The Monkey Theory

আমাদের মাথার মধ্যে অনেক রকমের বানরের বসবাস আছে । তারা রীতিমত একই ঘরের বাসিন্দা হয়ে থাকে । এদের এক একজনের স্বভাব আর কাজ এক একরকম। এই বানরগুলি আমাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং আবেগ।

যেমন,প্রক্রাস্টিনেটর মানকি বা অলস বানর। এই বানরের কাজ হলো কাজের ঢিলেমি করানো । আজ নয় কাল বা কাল নয় পরশু । এই ধরনের বানরেরা পরচর্চা করতে ভালোবাসে , শৃঙ্খলা এদের একদম অপছন্দের । এরা নিম্ন কর্মক্ষমতার ধূসর অঞ্চলে বাস করে। কখনো কি ভেবে দেখেছো , ফ্যানে জমে থাকা ধুলো মুছতে তোমার ৩ দিন লাগে কেনো ? বা পচে যাওয়া আপেল টা ফেলে দিতে তোমার ২ দিন লাগে কেনো? কিম্বা ওই কোনায় পড়ে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে তোমার দিনের পর দিন লাগে কেনো? কারণ পি - মানকি বা অলস বানর। সে সবসময় আগামীতে বিশ্বাস করে এবং তোমাকে আমাকেও করায়। কারণ সে ভালোভাবে জানে যে আগামী কাল যখন নতুন উদ্যম নিয়ে শুরু করতে যাবে সেটা অনেক কঠিন হবে । পি - মানকি আমাদের অলস ছাড়া আর কিছু তৈরি করে না।

দ্বিতীয় বানর হলো ড্রাঙ্ক মানকি বা মাতাল বানর। নমনীয়তা তার অনেক প্রিয় । কিন্তু সে একদম অধীনে থাকা পছন্দ করে না । ক্ষণে ক্ষণে তার ইচ্ছে বদলাতে থাকে । তার সিদ্ধান্তে সে একভাবে উপনীত থাকতে পারে না । ঠিক যেনো এক মাতাল । এখন এক কথা বলবে আর তখন এক । এই মাতাল বানরের প্রভাবে আমরা খুব বেশি হলে ২ দিন নিজেদের সিদ্ধান্তে উপনীত থাকতে পারি তারপর আবার আগের অবস্থা।

এবার আসা যাক ফিয়ার মানকি বা ভীত বানরের কথায়। এরা সুরক্ষা বলয়ে থাকতে খুব ভালোবাসে । পরিবর্তন এদের ভীষন ভয়ের স্থান । সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে এরা । সামান্য পরিবর্তনও এদের ভয় পাইয়ে দেয় ।

এই তিন বানরের ওপর যে কন্ট্রোল করতে পারে সে হলো হিউম্যান মানকি বা মানব বানর । এই বানর হলে তুমি নিজে । মানব বানর তোমাকে সব সম়য় উচ্চতার শিখরে নিয়ে যেতে চায়। কৃতিত্ব তার ভীষন পছন্দের । বাহানা সে একদম পছন্দ করে না। সব সময় সে একটাই ভয়ে থাকে যে বাকি তিন বানর কোনো গোলমাল না করে ফেলে। তাকে সব সময় এদের সাথে লড়াই করে যেতে হয় ।

আমরা সারাদিনে যদি ৫০,০০০ ভাবনা চিন্তা গ্রহণ করে থাকি তার ৭০% হলো খারাপ বা দুশ্চিন্তা। আমরা বানরের মত এক জায়গায় থাকি না। তখনই এক চিন্তা করি আর তখনই আর এক । এক ডালে আমরা বসে থাকতেই জানি না । হিউম্যান মানকি এর কাজ হলো আমাদের এক ডালে বসিয়ে রাখা । অর্থাৎ নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত থাকা । বাকি তিন বানরের প্রভাব কম করা । অর্জন বেশি করো , চিন্তা কম । ভালোবাসা দাও, নিন্দে কম। আমরা সবাই এগুলো মেনে চলতে চাই আর সেই কাজে আমাদের বাধা দেই বাকি তিন বানর আর সাহায্য করে কিন্তু এই মানব বানর ।

গৌতম বুদ্ধের ওপর এক তথ্যচিত্রে দেখানো হয় উনি তার ছাত্রদের এক গল্পঃ শোনাচ্ছিলেন। এক ব্যক্তি ও তার ৪ স্ত্রীর গল্পঃ। মৃত্যুকালে সে তার প্রত্যেক স্ত্রীকে ডেকে জিজ্ঞেস করে যে কে তার সাথে যেতে চায়? চতুর্থ স্ত্রী , যাকে কিনা সে সব থেকে ভালোবাসতো , দামী গহনা , শাড়ি সব দিত সে নাকচ করে দেয় এই বলে যে তার জীবন এখন অনেক বাকি ।শুধু শুধু সে তার প্রাণ বিসর্জন দিতে পারবে না। তার তৃতীয় স্ত্রী তাকে এই বলে নাকচ করে দেয়, সেই ব্যক্তি মারা গেলে সে আবার নিজের সংসার পাতবে অন্য কারো সাথে । এই উত্তর শুনেও ব্যক্তিটি মর্মাহত হয়। তার দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে এই বলে স্বান্তনা দেয় সে কবরস্থান অব্দি আসবে । তার বেশি যেনো তার থেকে আশা না রাখে । এবার সে তার চতুর্থ স্ত্রীকে ডেকে পাঠায় যাকে সে সারাজীবন অবজ্ঞা করে গেছে। তার স্বামীর মৃত্যুপরবর্তি কালে তার সাথে যেতে সে রাজি হয়। এই শুনে সেই ধনী ব্যক্তি টি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারে না।

চার স্ত্রীর এই সুন্দর উপমাটি এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে :

•প্রত্যেক ব্যক্তির চারজন স্ত্রী/স্বামী থাকে।

• চতুর্থ স্ত্রী আমাদের শরীর এবং তার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। আমরা কাজ করি

আমাদের শরীরের উপর এবং এর সৌন্দর্য এবং এটি বজায় রাখার জন্য প্রায় সবকিছুই করি

, কিন্তু এটি আমাদের মৃত্যুর মুহুর্ত ছেড়ে দেয়!

•তৃতীয় স্ত্রী আমাদের বস্তুগত সম্পদের প্রতীক (অর্থ, সম্পত্তি,

গহনা ইত্যাদি), যা আমরা মারা যাওয়ার পরে অন্য কারো কাছে যাবে।

• দ্বিতীয় স্ত্রী আমাদের সম্পর্কের প্রতীক যে পারে না কবরের ওপারে আমাদের সাথে থাকতে।

•প্রথম স্ত্রী আমাদের মন, কাজ এবং কর্মের প্রতীক। সর্বদা আমাদের সাথে, কিন্তু অলক্ষিত থেকে যায়, এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু উপেক্ষা করা হয় এবং এমন কিছু যা একজন প্রায়শই শুধুমাত্র জীবনের শেষ সময় উপলব্ধি করে ।

মানুষের মন বানরে ভরপুর। তারা আপনার জন্য কোন কারণ ছাড়ায় হঠাৎ মেজাজ পরিবর্তন করে। ভয় বানর ক্রমাগত মনে করিয়ে দেয় যে ভুল হতে পারে। মাতাল বানর অপ্রত্যাশিত আচরণ প্রদর্শন করে। পি-বানর আপনাকে বলে যে কেন এই কাজটি এই মুহূর্তে করা ভাল নয় । মানব বানর তা সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, অন্যান্য বানর থেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও। বিভিন্ন চিন্তাভাবনা মানুষের মনকে কষ্ট দেয় এবং প্রায়শই মানুষের শরীরে রোগের উৎস হয়ে দেখা দেয় । এই বানরগুলোকে বোঝার জন্য এগিয়ে যাওয়া জরুরি বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলা করা উচিত।

পি - মানকি হচ্ছে শক্ত বাদাম এর মতো যাকে ভাঙা সোজা না । এর মূল কাজ হলো অলসতাই বাস করা এবং করানো । কোনো কাজ আমরা আজ পূরণ করবার মনস্থির করলে , পি - মানকি সব সময় সেটি পর দিন করবার জন্য চাপ দিতে থাকে । মূলত এই অলস বানরের জন্যই আমরা আমাদের সামনে থাকা প্রয়োজন কাজ কে অবহেলা করি । পপ সাইকোলজি লেখক ম্যালকম গ্লাডওয়েল বলেছেন , কোনো কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে ১০,০০০ বার অভ্যাস এর প্রয়োজন । অন্ততত পক্ষে ৩ ঘন্টা সময় মনযোগ দেওয়া প্রয়োজন , কিন্তু তিনি এও লক্ষ্য করেছেন , পি - মানকির উপস্থিতির জন্য এক ঘন্টা মননিবেশ করাও কষ্টকর মনে হয় ।

পি- মানকি বা অলস বানরের সাথে হিউম্যান মানকি এর সব সময় দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে । যেহেতু অলস বানর আকারে বড়ো এবং শক্তিশালী তাই মাঝে মাঝে আহত হলেও সম্পূর্ণ হেরে যায় না । ধরুন আপনি কোনো এক রবিবার প্রজেক্ট নিয়ে বসেছেন এই ভেবে যে ,সেটি কে শেষ করেই উঠবেন । ঠিক সেই সময় অলস বানর বলে উঠবে , অনেক্ষন ধরে কাজ হচ্ছে একটু বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন । সেই সময় হিউম্যান মানকি তাকে দমিয়ে দিলে সে আবার বলে উঠবে , রবিবার ছুটির দিন । আগামী কাল সোমবার , তাই আগামী কাল করতে । একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে , ধরুন আপনার বাড়ির বাগানে গিয়ে গাছের পরিচর্চা করতে মন হয়েছে , বাড়ির থেকে বেরোনোর সময় যেই আপনার চোখ টেবিল এর ওপর রাখা চিপস এর প্যাকেট এবং টিভির রিমোট এর দিকে যাবে , ঠিক সেই সময় আপনার ভেতরে থাকা অলস বানর আপনাকে সেই দিকে টেনে নিয়ে যাবে । আর এভাবেই বার বার এই অলস বানর আমাদের লক্ষ্য ভ্রষ্ট করে দেয় ।

এই সময় হিউম্যান মানকির উপদেষ্টা হয় জ্ঞানের ঈগল । সে হিউম্যান মানকি কে বোঝায় যে অলস বানর কে হারানো সহজ না। তার জন্য কিছু ট্রিকস আছে । যেমন :

• ঘুমানোর ১৫ মিনিট আগে পড়ুন!

• একটি করণীয় তালিকা তৈরি করুন এবং এটি প্রতিদিন আপনার পকেটে রাখুন!

• ৪০ মিনিটের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং নিজেকে ২ মিনিটের বিরতি দিন, কিন্তু নিশ্চিত করুন যে পি-মানকি আপনাকে এই ২ মিনিটের মধ্যে বোকা বানাবে না। যদি সে আক্রমণ করার চেষ্টা করে, নিজেকে বলুন, এটি একটি ফাঁদ!

• প্রতিদিন বা প্রতি বিকল্প দিনে আপনার ঘর পরিষ্কার করুন।

• মনে রাখবেন দিনে তিন থেকে চার লিটার জল পান করতে হবে আপনার শক্তি স্তর বৃদ্ধি করবার জন্য।

• এক ঘন্টায় ১০,০০০ বার আপনার ফোন স্পর্শ করবেন না!

• আপনি যখন ফোন চালু করবেন তখন দ্রুত নতুন বিজ্ঞপ্তির প্রতি আকর্ষণ বোধ করবেন না।

• আপনার কাজ শেষ করুন এবং বিজ্ঞপ্তি চেক করুন ।

• জাঙ্ক ফুড কমানোর চেষ্টা করুন!

• কোনো কাজ কখনই আগামীকালের জন্য রেখে দেবেন না। মনে রাখবেন পি-বানর ভালোবাসে "আগামীকাল" কে।

এভাবে চলতে থাকলে , দুই সপ্তাহ পর আমরা নিজেরাই বুজতে পারবো যে অলস বানরের প্রভাব কম হচ্ছে । গ্রে জোনে থাকা পি - মানকি কে হারিয়ে হিউম্যান মানকি এভাবেই কালার জোনে প্রবেশ করে ।

কালার জোনে প্রবেশ করবার পর , সেই জোনে টিকে থাকার জন্য হিউম্যান মানকি কে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় , যাতে অলস বানর তার কাজ এ বাধা তৈরী করতে না পারে । প্রথমে , বিস্তারিত জানার চেষ্টা করতে হবে । অলস বানর যে যে বিষয়ে দেরি করাতে চাইবে , সেই সেই ক্ষেত্রে হিউম্যান মানকি কে পি - মানকির থেকে তার কারণ জানতে হবে । যখন পি মানকি ভরসা দেবে যে অমুক মাসের অমুক দিন থেকে কাজ শুরু করবো , জানতে হবে যে সেটি একটি ফাঁদ । তাই এসব অজুহাত কে নাকোচ করে দিয়ে সময় এর কাজ সময়ে করতে হবে । নিজের কাজের প্রতি দৃড় প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে । যে যে বিষয় গুলি নিজের লক্ষের পথে বাধা সেগুলি বাছাই করে নেওয়া প্রয়োজন । যেই মুহূর্তে মনে হবে যে লক্ষ্য ভ্রস্ট হচ্ছে , ঠিক সেই সময় সচেতন হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে , যেটা করছি সেটা ঠিক কিনা ! অনেক সময় এভাবে এক ই নিয়মে থাকতে থাকতে আমরা বিরক্ত হয়ে যায়, মনে হয় যে থাক ! আর ভালো লাগছে না । এইসময় নিজেকে শান্ত করে প্রশ্ন করা দরকার , এই কাজ টি যদি না সম্পূর্ন করি তাহলে কত বড়ো ক্ষতি হতে পারে । এভাবে আবার কাজ করবার উৎসাহ আসে । যতক্ষন না কাজ সম্পন্ন হবে ততক্ষন চেষ্টা করে যেতে হবে । পি - মানকি সাময়িক আনন্দ দেয় কিন্তু তার ফলস্বরূপ দীর্ঘ দিনের দুঃখ সৃষ্টি হয় । তাই অলস বানর কে বোকা বানানো প্রয়োজন ।

১. আমরা সবাই জিততে চাই, কিন্তু বিলম্ব আমাদের থামায়।

২. গ্রে জোনে পারফর্ম করা বন্ধ করুন। আপনি আপনার সম্ভাব্য শিখরে পৌঁছতে পারবেন না ।

৩. পি-বানর দুই ধরনের মানুষের সাথে ডিল করতে পারে না। যারা সুশৃঙ্খল এবং লক্ষ স্থির.

৪. নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় রাখা।

৫. বিলম্ব একটি ধীর বিষ। এর প্রভাব তাৎক্ষণিক নয়, তবে এটি অপরিবর্তনীয় যখন পি-বানর আপনার উপর কাজ করছে তখন চিনুন। বানরের সাম্রাজ্য ধ্বংস করার জন্য সেই উপলব্ধিই যথেষ্ট।

৬. একটি স্টপ-ডুয়িং তালিকা তৈরি করুন।

৭. ধৈর্য ধরুন। পরিবর্তন হতে সময় লাগে। তবে চেষ্টা করা বন্ধ করবেন না।

৮. সামঞ্জস্যতা মূল।

এভাবেই ধীরে ধীরে অলস বানর , হিউম্যান মানকির কাছে দুর্বল হয়ে যেতে থাকবে ।

ফিয়ার মানকি বা ভীত বানর , যার কাজ হলো কোনো কাজ শুরুর আগেই তার ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আর তার নেগেটিভ ফল হওয়ার ভয় সৃষ্টি করা । এই বানর সক্রিয় হয়ে হিউম্যান মানকির আত্মবিশ্বাস কে টেনে নামিয়ে আনার ভরপুর চেষ্টা করে আর অনেক ক্ষেত্রে সফল ও হয়ে যায়। ভীত বানর কখনও কখনও গভীর রাতে আমাদের চিন্তায় তাড়া করে। যখন প্রক্রাস্টিনেটর বাঁদরের ক্রিয়াকলাপ আপনার ক্যারিয়ার এবং বৃদ্ধিকে ধ্বংস করে, ভীত বানর আপনাকে চাপ দিতে পারে, প্রায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ভীত বানর ঠিক তখন ই চাপ দেয় যখন আমরা সচেতন থাকি না । সেই সময় ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে । যদি আমরা সজাগ এবং সচেতন থাকি আর নিজের কাজ এর প্রতি আত্মবিস্বাস রেখে চলি তাহলে ভীত বানর কোনো ভাবেই হিউম্যান মানকি কে হারাতে পারবে না । ভয়ের রাজ্যে নিজের পথ খুঁজে নিতে গিয়ে ,হিউম্যান মানকি মুখোমুখি হয় তিন বন্দি বানরের সাথে , তারা হলো : আত্মবিস্বাস, সাহস এবং সৃজনশীলতা । ভীত বানর শক্তি শালী হলে আমাদের মধ্যে থাকা এই তিন বানর কে বন্দি করে ফেলে । এই বন্দি দশা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ না । "দ্য লাইফলাইন" নামে একটি বই যা ভয় বানর সঙ্গে মোকাবিলা করবার গোপন পন্থা বলে দেয় । ভয় বানরের তিনটি পরিবার রয়েছে, তাদের তিনটির সাথেই মোকাবিলা করতে শিখতে হবে হিউম্যান মানকি কে। সেগুলি হলো :

১) অপমান-প্রমাণ পরিবার :-

তারা আপনাকে এমন সমস্ত জিনিস এড়াতে বাধ্য করবে যা আপনার অহংকে আঘাত করতে পারে। এই পরিবার আপনার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা, প্রশ্ন করা, জনসমাবেশে কথা বলা , আপনার অধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা বিভিন্ন বিষয়ে ভয় সৃষ্টি করে । এই পরিবারে থাকা উদ্বিগ্ন বানরকে বিভ্রান্ত রাখার চেয়ে ভাল আর কিছু নেই।

বিভ্রান্তি পদ্ধতি:

•> উদ্বিগ্ন? একটি খেলা দিয়ে নিজেকে বিভ্রান্ত করুন।

•> ভয় পাচ্ছেন? নিজেকে সারপ্রাইজ দিন।

•> এইভাবে ভীত বানর কে চমকে দিন । সে ভাববে আপনি তাকে আনন্দ দিচ্ছেন অথচ আপনি তাকে চমকে দিয়ে ভয় কে জয় করে নিজের কাজ করছেন ।

২) অন্ধকার ঘটনা পরিবার :-

তারা আপনাকে অতীতের ভুল এবং ভবিষ্যতের উদ্বেগ নিয়ে তাড়িত করবে। এই পরিবারের বানরের সাথে মোকাবিলার জন্য তিনটি নিয়ম আছে :

•> যখন আপনি চাপে থাকেন, তখন কর্টিসল, স্ট্রেস হরমোন মুক্তি পায় যা ভয় এবং উদ্বেগের জন্য দায়ী। আপনি সহজ অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম, ভ্রমরী বা দিয়ে শুরু করতে পারেন বা আরও সহজ কিছু। গভীর শ্বাস এন্ডোরফিন নামক ভালো রাসায়নিক নির্গত করে খুব শীঘ্রই, যার ফলে ভয় বানর নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়!

•> নেতিবাচক সময়ে আশা অনেক রোগ নিরাময় করে, অনেক কঠিন পরিস্থিতির সমাধান করে এবং অনেক যুক্তি জিতে যায় । আশাবাদী ব্যক্তি অনেক দূর যেতে পারেন।

•> যখন ভীত বানর নানারকম প্রশ্ন করবে তখন ঠান্ডা মাথায় ভাবা উচিত , আদেও কি বিষয় টি গম্ভীর নাকি তিল কে তাল বানানো হচ্ছে !

৩) মৃত্যু-প্রমাণ পরিবার :-

এরা ভালো ভয়ের বানর। মানব বানরের ,তাদের সাথে আচরণ করার সময় তার মতামত ব্যবহার করা প্রয়োজন । এই পরিবারের বানরের সাথে মোকাবিলা করতে প্রয়োজন নিজস্ব মতামত ,বিবেচনা ।

মাতাল বানর আলাদা। এই বানর তার রূপ বদলাতে পারে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে। পি-বানর আপনার পথে বিশাল বাধা দেয়। ভীত বানর আপনার পছন্দ এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে আপনার আত্মার ক্ষতি করে। বন্য মাতাল বানর আপনার সম্পর্কের ক্ষতি করে এবং ধ্বংস করে আপনার জীবনের গুণমান। মাতাল বানর মানুষের আবেগের চালক এবং নেতৃত্ব দিতে ভালোবাসে। আমাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া সাধারণত মাতাল বানরের প্রতিক্রিয়া। আমরা সারাদিনে যা আবেগ অনুভূতি অনুভব করি , কখনো আমরা খুব উচ্ছসিত হয় আবার কখনো দমে যায় । আমাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় যে বিভিন্ন রকম অবুভূতি কাজ করে তা এই মাতাল বানরের জন্য।

এই মাতাল বানর কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: -

১. সবুজ মাতাল বানর :

সবুজ মাতাল বানর সূক্ষ্ম, নরম এবং আনন্দময়। আমাদের অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে এবং যতদূর পর্যন্ত সম্ভব সবুজ বানরের সাথে থাকতে হবে। এটা আমাদের ভালো বোধ করতে, মানুষকে ভালোভাবে বুঝতে এবং উন্নতি করতে , এবং সাধারণভাবে জীবনের মান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

২. লাল মাতাল বানর :

লাল মাতাল বানর রাগ, অহং, হিংসা, ঘৃণা এবং নেতিবাচক আবেগ আমরা অনুভব করি , সব কিছুর জন্য দায়ী । এই বানর ব্যক্তিকে অহংকারী, ঘৃণাপূর্ণ, অভিযোগকারী, বিরক্তিকর এবং আরও অনেক কিছু করে তোলে।

আপনি কিভাবে একটি সম্মিলিত বানর আক্রমণ মোকাবেলা করবেন?

১. পর্যবেক্ষণ করুন: প্রথমত, বানরগুলিকে বুঝুন এবং লেবেল করুন। আপনার বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি লিখে রাখুন এবং কোন বানর দায়ী তা বের করার চেষ্টা করুন

।

২. একবার যদি আপনি জেনে যান যে বানররা কিভাবে কাজ করে, আপনি ঠিক করুন প্রথমে কার সাথে মোকাবিলা করতে চান।

চেরি খাওয়ানো, আশার মোমবাতি জ্বালানো, ইত্যাদির মধ্যে যে বিকল্পটি সেরা মনে হয় সেটি বেছে নিন।

৩. এক সময়ে একটি মাত্র বানরের সাথে মোকাবিলা করবার কথা ভাবা উচিত না । এমন হলে হিউম্যান মানকি একটি মাত্র বানরের সাথে মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকবে আর সেই সময় বাকি বানরেরা বেশি উৎপাত শুরু করবে ।

এবার আসা যাক একটি মায়া দ্বীপের কথায় । আপনার এমন একটি বিশেষ সমস্যা আছে যা আপনার মানসিক স্থান দখল করে রয়েছে । হিউম্যান মানকি এই দ্বীপে আসে এবং জানতে পারে যে, বেগুনি দ্বীপ এমন একটি অঞ্চল যেখানে যাদু ঘটে। এই দ্বীপে ভালো বানর সক্রিয় হয়ে যায় । বেগুনি দ্বীপে, ভীত বানরটি ভয় এড়াতে সক্রিয় থাকবে, বিলম্বকারী বানর কেবল সেইবজিনিসগুলিতে বিলম্ব করবে যেগুলো গুরুত্বহীন। মাতাল বানর আপনার জন্য কাজ করবে, সেখানে রাগের মুহূর্ত হবে, কিন্তু শুধুমাত্র গঠনমূলক কারণে।সেখানে বিভ্রান্তি হতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র আপনার জন্য সঠিক টা বেছে নিতে ।

পার্পল আইল্যান্ডে থাকার নিয়ম!

১. রিমোট কন্ট্রোল চুরি করুন।

মানব বানর প্রথমে এটির অর্থ বুঝতে পারেনি। এই দ্বীপে থাকা প্রবীণ বাসিন্দা তখন তাকে লোকদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেন যার উপর তার সুখ নির্ভর করে।

২. একটি 'ধন্যবাদ' এবং 'দুঃখিত' লেবেল পরুন।

প্রবীণ এই বাসিন্দা বলেন, ‘আমি আমার জীবদ্দশায় অনেক মানুষকে দেখেছি

যাদের অহংকার ছিল সবচেয়ে বড় জিনিস, যা দুঃখের স্থায়ী আমন্ত্রণ'।

৩. কম আশা করুন এবং বেশি কার্যকর করুন।

প্রবীণ এই নাগরিক আরও বলেন, ‘তোমাকে কাজে বেশি মনোযোগ দিতে হবে

এবং ফলাফল থেকে কম আশা রাখতে হবে। তোমার দরকার

কাজে মন দেওয়া এবং এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাকে ভাল ফলাফলের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে দেয়। বেশির ভাগ মানুষই ভবিষ্যত চিন্তায় থাকে

এবং তাই তাদের পরে আবার পার্পল আইল্যান্ড থেকে বের করে দেওয়া হয় '।

৪. বানর-সংখ্যার ধ্যান কৌশল ব্যবহার করুন। মেডিটেশন, সেরোটোনিন নামক ফিল-গুড হরমোন নিঃসরণ করে এবং অক্সিটোসিন যা মেজাজ উত্তোলনের জন্য দায়ী। এটা সমস্ত ভাল বানর নিয়ন্ত্রণ নিতে সাহায্য করে ।

৫. ভান করুন আপনি একটি অদৃশ্য বেগুনি মুকুট পরেছেন।

চারপাশে তাকান এবং বেগুনি রঙটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন। বেগুনি রঙ আপনার বেগুনি দ্বীপে থাকার জন্য একটি মৃদু অনুস্মারক হতে পারে।

চেষ্টা করুন এবং অনুভব করুন যে আপনার মাথায় বেগুনি শক্তি রয়েছে যা আপনাকে বলছে শীতল, শিথিল এবং কার্যকর হতে। এটি আপনার বেগুনি মুকুট।

এরপর হিউম্যান মানকি নিজের কাজে মনোযোগী হয়ে পড়ে । সে কিন্তু সব সময় তার একটি দৃষ্টি বেগুনি মুকুটের ওপর রাখতো যাতে আর কোনো বানর তাকে ভুল পথে চালিত করতে না পারে , যার ফলস্বরুপ বেগুনি মুকুট টি তাকে হারাতে হতে পারে । একদিন এই দ্বীপে জ্ঞানের ঈগল এর সাথে দেখা হয়ে সে জানতে পারে , যে তার এখানেই বসবাস । তার থেকে হিউম্যান মানকি জানতে পারে যে , এই দ্বীপ সব দেবে যে সেটি কে ধরে রাখতে পারবে । মানব বানর হাসল। সে বুঝতে পেরেছিল তাকে কি করতে হবে।

এখন সে বিশ্বের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত ।

শুরু হলো তার নতুন জীবন।

মনে রাখার জন্য কিছু পয়েন্ট :-

১. ‘যেকোনো দিনই শেষ দিন হতে পারে!’ এই সত্যটি ভুলে যাবেন না।

২. বর্তমান মুহূর্তটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্য বানরদের একপাশে ধাক্কা দেবে।

৩. শুধুমাত্র আপনার আত্মবিশ্বাস এবং কৃতজ্ঞতা আপনার সাথে বর্তমান থাকবে।

৪. যখনই আপনি অনুভব করবেন, আপনি প্রথমে বানর দ্বারা বেষ্টিত, সেই সময় বর্তমান মুহূর্তে ফিরে আসতে হবে, বর্তমানেই সব সমাধান আছে।

চেষ্টা করুন!