ষুদ্র পরিসরে বেঁধে ফেলতে হবে।

আপনার অবচেতন আপনার শরীরের নির্মাতা এবং এর সকল প্রধান অঙ্গ প্রত্যঙ্গের পরিচালক। অবচেতন মনের সংস্পর্শে রয়েছে অনন্ত জীবন ও সীমাহীন জ্ঞান, এর প্রবণতা ও আইডিয়াগুলো সর্বদাই জীবনমুখী। আপনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন বা আপনার দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে আপনি জ্ঞানত কোন তর্ক করেন না কারণ এগুলো আপনার চেতন মন থেকে আসে না; আসে আপনার অবচেতন মন থেকে। আপনার অবচেতন মন আপনার সাথে কথা বলে অনুমান, আবেদন, আইডিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে। এটি সব সময় আপনাকে এগিয়ে যেতে বলে, আরো উচ্চতর সীমায় আরোহন করতে বলে। কাউকে ভালোবাসার ব্যাকুলতা, কারো জীবন রক্ষা, সবকিছুই কিন্তু আসে অবচেতনের গভীর থেকে।

মার্ক টোয়েন নানান অনুষ্ঠানে বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন তিনি জীবনেও গল্প লেখার জন্য কখনো পরিশ্রম করেননি। তাঁর সমস্ত লেখা যুগিয়েছে তাঁর অবচেতন মন, যে মনের কাছে গল্পের জন্য প্রার্থনা করলে দারুন সব আইডিয়া পেয়ে যেতেন।

শরীর কীভাবে মনের কাজগুলো ফুটিয়ে তোলে:-

আপনার চেতন ও অবচেতন মনের মিথোস্ক্রিয়ার জন্য স্নায়ুর করেসপন্ডিং সিস্টেম এর মধ্যে একই রকম মিথোস্ক্রিয়া প্রয়োজন। ভলান্টিয়ার সিস্টেম হল চেতন মনের অঙ্গ। অটোনমিক সিস্টেম হল অবচেতন মনের অঙ্গ। ভলান্টারি নার্ভার সিস্টেম একটি চ্যানেল যার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীরের অনুভূতি গুলোর চেতনাময় উপলব্ধি রিসিভ করে থাকেন। শরীরের মুভমেন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এই ভলান্টারী সিস্টেম। মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সে এই সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র রয়েছে।

অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম, যাকে ইনভলান্টারি নার্ভাস সিস্টেমেও বলা যায়, মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশে এর পরিচালনশীল কেন্দ্র রয়েছে। এই প্রত্যঙ্গ গুলোর শরীরের প্রধান সিস্টেমের সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগ রয়েছে এবং চেতন মন নিষ্ক্রিয় থাকলেও এরা তাদের প্রধান কাজগুলো চালিয়ে যায়।

দুটি সিস্টেম আলাদা ভাবে কিংবা একইসঙ্গে কাজ করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিপদের আশঙ্কা দেখলে লঘু মস্তিষ্ক কানসাস কর্টেক্স এবং সাবকনসাস অ্যামিগডালায় একই সঙ্গে মেসেজ পাঠিয়ে দেয়। বিপদ ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগেই এই ব্যক্তির আত্মরক্ষামূলক সামর্থ্য কাজ শুরু করে দিতে পারে।

মানসিক ও শারীরিক মিথোস্ক্রিয়া বোঝার সহজ উপায় হল আপনার স্নায়ুর ভলান্টারি সিস্টেমের বৈদ্যুতিক ইমপালসের করেসপন্ডিং সিরিজের সমান্তরাল। বিনিময়ে আপনার স্নায়ুর ইনভলান্টারি চলে যায় অবচেতন মনে যা আসলে সৃজনশীল মিডিয়াম। এভাবে আপনার চিন্তাভাবনা গুলো মূর্ত হয়ে ওঠে।

স্বাস্থ্যবান ও সবল থাকাই স্বাভাবিক, অসুস্থ থাকা অস্বাভাবিক। যেসব শিশু জন্ম নেয় পৃথিবীতে তাদের বেশিরভাগ সুস্বাস্থ্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং এটাই স্বাভাবিক, আর অসুস্থ থাকা হল অস্বাভাবিক। অসুস্থ থাকা মানে আপনি জীবনের স্রোতের বিরুদ্ধে যাচ্ছেন এবং নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করছেন।

যে কথাগুলো মনে রাখা প্রয়োজন:-

(১) আপনার অবচেতন মন আপনার শরীরের নির্মাতা এবং এই দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সমান কাজ করে চলেছে।

(২) ঘুমাবার আগে যে কোনো সমস্যার বিষয়ে আপনার অবচেতন মনকে সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করার আদেশ করুন, জবাব মিলবে।

(৩) আপনার অবচেতন মনের ঝোঁক বা প্রবণতা কিন্তু সর্বদাই জীবনমুখী। আপনার কাজ হল সচেতন মন নিয়ে যে প্রতিজ্ঞা সত্য তা অবচেতন মনে প্রবেশ করানো।

(৪) প্রতি ১১ মাস অন্তর আপনি একটি নতুন শরীর গঠন করছেন। চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন এনে আপনার শরীরও বদলে ফেলুন এবং পরিবর্তন এর মধ্যেই থাকুন।

(৫) আপনি দৃঢ়তার সঙ্গে সচেতনভাবে যা বিশ্বাস করেন এবং সত্য হিসেবে অনুভব করেন তা আপনার মন, শরীর এবং সমস্ত কার্যক্রমে প্রকাশ বা প্রতীয়মান করবে। ভালো কিছু বিশ্বাস করুন এবং আনন্দময় জীবনে প্রবেশ করুন।

অধ্যায় -৮

আপনি যা চান তা কীভাবে পাবেন

সকল প্রার্থনার জবাব কিন্তু মিলে না।এই কথা সবার জানা। প্রার্থনা করছেন অথচ তার জবাব পাচ্ছেন না, তখন কি হবে? এটি নিঃসন্দেহে একটি ব্যর্থতা। আর এতে আত্মবিশ্বাসের যথেষ্ট ঘাটতিও রয়েছে। অনেকেই সন্দেহবাদী মন নিয়ে প্রার্থনা করে, এই জন্য তাদের অবচেতন মন তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেয় না। আপনাকে একটি কথা মনে রাখতেই হবে যখনই আপনার অবচেতন মন কোন আইডিয়া গ্রহণ করে, এটির সঙ্গে সঙ্গে তার বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দেয়। আপনার গভীরতম মনের সকল মানসিক এবং আধ্যাত্মিক কানুন গুলো সে একত্রিত করে। এ কানুন ভালো আইডিয়ার জন্য সত্য হলেও খারাপ আইডিয়াগুলো কেও কিন্তু ধরে রাখে। ফলস্বরূপ আপনি আপনার অবচেতন মনকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করলে তা বয়ে আনবে ঝামেলা, ব্যর্থতা এবং বিভ্রান্তি। আর এটিকে গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করলে এটি বয়ে আনবে স্বাধীনতা এবং মনের শান্তি।

তবে যখনই অবচেতন মনকে জোর করে কিছু করাতে যাবেন, ব্যর্থ হবেন। মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে অবচেতন মন সাড়া দেয় না। যদি প্রার্থনার সময় নিজের কথাগুলো ভাবতে থাকেন তাহলে তো ব্যর্থ ফলই পাবেন–

*অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

*আমি কখনোই কোন জবাব পাব না

*এসব করে আসলে লাভ হবে না।

এধরনের ভাবনাচিন্তা করা মানে আপনি আপনার অবচেতন মনের কাছ থেকে কোন সারা বা সহযোগিতা পাবেন না। সৈনিকদের টাইম মার্কিং এর মত আপনি না পারছেন সামনে এগোতে না পেছাতে। অন্যভাবে বলতে গেলে আপনি কোথাও পৌঁছাতেই পারবেন না।

আপনার সমস্যার সমাধানে সবচেয়ে সহজ এবং সুখী সমাধানটির কথা ভাববেন। সমস্যাটি স্বাস্থ্য ,আর্থিক অথবা ব্যক্তিগত সম্পর্ক যা নিয়েই থাকুক না কেন।

কল্পনা ব্যবহার করুন, ইচ্ছা শক্তি নয়:-

অবচেতন মনের শক্তি তালিকাভুক্ত করা মানে বাধা অপসারণের জন্য ওকে ঠেলে দেওয়া। খুব কঠিন পরিশ্রম করলেই ভালো ফলাফল লাভ করা যায় না। ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করবেন না। বরং এটি যে স্বাধীনতার অবস্থা তৈরি করে তাকে কল্পনা করুন। আপনি দেখতে পাবেন আপনার বুদ্ধিমত্তা রাস্তা খুঁজে পাবার চেষ্টা করছে, সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছে এবং সেসব রাস্তায় ছাপ ফেলছে আপনার অবচেতন মনের ওপর।

প্রার্থনায় সাফল্য পাবার তিনটি পদক্ষেপ:-

সফল প্রার্থনায় তিনটি মৌলিক পদক্ষেপ রয়েছে-

১. সমস্যাটি স্বীকার করুন।

২. অবচেতন মনের কাছে সমস্যা পাঠিয়ে দিন, সে একা শুধু জানে এর সবচেয়ে কার্যকর সমাধান কী।

৩. এরকম দৃঢ় প্রত্যয় মনে আনন্দে কাজ হয়ে গেছে।

সন্দেহ ,দ্বিধাদ্বন্দ্ব আপনার প্রার্থনাকে কেবল দুর্বল করে তুলবে। আপনি অবচেতন মনের অসীম নিরাময়ের যোগ্য শক্তির একটি যন্ত্র মাত্র। আপনার অবচেতন মনের কাছে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এই আইডিয়াটি পাঠিয়ে দিন; তারপর রিল্যাক্স করুন। নিজেকে তুলে দিন শক্তির কাছে। রিলাক্সেশন এবং দৃঢ় প্রত্যয়ের মাধ্যমে আপনার ভাবনাগুলো প্রবেশ করান অবচেতন মনের মাঝে। আইডিয়ার মধ্যে যে গতিশক্তি রয়েছে এটি তা চালু করে দেবে এবং নিরেট উপলব্ধি বহন করে আনবে।

আকাঙ্ক্ষা এবং কল্পনার দ্বন্দ্ব অবশ্যই মেটাতে হবে:-

আপনার আকাঙ্ক্ষা এবং কল্পনার মধ্যেকার দ্বন্দ্ব আপনাকে অবশ্যই মেটাতে হবে। আর এটি করা সম্ভব একটি নিদ্রালু পরিবেশের মধ্যে নিজেকে নিয়ে আসবার মাধ্যমে। ঘুমন্ত অবস্থায় সচেতন মন একদমই ঘুমিয়ে থাকে।। আপনার অবচেতন মনে আপনার আইডিয়া প্রবেশের যথার্থ সময় হলো ঠিক ঘুমাবার আগের সময়। এ সময় নেতিবাচক চিন্তাগুলো আপনার আকাঙ্ক্ষাকে নিষ্ক্রিয় করে রাখে এবং আপনার অবচেতন মন এগুলোকে গ্রহণ করে না। আপনি যখন আপনার পূর্ণ হওয়া আকাঙ্ক্ষার বাস্তবতা কল্পনা করেন এবং এর বাস্তবায়নে রোমাঞ্চ অনুভব করেন, আপনার অবচেতন মন আপনার আকাঙ্কার উপলব্ধিকে বহন করে নিয়ে আসে।

মে কথাগুলো মনে রাখা দরকার:-

(১) মনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে কিংবা মনে ভয় ভীতি দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থাকলে আপনি আপনার প্রার্থনার জবাব পাবেন না।

(২) আপনার মন যখন শিথিল থাকে এবং আপনি একটি আইডিয়া গ্রহণ করেন, আপনার অবচেতন মন সে আইডিয়ার বাস্তবায়নে কাজে লেগে পড়ে।

(৩) স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে স্বাস্থ্য পাওয়া যায়। সম্পদের কথা ভাবলে সম্পদ। আপনি কী ভাবছেন?

(৪) কল্পনা শক্তি আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষমতা। সবচেয়ে ভালো জিনিস টি কল্পনা করুন।

অধ্যায়-৯

ধন-সম্পদের জন্য আপনার অবচেতন মনের ক্ষমতা কীভাবে ব্যবহার করবেন:-

আপনি যদি অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন এবং এর জন্য হাল ছেড়ে দেন তার মানে আপনি অবচেতন মন কে এটা বোঝাতে সমর্থ্য হননি যে আপনার সব সময়ই অনেক কিছু হবে এবং সামান্যই ব্যয় করবেন। আপনি জানেন অনেক নারী পুরুষই আছে যারা সপ্তাহে কয়েক ঘণ্টা কাজ করে প্রচুর টাকা আয় করে। তাদেরকে সংগ্রাম করতে হয় না কিংবা পশুর মত খাটতেও হয় না। ওই গল্পে বিশ্বাস করবেন না যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করলেই সম্পদশালী হওয়া যায়। জীবন ওরকম নয়; নিরুদ্বেগ, পরিশ্রমহীন জীবনই সবচেয়ে ভালো জীবন। আপনি যে কাজটি করতে ভালোবাসেন সেটিই করুন এবং এর আনন্দ ও রোমাঞ্চের জন্য করুন।

মনের সম্পদ-

সম্পদ আসলে একজন মানুষের অবচেতন মনের দৃঢ় প্রত্যয়ের বেশি কিছু নয়। আপনার মনের ভেতরে সম্পদের সচেতনতা গড়ে তুলুন।

সম্পদের জন্য আপনার দৃঢ় ঘোষনা কেন ব্যর্থ হয়:-

আপনার দৃঢ় ঘোষণা সাফল্য লাভ করে তখনই যখন এটি হয় সুনির্দিষ্ট এবং মনের মাঝে কোন দ্বন্দ্ব বা তর্ক সৃষ্টি করে না। আপনার অবচেতন মন তাই গ্রহণ করবে যা আপনি সত্যি বলে অনুভব করেন, কোনো অলস বিবৃতি নয়। কর্তৃত্বপরায়ন আইডিয়া কিংবা বিশ্বাস সব সময় অবচেতন মন গ্রহণ করে।

মানসিক দ্বন্দ্ব কীভাবে এড়াবেন–

যাদের মানসিক দ্বন্দ্বের সমস্যা রয়েছে, তারা এটি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে এই পথ গ্রহণ করতে পারেন:

ঘুমানোর আগে বারবার বলবেন,"আমি দিনে এবং রাতে সারাক্ষণ সমৃদ্ধি অর্জন করেই চলেছি।"এই ঘোষণা কোনো তর্কের সৃষ্টি করবে না কারণ এটি আপনার অবচেতন মনের আর্থিক শূন্যতার প্রতিচ্ছবি সঙ্গে কোনোরকম বিরোধিতায় যাবে না।

কেন কিছু ঘটে না:-

এমন অনেক লোকই রয়েছে যাদেরকে বলতে শোনা যায়,"ওহ, আমি অমুক কাজ করেছি কিন্তু কিছুই ঘটেনি।" আপনি ফলাফল লাভ করতে পারেন নি কারণ আপনি ভয়ের রাজ্যে ডুবে ছিলেন। গঠনমূলক সিদ্ধান্ত দিন। বলুন "আমি সব সময় সমৃদ্ধি অর্জন করে চলবো।"

সম্পদের উৎস:-

আপনার অবচেতন মনে আইডিয়ার অভাব নেই। ভিতরে অসীম সংখ্যক আইডিয়া রয়েছে যা আপনার চেতন মনে প্রবাহিত হবার জন্য প্রস্তুত এবং অসংখ্য উপায়ে আপনার পকেটে নগদ হিসেবে আবির্ভূত হয়। আপনি যদি নিজের অবচেতন মনকে একথা বোঝাতে পারেন যে সম্পদ আপনার এবং সব সময় তা আপনারই থাকবে, আপনি অবশ্যই সম্পদ পাবেন।

সম্পদ আহরণে প্রধান বাধা:-

সম্পদ আহরণে প্রধান বাধাটির নাম ঈর্ষা। আপনি যদি দেখেন আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী বড় অংকের টাকা ব্যাংকে জমা দিচ্ছে আর আপনি জমা দিচ্ছেন যথাসামান্য অর্থ, তখন কি আপনার মনে ঈর্ষা জাগ্রত হয়?

মনে ঈর্ষা নিয়ে বসবাস ভয়ানক ব্যাপার। কারণ এটি আপনাকে নেতিবাচক অবস্থানে নিয়ে যায়। অন্যত্র ঈর্ষা থাকলে সম্পদ আপনার কাছে আসার বদলে অন্যত্র সরে যাবে। আপনি যদি কারো উন্নতি দেখে ঈর্ষা বোধ করেন সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে বলুন আপনি লোকটির সম্পদ যাতে আরো বৃদ্ধি পায় সেজন্য প্রার্থনা করছেন। এতে আপনার মনে ইতিবাচক চিন্তা গুলো সষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এবং অবচেতন মন তার আইন অনুযায়ী আপনার দিকে সম্পদের স্রোত ধাবিত করবে।

সম্পদ নিয়ে মেন্টাল ব্লক দূর করুন:-

ধরুন আপনি ভাবছেন একজন লোক অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করছে, আপনি তাকে নিয়ে চিন্তিত এবং তার সমালোচনাও করছেন। এগুলো করা বাদ দিন। আপনার সন্দেহ যদি সঠিক হয় তাহলে আপনি জানেন ওই লোকটি মনের আইন নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করছে। এক সময় মনের আইনই তার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আপনি তার সমালোচনা করতে যাবেন না। মনে রাখবেন: সম্পদে ব্লক বা বাধা কিন্তু আপনার নিজের মনের মধ্যেই। সকলের সঙ্গে সদাচারণ করার মাধ্যমে এটি আপনি ধ্বংস করতে পারবেন।।

ঘুমান এবং সম্পদশালী হন:-

প্রতি রাতে ঘুমাবার সময় 'সম্পদ'শব্দটি চুপচাপ, বারবার বলবেন। ঘুম পাড়ানি গানের মত শব্দটি উচ্চারণ করতে থাকবেন। এর ফল দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। সম্পদ আপনার দিকে প্রাচুর্যের হিমবাহ হয়ে ধেয়ে আসবে। আপনার অবচেতন মনের জাদুর শক্তির এটি হলো আরেকটি উদাহরণ।

মনের শক্তি দিয়ে নিজেই নিজের সেবা করুন:-

(১) সহজ উপায়ে সম্পদশালী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিন আপনার অবচেতনমনের সাহায্যে।

(২) সম্পদ হলো অবচেতন মনের প্রত্যয়। মনের মধ্যে সম্পদের আইডিয়া গড়ে তুলুন।

(৩) বেশিরভাগ মানুষের সমস্যা এটাই যে তাদের অদৃশ্য সমর্থন নেই।

(৪) সম্পদের অনুভূতি নিয়ে আসে সম্পদ।এই কথাটি সর্বদা মনে রাখবেন।

(৫) 'শর্টেজ' রয়েছে বা যাবার আর জায়গা নেই? এই ধরনের ব্ল্যান্ক চেক লেখা বন্ধ করুন। এ ধরনের স্টেটমেন্ট আপনার লস ত্বরান্বিত করে।

(৬) আপনি সচেতন ভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে যা ঘোষণা করছেন, কয়েক মাস পরে তা যেন অস্বীকার করতে যাবেন না। তাহলে আপনার ভালোটা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।

অধ্যায়-১০

ধনী হওয়ার অধিকার

ধনী হওয়ার মৌলিক অধিকার রয়েছে আপনার। আপনি এ পৃথিবীতে এসেছেন একটি সুখী, প্রাচুর্যপূর্ণ, স্বাধীন জীবন যাপন করতে। আর সমৃদ্ধশালী একটি জীবন যাপন করার জন্য আপনার পর্যাপ্ত ধন-সম্পদ থাকা উচিত।

আপনার অবচেতন মনের প্রাচুর্য উপভোগ করার সুযোগ যখন রয়েছে তখন কেন অল্প কিছুতেই সন্তুষ্ট হবেন? টাকার সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব করা প্রয়োজন। একবার বন্ধুত্ব হয়ে গেলে আপনার যত অর্থ প্রয়োজন, সব পাবেন, তার চেয়ে বেশিই পাবেন। ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আপনার মনের মধ্যে যেন কোনো সন্দেহ বা লজ্জা না থাকে। এ হলো একটি মহাজাগতিক আকুলতা। ধনী হওয়ার জন্য এই আকুলতা ভালো, খুবই ভালো।

টাকা হল বিনিময়ের প্রতীক। এটি আপনার কাছে কেবল অভাব অনটন থেকে মুক্তির প্রতীক-ই নয়, এ সৌন্দর্য, প্রাচুর্য এবং বিলাসেরও প্রতীক। এটি একটি জাতির অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের প্রতীকও বটে।

অবচেতন মনের শক্তির কথা একবার বুঝে গেলে ধনী হওয়ার রাজকীয় রাস্তায় হাঁটবার‌ রোডম্যাপ কিন্তু আপনার হাতে এসে যাবে। নিজের মনকে আপনার বোঝাতে হবে সারা জীবন ধরে আপনার জীবনে প্রবাহিত হচ্ছে অর্থ এবং সর্বদাই আপনার কাছে অতিরিক্ত অর্থ রয়েই যাচ্ছে। কাল অর্থনৈতিক ধ্বস নামক আর যাই ঘটুক, আপনার কাছে সম্পদ থাকছে ই।

যদি অর্থ উপার্জনই আপনার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে আপনি ভুল করছেন। আপনি হয়তো ভাবছেন শুধু টাকাই আপনার চাই, কিন্তু অর্থ উপার্জনের জন্য বহু পরিশ্রম শেষে দেখতে পেলেন শুধু টাকা পাওয়াই আপনার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। আপনি এখানে এসেছেন একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য। মনের শান্তি, হারমোনি, প্রেম এবং সুস্বাস্থ্যের খিদেও কিন্তু আপনাকে মেটাতে হবে। আপনার ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের জন্য অর্থই সবকিছু নয়, এর জন্য আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। অবচেতন মনের আইন-কানুন শিখে নিয়ে আপনি চাইলে লাখ লাখ কোটি টাকা আয় করতে পারবেন তবে সে সঙ্গে কিন্তু মনের শান্তি, সংহতি, সুস্বাস্থ্য এবং পারফেক্ট এক্সপ্রেশনটিও দরকার তা মনে রাখবেন।

ধনী হওয়ার পথে এগোনোর পদক্ষেপ গুলো:-

১. সাহস করে দাবি করুন যে ধনী হওয়ার অধিকার আপনার রয়েছে। আপনার গভীর মন আপনার এই দাবিকে সম্মান করবে।

২. আপনাকে টাকার জন্য অন্যত্র হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে না। টাকা আপনার নিজের কাছে এসে ধরা দেবে, এ বিশ্বাস গভীরভাবে রোপন করুন নিজের মাঝে।

৩. আপনার জীবনে যখন টাকার ছড়াছড়ি তার মানে আপনি আর্থিকভাবে সুস্থ। টাকার জোয়ারে যদি ভাটা নেমেও আসে, নিশ্চিত থাকুন আবার সে স্রোত আপনার কাছে ফিরে আসবে।

৪. আপনি টাকার সমালোচনা করলে টাকা উড়ে যাবে, ধরা দেবে না। কাজেই ই টাকার সমালোচনা করবেন না।

৫. টাকাকে ঈশ্বর মনে করবেন না। এটি একটি প্রতীক মাত্র, আপনার আসল প্রাচুর্য তো আপনার মনের মধ্যেই রয়েছে। আপনি এই পৃথিবীতে এসেছেন একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন করতে–এতে যত টাকা দরকার তা আপনি পাবেন।

৬. টাকা উপার্জনই যেন আপনার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য না হয়ে ওঠে। সম্পদ, সুখ, শান্তি, প্রকৃত এক্সপ্রেসন ইত্যাদি প্রার্থনা করুন আপনার অবচেতন মন সব দেবে।।

৭.দারিদ্র তুমি মোরে করেছো মহান–এই কবিতায় বিশ্বাস করার দরকার নেই। দারিদ্র্য হল মনের অসুখ। এই মানসিক দ্বন্দ্ব মন থেকে দূর করুন।

৮. আপনি পৃথিবীতে ফকিরনির মতো জীবন যাপন করতে আসেননি। এসেছেন প্রাচুর্যের মধ্যে বাঁচার জন্য।

৯. বারবার বলুন'আমি টাকা পছন্দ করি। আমি এটি সঠিকভাবে‌ ব্যবহার করছি। আমি টাকা খরচ করছি আনন্দের সঙ্গে এবং এটি সহস্র গুণরূপে বৃদ্ধি পেয়ে আমার কাছে ফিরে আসছে।'

১০. টাকা শয়তান বা খারাপ কিছু নয়। শয়তান হলো মনের অজ্ঞতা।

১১. যা থেকে কিছু লাভ হবে না তা পাবার চেষ্টা ত্যাগ করুন। ফ্রি লাক বলে দুনিয়ায় কিছু নেই। কিছু পেতে হলে দিতে হয়। সম্পদ লাভের প্রধান উপায় হল সম্পদের আইডিয়া অবচেতন মনের মধ্যে রোপন করা।

অধ্যায়-১১

সাফল্যের অংশীদার হিসেবে অবচেতন মন

সাফল্যের পথে তিন ধাপ:-

সাফল্যের পথে প্রধান পদক্ষেপটি হল আপনি যে জিনিসটি ভালোবাসেন তা খুঁজে বের করা, তারপর কাজটি করা। নিজের কাজকে ভালবাসতে না পারলে নিজেকে সফল বলে দাবি করতেও পারবেন না। সে গোটা পৃথিবীর মানুষ যদি আপনাকে সফল বলে স্যালুট করে, তবুও নয়। নিজের কাজকে ভালোবাসা মানে একে বাইরে নিয়ে আসার এক গভীর আকাঙ্ক্ষা আপনার মধ্যে রয়েছে। কেউ মনোবিজ্ঞানী হতে চাইলে শুধু একটি সার্টিফিকেট পেয়ে তার দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখলেই হলো না। তাকে মাঠে নেমে কাজ করতে হবে, মনকে ক্রমাগত বিশ্লেষণ করতে হবে।

কিন্তু যদি এমন হয় যে আপনার মনে হলো আপনি প্রথম পদক্ষেপটি নিতে পারবেন না। কারণ আপনি জানেন না আপনি কী করতে চান। এরূপ অবস্থা তাহলে গাইডেন্স এর জন্য এভাবে প্রার্থনা করুন–"আমার অবচেতন মনের অসীম বুদ্ধিমত্তা আমাকে আমার জীবনের সত্যিকারের জায়গাটি খুঁজে দেবে"

—--এ প্রার্থনাটি চুপচাপ, সুন্দর ভাবে মনের গভীর অংশকে বারবার শোনান। আস্থা এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে লেগে থাকলে জবাব অবশ্যই আসবে।

সাফল্যের পথে দ্বিতীয় ধাপ বা পদক্ষেপ হলো কোন বিশেষ কাজে স্পেশালাইজ হওয়া এবং এতে সেরাটি দেওয়ার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। ধরা যাক কোন ছাত্র রসায়ন শাস্ত্রকে পেশা হিসেবে নেবে ঠিক করেছে। তার উচিত এই বিষয়টির নানান শাখার মধ্যে একটিতে মনোযোগ দেয়া এবং এর পেছনেই সমস্ত সময় ব্যয় করা। তার উৎসাহই তাকে তার ফিল্ডের সবকিছু জেনে নিতে সাহায্য করবে।

তৃতীয় পদক্ষেপটি হল আসল। আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি যা করতে চাইছেন তা শুধু আপনার নিজের সাফল্য-এই অবদান রাখবে না। আপনার আকাঙ্ক্ষা যেন স্বার্থপর সুলভ না হয়। আপনার আইডিয়া হবে সারা দুনিয়ার মানুষকে সেবা করা। তাহলে এটি আপনার কাছে বহু গুণে বর্ধিত হয়ে ফিরে আসবে। আপনি যদি শুধু নিজের স্বার্থেই কাজ করেন, তাহলে একসময় এর সীমাবদ্ধতা অসুস্থতার দিকে ধাবিত হতে পারে।

সাফল্যের তিনটি পদক্ষেপ আপনাকে কখনোই ভুললে চলবে না যে সৃজনশীল শক্তির মূল ভিত কিন্তু অবচেতন মন। সাফল্যের যে কোন পরিকল্পনার পেছনের সমস্ত পদক্ষেপের এটাই শক্তি।

১৬ বছরের কিশোর টড এম. একদিন লেখকের কাছে এসে বলেছিল"আমি সব জায়গাতেই ব্যর্থ হচ্ছি।জানি না কেন। আমার মনে হয় আমি আসলে একটা স্টুপিড। স্কুল থেকে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার আগেই হয়তো আমি ওখান থেকে চলে আসব"

লেখক ছেলেটির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবিষ্কার করেন ছেলেটির একমাত্র সমস্যা তার অ্যাটিটিউড। পড়াশোনার প্রতি সে খুবই উদাসীন এবং কয়েকজন শিক্ষক ও সহপাঠীদের প্রতি মহাঅসন্তুষ্ট। লেখক তাকে শিখিয়ে ছিলেন কীভাবে অবচেতন মনকে ব্যবহার করে পড়াশোনায় সাফল্য অর্জন করা যাবে।সে প্রতিদিন অনেক বার করে কিছু বিশেষ সত্য নিয়ে ঘোষণা সুরে বলতে লাগলো। বিশেষ করে, রাতে ঘুমাবার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠেই।সে যা বলেছিল তা হল-

"আমি উপলব্ধি করতে পারছি আমার অবচেতন মন হলো স্মৃতির আকর। আমার শিক্ষকরা আমাকে যা পড়ান এবং আমি যা শুনতে পাই তার সবকিছুই এর মধ্যে সঞ্চিত থাকে। আমার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো এবং আমি চাইলে এটি ব্যবহার করতে পারি। আমি চাইলেই আমার অবচেতন মনের সীমাহীন বুদ্ধিমত্তা আমার কাছে সবকিছু প্রকাশ করে দেয়। আমি আমার সকল শিক্ষক এবং সহপাঠীদেরকে ভালোবাসি। আন্তরিকভাবেই তাদের সর্বাঙ্গিক মঙ্গল ও সাফল্য কামনা করি।"

পরবর্তীকালে টড পড়াশোনায় দারুন সাফল্য লাভ করে।

মনে রাখুন:-

১. সাফল্য মানে সফল ভাবে জীবন যাপন। আপনি যখন শান্তিতে, সুখে, আনন্দের সঙ্গে আপনার কাজটি করছেন তার মানে আপনি সুখী।

২. মনের শান্তি ছাড়া প্রকৃত সাফল্য লাভ করা যায় না।

৩. একজন সফল মানুষের থাকে সাইকোলজিক্যাল এবং স্পিরিচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং।

৪. কোন বস্তু পরিষ্কারভাবে কল্পনা করতে পারলে আপনার অবচেতন মনের জাদুর শক্তি প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরবরাহ করবে।

৫. আপনি আপনার কাছে প্রমোশন চাইলে কল্পনা করুন আপনার চাকুরীদাতা, সুপারভাইজার কিংবা প্রিয় মানুষগুলো আপনার প্রমোশনের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছে। ছবিটি পরিষ্কার এবং বাস্তব ভাবে ফুটিয়ে তুলুন। ঘনঘন এটি করতে থাকুন, আপনার প্রার্থনার জবাব মিলবে।

৬. আপনার অবচেতন মন হল স্মৃতির সংগ্রহশালা। নিখুঁত স্মৃতির জন্য দৃঢ়ভাবে বলুন"আমার অবচেতন মনের অসীম বুদ্ধিমত্তা আমি যখন যেখানে যা জানতে চাইব, সব আমার কাছে প্রকাশ করবে।"

৭. সাফল্যের আইডিয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সফলতার সমস্ত উপাদান। প্রবল বিশ্বাস এবং প্রত্যয়নী 'সাফল্য' শব্দটি বারবার জপতে থাকুন সাফল্য আপনার কাছে ধরা দেবেই।

অধ্যায়-১২

বিজ্ঞানীরা কিভাবে অবচেতন মন কে ব্যবহার করেন

ইতিহাসের বেশিরভাগ সৃজনশীল বিজ্ঞানী অবচেতন মনের প্রকৃত গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন।তারা তাদের অবচেতন মনের শক্তি ব্যবহার করে দারুন সব আবিষ্কার করেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে প্রখ্যাত রসায়নবিদ ফ্রেডরিক ভন স্ট্রাডোনিজের। হাইড্রোকার্বন বা বেনজাইনের রাসায়নিক গঠনটি বুঝবার জন্য বহুদিন ধরেই তিনি চেষ্টা করে আসছিলেন। এটি একটি কমপাউন্ড যার ভেতরে রয়েছে কার্বনের ছটি পরমাণু এবং হাইড্রোজেনের ছটি অ্যাটম। এই সমস্যা সর্বদা হতবুদ্ধি করে রাখত স্ট্রাডোনিজকে। এ ধাঁধার সমাধানে ব্যর্থ, ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত স্ট্রাডোনিজ সমস্যাটি পুরোপুরি সমর্পণ করলেন তাঁর অবচেতন মনের কাছে। একদিন হঠাৎ করেই তাঁর অবচেতন মন একটা বিদ্যুৎ ঝলক যেন পাঠিয়ে দিল সচেতন মনের কাছে। অবচেতন মনের এই মেসেজ স্ট্যাডোনিজেকে ভিন্নভাবে গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ করে। শীঘ্রই তিনি তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জবাবটি পেয়ে গেলেন, অ্যাটমের বৃত্তাকার অ্যারেঞ্জমেন্ট যা বেনজাইন রিং নামে পরিচিত।

এক বিখ্যাত বিজ্ঞানীর আবিষ্কার:-

বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের প্রতিভাবান পাইওনিয়ার বলা হয় নিকোলা টেসলাকে। তিনি টেসলা কয়েলের আবিষ্কর্তা। এটি হল বৈদ্যুতিক চার্জ দেওয়া একটি ধাতব গোলক। এটিকে কেউ স্পর্শ করা মাত্র তার মাথার সমস্ত চুল খাড়া হয়ে যায়। এটি সায়েন্স মিউজিয়ামগুলোতেও প্রদর্শিত হয়, শিশুদের খুবই প্রিয় একটি খেলা।

টেসলা অবচেতন মনের শক্তি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। যখনই কোন নতুন আবিষ্কারের আইডিয়া মাথায় আসতো কিংবা নতুন কোন গবেষণায় হাত দিতেন, তিনি কল্পনায় এর দৃশ্যকল্প তৈরি করে তা অবচেতন মনে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি জানতেন তার অবচেতন মন এটি পুনর্গঠিত করবে এবং একে একটি নিরেট আকৃতি দেওয়ার প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান সহ সচেতন মনের কাছে পাঠিয়ে দেবে।

অবচেতন মন থেকে কিভাবে গাইডেন্স পাবেন:-

কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কিংবা সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে এগুলো নিয়ে গঠনমূলক চিন্তাভাবনা শুরু করে দিন। ভয় পেলে বা দুশ্চিন্তা গ্রস্ত থাকলে কিন্তু ধরে নেওয়া হবে আপনি ঠিক ভাবে চিন্তা করতে পারছেন না। প্রকৃত চিন্তা সর্বদাই ভয় মুক্ত থাকে। যেকোনো বিষয়ে গাইডেন্স পাবার জন্য এই সরল কৌশলটির পদক্ষেপ গুলো আপনি ব্যবহার করতে পারেন:-

*মন এবং দেহ শান্ত করুন। শরীরকে বলুন রিলাক্স হতে; এ আপনার কথা শুনতে বাধ্য।

*মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন; কীভাবে সমস্যার সমাধান করবেন তার প্রতি চিন্তা করুন।

*সচেতন মন দিয়ে একটি সমাধানের চেষ্টা করুন।

*ভাবুন যথার্থ সমাধান পেলে আপনার মন কত ভালো লাগবে।

*শিথিলভাবে সুখ এবং শান্তির মধ্যে ভাসিয়ে দিন মনটাকে; তারপর ঘুমিয়ে পড়ুন।

*ঘুম থেকে জাগার পরে, আপনার প্রার্থনার জবাব যদি তখনো না পেয়ে থাকেন, অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলে হয়তো জবাবদিহি চট করে আপনার মনের মধ্যে চলে আসবে।

গাইডেন্স এর গোপন রহস্য-

গাইডেন্স এর গোপন রহস্য হলো সঠিক জবাবের জন্য নিজেকে মানসিক ভাবে উৎসর্গ করা। মনের সাড়া হলো একটি অনুভূতি, একটি অভ্যন্তরীণ সচেতনতা। আপনি এই শক্তিটি সেই পয়েন্টে ব্যবহার করেছেন, যেখান থেকে এটি আপনাকে ব্যবহার শুরু করেছে।

যে কথাগুলো স্মরণ রাখা দরকার:-

১. মনে রাখবেন সকল বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকের আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে অবচেতন মনের অবদান।

২. হতবুদ্ধি কর কোন সমস্যার সমাধানের জন্য সমস্ত মনোযোগ এবং আকুলতা ঢেলে দিলে আপনার অপচিতল মন সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে তা সচেতন মনের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

৩. রাতারাতি কোনো জবাব কিন্তু পাবেন না। দিনরাত সারাক্ষণ অবচেতন মনের কাছে অনুরোধ পাঠাতেই থাকুন।

৪. জবাব দিতে দেরি হবে কিংবা এটি একটি বিরাট সমস্যা এসব কথা ভেবে কিন্তু জবাব পেতে আপনি দেরি করিয়ে দিচ্ছেন। আপনার অবচেতন মনের কোন সমস্যা নেই, সে সবসময়ই জবাব দেবে।

৫. আপনার অবচেতন মন হলো স্মৃতিশক্তির গুদামঘর। সেই ছোটবেলা থেকে সমস্ত অভিজ্ঞতাই সঞ্চিত হয়ে আছে অবচেতন মনের ভেতরে।

৬. বিজ্ঞানীরা প্রাচীন স্থান, মন্দির,কফিন ইত্যাদি নিয়ে ধ্যান করে যা পান তা দিয়েই কিন্তু অতীতের দৃশ্যাবলী পুনর্গঠিত করতে পারেন এবং বর্তমানে প্রেক্ষাপটে তার জীবন্ত করে তোলেন। এতে তারা অবচেতন মনের সহায়তা পান।

৭. অ্যাকশন হলো আপনার চিন্তাভাবনা আর রিয়্যাকশন হল আপনার অবচেতন মনের সাড়া। আপনার চিন্তাভাবনা গুলো জ্ঞানগর্ভ হলে অ্যাকশন এবং সিদ্ধান্ত গুলোও তাই হবে।

অধ্যায়-১৩

আপনার অবচেতন মন এবং ঘুমের বিস্ময়

আপনি প্রতি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৮ ঘন্টাই ঘুমিয়ে কাটান। তার মানে জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় কেটে যায় আপনার ঘুমের রাজ্যে। এ অবশ্য জীবনের এক অপ্রতিরোধ্য নিয়ম বা আইন। ঘুমকে বলা হয় স্বর্গীয় আইন, আমরা যখন গভীরভাবে ঘুমাই তখন আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান চলে আসে ঘুমের মধ্যে।

লোকে বলে আপনি দিনের বেলা ক্লান্ত থাকেন বলে রাতে ঘুমালে বিশ্রাম পায় শরীর এবং ঘুমের মধ্যে শরীরের ঘাটতি পূরণের প্রক্রিয়া চলে। এটি ভুল ধারণা। আপনি যখন ঘুমিয়ে থাকেন তখনও আপনার শরীরের সকল প্রধান অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তার কাজ করতে থাকে। ঠিক একইভাবে আপনার অবচেতন মন কদাপী বিশ্রাম নেয় না বা ঘুমায় না। এটি সর্বদাই সক্রিয়, আপনার সমস্ত প্রধান শক্তিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। ঘুমের মধ্যে নিরাময় প্রক্রিয়াটি দ্রুত কাজ করে কারণ তখন সে আপনার সচেতন মন দ্বারা কোনরকম বাধাগ্রস্ত হয় না। ঘুমের সময় আপনাকে দারুন সব জবাব দেওয়া হয়।।

আমরা কেন ঘুমাই:-

ঘুম নিয়ে গুরুতর গবেষণা করেছেন যে সব বিজ্ঞানী তাদের মধ্যে ডঃ জন বিগলো অন্যতম। তিনি বলেন আমাদের ঘুমের মূল কারণ হলো"আত্মার মহত্ত্ব অংশটি আমাদের উচ্চতর প্রকৃতির সঙ্গে নিস্কর্শ দ্বারা একত্রিত এবং এর ফলে এটি হয়ে ওঠে দেবতাদের জ্ঞান ও পূর্বজ্ঞানের অংশীদার"।

ঠিকমতো ঘুম না হলে আপনার মেজাজ হয়ে ওঠে খিটখিটে, আপনি হয়ে উঠেন মুডি এবং হতাশ। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে সকলেরই প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় ঘন্টা ঘুমানো দরকার। বেশিরভাগ মানুষের আরো বেশি ঘুমের দরকার হয়। যারা বলেন কম ঘুমালেও তাদের চলে তারা আসলে নিজেদেরকেই বোকা বানাচ্ছেন। জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে চাইলে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।

ঘুমের বিস্ময়ের সারমর্ম:-

১. যদি এমন দুশ্চিন্তে ভুগতে থাকেন যে আপনি ঠিকমতো সময় ঘুম থেকে জাগতে পারবেন না তাহলে ঘুমাবার আগে আপনার অবচেতন মনকে নির্দেশ দিয়ে বলুন ঠিক কখন আপনি ঘুম থেকে উঠতে চান। সে আপনাকে ঠিক ওই সময়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেবে। এজন্য তার ঘড়ির দরকার হবে না।

২. আপনার অবচেতন মন কখনো নিদ্রা যায় না। সে সব সময় তার কাজ করে চলে। ঘুমাবার আগে নিজেকে এবং অন্য সকলকে ক্ষমা করে দিন, খুব দ্রুত আপনার নিরাময় হবে।

৩. ঘুমন্ত অবস্থায় আপনাকে পথ নির্দেশ দেওয়া হয়, কখনো বা স্বপ্নের মাধ্যমে। নিরাময়ের স্রোতও প্রবাহমান থাকে বলে পরদিন সকালে নিজেকে আপনার ফ্রেশ লাগে।

৪. মনের শান্তি এবং দেহের স্বাস্থ্যের জন্য ঘুম খুব দরকার জিনিস। ঘুমের অভাব আপনাকে করে তোলে বদমেজাজি এবং হতাশ। প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুমাবেন।

৫. মেডিকেল গবেষকরা দেখিয়েছেন অনিদ্রা মাঝেমাঝে সাইকোটিক ব্রেকডাউন তৈরি করে।

৬. ঘুমের মধ্যে আপনি আধ্যাত্মিক ভাবে রিচার্জ হয়ে যাচ্ছেন। জীবনকে উপভোগ করার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার।

৭. আপনার ক্লান্ত মস্তিষ্ক ঘুমের জন্য এমন হাহাকার তোলে যে একটু ঘুমের জন্য সে সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি। যাদের ভালো ঘুম হয় না তারা

গাড়ি চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে ফেলে।

৮. যাদের কম ঘুম হয় তাদের স্মৃতিশক্তি হয় দুর্বল। তারা অনেক কিছুই ঠিক মতো চিন্তা করতে পারে না এবং বিভ্রান্তিতে ভোগে।

৯. ঘুমের মধ্যে পরামর্শ মেলে। ঘুমাবার আগে আপনার অবচেতন মনের অসীম বুদ্ধিমত্তার কাছে পথ নির্দেশনা চান। ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখবেন ঠিকই তা পেয়ে গেছেন।

১০. নিজের অবচেতন মনের ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখুন। জানবেন এর প্রবণতা হল সর্বদা জীবনমুখী।

১১. আপনার ভবিষ্যৎ কিন্তু আপনার মনের মাঝেই, এটি গড়ে ওঠে আপনার অভ্যাসগত চিন্তা ভাবনা এবং বিশ্বাসকে ভিত্তি করে। অসীম বুদ্ধিমত্তার কাছে দাবী করুন সে যেন আপনাকে পথ নির্দেশ দেয়, মনে করুন জগতের যা কিছু ভালো সব আপনার জন্য এবং দেখবেন আপনার ভবিষ্যত কি সুন্দর হয়ে উঠেছে।

১২. রাতে আপনার মনের সঙ্গে কথা বলুন। প্রার্থনা করলে ঠিকই তার জবাব পাবেন। দেখবেন ঘুম সত্যিই কি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটাতে পারে।

অধ্যায়-১৪

আপনার অবচেতন মন ও বৈবাহিক সমস্যা

সকল বৈবাহিক সমস্যার কারণ মনের শক্তি ও কার্যক্রম বুঝতে না পারার ব্যর্থতা। স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ই যদি মনের আইনটি যথাযথ ব্যবহার করেন তাহলে তাদের মধ্যে আর কোন দ্বন্দ্ব থাকবে না। প্রার্থনার মাধ্যমে তারা একসঙ্গে থাকতে পারেন।

বিয়ের অর্থ:-

বিয়ের ভিত্তি স্বর্গীয়। এ আসে হৃদয়ের ভালোবাসা থেকে। আর ভালোবাসা হলো সততা, আন্তরিকতা, দয়া এবং সংহতির ই অন্য রূপ। প্রতিটি পার্টনারেরই অপরের প্রতি সৎ এবং আন্তরিক হওয়া উচিত। টাকা বা সামাজিক অবস্থানের লোভে কখনো বিয়ে করা উচিত নয়। এতে আন্তরিকতার, সততা এবং প্রকৃত ভালোবাসা অনুপস্থিত থাকে। এ বিয়ে হল ভূয়া। কোন মহিলা যদি বলে"আমি নিরাপত্তা চাই বলে বিয়ে করতে চাই", তাহলে বুঝতে হবে তার প্রতিজ্ঞার কোনো দাম নেই।সে তার মনের আইন সঠিকভাবে ব্যবহার করছে না। একজন নারীর স্বাস্থ্য, শান্তি, আনন্দ, অনুপ্রেরণা, গাইডেন্স, প্রেম, সম্পদ, সিকিউরিটি, সুখ বা অন্য কোনো কিছুর জন্যই তার স্বামীর উপর নির্ভর করার দরকার নেই।তার মনের শান্তি ও নিরাপত্তা আসে তার মনের শক্তি থেকে।

আপনি একজন আদর্শ স্বামী চাইছেন। কিন্তু কীভাবে তাকে পাবেন? সহজ একটি কৌশল শিখে নিন ,এতে কাজ দেবে। রাতের বেলা আর্মচেয়ারে বসে চক্ষু বন্ধ করে শিথিল করে দিন শরীর। তারপর কথা বলুন আপনার অবচেতন মনের সঙ্গে। বারবার বলতে থাকুন-"আমি এখন এমন একজন পুরুষকে আকর্ষণ করছি যে সৎ, আন্তরিক, বিশ্বস্ত, সুখী এবং সমৃদ্ধশালী। যে গুণাবলী গুলোর কথা আমি বললাম সেগুলো এখন আমার অবচেতন মনে ডুব দিচ্ছে। এই বৈশিষ্ট্য গুলো হয়ে উঠছে আমার অংশ এবং অবচেতন ভাবে ভাবনার বাস্তব রূপ দান করছে।"এই প্রক্রিয়াটি প্র্যাকটিসের মাধ্যমে অবচেতন মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিন। দেখবেন আপনার মনের মতন পুরুষটিকে পেয়ে গেছেন।

একইভাবে একজন আদর্শ স্ত্রী চাইতে পারেন। নীচের কথাগুলো দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষনা করুন-"আমি এখন সেই সঠিক নারীটিকে আকর্ষণ করছি যে আমার সঙ্গে সব দিক থেকে খাপ খেয়ে যাবে। আমি জানি, আমি এই নারীটিকে দিতে পারব ভালোবাসা, আলো, শান্তি এবং আনন্দ। আমি অনুভব করি এবং বিশ্বাস করি আমি এ নারীর জীবন পূর্ণ এবং অসাধারণ করে তুলতে পারবো"।

আপনি যখন চুপচাপ এবং গভীর আগ্রহ নিয়ে আপনার সঙ্গিনীর মধ্যে এসব গুন খুঁজছেন তখন কিন্তু আপনার মনের ভেতরে একই রকম মানসিক অবস্থা তৈরি হয়ে যাচ্ছে।। তারপর ,আপনার অবচেতন মনের গভীরতম স্রোত আপনাদের দুজনকে একত্রিত করে দেবে।

মস্ত ভুল:-

আপনার দাম্পত্য জীবনের সমস্যা বা সংকট নিয়ে কখনো পড়শী বা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে যাবেন না। তাহলে মস্ত ভুল হবে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে কোনো রকম অভিযোগ যদি আপনি অন্যদের কাছে করেন তাহলে কিন্তু সকলের চোখে তাকে হেয় করছেন। আর আত্মীয়-স্বজন এবং পড়শিরা কিন্তু আপনাকে ভুল পরামর্শই দেবে। তাতে আপনার ক্ষতি বৈ লাভ হবে না।

আপনার কাজগুলো পর্যালোচনা করুন:-

১) মানসিক এবং আধ্যাত্মিক আইন-কানুন সম্পর্কে অজ্ঞতাই সকল বৈবাহিক সমস্যার জন্য দায়ী। দুজনে বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রার্থনা করে একত্রে থাকতে পারবেন।

২) ডিভোর্স ঠেকানোর সেরা সময় বিয়ের আগে ই। ঠিকমতো প্রার্থনা করতে জানলে আসল জীবনসঙ্গী কে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারবেন।

৩) বিয়ে হল পুরুষ এবং নারীর মিলন, যারা ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের হৃদস্পন্দন একত্র হয়, তারা এক সঙ্গে সর্বদা চলাফেরা করে।

৪) বিয়ে সুখের নিশ্চয়তা দিতে পারেনা। মানুষ সুখ পায় ঈশ্বরের অনন্ত সত্য এবং আধ্যাত্মিক জীবনের মূল্যবোধের মধ্যে বসবাস করে। তারপর পুরুষ এবং নারী একে অন্যের সুখ এবং আনন্দ দিতে পারে।

৫) একজন নারী বা পুরুষের মধ্যে যেসব গুণ আপনি দেখতে চান, তার মধ্যে আপনার নিজের বসবাস করতে হবে তবেই যথার্থ সঙ্গীকে খুঁজে পাবেন। তারপর আপনার অবচেতন মন দুজনকে একে অপরের কাছে টেনে নিয়ে আসবে।

৬) বিয়েতে ভুলের পুনরাবৃত্তি করা যাবেনা। আপনি যদি সত্যি বিশ্বাস করেন আপনি আপনার আদর্শ নারী বা পুরুষ টিকে পাবেন, তাহলে ঠিকই পাবেন। আপনার আদর্শ সঙ্গীকে মানসিক ভাবে গ্রহণ করুন।

৭) আপনার পার্টনার কে কখন ,কোথায়, কীভাবে পাবেন তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আপনার অবচেতন মনের ওপর ভরসা রাখুন।

৮) ম্যারেজ পার্টনারের প্রতি আপনি যখন অতিমাত্রায় রুস্ট হয়ে ওঠেন তখনই কিন্তু আপনার মানসিক ডিভোর্স ঘটে যায়।

৯) ম্যারেজ পার্টনার কে ভয় দেখাবেন না। বরং তাকে ভালোবাসুন।

১০) যে পার্টনার সব সময় ঘ্যানঘ্যান করছে সে আসলে ভালোবাসা এবং স্নেহ চাইছে। তাকে ভালোবাসো এবং স্নেহ করুন।

১১) যেসব দম্পতি একে অন্যকে ভালোবাসে তারা কখনো পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পরায়ণ আচরণ করে না।

১২) দাম্পত্য সমস্যায় সব সময় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আপনি দাঁত তুলতে নিশ্চয়ই কাঠমিস্ত্রির কাছে যাবেন না। কাজেই দাম্পত্য সমস্যা নিয়ে বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলাপ করতে নেই। পরামর্শের প্রয়োজন হলে ট্রেইন্ড লোকের কাছে যান।

১৩) স্বামী বা স্ত্রীকে কখনো পরিবর্তন করতে যাবেন না। এটি বোকামো হবে। কারণ এতে অহংবোধে আঘাত লাগতে পারে। ফলে সংসারে অশান্তি দেখা দেয় এবং বিয়ে নামক বন্ধনটি ছুটে যায়।

১৪) দুজনে এক সঙ্গে বসে প্রার্থনা করুন। সায়েন্টিফিক প্রেয়ার সকল সমস্যার সমাধান করে দেয়। কল্পনায় দেখুন আপনার স্ত্রী হাসি খুশি, স্বাস্থ্যবতী, সুন্দরী। আর স্বামীকে দেখুন শক্তিমান, ক্ষমতাবান এবং দয়ালু। এই মনছবিটা মনের মাঝে ধরে রাখুন, আপনাদের দাম্পত্য জীবন মধুর হয়ে উঠবে।

অধ্যায়-১৫

আপনার অবচেতন মন ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য

আপনার জীবনে সত্যিকারের এবং দীর্ঘস্থায়ী সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আসতে পারে সেদিন যেদিন পরিষ্কার বুঝতে পারবেন যে আপনি যেকোনো দুর্বলতা জয় করতে পারবেন-যেদিন আপনি উপলব্ধি করবেন আপনার অবচেতন মন আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারবে, আপনার শরীর সারিয়ে তুলতে পারবে, আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

সুখ হল মনের একটি অবস্থা। সুখ নির্বাচন করার স্বাধীনতা আপনার আছে। এবং সেটি খুবই সরল। এজন্যই লোক সুখের পথে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খায়; তারা সুখে সহজ রাস্তাটি দেখতে পায় না। জীবনের সেরা সেরা জিনিসগুলো সহজ সরল, ডায়নামিক এবং সৃজনশীল। এগুলো জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ নিয়ে আসে, তৈরি করে।

যখনই আপনার কাছ থেকে ভালো এবং গঠনমূলক চিন্তাগুলো দূরে সরে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে ওগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করূন। নিজেকে একজন ধার্মিক মানুষ এবং মানসিক চুম্বক হিসেবে সকল মঙ্গলের প্রতি আকৃষ্ট করুন। সুখী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই আপনার মনের মধ্যে থাকতে হবে।

অনেক লোকই নাবুঝে অ-সুখ কে বেছে নেয়। তারা যেসব চিন্তা করে নিজেদেরকে অসুখী করে তোলে তা হল-

*আজ দিনটা ভালো না। আজ কোন কিছুই ঠিকঠাক মতো ঘটবে না।

*আমি সফল হতে পারব না।

*সবাই আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে।

—--ঘুম থেকে উঠেই যদি মনের মধ্যে এসব নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আসে তাহলে সুখী হবেন কি করে? নেতিবাচক চিন্তাভাবনা মন থেকে একেবারেই দূর করে দিন। মনকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিন আপনার নিজের মানসিকতার বাইরে অন্য কোন অভিজ্ঞতা ধারে কাছেও ঘেষতে দেবেন না।

সারসংক্ষেপ:-

১) উইলিয়াম জেমস বলেছেন উনবিংশ শতাব্দীর সেরা আবিষ্কার হলো অবচেতন মনের শক্তি যাতে রয়েছে, বিশ্বাসের ছোঁয়া।

২) আপনার ভেতরে প্রচুর শক্তি রয়েছে। এই শক্তির ওপর বিশ্বাস রাখলে সুখ আপনার কাছে এসে ধরা দেবেই। তখন আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।

৩) অবচেতন মনের দুর্দান্ত ক্ষমতা দ্বারা আপনি যে কোনো পরাজয় থেকে আবার উঠে দাঁড়িয়ে বিজয়ী হতে পারবেন।

৪) সুখ আপনাকে বাছাই করতে হবে। সুখ একটি অভ্যাস। এই অভ্যাসটি নিজের মধ্যে গড়ে তুলুন এবং একে লালন করুন।

৫) সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বলুন 'আমি আজ সুখ বাছাই করছি। সাফল্য বাছাই করছি। আমি আজ সঠিক কাজটি বাছাই করছি। আজ সারা দিনের জন্য ভালোবাসা ও সদিচ্ছা বাছাই করছি। আমি আজ শান্তি বাছাই করছি'। এভাবে সুখ আসবে আপনার কাছে।

৬) যা পেয়েছেন সেজন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিন। আরো শান্তি ,সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করুন যেন তা বর্ষিত হয় আপনার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, আপনার সহকর্মীবৃন্দ এবং সবার ওপরে।

৭) সুখী হওয়ার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা আপনার থাকতে হবে। আকাঙ্ক্ষা না থাকলে কিছু পাওয়া যায় না। আকাঙ্ক্ষা হলো কল্পনা ও বিশ্বাসের ডানাওয়ালা উইশ। কল্পনা করুন আপনার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে এবং অবশ্যই হবে।

৮) সারাক্ষণ ভয়-ভীতি, রাগ ,ঘৃণা এবং ব্যর্থতার মধ্যে বসবাস করতে থাকলে আপনি হয়ে উঠবেন হতাশ এবং অসুখী। মনে রাখবেন আপনার জীবন কিন্তু গড়ে ওঠে আপনি যা ভাবছেন তা দিয়ে।

৯) সুখ হলো শান্ত মনের ফসল। আপনার মনের চিন্তা নোংর করুন শান্তি, ভারসাম্য, নিরাপত্তা ও স্বর্গীয় পথ নির্দেশের ওপর, আপনার মন ভরে যাবে সুখে।

১০) সুখী হওয়াতে মনের মধ্যে কোনো বাধা রাখা যাবে না।

১১) পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষ সে-ই যে নিজের মধ্যে সেরাটি নিয়ে আসতে পারে।

অধ্যায়-১৬

আপনার অবচেতন মন ও মানুষের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক

আপনি যদি সুখী হতে চান তো কাউকে হিংসা করবেন না। হিংসা বা নেতিবাচক মনোভাব, এটি কিন্তু আপনার জন্য খুবই ক্ষতিকর। আপনি যে নেতিবাচক শক্তি উৎপাদন করছেন তা আপনার সমস্ত উৎসাহ, উদ্দীপনা, শক্তি, গাইডেন্স, গুডউইল খেয়ে ফেলছে। এইসব নেতিবাচক চিন্তা এবং আবেগ আপনার অবচেতন মনে প্রবেশ করলে তা জীবনে শুধু সমস্যা আর ঝামেলাই বয়ে আনবে।

মানবিক সম্পর্কের বিশেষ কতগুলো দিক:-

১) আপনার অবচেতন মন হল রেকর্ডিং মেশিনের মত যে আপনার অভ্যাসগত চিন্তা ভাবনা গুলো পুনরুৎপাদিত করে তুলেছে। অন্যের মঙ্গল চিন্তা করুন তাহলে নিজের জন্যও ভালো কিছু ভাবতে পারবেন।

২) হিংসা-বিদ্বেষ হল মনের বিষ। অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা করবেন না তাহলে নিজেরই ক্ষতি হয়ে যাবে।

৩) আপনার মন একটি ক্রিয়েটিভ মিডিয়াম; তাছাড়া, আপনি অন্যান্যদের সম্পর্কে যা ভাবছেন বা অনুভব করছেন তা আপনার নিজের অভিজ্ঞতায় প্রেরণ করছেন।

৪) কাউকে ঠকালে বা কারো সঙ্গে প্রতারণা করলে তাতে নিজেকেই ঠকানো হয়।

৫) মানুষের ভালো করলে আপনার নিজেরও ভালো হবে।

৬) আপনি অন্যদের বিষয়ে যা ভাবছেন তার দায়ভার কিন্তু শুধুই আপনার নিজের। আপনার চিন্তাগুলো রিপ্রডিউস্ট হয়। এই মুহূর্তে আপনি অন্যের বিষয়ে কী ভাবছেন?

৭) ইমোশনালি ম্যাচিওর হয়ে উঠুন, অন্যের সমালোচনা মেনে নিন। আপনার মতামতের সঙ্গে রাজি না হওয়ার অধিকার লোকের রয়েছে এবং আপনিও অন্যের মতামত মেনে না নেওয়ার স্বাধীনতা ভোগ করছেন।

৮) আপনার অভ্যন্তরীণ কথাগুলো আপনার নীরব চিন্তা ভাবনা এবং অনুভূতিরই বহিঃ প্রকাশ ঘটায়।

৯) নিজের জন্য যা উইশ করছেন, অপরের জন্য একই উইশ করুন। এ হলো বৈরিতা মুক্ত মানবিক সম্পর্কের প্রধান রাস্তা।

১০) আপনার চাকরি দাতা সম্পর্কে নিজের ভাবনা এবং মূল্যায়ন বদলে ফেলুন।

১১) আপনি নিজে বিরক্ত বোধ না করলে অন্যের কি সাধ্য আপনার মধ্যে বিরক্তবোধ জাগিয়ে তোলে। আপনার চিন্তাভাবনা গুলো সৃষ্টিশীল। কেউ আপনাকে অপমান করলে উল্টে তাকে বলুন"ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন"।

১২) অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রধান উপায় প্রেম।

১৩) যারা নেতিবাচক চিন্তা করে হতাশাগ্রস্ত এবং কঠিন যাদের প্রকৃতি, তাদেরকে ভালোবাসুন। তাদের ভেতরে ও কিন্তু অন্য সকলের মত স্বর্গীয় স্ফুলিঙ্গ রয়েছে। সবাইকে বুঝতে হলে সকলকে ক্ষমা করতে হয়।

১৪) অন্যদের সাফল্য, প্রমোশন এবং সৌভাগ্যে খুশি হন। এতে নিজেও সম্পদশালী হয়ে উঠবেন।

১৫) নিজের জন্য স্বাস্থ্য, সুখ এবং জগতের সমস্ত মঙ্গল যেমন উইশ করছেন, অন্য সকলের জন্য তা উইশ করুন।

অধ্যায়-১৭

ক্ষমায় কিভাবে অবচেতন মনকে ব্যবহার করবেন

জীবন কারো পক্ষপাতিত্ব করে না। আপনার জীবন প্রবাহে মনের মধ্যে প্রতিরোধ তৈরি করলে এই আবেগী ভিড় আপনার অবচেতন মনে জট পাকিয়ে তুলবে এবং সকল নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করবে। বিশ্বের অসুখী, বিশৃংখলাময় অবস্থার জন্য ঈশ্বর দায়ী নয়। এই সমস্ত অবস্থা তৈরি করেছি আমরা মানুষ, নেতিবাচক এবং ধ্বংসাত্মক চিন্তাভাবনা করে আপনার বিপদ কিংবা অসুস্থতার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে দায়ী করাটাও মস্ত ভুল। মানুষ সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে যত নেতিবাচক ধারণা করবে ,ততই তারা তাদের অবচেতন মন থেকে স্বয়ংক্রিয় নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবে। তারা এ বিষয়টি বুঝতে অসমর্থ যে তারা আসলে নিজেদেরকেই শাস্তি দিচ্ছে। তাদের বিশ্বাস করতে হবে ঈশ্বর একজন স্নেহময় পিতা যিনি তাদেরকে দেখছেন ,তাদের দেখভাল করছেন ,পথ দেখাচ্ছেন, শক্তি দিচ্ছেন। যারা ঈশ্বর বিশ্বাস করবে, অবচেতন মনে মেনে নেবে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব এবং লাইফ প্রিন্সিপাল তারাই আশীর্বাদ পুষ্ট হবে।

ক্ষমতাশীলতার সারমর্ম:-

১) জীবন কাউকে পক্ষপাতিত্ব করেনা।

২) সৃষ্টিকর্তা কিংবা জীবন কখনো অসুখ-বিসুখ, এক্সিডেন্ট ,দুঃখ-দুর্দশা প্রেরণ করে না। আমাদের নেতিবাচক, ধ্বংসাত্মক চিন্তাভাবনার মাধ্যমে আমরা এই জিনিসগুলো নিয়ে আসি।যেমন কর্ম তেমন ফল হয়।

৩) সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে আপনার ধারণা হলো আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আপনি যদি ঈশ্বরের ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন, অবচেতন মন আপনার জন্য অগণিত আশীর্বাদ নিয়ে আসবে। ঈশ্বরের ভালোবাসায় বিশ্বাস করুন।

৪) জীবন কিংবা ঈশ্বর কারোরই আপনার প্রতি প্রতিহিংসা নেই। জীবন কখনো আপনাকে দোষারোপ করে না। আপনি হাত কেটে ফেললে জীবন তা সারিয়ে তোলে। আপনি আঙ্গুল পুড়িয়ে ফেললে জীবন তা ক্ষমা করে।

৫) আপনার অপরাধবোধ জীবন ও ঈশ্বরের একটি ভুয়া কনসেপ্ট। জীবন অথবা ঈশ্বর কখনো আপনাকে শাস্তি দেয় না, আপনার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ওঠেনা। আপনি ভুয়া বিশ্বাস, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আত্মদোষারোপের মাধ্যমে এগুলো নিজের উপর চাপিয়ে দেন।

৬) ঈশ্বর কিংবা জীবন আপনাকে দোষারোপ করে না কিংবা শাস্তি ও দেয় না। প্রকৃতির শক্তিরা মন্দ নয়। এদের পরিণতি নির্ভর করে আপনি কীভাবে নিজের ভেতরের শক্তিগুলো ব্যবহার করছেন তার ওপর। বিদ্যুৎ দিয়ে আপনি কাউকে হত্যা করতে পারেন আবার ঘরের বাতিও জ্বালাতে পারেন। আপনি পানির মধ্যে চুবিয়ে কোনো শিশুকে মেরে ফেলতে পারেন আবার তার তৃষ্ণা নিবারণও করতে পারেন। একজন মানুষ যেভাবে ভালো এবং মন্দকে ভাবে সেভাবেই তার চিন্তায় চলে আসে।

৭) কেউ আপনার সমালোচনা করলে তাকে বরং ধন্যবাদ বলুন। এতে বিশেষ কিছু ত্রুটি সারিয়ে তোলার সুযোগ পাবেন।

৮) আপনি যখন গাইডেন্স এবং সঠিক অ্যাকশন এর জন্য প্রার্থনা করেন, যা পাবেন তা গ্রহণ করুন। উপলব্ধি করুন এটি খুব ভালো। তাহলে আর সমালোচনা এবং ঘৃণা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।

৯) ভালো-মন্দ বলে কিছু নেই, চিন্তা থেকেই এর সৃষ্টি। খাদ্য, সম্পদ কিংবা প্রকৃত এক্সপ্রেশনের জন্য আকাঙ্ক্ষায় খারাপ কিছু নেই। বিষয়টি নির্ভর করে আপনি কীভাবে এই চাহিদাগুলো অর্জন করছেন তার ওপর।

১০) অসন্তোষ, ঘৃণা, ক্ষতি করার ইচ্ছা, শত্রুতা ইত্যাদি সবই এক ধরনের অসুস্থতা। নিজেকে এবং সকলকে ক্ষমা করুন প্রেম ও ভালোবাসা ঢেলে দিয়ে। যারা আপনাকে আঘাত করেছে তাদের মঙ্গল কামনা করুন।

১১) ক্ষমা মানে কিছু পাবার জন্য প্রার্থনা। প্রেম, শান্তি, আনন্দ, জ্ঞান এবং জীবনের সকল কিছুর জন্য মঙ্গল কামনা করূন বিনিময়ে অন্তর থেকে উধাও হয়ে যাবে সকল ঘৃণা, হুল ফোটার বেদনা। এটি হলো ক্ষমশীলতার অ্যাসিড টেস্ট।

১২) কেউ আপনাকে আঘাত করলো ,আপনার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলল, আপনি কী লোকের বিরুদ্ধে মনে নেতিবাচক চিন্তা ধরে রেখেছেন? তাহলে তো আপনি নিজেও ক্ষমা পাননি। ঘৃণার সমস্ত মূল এখনো আপনার অবচেতন মনে রয়ে গেছে, আপনি এবং আপনার সমস্ত ভালো নিয়ে ধ্বংসের খেলা খেলছেন। এ মূল উৎপাটনের একমাত্র উপায় হল ভালোবাসা। মন থেকে ওই লোকটির সর্বাঙ্গীন উন্নতি কামনা করুন।

অধ্যায়-১৮

অবচেতন মন যেভাবে মনের ব্যথা দূর করে

আপনি কঠিন একটি অবস্থার মধ্যে পড়ে গেলেন এবং সেখান থেকে উত্তরণের কোন পথ দেখছেন না, তখন কী করবেন? সমাধান সমস্যার মধ্যেই নিহিত। প্রতিটি প্রশ্নের মধ্যেই থাকে তার জবাব। আপনার অবচেতন মনের অপরিসীম বুদ্ধিমত্তা সবকিছুই জানে এবং দেখছে। এর কাছে জবাব আছে এবং এই মুহূর্তে সে আপনাকে জবাব দিচ্ছেও। তবে আপনাকে অবশ্যই শুনতে হবে। নিখাদ আত্মবিশ্বাস নিয়ে আপনার অবচেতন মনের আরজিগুলো অনুসরণ করতে হবে। একবার যদি এই নতুন মানসিক দৃষ্টিভঙ্গিকে আয়ত্ত করতে পারেন যে আপনার ভেতরকার সৃষ্টিশীল বুদ্ধিমত্তা একটি সুন্দর সমাধান নিয়ে আসছে।, আপনি যে প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন তা পেয়ে যাবেন।

আমরা সবাই অভ্যাসের দাস। অভ্যাস আমাদের অবচেতন মনের একটি কর্মকান্ড মাত্র। আমরা সাঁতার কাটতে শিখি, সাইকেল চালাই, নাচ করি, গাড়ি চালাই সবই কিন্তু করছি সচেতন ভাবে বারবার, যতক্ষণ না পর্যন্ত এগুলো আমাদের অবচেতন মনে আসন গেড়ে বসে। তারপর অবচেতন মনের অটোমেটিক হ্যাবিট অ্যাকশন এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। একে কখনো কখনো বলা হয়'দ্বিতীয় প্রকৃতি'এই হল আমাদের'প্রথম'প্রকৃতির চিন্তাভাবনা এবং কার্যকলাপের প্রতি অবচেতন মনের প্রতিক্রিয়া।

আমরা যদি নিজেদের অভ্যাস নিজেরাই গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমরা ভালো কিংবা মন্দ সবরকম অভ্যাসই তৈরি করতে পারব। যখন বারবার কোনো নেতিবাচক চিন্তা করেন বা একই কাজ বারবার করেন, এটি কিন্তু অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।

মনে রাখার বিষয়:-

১) সমাধান রয়েছে সমস্যার মধ্যেই। প্রতিটি প্রশ্নের মধ্যেই রয়েছে উত্তর।

২) অভ্যাস হলো আপনার অবচেতন মনের কর্ম। অভ্যাসের দাস মাত্র।

৩) আপনি কোনো চিন্তা বা কাজ বারবার করার কারণে অবচেতন মনে আপনার অভ্যাসের প্যাটার্নটি গঠন করেন।

৪) যেকোনো কিছু ইচ্ছে মতো নির্বাচন করার স্বাধীনতা আপনার রয়েছে। আপনি ভালো কিংবা খারাপ যে কোনো অভ্যাসই বেছে নিতে পারেন। প্রার্থনা একটি ভালো অভ্যাস।

৫) মানসিক চিত্রটি যা-ই হোক না কেন, তাতে যদি থাকে বিশ্বাসের ছোঁয়া, আপনার অবচেতন মন তা বাস্তবে রূপ দেবে।

৬) আপনার সাফল্য এবং অ্যাচিভমেন্ট এর পেছনে একমাত্র বাধা আপনার নিজের চিন্তা কিংবা মানসিক ছবি।

৭) আপনার মনোযোগ যদি ইতস্তত ঘুরে বেড়ায়, একে আপনার লক্ষ্যের ধ্যানমগ্নতায় ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। অভ্যাসটি গড়ে তুলুন। একে বলে মনকে সুশৃংখল করে তোলা।

৮) আপনার সচেতন মন হল ক্যামেরা এবং আপনার অবচেতন মন হলো এর সংবেদনশীল প্লট যার ওপর আপনি ছবির ছাপ ফুটিয়ে তোলেন।

৯) অলুক্ষণে বলে যে শব্দটি রয়েছে তা আসলে মনের একটি ভয়মাত্র। ভয়ের এই ভাবনাটি মনে পুনরাবৃত্তি ঘটে বলে লোকে অলুক্ষনে কথাটি বারবার বলে। আপনি ভাল কিছু চিন্তা করে অলুক্ষণে চিন্তা মন থেকে দূর করে দিতে পারেন।

১০) কোনো নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে হলে আপনার মনকে বোঝাতে হবে এটি পরম আকাঙ্ক্ষিত। আপনি যখন খারাপ অভ্যাস বাদ দেওয়ার ইচ্ছা করবেন তখনই কিন্তু এটি ৫১ ভাগ মন থেকে মুছে যাবে।

১১) অন্যদের কথা আপনাকে আঘাত করতে পারে না যদি না আপনার মন তা মেনে নেয়।

১২) অতিরিক্ত মদ্যপান হল পালিয়ে বাঁচার একটি অবচেতন আকাঙ্ক্ষা। অ্যালকোহলের অভ্যাসের কারণে নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক চিন্তা গড়ে ওঠে মনে। এ থেকে মুক্তি চাইলে স্বাধীনতা, মিতাচার এবং পারফেকশনের কথা ভাবুন।

১৩) অনেকেই অ্যালকোহলিক হয়ে থাকে কারণ সমস্যাটি তারা স্বীকার করতে চায় না।

১৪) যখন মনের দরজায় কড়া নাড়বে ভয়, তখন ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং যা কিছু ভালো তার দরজা খুলে দিন।

অধ্যায়- ১৯

অবচেতন মনের সাহায্যে ভয় দূর করুন

ভয়কে বলা হয় মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। ব্যর্থতা, অসুস্থতা, মানুষের সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের পেছনে দায়ী ভয়। লাখ লাখ মানুষ অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীত, তারা ভয় পায় বৃদ্ধ বয়সকে, মস্তিষ্ক বিকৃতি এবং মৃত্যুকে। কিন্তু ভয় হল মনের একটি ভাবনা। এর মানে আপনি নিজেই নিজের ভাবনাকে ভয় পাচ্ছেন।

যেই জিনিসে ভয় পাচ্ছেন ওটাই করুন। উনিশ শতকের বিখ্যাত দার্শনিক এবং কবি ওয়াল্ডো এমারশন বলেছেন,"আপনি যে জিনিসটি নিয়ে ভয় পাচ্ছেন বা যে কাজ করতে ভীত, ওটাই করুন"। আপনি যদি প্রত্যয়ী হন যে সত্যি মন থেকে জয় করবেন ভয়, আপনার সচেতন মনকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিন। অবচেতন মনের শক্তি রিলিজ করুন,সে আপনার চিন্তার প্রকৃতি অনুযায়ী প্রবাহিত হবে।

ভয়কে জয় করতে এই উপায় গুলো অবলম্বন করুন:-

১) যে জিনিসটি নিয়ে আপনি ভয় পাচ্ছেন, সেই কাজটাই করুন। মৃত্যুকে ভয় পাবেন না। কারণ মৃত্যু অনিবার্য। আপনি যদি নিজেকে প্রকৃত আত্মবিশ্বাস এবং আস্থা দিয়ে বলতে পারেন,"আমি এই ভয়টিকে জয় করব", নিশ্চয়ই পারবেন।

২) ভয় হলো আপনার মনের একটি নেতিবাচক ভাবনা। ভয় লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে। ভয়ের চেয়ে আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি শক্তিশালী। ঈশ্বরের ওপরে বিশ্বাসের চেয়ে শক্তিশালী আর কিছু হতে পারে না।।

৩) ভয় একজন মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। ব্যর্থতা, অসুস্থতা এবং মানুষের সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের পেছনে ভয়ই দায়ী। ভালোবাসা দিয়ে ভয়কে জয় করা যায়। ভালোবাসা হলো জীবনের যা কিছু ভালো তার সঙ্গে একটি মানসিক সংযুক্তি। সততা, সংস্কৃতি, ন্যায় বিচার , সদিচ্ছা এবং সাফল্যের প্রেমে পড়ুন। সবচেয়ে সেরাটি প্রত্যাশা নিয়ে বাঁচুন, সেরা জিনিসটি পাবেন।

৪) বিপরীত চিন্তার মাধ্যমে ভয় কে ঠেকিয়ে রাখুন, যেমন'আমি দেখতে সুন্দর, আমি ভারসাম্যপূর্ণ, শান্ত ও সমাহিত', এতে লাভ হবে অনেক।

৫) স্মৃতিভ্রংস নিয়ে ভয় পরীক্ষার সময় ব্যাপক প্রভাব রাখে। আপনি দৃঢ় চিত্তে এ কথাগুলো বলে এই ভয়টি দূর করতে পারেন,'আমরা যখন যা জানবার প্রয়োজন তার জন্য আমার রয়েছে একটি চমৎকার স্মৃতি শক্তি', কল্পনা করুন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য বন্ধুরা আপনাকে অভিনন্দিত করছে। এই কল্পনাটি সংরক্ষণ করুন এবং আপনি জয়লাভ করবেন।

৬) আপনি সাঁতার কাটতে ভয় পেলে কল্পনায় আনন্দের সঙ্গে সাঁতার কাটতে থাকুন। মানসিকভাবে পানিতে নেমে পড়ুন, পানির শীতল স্পর্শ অনুভব করুন, ছবিটি পরিষ্কার দেখতে থাকুন। মনগতভাবে এটি দেখতে থাকলে আপনি জলে নামার পরে ঠিকই সাঁতার কাটতে পারবেন।

৭) বন্ধ জায়গায় যদি আপনার ভয় লাগে, ধরুন এলিভেটর, মানসিকভাবে কোনো এলিভেটরে চেপে বসুন। দেখবেন কত দ্রুত এলিভেটারে চাপবার ভয় দূর হয়ে গেছে।

৮) আপনি জন্ম নিয়েছেন দুটি ভয় কে নিয়ে। পড়ে যাওয়ার ভয় এবং উচ্চকিত কন্ঠ শোনার ভয়। অন্য ভয়গুলো আপনার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এসব ভয় জয় করুন।

৯) স্বাভাবিক ভয় পাওয়াতে কোন সমস্যা নেই। তবে অস্বাভাবিক ভয় পাওয়া খুব খারাপ জিনিস এবং এটি ধ্বংসাত্মক বটে। সারাক্ষণ ভয়ের ভাবনার মধ্যে ডুবে থাকলে তা থেকে জন্ম নেয় অস্বাভাবিক ভীতি, অবসেশন এবং আরো নানান জটিলতা, কোনো কিছু নিয়ে ক্রমাগত ভয় পেতে থাকলে তা আতংকে রূপ নেয়।

১০) অস্বাভাবিক ভয় আপনি জয় করতে পারবেন তখন যখন অবচেতন মনের শক্তির কথা জানতে পারবেন, বুঝতে পারবেন এটি সমস্ত অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে।

১১) ব্যর্থতা নিয়ে ভয় থাকলে সাফল্যের প্রতি মনোযোগ দিন। অসুস্থতা নিয়ে ভয় করলে সুস্বাস্থ্যের মধ্যে বসবাস করুন। এক্সিডেন্টের ভয় পেলে ঈশ্বরের কাছে প্রটেকশন চান। মৃত্যু ভয় থাকলে অনন্ত জীবনের মাঝে বাস করুন। ঈশ্বরই জীবন এবং সেটাই এখন আপনার জীবন।

১২) আপনি যা নিয়েই ভয় পান না কেন তার সমাধান কিন্তু রয়েছে আপনার আকাঙ্ক্ষার মাঝে। আপনি অসুস্থ হলে সুস্বাস্থ্য আকাঙ্ক্ষা করুন, কারাগারের ভয় থাকলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা করুন। ভালো কিছু প্রত্যাশা করুন। মানসিকভাবে আত্মনিবেদন করুন ভালোর উপর এবং জানবেন আপনার অবচেতন মন সব সময় এর জবাব দেয়। এ কখনো ব্যর্থ হয় না।

১৩) যেসব নিয়ে আপনি ভয় পাচ্ছেন সেসবের আসলে কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই শুধু আপনার মনের ভেতরে ছাড়া। ভালো কিছু কল্পনা করুন, ভালো আসবে

১৪) ভয়কে উপেক্ষা করতে শিখুন। এটাই সেরা ওষুধ। কোনো কিছুই আপনার মনকে বিচলিত করতে পারবে না। কোন পরামর্শ বা লোকের সাধ্য নেই আপনাকে ভীত করে তোলে। শক্তিটি আপনার ভেতরেই রয়েছে। এবং আপনার চিন্তাগুলো যখন ভালো কিছুর ওপর ফোকাসড হবে, ঈশ্বরের শক্তি তখন আপনার ভালো চিন্তা ভাবনার সঙ্গে যুক্ত হবে।

অধ্যায়-২০

সারাক্ষণ প্রানচঞ্চল কীভাবে থাকবেন

আপনার অবচেতন মন কখনো বুড়ো হয় না। এ হলো অন্তহীন, অনন্ত যৌবনা এবং সীমাহীন। এ হলো সৃষ্টিকর্তার সর্বজনীন মনের একটি অংশ যার জন্ম নেই, মৃত্যু নেই।

ক্লান্তি, কিংবা বার্ধক্য, কোনো আধ্যাত্মিক গুণ কিংবা শক্তির ওপর প্রভাব ফেলে না। ধৈর্য, সত্যনিষ্ঠা, বিনয়, সদিচ্ছা, শান্তি, হারমোনি এবং ভ্রাতৃসুলভ প্রেমের বয়স কখনো বাড়ে না। আপনি যদি এই গুণগুলো এই সাদাসিধে জীবনে উৎপাদন করে যেতে পারেন ,সর্বদাই প্রাণচঞ্চল থাকবেন। সময় ফুরিয়ে যাওয়ার ভয় আমাদের মন এবং শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ ভয় সময়ের আগেই দেহ মনে নিয়ে আসতে পারে বার্ধক্য।

মনে রাখুন এ কথাগুলো:-

১) সময় চলে যাওয়ার ভয়টা বয়সের আগেই মানুষকে বুড়িয়ে দেয়।

২) ধৈর্য্য, দয়া, প্রেম, সদিচ্ছা, আনন্দ, সুখ, জ্ঞান এবং অপরকে বুঝতে পারার গুণাবলী গুলো কখনো বুড়িয়ে যায় না। এগুলোর আবাদ করুন, প্রকাশ করুন এবং মন ও শরীরে তরুণ থাকুন।

৩) বয়স উড়ে যায় না; এ মানুষের মনে জ্ঞানের ভোর নিয়ে আসে।

৪) আপনার জীবনের সবচেয়ে উৎপাদনশীল বছরগুলো হতে পারে ৬৫ থেকে ৯৫।

৫) বয়স বাড়লে তাকে বরং স্বাগত জানান। এর সাহায্যে কিন্তু আপনি জীবনের সীমাহীন এক পথের দিকে এগিয়ে চলেছেন।

৬) ঈশ্বর ই জীবন এবং আপনার জীবন এখন তাই। জীবন হলো সেলফ-রিইউনিয়ন, অসীম, তাকে ধ্বংস করা যায় না এবং সকল মানুষের বাস্তবতা। আপনি অনন্ত কাল বাঁচবেন কারণ আপনার জীবন ঈশ্বরেরই জীবন।

৭) আপনি আপনার মনকে দেখতে পান না তবে জানেন আপনার একটি মন আছে। আপনি স্পিরিট দেখতে পান না তবে আপনি খেলার স্পিরিট, একজন চিত্রশিল্পীর স্পিরিট, একজন মিউজিসিয়ানের স্পিরিট ইত্যাদি সবই বুঝতে পারেন। আপনার মনে সত্য, মঙ্গল এবং সৌন্দর্যের যে স্পিরিট প্রবাহমান তা কিন্তু বাস্তব। আপনি জীবন দেখতে পান না তবে জানেন আপনি বেঁচে আছেন।

৮) বুড়ো বয়সকে বলা হয় ঈশ্বরের ধ্যান। বুড়ো বয়সের আনন্দ তরুণ বয়সের আনন্দের চেয়েও বেশি।

৯) আপনি নিজেকে যতটা তরুণ ভাববেন ততটাই তরুণ থাকবেন। আপনি নিজেকে যতটা বলবান ভাববেন ততটাই বলবান। আপনি নিজেকে যদি ব্যবহার করার উপযোগী ভাবেন, তবে তাই। আপনি আপনার চিন্তা-চেতনার মতোই তরুণ।

১০) আপনার পাকা চুল আপনার অ্যাসেট। আপনি আপনার পাকা চুল বিক্রি করছেন না, বিক্রি করছেন আপনার প্রতিভা, সামর্থ্য এবং জ্ঞান যা আপনি দীর্ঘদিন ধরে অর্জন করেছেন নানা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে।

১১) ডায়েট এবং মাল্টিভিটামিন সেবন আপনাকে তরুণ করতে পারবে না। মনে রাখবেন একজন মানুষ যা ভাবে সেই ঠিক তাই।

১২) বুড়ো হয়ে যাওয়ার ভয় মানসিক এবং শারীরিক বৈকল্য সৃষ্টি করে। আমি সবচেয়ে যেটা ভয় পাই সেটাই আমার ওপর আছড়ে পড়বে।

১৩) আপনি যখন স্বপ্ন দেখা বাদ দেন তখন আপনি বুড়ো হয়ে যান, বুড়ো হয়ে যান যখন আপনি জীবনের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। ঈশ্বরের সত্য দিয়ে মনকে ভরে তুলুন, তার প্রেম দ্বারা উজ্জীবিত হন–এটাই হলো তারুণ্য।

১৪) সামনে তাকান ,আপনি সবসময়ই অনন্ত জীবনের দিকে তাকিয়ে আছেন।

১৫) আপনার অবসর একটি নতুন অভিযাত্রা। আপনি চাকরি করার সময় হয়তো অনেক কিছুই করতে পারেননি। এখন অবসরে গেছেন বলে সেই অপূর্ণ সাধগুলো পূরণ করতে নেমে পড়ুন।

১৬) একজন প্রযোজক হন, সমাজের বন্দী নয়। নিজের সামর্থ্য, গুণাবলী ইত্যাদি সম্পর্কে উদাসীন হবেন না।

১৭) তারুণ্যের রহস্য হলো ভালোবাসা, আনন্দ, অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং হাসি। যেখানে ঈশ্বর আছেন সেখানে সকল আনন্দ আছে। যেখানে ঈশ্বর নেই সেখানে কেবলই অন্ধকার।

১৮) আপনাকে সমাজের দরকার আছে। বহু বিশ্বখ্যাত দার্শনিক, চিত্রশিল্পী, বিজ্ঞানী, লেখক এবং অন্যান্যরা তাঁদের সেরা কাজগুলো করেছেন ৮০ বছর বয়সে।

১৯) বৃদ্ধ বয়সের পুরস্কার হল ভালোবাসা, প্রেম, শান্তি, ধৈর্য, বিনয়, বিশ্বাস, আস্থা ইত্যাদি।

২০) আপনি অনন্ত জীবনের একটি সন্তান যার কোন শেষ নেই। আপনি অনন্তের উত্তরাধিকার। আপনি অপূর্ব।

সমাপ্ত

(উপরোক্ত লেখাটি Dr. Joseph Murphy-র লেখা "The Power of Your Subconscious Mind"এর সারসংক্ষেপ। আপনি চাইলে পুরো বইটি পড়তে পারেন।)

ধন্যবাদ