4:30 AM, September 27, 2022
THE MIRACLE MORNING
–Hal Elrod
Hal Elrod -একজন আমেরিকান লেখক ও পেশাজীবী বক্তা। তিনি পৃথিবীব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন "THE MIRACLE MORNING" বইটির জন্য। এটি পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিক্রিত বই গুলির মধ্যে একটি।
Hal 20 বছর বয়সে মারাত্মক দুর্ঘটনার স্বীকার হন। একজন মাতাল ড্রাইভার তার গাড়িতে আঘাত করে এবং তিনি প্রচন্ডভাবে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। দুর্ঘটনার স্থলে তিনি প্রায় মারাই গিয়েছিলেন। শরীরের ১১টি হাড় ভেঙে গিয়েছিল। হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর তিনি জানতে পারেন জীবনে আর কখনোই তিনি হাঁটতে পারবেন না। কিন্তু Hal শুধু হাঁটতেই সক্ষম হননি তিনি সক্ষম হয়েছিলেন ৫২ মাইল এর ম্যারাথন সম্পন্ন করতে।
জীবনের চরম খারাপ অবস্থা থেকে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় Hal তা দেখিয়েছেন। তিনি মনে করেন একজন মানুষের সমস্যার থেকে সম্ভাবনা অনেক বেশি।"The Miracle Morning"-এ Hal দেখিয়েছেন জীবনের প্রতিকূল অবস্থা মানে ফুরিয়ে যাওয়া নয়, ওটাই হতে পারে নতুন ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ও শক্তি। জীবনের সম্ভাবনা গুলো সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে কিভাবে স্বপ্ন পূরণ করা অনিবার্যভাবে সম্ভব তা তিনি "The Miracle Morning"-এ বিভিন্নভাবে উপস্থাপনা করেছেন।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের জন্য একটি বিশেষ নোট —
ঠিক এই মুহূর্তে আপনি আপনার জীবনের যে পরিস্থিতিতে থাকেন না কেন এটা কোন বড় ব্যাপার নয়, হতে পারে যে আপনি আপনার জীবনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছেন অথবা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন আপনার পথটি পাওয়ার জন্য। আমাদের ভেতর একটা সাধারণ ব্যাপার রয়েছে (সম্ভবত একটা চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু একটার ব্যাপারে নিশ্চিত)। সেই মিলটি হচ্ছে ,আমরা আমাদের জীবনের নিজস্ব উন্নতি করতে চাই। এটা এরকম কোন পরামর্শ দেওয়া নয় যে ,আমাদের ভেতরে আমাদের জীবনে কোন ভুল আছে ,কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের জন্মই হয়েছে ক্রমাগত বিকশিত হওয়া ও উন্নতি করার সহজাত আকাঙ্ক্ষা ও প্রচেষ্টা নিয়ে। এটা আমাদের সবার মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে। তারপরও, আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠি এবং জীবন প্রায় একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রত্যেকের ভেতরের অপরিসীম সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আত্ম উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করা নিশ্চয়তা হিসেবে"The Miracle Morning"সবচেয়ে বাস্তব, ফলাফলকেন্দ্রিক ও জীবন পরিবর্তনকারী একটি পদ্ধতি। যাদের জীবনের চাওয়া পাওয়া অনেক বড় ,তাদের জন্য"The Miracle Morning"একটি পরিপূর্ণ গেম চেঞ্জার যা আপনাকে অধরা পরবর্তী লক্ষ্য অর্জনের দিকে নিয়ে যাবে।
যারা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রয়েছেন সংগ্রামের সময় অতিক্রম করছেন ,The Miracle Morning-তাদের অনতিক্রম্য চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবিলায় শক্তিমান করে তুলবে, যুগান্তকারী পরিবর্তনের মাধ্যমে বিরাট সফলতা এনে দেবে, এবং পরিস্থিতি পাল্টে দেবে এবং প্রায়ই এসব ঘটবে খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ে।
আপনি কোনো পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা আপনার সমগ্র জীবনের আমুল পরিবর্তন ঘটাবে, সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে এটা বলা যায় যে, আপনি সঠিক বইটি নির্বাচন করেছেন, যা নিশ্চিত ভাবে রূপান্তর ঘটাবে আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে…. সবকিছুই সকাল আটটার আগে।
"আপনার জীবন যাপনের মাত্র দুটো পথ রয়েছে
একটি হচ্ছে যেন কোনো কিছুই অলৌকিক নয়।
অন্যটি হচ্ছে যে যেন সবকিছুই অলৌকিক"
—--অ্যালবার্ট আইনস্টাইন
ভূমিকা
৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৯: Hal Elrod- ওঁনার জীবনটি ভালো ছিল বললেও কম বলা হবে ,এটি ছিল বিরাট। কুড়ি বছর বয়সে তিনি কলেজে প্রথম বর্ষ পার করেন। তিনি সর্বশেষ ১৮ মাস কাটিয়েছিলেন ২০০ মিলিয়ন ডলারের একটি মার্কেটিং কোম্পানির একজন অন্যতম শীর্ষ উৎপাদন সরবরাহকারী হিসেবে। ওই সময় ওঁনার আয় ছিল কল্পনাতীত ।তিনি ছিলেন আশীর্বাদ পুষ্ট ,খুব ভালবাসার একজন প্রেমিকা, একটি নির্ভরযোগ্য পরিবার, সেরা বন্ধু মহল ,সবকিছুই ছিল ওঁনার জীবনে। বলতে পারেন তিনি ছিলেন পৃথিবীর শীর্ষ অবস্থানে। কিন্তু তিনি কখনোই ভাবতে পারেননি, একটি রাতের মধ্যেই তাঁর পৃথিবীটা শেষ হয়ে যাবে।
রাত ১১: ৩২/ঘন্টায় ৭০ মাইল বেগে দক্ষিণ দিকে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
রেস্তোরাঁতে বন্ধুদের পেছনে ফেলে উনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়েপড়েন। সঙ্গে ছিলেন ওনার প্রেমিকা। সান্ধ্যকালীন আয়োজনে উনার প্রেমিকা ক্লান্ত হয়ে প্যাসেঞ্জার সিটেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তিনি জাগ্রত ছিলেন এবং ওনার চোখ দুটো রাস্তার মধ্যেই নিবদ্ধ ছিল। গাড়ির মধ্যে Tchaikovsky-র সংগীতে ডুবে ছিলেন। মাত্র ২ ঘন্টা আগে তিনি তাঁর জীবনের সেরা বক্তব্য দিয়ে এসেছিলেন। তার জন্য সবাই দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। সেই ঘটনার জন্য তিনি খুব উত্তেজিত ছিলেন ,ঘটনাগুলো ওনাকে আনন্দের রাজ্যে নিয়ে গিয়েছিল। তাই জন্য ঘুম ছিল চিন্তা রাজ্যের অনেক দূরের ব্যাপার। ওনার ব্র্যান্ড নিউ সাদা Ford Mustang-এ উন্মুক্ত পথের ৭০ মাইল বেগে চলছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি মরিয়া হয়ে চাচ্ছিলেন চিৎকার করে কাউকে কৃতজ্ঞতা জানাতে। ওঁনার প্রেমিকা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, তাই ওনাকে জানানো সম্ভব ছিল না। তিনি তাঁর বাবা মা কেও ফোন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হয় না কারণ ততক্ষণে ওনারা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেই মুহূর্তে তিনি কোনভাবেই ভাবতে পারেননি ,ওই মুহূর্ত টাই ছিল ওনার মা-বাবা কিংবা কারো সঙ্গে কিছু সময় কথা বলার শেষ সুযোগ।
একটি অকল্পনীয় বাস্তবতা
একটি বিশাল ট্রাকের হেডলাইট দুটো সরাসরি ওনার দিকে ছুটে আসে কিন্তু দুর্ভাগ্যের এক মুহূর্তেই ঘন্টায় ৮০ মাইল বেগে ছুটে চলা বিশাল ট্রাকটি ওনার Ford Mustang ব্যক্তিগত গাড়িটির সামনের অংশ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল। দুটো গাড়ির সামনের ধাতব অংশ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রথমে হঠাৎ ঘর্ষণের উচ্চ শব্দ এবং তারপর গাড়িটির মাথাটি মুচরে ভেঙে যায়। Mustang-এর এয়ারব্যাগ গুলি বিস্ফোরিত হয়। Elrod এবং ওনার প্রেমিকা জ্ঞান হারান। Hal Elrod-এর মাথার সম্যকভাবে প্রচন্ডভাবে আঘাত লাগে। গাড়ির দরজাটি ওনার শরীরের বাম পাশে আঘাত করে ভেঙে পড়ে। গাড়ির ধাতব ছাদটি ওনার মাথার সঙ্গে লেপটে যায় ,মাথার খুলি ফালি করে ফেলে এবং বাম কান প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাম চোখের হার গুলি চূর্ণ হয়ে যায়, বাম চোখ বিপদজনক ভাবে ঝুলে যায়। ওনার বাম হাত ভেঙে যায় ,মূল শিরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, কনুই বিধ্বস্ত হয়ে যায় ,ভাঙ্গা হাড় হাতের ওপরের অংশে চামড়া ভেদ করে ঢুকে যায়।
ওনাকে গাড়ি থেকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কোমরের নিচে তিনটি জায়গা ভেঙে যায় ।ওনার উরু যেখানে শরীরের সবচেয়ে বড় হার রয়েছে ,তা অর্ধেকটা ভেঙে যায় এবং একপাশ উরুর চামড়ায় বিদ্ধ হয়ে যায়।
চারিদিকে রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। ওনার শরীর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ,ব্রেন চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল, শরীর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, রক্তের চাপ থেমে গিয়েছিল এবং তিনি গভীর কোমায় চলে গিয়েছিলেন।
আমরা কি দ্বিতীয়বার জীবন ফিরে পাই
পরবর্তীকালে যা ঘটেছিল তা শুধুমাত্র অবিশ্বাস্য ছিল না ,তা ছিল এক অলৌকিক ঘটনা। জরুরী উদ্ধার কর্মীদের দ্বারা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ওনার রক্তাক্ত দেহটাকে বের করা হয়। মেডিকেল সহকর্মীরা দ্রুতই তাকে হেলিকপ্টারে তোলেন এবং বাঁচানোর জন্য দৃঢ়ভাবে প্রচেষ্টা করেন। প্রায় ছয় মিনিট পর ওনার শ্বাসক্রিয়া আবার শুরু হয়।
৬ দিন পর জ্ঞান ফিরে পেয়ে তিনি জানতে পারেন তিনি হয়তো কখনো হাঁটতে পারবেন না। ছয় সপ্তাহ পর হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে ওনার মা বাবার সেবা যত্নে আবার বাস্তব পৃথিবীতে ফিরে আসেন এবং ধীরে ধীরে হাঁটতে সক্ষম হলেন।
হাসপাতালেই উনার প্রেমিকা সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটান। ১১ টি ভাঙা হাড়,স্থায়ী ব্রেন ড্রামেজ ছিল ওনার চরম বাস্তবতা। জীবনে আর কোন কিছুই আগের মত হবে না--এই বাস্তবতাকে তিনি মেনে নিয়েছিলেন। অবশ্যই তা খুব সহজ ছিল না; মাঝে মাঝে আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি ভাবতেন কেন উনার জীবনের সাথেই এসব ঘটে গেল?
জীবন কেমন হতে পারতো এসব ভাবনার পরিবর্তে তখন জীবনে যা যা ছিল তাই তিনি আলিঙ্গন করেন। "জীবন এরকম না হয়ে অন্যরকম হতে পারতো" বা "যদি দুর্ঘটনা টা না ঘটতো" এসব ভাবনার পরিবর্তে তখন যা যা ছিল সেগুলোকে সর্বোচ্চ ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শতভাগ মনোনিবেশ করেন। যেহেতু অতীত পরিবর্তন করা সম্ভব না ,তিনি লক্ষ্য স্থির করলেন ওনার সমস্ত ভাবনা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। নিজেকে উৎসর্গ করলেন সব সম্ভাবনা অর্জনের মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণের জন্য এবং অন্যরাও কিভাবে একইভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে পথও তিনি আবিষ্কার করে ফেলেন।
ওনার যা কিছু ছিল তা আন্তরিকভাবে মেনে নিলেন এবং যা ছিল না তা কোন অভিযোগ ছাড়াই শর্তহীনভাবে মেনে নিলেন। জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনায় কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে হাজির হয় কিন্তু সবচেয়ে কার্যকরী প্রভাবশালী কারণটা খুঁজে বের করা আমাদের দায়িত্ব। অবশেষে এই ব্যাপক বিধ্বংসিক গাড়ি দুর্ঘটনা ওনার জীবনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভালো ঘটনার একটিতে পরিণত হয়ে গেল।
২০০০ সালটি উনার শুরু হয় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কিন্তু বছরটি শেষ হয় সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। উনি ভেঙ্গে গিয়েছিলেন কিন্তু পরাজিত হননি। নিজেকে নিয়ে দুঃখ করা এবং ঘরে বসে থাকার সব রকম অজুহাতই ওনার কাছে ছিল। এরকম অবস্থান থেকেও তিনি তাঁর কর্মস্থলে (Cuto)ফিরে যান। তিনি কখনোই ভাবেননি ওই বছরটি ওনার ক্যারিয়ারের সেরা বছর হতে পারে। বছরটি শেষ হয়েছিল সর্বোচ্চ বিক্রয়ের রেকর্ডে। এসবই হয়েছিল ওনার ধ্বংসাবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে।
২০০১: জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু অমূল্য শিক্ষা তিনি অর্জন করেন। তুমি মনে করলেন এই প্রতিকূল অবস্থা ও তা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা, অন্যের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। হাই স্কুল এবং কলেজে ওনার গল্প বলা শুরু করেন। শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন অনুষদ থেকে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেতে থাকেন। তিনি যুব সমাজকে প্রভাবিত করার একটা মিশন শুরু করেন।
২০০২: ওনার প্রিয় বন্ধু Jon Berghoff অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করতে ওনার জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নিয়ে একটি বই লিখতে উৎসাহিত করেন। লেখা শুরু করেই তিনি থেমে যান। তিনি কোন লেখক ছিলেন না। হাই স্কুলে রচনা লেখাই ছিল ওনার কাছে যথেষ্ট কষ্টকর। বই লেখাটা ওনার জগত ছিল না।
২০০৪: Sacramento Cutco অফিসে বিক্রয় ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিক্রয় সেবছর সকল সময়ের বার্ষিক রেকর্ড অতিক্রম করেছিল এবং ওনাদের দলটি সেরা হয়। কোম্পানির সমগ্র খ্যাতির অর্ধেকই ছিল ওনার। তিনি অনুভব করেন মোটিভেশনাল স্পিকার হওয়ার এটাই সেরা সময়। গত কয়েক বছর ওনার মাথায় বারবার এই চিন্তাটা কাজ করতে থাকে যে সেই বইটা যেটা তিনি শুরু করেও শেষ করতে পারেননি সেটা আবার লিখতে পারেন।
ফেব্রুয়ারি ২০০৫: ওনার সর্বশেষ কনফারেন্সে দর্শক শাড়িতে বসে যখন দুজন সেরা পারফরমারকে Cutco কোম্পানির দেওয়া সেরা বার্ষিক পুরস্কার হিসেবে লোভনীয় রোলেক্স নিতে দেখেন, তখন তিনি উপলব্ধি করেন তিনি কখনোই শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন না। নিজের সম্ভাবনা পুরো না করে কোম্পানি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপার ওনার নিজের কাছেই খুব খারাপ মনে হয়। তার জন্য ওনার প্রয়োজন ছিল পুরো একটা বছর কোম্পানিতে সময় দেওয়া এবং সেই সময় ওনার সবকিছু তিনি কোম্পানিকে উজাড় করে দেন।
২০০৫: দেরিতে শুরু করা সত্ত্বেও প্রায় দ্বিগুণ বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে লক্ষ্য স্থির করেন। তিনি শঙ্কিত ছিলেন কিন্তু তার থেকেও বেশি ছিলেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি অনুভব করেছিলেন বইটি
লেখা ও ওনার কথা সারা পৃথিবীকে জানানোর জন্য উনার ভেতর একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পুরো ৩৬৫ দিন তিনি কোম্পানির বিক্রয়ের কাজে ও বই লিখে কাটিয়েছিলেন। ২৫ বছরের জীবনে সেই বছর তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি শৃঙ্খলিত। উনি ওনার বেদনাদায়ক অথচ আরামপ্রদ মাঝারি মানের জগত থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি অসাধারণ হওয়ার পথ খুঁজছিলেন। বছর শেষে দুটো লক্ষ্ম্যেই পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন, কোম্পানিতে বিগত বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং ওনার প্রথম বইটা শেষ করেছিলেন।
"আপনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে সবকিছুই সম্ভব"
২০০৬ বসন্ত: ওনার লেখা প্রথম বই ছিল "Taking Life Head On:How To Love The Life You Have While You Create The Life Of Your Dreams", যা, আমাজন বেস্ট সেলার তালিকায় সপ্তম স্থান অর্জন করেছিল। তার মধ্যে ঘটে যায় এক অভাবনীয় ব্যাপার। প্রকাশক বেস্ট সিলিং বইয়ের শতভাগ রয়্যালটি নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ওনার বাবা-মা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। তিনি ভেঙ্গে পড়েন নি। গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে তিনি শিক্ষা নিয়েছিলেন যে জীবনের যে দিকগুলো পাল্টানো সম্ভব না তা নিয়ে অযথা ভাবনা চিন্তা করা বা মন খারাপ করার কোন মানেই হয় না। বরং চ্যালেঞ্জ থেকে আমরা যা শিখি, তা অন্যের জীবনে কাজে লাগিয়ে জীবনের প্রতিকূল অবস্থাকে একটা সুযোগ বা সুবিধায় পরিণত করা যায়।
২০০৬: প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছাড়াই তিনি হয়ে উঠলেন জীবন ও ব্যবসায় একজন সফল প্রশিক্ষক । বছর ৪০ এর একজন অর্থ উপদেষ্টা ওনার কাছে প্রস্তাব রাখেন তার প্রশিক্ষক হওয়ার জন্য। খুব ভালোবাসার সাথেই তা তিনি শেষ করেন। এবং ঠিক ২৬ বছর বয়সে একজন পেশাদার কোচ হয়ে ওঠেন।
প্রশিক্ষণ ব্যবসার মধ্যগগনে তিনি প্রথম বক্তৃতা দেন টাকার বিনিময়ে। Boys and Girls clubs of America তাদের জাতীয় সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে ওনাকে বেছে নিয়েছিল। খাড়া চুল, তরুণ চেহারার একজন যুবক যার ডাকনাম"Yo Pal" Hal, নামেই খুব সমাজকে প্রভাবিত করেছিল। এরপর তিনি স্থানীয় স্কুল ও কলেজে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন ,তখন তিনি নিজের গল্প শেয়ার করতেন।
২০০৭: এবছর ওনার জীবনটা সম্পূর্ণ অন্যরকম হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে ,ফলে মক্কেলরা কোচিং চালানোর আর্থিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। উনি ঘরভাড়া সহ সব রকমের বিল পরিশোধ করার সামর্থ্য হারান। ৪,২৫০০০ ডলারের দেনায় পড়ে যান। মানসিক ,শারীরিক ও আর্থিকভাবে একেবারে তলানিতে নেমে যান। খুব মরিয়া হয়ে তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে থাকেন।
২০০৮: এবছর থেকে উনার জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে। এই সময় খুব কাছের এক বন্ধুর কাছে ওনার খারাপ সময়ের সব কথা খুলে বলেন। তিনি ওনাকে দৌড়ানো শুরু করতে বলেন কারণ এটি খুব ভালো অনুভব করতে সাহায্য করে ও সঠিকভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। তিনি দৌড়াতে একদমই পছন্দ করতেন না। তবুও তার উপদেশমত তিনি দৌড়ানো শুরু করেন যা তাঁর জীবনের একটা সন্ধিক্ষণে পরিণত হয়। বস্তুত ওনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর প্রভাব এত দ্রুত ঘটেছিল যে তিনি এটাকে বলেছিলেন- "Miracle Morning".
শরৎ, ২০০৮: তিনি Miracle Morning নিয়ে এগিয়ে চললেন। আরো বিভিন্ন ব্যক্তিগত উন্নতি মূলক অভ্যাসের পরীক্ষানিরীক্ষা ও ঘুমের সময় নিয়ে পর্যালোচনা করলেন। আসলেই কতটুকু ঘুমের প্রয়োজন তা তিনি গবেষণা করেন। অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের ফলাফলে সন্তুষ্ট হয়ে তিনি তার প্রশিক্ষণ মক্কেলদের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করেন। অবিশ্বাস্যভাবে তিনি দেখতে পেলেন ,যাদের সঙ্গে আগে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি তারাও ফেসবুকে ও টুইটারে তাদের মিরাকেল মর্নিং নিয়ে পোস্ট দিচ্ছে।
২০০৯: এটি ছিল তাঁর জীবনের সেরা বছর। নিজের স্বপ্নের নারীকে তিনি বিয়ে করেন। এক কন্যা সন্তানের পিতা হন। ওনার প্রশিক্ষণ ব্যবসা ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। পেশাদার বক্তা হয়ে ওঠেন।The Miracle Morning দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তখন তিনি মনে করেন ,এটা সারা পৃথিবীর মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়া দরকার এবং এটি বই লেখার মাধ্যমেই সম্ভব। ধীরে ধীরে হলেও তিনি আবার লেখা শুরু করেন। এবার তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওনার প্রিয় বন্ধু Romacio Fulcher সব সময় বলতেন"সব সময়ই একটা পথ থাকে ….যখন তুমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ"
আপনার জীবনকে সামনে নিয়ে যাওয়া
জীবনে কী কী অতিক্রম ও অর্জন করা যায় তার প্রমাণ দেখাতে তিনি তাঁর নিজের গল্পটি সকলের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। আপনার চ্যালেঞ্জগুলো কতটা কঠিন এটা কোন ব্যাপার না। কেউ যদি মৃত অবস্থা থেকে ফিরে আসতে পারে আবার নতুন করে স্বপ্ন বুনতে পারে ,তাহলে আপনার কাছে কোন যুক্তিসঙ্গত অজুহাত নেই ,যা দিয়ে আপনি দেখাবেন যে আপনার পক্ষে সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে কাঙ্খিত কোন কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। সবার জন্য এ কথা প্রযোজ্য। উদাহরণ থেকে কোন কিছু মেনে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আপনার অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি কেমন এটা কোন ব্যাপারই না। এটা শুরু হয় আপনার জীবনের প্রতিটি বিষয়ের সামগ্রিক দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার মাধ্যমে এবং কোনো কিছুর জন্য অন্যকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে। যে মাত্রায় আপনি আপনার জীবনের যেকোনো কিছুর দায়িত্ব নিতে পারেন,তাই হচ্ছে আপনার ব্যক্তিগত ক্ষমতার মাত্রা, যা দিয়ে আপনি আপনার জীবনের কোন কিছুর পরিবর্তন সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন।
দায়বদ্ধতা ও দোষ একই জিনিস নয়।দোষ নির্ধারণ করে কোন কাজের জন্য কারো ত্রুটি, অন্যদিকে দায়বদ্ধতা কোন কাজের উন্নতির জন্য কারো প্রতিশ্রুতিকেই নির্ধারণ করে। Hal Elrod -এর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায় কার দোষ এটা আসলেই কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। সবাই অতীতকে অতীতে ফেলে দিতেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের জীবনকে ঠিক সেরকম ভাবে তৈরি করতে পারি ,যেমনটা আমরা চাই। শুরুটা হতে পারে আজই।
সময়টা আপনার ,গল্পটাও আপনার
এই মুহূর্তে আপনি আপনার জীবনের যেখানেই থাকুন তা অস্থায়ী এবং ভাবুন ঠিক এখন আপনার কোথায় থাকার কথা। আপনি জীবনের এই মুহূর্তে পৌঁছেছেন ঠিক সেই জিনিসটি শিখতে, যা আপনাকে অবশ্যই শিখতে হবে। জীবন যখন কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং ,বর্তমান সময়টাই তখন সর্বদাই আমাদের জন্য একটি সুযোগ; শিক্ষার জন্য; বিকশিত হওয়ার জন্য এবং আগের চেয়ে অধিক ভালো হওয়ার জন্য।
গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলি চিহ্নিত করূন
যখন পড়বেন,পরবর্তীকালে আবারো পড়া প্রয়োজন হতে পারে এরকম মনে হলে সে অংশটুকু চিহ্নিত করুন। যা মূল্যবান তা সহজেই বের করার জন্য Hal Elrod বইয়ের বিশেষ বিশেষ জায়গা গুলি চিহ্নিত করে রাখতেন। যাতে দ্রুত সেগুলো আবার পড়তে পারেন এবং খুব দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মূলভাব আয়ত্ব করতে পারেন।
আপনার পূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে জেগে ওঠার এখনই সময়
আপনি যদি প্রতি রাতে সন্তুষ্ট চিত্তে বিছানায় যেতে চান তাহলে আপনাকে,
প্রতি সকালে দৃঢ়তা নিয়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
—-- Geroge Lorimer
যখন কোন শিশু জন্মায় প্রায়ই তাকে " The Miracle of Life"বলা হয়। কিন্তু অন্যদিকে আমরা আমাদের জীবনের মধ্যম অবস্থানে সন্তুষ্ট থাকতে পারিনা। যখন আমরা জন্ম নিয়েছিলাম প্রত্যেকেই আশ্বস্ত করেছিলেন, বড় হয়ে আমরা যা চাইবো ঠিক তাই হতে পারব। সুতরাং আপনি এখন বড় হয়েছেন ,তাহলে আপনি কি যে কোন কিছু করতে পারছেন? আপনি কি নিজেকে এভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন? আপনি কি স্থির জীবন যাপন থেকে বেরিয়ে আসতে প্রস্তুত? তাহলে, আপনি আপনার সেরা জীবন যাপন শুরু করতে পারেন ,এটা আপনার স্বপ্নের জীবন।
দশমস্তরের জীবন সৃষ্টি
"জীবনে তুমি সবচেয়ে বড় যে অ্যাডভেঞ্চারটি করতে পারো তা হচ্ছে তোমার স্বপ্নের জীবন যাপন করা"-এই কথাটিতে Hal Elrod খুব বেশি একমত হতে পারেন নি। দুঃখের সময় খুব কম লোকই তাদের স্বপ্নের জীবনের কাছাকাছি আসতে পারে। অধিকাংশ মানুষ গড়পরতা একটা মাঝারি মানের জীবনেই থেমে যায়। তারা জীবনে যা কিছু পেয়েছে তা নিয়েই পড়ে থাকে, আর অগ্রসর হয় না। এ কথার কোন অর্থ নেই যে আপনাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে যা সত্যি আপনি চান তার থেকে কম পেয়ে। আপনি অসাধারণ জীবন যাপন করতে পারেন। সুখ, স্বাস্থ্য, টাকা-পয়সা, ভালোবাসা, সফলতা এর সবগুলি আপনি পেতে পারেন।
যদি আমরা আমাদের জীবনের চাওয়া পাওয়াকে এক থেকে দশ পর্যন্ত মাপের একক নির্ধারণ করি, তাহলে আমরা সবাই দশম এর স্তর চাই। কোন ব্যক্তি এটা বলেনি যে ৭-এর স্তরের স্বাস্থ্য চায়। যদি আপনাকে বলা হয় আপনার জীবনটি সেরা হিসেবে তৈরি করা অর্থাৎ ১০-এর জীবনযাপনে পৌঁছানো এবং সেই সঙ্গে আপনার সাফল্য, সুখ, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এতদিন যে স্তরে ছিল, তার চেয়ে অনেক উপরে নিয়ে যাওয়া শুধু সম্ভব নয়, এটি সহজ —--কেমন হবে?
কেমন হবে ,এর সব কিছুর শুরু হয় কীভাবে সকালে ঘুম থেকে উঠছেন তার ওপর? এজন্য রয়েছে ছোট ছোট সহজ পদক্ষেপ, এগুলো চাইলে আজই শুরু করা সম্ভব। এগুলো আপনাকে সক্ষম করে তুলবে সেই ব্যক্তি হতে যা হওয়া আপনার জন্য সত্যিই প্রয়োজন।
এই বইটি তিনটি প্রয়োজনীয় উপদেশ মূলক আর্গুমেন্ট তৈরি করে
অসাধারণ স্বাস্থ্য, সম্পদ, সুখ, ভালোবাসা ও সফলতা সৃষ্টি করতে এবং তা ধরে রাখতে আপনি পৃথিবীর যেকোনো মানুষের মতোই যোগ্য, দাবিদার ও সক্ষম। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ,শুধু আপনার জীবনের মানের জন্যই নয় আপনার পরিবার, সহকর্মী, বন্ধু এবং যে কারো ওপর যে প্রভাব ফেলেন তার জন্য।
আপনার জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে আপনার যা প্রাপ্য, তা থেকে কম পাওয়া অবস্থায় না থাকার জন্য এবং আপনার ব্যক্তিগত ,পেশাগত ও আর্থিক সফলতার যে স্তরে আপনি থাকতে চান, তার সৃষ্টি করার জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিন সময়ের প্রতি নিবেদিত হতে হবে।
প্রতিদিন আপনার ঘুম থেকে ওঠার নিয়ম এবং আপনার সকালের রুটিন নাটকীয় ভাবে আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার স্তরকে প্রভাবিত করে। উজ্জল, সৃষ্টিময় ও সফল একটি সকাল তৈরি করে একটি উজ্জ্বল ও সফল দিন–যা অবশেষে অনিবার্যভাবে সৃষ্টি করে সফল জীবন। অন্যদিকে নিষ্প্রভ, সৃষ্টিহীন ও মধ্যম সকাল নিয়ে আসে একটি নিষ্প্রভ ও সৃষ্টিহীন দিন–অবশেষে একটি অতি সাধারণ মানের আমজনতার জীবন। শুধুমাত্র সকালে ওঠার অভ্যাস পরিবর্তন করে আপনার জীবনের যেকোনো দিকে রূপান্তর ঘটাতে পারেন।
"আমি কোন মর্নিং পারসন নই"
"আমি রাতের পেঁচা"
"দিনের যথেষ্ট সময় পাওয়া যায় না"
"তাছাড়া, আমার বেশি ঘুম প্রয়োজন, কমে হয় না"
"The Miracle Morning"এর আগে এই সবগুলোই Hal Elrod-এর জন্য সত্য ছিল। উনিও সকালে উঠতে ও বাইরে বের হতে অস্বস্তি বোধ করতেন। পরবর্তীকালে ওনার জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। The Miracle Morning সবার জীবনে কার্যকরী। আপনি দেখবেন কত অধিক শক্তি, অনুপ্রেরণা ও সময় আপনি পেতে চলেছেন এবং উপভোগ করবেন বেড়ে যাওয়া উৎপাদনশীলতা, অধিক প্রাণশক্তি ও আনন্দ। The Miracle Morning পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষের জীবনে রূপান্তর ঘটিয়েছে।
The Miracle Morning-এর উৎপত্তি: হতাশার থেকে সৃষ্টি
"আপনার জীবনে ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য দুটি জিনিস প্রয়োজন: হয় অনুপ্রেরণা আর না হয় হতাশা"
—---Anthony Robbins
একেবারে তলানিতে পড়ে যাওয়া অবস্থায় খুব কম সময়ে দুইবার পতিত হওয়ার কারণে Hal Elrod নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতেন। কারণ এটা থেকে তিনি অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। তিনি সেই ব্যক্তিতে পরিণত হতে সক্ষম হয়েছিলেন যা ওনার জন্য প্রয়োজন ছিল। তিনি যেই জীবন চেয়েছিলেন সেই জীবনটি সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য তিনি ভাগ্যবান। তিনি শুধু সাফল্যের জন্যই কৃতজ্ঞ ছিলেন না, ব্যর্থতার জন্যও কৃতজ্ঞ ছিলেন। ওনার এই শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা আরও অনেককে সাহায্য করেছে নিজের সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে।
ওনার প্রথম সর্বোচ্চ খারাপ সময় তৈরি হয়, কুড়ি বছর বয়সে ,মাতাল ড্রাইভার এর কারণে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং প্রায় মারাই যাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় খারাপ সময় তৈরি হয় ১৯৩০ দশকের কুখ্যাত মহামন্দার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দার চরম অবস্থা বিরাজ করেছিল। ওনার মাসিক আয় থেকে নেমে গেছিল । দেনায় ডুবে গিয়েছিলেন, সবকিছু বন্ধক দিতে হয়েছিল, এরূপ অবস্থায় তিনি প্রচন্ডভাবে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, জীবনের সর্বনিম্নস্তরে চলে গিয়েছিলেন।
কেন দেনা মৃত্যু চেয়ে খারাপ
যদি জিজ্ঞাসা করা হয় কোনটা বেশি কঠিন, গাড়ি দুর্ঘটনা নাকি আর্থিক সংগ্রাম, তাহলে বলা যায় আর্থিক সংগ্রাম ই সবচেয়ে কঠিনতম অবস্থা। দুর্ঘটনার পর তিনি মৃত অবস্থা থেকে ফিরে যান। সেই ভয়ঙ্কর ধ্বংস থেকে যে শারীরিক, মানসিক যন্ত্রণা তিনি পেয়েছিলেন তা অবশ্যই ব্যক্তির জীবনের সর্বনিম্ন খারাপ অবস্থা হিসেবেই গণ্য হবে। দুর্ঘটনার সময় সেবা করার জন্য তিনি অনেক জনকে পাশে পেয়েছিলেন । কিন্তু দ্বিতীয় বারের ব্যাপারটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তখন ওনার জন্য কারো সহানুভূতি ছিল না। ওনার যত্ন নেওয়ার বা সুস্থতার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার কেউ ছিল না। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। ভয় ও অনিশ্চয়তায় পেয়ে বসেছিল ওনাকে। প্রতিদিন আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করতেন। মানুষের জীবনের আত্মহত্যা সিদ্ধান্ত শুধু সবচেয়ে স্বার্থপর একটা ব্যাপারই নয়, গভীরভাবে ভাবলে তা জানা যায়–জীবন যতই কঠিন হোক না কেন, সব সময়ই এটা থেকে বের হয়ে আসার একটা উপায় আছে। সেই আর্থিক সংকট থেকে বের হয়ে আসার কোন উপায় তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তির কোন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না।
যে সকালটির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল
তারপর এক সকালে সবকিছুই পাল্টে যায়। প্রত্যেকদিন সকালে খুব হতাশা নিয়েই তিনি ঘুম থেকে উঠতেন। কিন্তু ওই সকালে তিনি ভিন্ন কিছু করে ফেলেন। এক বন্ধুর পরামর্শ মত সকালে দৌড়ানো শুরু করেন। ওনার এক প্রিয় বন্ধু যখনই কোন চাপ অনুভব করতেন তখনই তিনি দৌড়াতে যেতেন। এটা চিন্তাশক্তি বাড়াতে সক্ষম করে তুলতো, তেজ বাড়িয়ে দিত এবং খুব সহজেই সমস্যার সমাধান পেতে সহযোগিতা করত। তাই তিনিও দৌড়ানো শুরু করেন। ওনার কোন ধারনাই ছিল না যে, ওই দৌড়ানোর মাধ্যমে তিনি পেয়ে যাবেন সারা জীবনের সবচেয়ে শক্তিমান, গভীর ও জীবন বদলানো যুগান্তকারী পরিবর্তন সমূহ।
সমান্তরাল সফলতা
এটি ছিল একটি জোয়ার। এক বাস্তবতার জোয়ার। ওলোট পালট করা সেই জোয়ারে তিনি সত্যের মুখোমুখি হলেন যে, যেই পর্যায়ে তিনি নিজেকে উন্নিত করতে পারছিলেন না, যে স্তরের ব্যাক্তি হওয়া, তার জন্য প্রয়োজন ছিল, তা সম্ভব।
আমাদের বাহ্যিক পৃথিবী সবসময়ই আমাদের ভেতরের জগতের একটা প্রতিফলন। আমাদের সফলতার স্তর সব সময়ই আমাদের ব্যক্তিগত উন্নয়নের সমান্তরাল হয়ে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত জীবন সৃষ্টিতে প্রতিদিন এবং প্রতিমুহূর্তে নিবেদিত না হব, ততদিন পর্যন্ত সফলতা শুধুমাত্র অর্জনের সংগ্রাম, যা অধরা হয়েই থেকে যাবে।
প্রথম চ্যালেঞ্জ: সময় বের করা
তিনি বুঝতে পারেন, যে সব সমস্যার সমাধান ছিল প্রতিদিন ব্যক্তিগত জীবনের উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া। এটা ছিল সেই মিসিং লিংক যা তাকে কাঙ্খিত সফলতা এনে দেবে।
সবার মত ওনারও প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল সময় বের করা। জীবনে টিকে থাকতে ও বিল পরিশোধ করতে তিনি এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, জীবনের উন্নতির জন্য সময় বের করা ছিল সবথেকে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। বেস্ট সিলিং লেখক Matthew Kelly বলেছিলেন যে, আমরা সবাই চাই সুখী হতে এবং আমরা এটাও জানি কোন জিনিসগুলো আমাদেরকে সুখী করে। কিন্তু সেই কাজগুলো আমরা করি না। কেন? আমরা খুব ব্যস্ত। কোন কাজে ব্যস্ত? জীবনে সুখী হওয়ার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত।
সুতরাং, Hal Elrod পরিকল্পনা আঁকড়ে ধরলেন। সময় বার করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন।
সন্ধ্যাটা হতে পারি কি
প্রথমে তিনি ভাবলেন কাজের শেষে সন্ধ্যেবেলা তিনি সময় বার করতে পারেন অথবা অধিক রাতে। কিন্তু সাধারণত সন্ধ্যের পর থেকে তিনি ক্লান্ত থাকতেন। তাই সন্ধ্যাটা সর্বোত্তম সময় হতে পারে না।
তখন তিনি সকালবেলাটা বিবেচনায় নিলেন। কিন্তু নিজের থেকে বাধা পেলেন। কারণ সকালে ওঠাটা দৌড়ানোর মতই তার কাছে ছিল অপছন্দের জিনিস। কিন্তু সকালে ওঠার ব্যাপারে তিনি যত বেশি চিন্তা করতে থাকেন, ততোই কিছু বিষয় উনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হতে থাকে।
প্রথমত, ওনার মনে হলো ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য সকালের সময়ের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে, দিনটা শুরু হবে খুবই ইতিবাচক উদ্দীপনা ও প্রেরণার সঙ্গে। সকালে তিনি নতুন কিছু শিখতে পারবেন। সারা দিনের জন্য আরো অনেক বেশি উৎসাহী, একাগ্র ও অনুপ্রাণিত হতে পারবেন। সকালে ব্যক্তিগত উন্নয়নের কাজ করলে সারাদিনই এটা বলার কোন অজুহাতে থাকে না যে"আমি ক্লান্ত ও আমার সময় নেই"
অবশেষে সকালের থেকে ভালো কোনো সময় তিনি পেলেন না। ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য সকালবেলাতেই কার্যকরী কিছু করাটা ওনার কাছে সুবিধা জনক বলে মনে হয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই সকাল ছয়টায় নিজেকে ঘুম থেকে টেনে তোলা ওনার কাছে ছিল সবথেকে কষ্টকর ব্যাপার। হতাশ ও কিছুটা পরাজিত ভাবে সমস্ত পরিকল্পনা বাতিল করারও চিন্তাভাবনা করেন। ওনার মেন্টর Kevin সব সময় বলতেন,"যদি তুমি তোমার জীবনকে ভিন্ন করতে চাও, প্রথমেই তোমাকে ভিন্ন কিছু করার জন্য আগ্রহী হতে হবে"। অবশেষে তিনি সময়সূচী এভাবেই সাজান যে ব্যক্তিগত উন্নয়নের প্রথম রুটিন সফল করতে সকাল ৫:০০ ঘুম থেকে উঠতে হবে।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ :সবচেয়ে প্রভাব সৃষ্টিকারী কাজ করা
তারপর তিনি দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। ওই ঘন্টায় যা যা করতেন তা সবকিছু ব্যাপক প্রভাব ফেলে। জীবনের খুব দ্রুত উন্নয়ন ঘটতে থাকে। তিনি ব্যায়াম শুরু করেন। তিনি ছয়টি কার্যক্রম বেছে নেন এবং প্রতিটির জন্য ১০ মিনিট করে সময় রাখেন। পরের দিন সকালে ছয়টি কার্যক্রম চেষ্টা করতে পরিকল্পনা করেন এবং আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে তালিকার দিকে তাকিয়েই তিনি অনুপ্রাণিত হলেন। সহসা ওনার মনের এক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা, যা ছিল ভয়ের তা হয়ে ওঠে চরম আকর্ষণীয়।
সকাল পাঁচটায় এলার্ম ঘড়ি বেজে ওঠার পর তিনি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসেন। নিজেকে খুব শক্তিমান এবং উত্তেজিত মনে করেন। জীবনে প্রথম তিনি মনে করেন সকালে ঘুম থেকে ওঠা খুবই সহজ একটি ব্যাপার। ঈদের সকালে যেমন একটি শিশু সারা দিনের আনন্দের কথা ভেবে ঘুম থেকে ওঠে, তেমনই তিনি সারাদিনের ব্যাপারে খুবই উত্তেজিত বোধ করেন।
যে সকালটি সারা জীবন পাল্টে দিয়েছিল
ঘড়িতে তখন ৫: ০৫। দাঁত ব্রাশ করে, মুখ ধুয়ে নিয়ে, হাতে এক গ্লাস জল নিয়ে তিনি সোফাতে বসেন। জীবন পাল্টানো ব্যক্তিগত উন্নয়নের তালিকাটি টেনে বার করেন। বছরের পর বছর তিনি ওগুলো শিখে এসেছেন কিন্তু কখনই তা প্রয়োগ করেননি। এক এক করে তিনি প্রতিটি প্রয়োগ করেন।
নিরবতা: ১০ মিনিট নিরবে বসে প্রার্থনা ও ধ্যান করলেন এবং শুধুমাত্র নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর মনোনিবেশ করেন। উনি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে চাপমুক্ত অনুভব করেন। মনে করলেন ওনার শরীর ও মনের উপর দিয়ে একটি শান্তির বাতাস প্রবাহিত হয়ে গেল। ব্যস্ত সকালের বিশৃঙ্খলা থেকে এটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। এই প্রথমবারের মতো তিনি শান্তি অনুভব করেন।
পড়া: কেন পড়ার সময় পাওয়া যায় না এ ব্যাপারে সব সময় অজুহাত তৈরি করতেন। কিন্তু ওই সকালে তিনি সময় বার করতে খুব আগ্রহী হলেন। Nepoleon Hill-এর সেরা বই Think and Grow Rich হাতে নিলেন। অধিকাংশ বইয়ের মত এই বইটি ও তিনি শুরু করেছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি। তিনি দশ মিনিট বইটা পড়লেন এবং যা ধারণা পেলেন তা ঐদিনেই প্রয়োগ করার জন্য উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। ওনার মনে হল এই ধারণাগুলোই জীবন পাল্টে দিতে পারে।
আত্ম-কথন: আত্ম-কথনের শক্তি কখনোই তিনি কাজে লাগাননি। Think and Grow Rich বইটির self- confidence affirmation অংশটি জোরে জোরে পড়েন। ইতিবাচক আত্মকথন যেন এক বিরাট শক্তি যা মনে করিয়ে দেয় ওনার ভেতরে বিদ্যমান অসীম সামর্থ্যের কথা। উনি নিজের affirmation নিয়ে লেখার চেষ্টা করেন। জীবনে কী হওয়ার জন্য তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন এবং জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য যেসব প্রতিশ্রুতি ছিল সে সবই তিনি খুব দ্রুতই লিখে ফেললেন।
কল্পনা: The Secret সিনেমাটি দেখার পর তৈরি করা vision board টি হাতে নিলেন। দশ মিনিট ধরে ওনার মনোযোগ একটি ইমেজ থেকে অন্য ইমেজে চলে যাচ্ছিল, প্রতিটাই থেমে যাচ্ছিল, চোখ বন্ধ করে নিজের সমস্ত সত্তা দিয়ে তিনি অনুভব করলেন যে এই ইমেজগুলি ওনার জীবনে প্রতিফলিত হলে কেমন হবে।
ডাইরি লেখা: দীর্ঘদিন থেকে কিনে রাখা অনেকগুলো থেকে একটি ডাইরি বের করেন এবং জীবনে যেই সমস্ত কিছুর জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন সেগুলি লেখেন। তাৎক্ষণিকভাবে ওনার মনে হল ওনার হতাশা কেটে যাচ্ছে, খুবই হালকা অনুভব করেন। যে সব বিষয় নিয়ে তিনি কৃতজ্ঞ ছিলেন শুধুমাত্র লেখাতেই ওনার আত্মিক উন্নতি ঘটে।
সবশেষে ব্যায়াম: সকাল থেকে ওঠে যতক্ষণ পারেন বুকডন করেন। যোগ ব্যায়ামের ভিডিও দেখে ৬ মিনিট ব্যায়াম করেন। এর ফলে তিনি নিজেকে শক্তিশালী অনুভব করেন।
তিনি নিজেকে জীবনের সবথেকে বেশি শান্তিপূর্ণ, শক্তিশালী,কৃতজ্ঞতাপূর্ণ এবং শক্তিমান মনে করেন। মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যে এসব কিছু ঘটে যায়। তখন ঘড়িতে সবে সকাল ৬.০০ টা।
পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ তিনি পাঁচটার সময় ঘুম
থেকে উঠতে থাকেন এবং ৬০ মিনিট ব্যক্তিগত উন্নয়নের রুটিন অনুসরণ করতে থাকেন। ওই সময় গুলিতে তিনি অবিশ্বাস্য রকমের সুখ অনুভব করেন। তাই এক রাতে তিনি বিছানায় যাওয়ার আগে ঘড়িতে ভোর চারটের অ্যালার্ম সেট করে রাখেন। অবিশ্বাস্যভাবে ভোর চারটেয় ঘুম থেকে ওঠা সকাল পাঁচটায় ওঠার মতনই সহজ বলে মনে হল।
নাটকীয় ভাবে উনার মানসিক চাপের স্তর কমে গেল। তিনি সত্যিই সুখী, উদ্ধৃত, অনুপ্রাণিত অনুভব করলেন। উনি নিজের আগের সত্তা ফিরে পেলেন। শক্তি, অনুপ্রেরণা, স্বচ্ছতা ও মনোনিবেশের ক্ষেত্রে এক নতুন স্তরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। ব্যবসা ঠিক রাখতে এবং উপার্জন বৃদ্ধি করার কৌশল নির্ধারণ করতে পারছিলেন। Miracle Morning শুরু করার দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে ওনার উপার্জন শুধু আর্থিক দুরাবস্থার আগের সময় ফিরে গেল না, এটা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হয়ে গেল।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওনার অনেক ক্লাইন্ট নিজেদের Miracle Morning-এর মাধ্যমে নিজেদের জীবন বদলানোর উপকারিতা সমূহের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন। অনেকে ফেসবুকে, টুইটারে Miracle Morning নিয়ে পোস্ট দেওয়া শুরু করেন। তারা গর্বের সাথে ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট দিতে থাকেন।
উনি বুঝতে পারেন Miracle Morning একটি জীবন বদলানো ব্যাপার, এটা সারা পৃথিবীর সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। Miracle Morning বেশি মানুষের সঙ্গে শেয়ার করা তার কর্তব্য বলে মনে হল। তিনি মনে করেন এটি যেভাবে তার জীবনে পরিবর্তন এনেছে ঠিক তেমনি অন্যদের জীবনে রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হবে।
বাস্তবতার নিরিখে
"জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়ের একটি হচ্ছে জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া
এবং অনুতাপ এর সঙ্গে উপলব্ধি করা যে, জীবনে আপনি আরো অনেক বড় হতে পারতেন, অনেক বেশি কিছু করতে পারতেন এবং আপনার আরো অনেক বেশি কিছু থাকতে পারতো"
—-Robin Sharma
প্রতিদিন আমরা ঘুম থেকে উঠি ,সেই একই চিরন্তন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই। মানব জীবনের এটি একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ –অজুহাত কাটিয়ে ওঠা, সঠিক কাজটি করা, সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা ও আমাদের সর্বোচ্চ স্তরের জীবন যাপন করা। কিন্তু খুব কম মানুষই এই জীবন যাপন করতে পারে। আমাদের সমাজে প্রায় ৯৫% মানুষ তাদের আকাঙ্ক্ষের তুলনায় অনেক কম প্রাপ্তির স্তরে স্থির হয়ে যায়। কিন্তু তারা কখনো বুঝতে পারে না তারা যা হতে চেয়েছিলেন তা হতে পারতেন। আর্থিকভাবে বলতে গেলে আমাদের মাত্র ৫% মানুষই স্বাধীন জীবনযাপনে সফল হবে এবং ৯৫% মানুষ সারা জীবন সংগ্রাম করতে থাকবে।।
আমজনতার লেভেলের ঊর্ধ্বে ওঠা এবং পাঁচ পার্সেন্ট এর অন্তর্ভুক্ত হওয়া:
আপনি কখনোই ঠিক অবস্থানে নেই যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার যা আছে, আপনি যা হতে পারেন, এবং আপনি যা করতে পারেন তার চেয়ে সবকিছু কম স্তরে রয়েছে। জনতার স্তরের ওপরে উঠতে এবং ৫% এর সঙ্গে থাকতে সাধারণ অথচ সিদ্ধান্ত মূলক পদক্ষেপ রয়েছে:
ধাপ ১
স্বীকার করুন ,বাস্তবতার নিরিখে ৯৫%
আমরা অবশ্যই অনুধাবন করব এবং বাস্তবতা স্বীকার করবো যে আমাদের সমাজের ৯৫% মানুষ কখনোই তাদের আকাঙ্ক্ষিত জীবনটি তৈরি করতে সেরকম জীবন যাপন করবে না। অধিকাংশ মানুষের জীবন এমনই। আপনি যদি এখনই এই ব্যাপারে কিছু না করেন, আপনার সম্ভাবনার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হোন, তাহলে আপনিও সাধারণ মানের জীবনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।
গড়পরতা মানে এমন এক জায়গায় স্থিতু হয়ে যাওয়া যা আপনার জীবনের চাওয়া-পাওয়ার তুলনায় অনেক কম। অধিকাংশ মানুষ প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তাদের শারীরিক,মানসিক ও আর্থিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে যায়। তাদের সংগ্রাম হচ্ছে সুখ, ভালোবাসা ,সফলতা ও আর্থিক সমৃদ্ধির সেই স্থর তৈরি করা যা তারা প্রকৃতপক্ষে কামনা করেন।
নীচেরগুলো ভেবে দেখুন:
শারীরিকভাবে: স্থূলতা একটা মহামারী। ক্যান্সার হৃদরোগ প্রত্যেকদিন বেড়েই চলেছে। মানুষের শারীরিক শক্তি যেকোনো সময়-এর চেয়ে কম। কয়েক কাপ কফি অথবা এনার্জি ড্রিঙ্ক ছাড়া মানুষ যেন একদিনও তাদের শারীরিক শক্তি ধরে রাখতে পারেনা। এই জাতীয় পণ্যের সফলতাই বলে দেয় মানুষ কতটা শারীরিক সংগ্রামের ভেতর রয়েছে।
এছাড়াও মানসিক ও আবেগ জনিতভাবে, সম্পর্কের দিক দিয়ে ও আর্থিক ভাবে মানুষ সংগ্রামের মধ্যে রয়েছে।
ধাপ ২
আমজনতার জীবনের কারণগুলি চিহ্নিত করুন:
আমরা যখন এটা মেনে নিয়েছি যে, আমাদের সমাজের ৯৫% মানুষ সামর্থ্যের তুলনায় অনেক কম পাওয়া জীবনে স্থির হয়ে যাচ্ছে, জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সেই স্তরের জীবনটি পাচ্ছে না–যা তারা প্রকৃতপক্ষে চেয়ে থাকে, তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি হচ্ছে তার কারণটি খুঁজে বের করা।এর জীবনযাপন থেকে নিজেকে বাঁচাতে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কী কারণে গড়পরতা মানুষেরা আমজনতার জীবন যাপন করতে করতেই ফুরিয়ে যায়।
আমরা কেউ চাইনা জীবনটা একটি সংগ্রামে পরিণত হোক। আমরা একটি স্বাধীন জীবন চাই। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে ভালবাসতে চাই, আমাদের কাজ কে ভালবাসতে চাই, এটাই সফলতার সংজ্ঞা। এই ধরনের জীবন এমনি এমনি তৈরি হয় না। এর জন্য পরিকল্পনা করতে হয়। তাই অবশ্যই আপনাকে মৌলিক কারণ গুলি খুঁজে বের করতে হবে, যাতে আপনি আপনার কাঙ্খিত জীবনকে ওসবের কবল থেকে রক্ষা করতে পারেন।
Mediocrity-র কারণ সমুহ
অতীতমুখীতা
মাঝারি মানের জীবনের জন্য অন্যতম কারণ হচ্ছে অতীতমুখীতা। আমাদের অবচেতন মন সব সময় একটি অতীতমুখী সীমাবদ্ধে সজ্জিত। আমরা খুব ভুল ভাবে বিশ্বাস করি যে আমরা হচ্ছি তাই যা আমরা অতীতে ছিলাম। তাই আমরা আমাদের বর্তমানের সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলি আমাদের অতীতের সীমাবদ্ধতার ওপর ভিত্তি করে।
আপনি আপনার অতীতকে ঝেড়ে ফেলে সামনে যেতে চান এবং আপনার সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে আপনার অতীত চিন্তায় বসবাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দৃষ্টান্তটি মেনে নিন:"আমার অতীত আমার ভবিষ্যতের সমতুল্য নয়"। তখন এভাবে ভাবতে পারবেন যে আপনার জীবনের যে কোন কিছু শুধু সম্ভবই নয়, বরং সেরকম কিছু ঘটাতে আপনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সক্ষম। প্রথমেই সম্ভবত আপনি এটা বিশ্বাস করবেন না। আপনার কাছে এটা অস্বস্তিকর মনে হতে পারে এবং এরূপ ভাবনা থেকে আপনি দূরে থাকতে পারেন। ঠিক আছে, যেকোনো ভাবে নিজে নিজেই বারবার চেষ্টা করুন। এভাবেই একসময় অবচেতন মন ইতিবাচক আত্মকথনের সঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। আপনার জীবনে চাওয়ার কোন অপ্রয়োজনীয় সীমাবদ্ধ রাখবেন না। আপনি কি চান তা আগে স্পষ্ট করুন এবং নিজেকে আশ্বস্ত করুন যে এটা সম্ভব। ইতিবাচক মনো ভাবনা নিয়ে একটানা ছুটে চলুন লক্ষ্যের দিকে যতক্ষণ না এটা বাস্তবে পরিণত হয়।
সবসময় স্মরণে রাখুন, আপনি এখন যে অবস্থানে রয়েছেন , এটা অতীতে আপনি যা ছিলেন তারই একটা ফল। কিন্তু কোন অবস্থানে আপনি থাকবেন, তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে এখন থেকে আপনি কোন ব্যক্তি হওয়ার জন্য মনস্থির করছেন তার ওপর।
উদ্দেশ্যের অভাব
আপনি যদি গড় মানুষকে জিজ্ঞেস করেন–তাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি, তারা আপনার দিকে হালকা রসাত্মক ভাবে তাকাবে, অথবা এরকম উত্তর করবে যে"ঠিক জানিনা"।
সাধারণ মানুষেরা একটা দিনকেই সারজীবনের সব দিন মনে করেন এবং শুধু জীবনযাপন ছাড়া জীবনের বড় কোনো উদ্দেশ্য তাদের থাকেনা। অধিকাংশ মানুষ শুধুমাত্র দিনটি কাটাতে মন নিবাস করেন কোনরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়া। জীবনে বড় হওয়ার পথে যে কষ্ট -অস্বস্তি থাকে তারা তা এড়িয়ে চলেন।
জীবনের সাতটি বছর Hal Elrod সরাসরি বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির অনেক রেকর্ড ভাঙতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। এরূপ সফলতা থাকা সত্ত্বেও সাত বছরের ছয় বছর তিনি সংগ্রাম করেছিলেন সাধারণ মানের জীবন কাটিয়ে উঠতে। অবশেষে গড়পরতা জীবন অতিক্রম করার গোপন সূত্রটি পেয়ে গেলেন–"উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন যাপন করুন"
মনে রাখুন যে, এমনটি নয় যে আপনি আপনার উদ্দেশ্যটি খুঁজে বের করবেন। আপনাকে এটা তৈরি করতে হবে, সৃষ্টি করতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি চান। মনোনিবেশ করুন কিভাবে বিকশিত হওয়া যায় এবং কতটা সেরা আপনি হতে পারেন। অনুসন্ধান করুন আপনার স্বপ্নের এবং অন্যদেরকেও এই কাজটি করতে অনুপ্রাণিত করুন। এটাই আপনার উদ্দেশ্য।
আপনার জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভাবনা এবং তা প্রকাশ করার জন্য এই সপ্তাহে কিছু সময় নির্ধারণ করুন। এটা লিখে সেরকম জায়গায় রাখুন যাতে প্রতিদিন দেখতে পারেন। সব সময় মনে রাখুন, এখন আপনি আপনার জীবনের উদ্দেশ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তা যখন আপনার সমস্যা গুলোর থেকে অনেক বড় কিছু, তখন আপনার সমস্যাগুলো আপেক্ষিক ভাবে তাৎপর্যহীন এবং আপনি খুব সহজে সেগুলো অতিক্রম করতে পারবেন।
বিচ্ছিন্ন ঘটনা সমূহ
খুব স্পষ্টভাবে বোঝা না গেলেও, সাধারণ মানের জীবনের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বিচ্ছিন্ন কাজ সমূহ। আপনার এটা ভুল ধারণা যে, একদিনের একটি কাজ না করা শুধুমাত্র সেই বিশেষ কাজটিকেই প্রভাবিত করে, এবং পরবর্তীকালে আপনি উত্তম ভাবে সবকিছু করবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি এটা ভাবতে পারেন,একদিনশরীরচর্চা না করা কোন বড় ব্যাপার না কারণ আগামীকাল আপনি নতুনভাবে শুরু করবেন।
প্রতিটি একক চিন্তা, কাজ এবং পছন্দ নির্ধারণ করে দিচ্ছে আপনি কোন মানুষ হতে যাচ্ছেন, যা অবশেষে আপনাদের মান কেমন তা নির্ধারণ করবে। সঠিক কাজটি করার পরিবর্তে সব সময় যদি আপনি সহজ কাজটি করেন তাহলে আপনি আপনার পরিচয়টি তুলে ধরছেন, সেই ধরনের একজন মানুষ হয়ে যাচ্ছেন যারা সহজ কাজটি করে, সঠিকটি নয়।
অন্যদিকে, যখন আপনি সঠিক কাজটি করেন এবং আপনার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে থাকেন–তখন আপনার জীবনে অসাধারণ শৃঙ্খলতার উন্নয়ন ঘটে। আপনার জীবনে অসাধারণ ফলাফল সৃষ্টির জন্য এরূপ শৃংখলতা প্রয়োজন।
"Discipline creates lifestyle"
জবাবদিহিতার অভাব
সফলতা ও জবাবদিহিতার মাঝে একটি অকাট্য যোগসূত্র রয়েছে। সকল উচ্চ স্তরের সফল ব্যক্তিদেরকে ব্যাপক জবাবদিহিতার ভেতরে থাকতে হয়। জবাবদিহিতা হচ্ছে কোন ব্যক্তির কাছে, অথবা কোন কাজ বা ফলাফলের জন্য দায়ী থাকার অবস্থা। যেকোনো ধরনের জবাবদিহিতা ছাড়া এ পৃথিবীতে অথবা আপনার জীবনে খুব সামান্য কিছুই ঘটে থাকে। জবাবদিহিতা আমাদের জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে। উন্নতি,অগ্রগতি এবং সেইসঙ্গে যা কিছু আমারা অর্জন করেছি তার জবাবদিহিতা ছাড়া সম্ভব ছিল না। যেহেতু আমরা এখন সবাই বড় হয়েছি এবং যথাযথ সাফল্য এবং পূর্ণতার জন্য সংগ্রাম করছি, আমাদেরকে অবশ্যই দায়িত্ববান হতে হবে আমাদের নিজস্ব জবাবদিহিতার ব্যবস্থার জন্য।
জবাবদিহিতার একজন সঙ্গী নিন–
আপনার জীবনে কি কখনো এমন কোন দিন এসেছে আপনি ব্যায়াম করতে বা জিমে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু যাননি কারণ আপনার ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু কেমন হতো যদি কেউ একজন আপনার ব্যায়াম করতে যাওয়া বা জিমে যাওয়ার হিসেব রাখছে এবং প্রতিদিন এর জন্য আপনাকে তার কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে, এরকম হলে নিশ্চয়ই আপনি নিয়ম ভঙ্গ করতেন না। এই বইটি পড়তে পড়তে একজন জবাবদিহি অংশীদারের সঙ্গে একত্রে কাজ করুন, হতে পারে সে আপনার পরিবারের কোনো সদস্য অথবা আপনার কোন বন্ধু অথবা কোন সহকর্মী।
প্রভাবময় আমজনতার সঙ্গ
গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমরা যে পাঁচ জন মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাই, তাদের গড় করলে আমাদের অবস্থান পাওয়া যায়। আপনি কাদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, সেই ব্যাপারটি হতে পারে আপনি কেমন মানুষ হয়ে উঠছেন তার একক নির্ধারণী ফ্যাক্টর। আপনি যদি দুর্বল মনের অলস ও অজুহাত তৈরি করা মানুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন, অনিবার্যভাবে আপনি তাদের মতই হয়ে যাবেন। ইতিবাচক ও সফল মানুষদের সঙ্গে সময় কাটালে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও সফলতার অভ্যেসগুলো আপনাকে প্রভাবিত করবে।
জোরালো তাগিদ না থাকা
যুক্তিসঙ্গত ভাবে বলা যায় যে, মধ্যমানের জীবনের ও সেই সঙ্গে সম্ভাবনা অপূর্ণ থেকে যাওয়ার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কারণটি হচ্ছে নিজেদের জীবনকে উন্নত করার জন্য কোন তাড়া এবং সেই জাতীয় বোধ অধিকাংশ মানুষের থাকে না। মানব প্রকৃতি এরকম যে "কোন একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে"এরূপ ভাবনাচিন্তার সঙ্গে মিশে থাকে। সে চিন্তা করে জীবনের সবকিছু এমনি এমনি ঠিক হয়ে যাবে। এই "কোনো একদিন ঠিক হয়ে যাবে" মানসিকতা চিরস্থায়ী হয়ে যায় এবং এটা নিয়ে আসে সম্ভাবনার মৃত্যু এবং পরিতাপের জীবন।
জীবনে এই সত্যটি মনে রাখুন: আপনার জীবনের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজ যদি আপনি আপনার জীবনের কাঙ্খিত অসাধারণ মানুষটি হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি না করেন, সেই জীবনে উন্নীত হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা না করেন, তাহলে এমন কী কারণ ঘটবে যে, আপনি আগামীকাল শুরু করবেন। সেই জন্য অবশ্যই আপনি সীমানা নির্ধারণ করুন; এই নির্ধারিত সময়ে আপনাকে সব কিছু সম্পন্ন করতে হবে।
ধাপ ৩
সীমানা নির্ধারণ করুন
আপনার জীবনে তৃতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে, আপনাকে আপনার সীমা ও সীমানা নির্ধারণ করে নিতে হবে। আজ থেকে আগামীদিনের জন্য সাধারণ জীবন যাপন করা মানুষদের থেকে ভিন্নভাবে কী কী করতে চলেছেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। যেদিন আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন, নিজের জীবনে আপনি আর সাধারণ মানের জীবন মেনে নিতে প্রস্তুত নন, সেদিনই আপনার সমগ্র জীবন পাল্টে যাবে। আপনার প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত এবং কর্ম সমূহ আপনাকে একটি বিশেষ মানুষে পরিণত করবে এবং এগুলি নির্ধারণ করবে আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের মান।
আপনি কেন আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছিলেন
আপনি কেন আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছিলেন এটা সম্ভবত সেই প্রশ্ন যা আপনাকে কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেনি। কিন্তু এই মুহূর্তের জন্য আপনি ভেবে দেখুন অধিকাংশ সকালে আপনি কেন ঘুম থেকে ওঠেন? প্রতিদিন সকালে আপনি কি এই জন্য বিছানা ছাড়েন যে আপনি প্রকৃতপক্ষে এটা চান তাই? অথবা এটা কি এজন্য যে যেকোনো কারণেই হোক আপনাকে বিছানা ছাড়তে হবে? যদি আপনি অধিকাংশ মানুষের মতন হয়ে থাকেন তাহলে আপনি অ্যালার্ম ঘড়ির একটানা শব্দে অনিচ্ছা সত্বেও বিছানা থেকে নিজেকে টেনে তোলেন কারণ আপনার কোথাও যাওয়ার থাকে অথবা কোনো কাজ করতে হয়। তবে ঘুমের অপশন থাকলে অধিকাংশ মানুষ ঘুমিয়েই থাকবে।
প্রতিবার আপনি যখন এলাম ঘড়ি স্নুজ করবেন আপনি থামিয়ে দিচ্ছেন আপনার দিন ,জীবন এবং আপনার কাঙ্খিত জীবন। সকালের আবহে যে সুর আছে তার একটি শক্তিশালী প্রভাব আমাদের মনে সারাদিন বিরাজ করে।
প্রতিদিন সকালে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ঘুম থেকে না ওঠা মানুষেরা শুধু স্বচ্ছতা, শক্তি, অনুপ্রেরণা এবং নিজেদের শক্তি থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন না, প্রতিদিন তারা এভাবে দিনকে থামিয়ে রাখার অনিবার্য প্রক্রিয়ায় বিশ্বকে শক্তভাবে এ কথা জানিয়ে দিচ্ছেন যে, কাঙ্খিত জীবনের জন্য প্রচেষ্টা এবং সেরূপ জীবন যাপনের থেকে বিছানায় অচেতন জীবন ই তাদের বেশি পছন্দের।
কতটা ঘুম আমাদের বাস্তবেই প্রয়োজন
কয় ঘন্টা ঘুম আমাদের প্রয়োজন এ বিষয়ে প্রথম যে কথাটি বিশেষজ্ঞরা আপনাকে বলবেন, তা হচ্ছে এর কোন "ম্যাজিক নাম্বার "নেই। ঘুমের যে আদর্শ পরিমান তা এক এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এক এক রকম, তা নির্ভর করছে আপনার বয়স, স্বাস্থ্য ও শারীরিক চর্চার ওপর।
National Sleep Foundation অনুসারে,গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘ সময় ব্যাপী ঘুমরোগ অসুস্থতা এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই গবেষণায় আরও উৎঘাটিত হয়েছে, দীর্ঘ সময়ের ঘুমের সঙ্গে বিষন্নতার যোগসূত্র রয়েছে।
কীভাবে অধিক শক্তি নিয়ে জেগে ওঠা যায় (কম ঘুমে):
এখানে Hal Elrod তাঁর নিজের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এবং Miracle Morning-এর অন্যান্য আগ্রহ ব্যাক্তি যারা এই থিওরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন তাদের সাথে মিলে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, আমাদের ঠিক ততটুকু ঘুমের প্রয়োজন যতটুকু আমরা প্রয়োজন বলে বিশ্বাস করি। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা কেমন অনুভব করি তা রাতে কয় ঘন্টা ঘুমিয়েছি তার ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঘুম থেকে উঠে কেমন অনুভব করব বলে নিজে চিন্তা করেছিলাম তার ওপর। এটা নিজে মনে সৃষ্ট একটি অন্তর্ঘাতমূলক চিন্তা। আপনি যদি মনে করেন রাতে ৬ ঘন্টা ঘুমিয়ে সকালে উঠে আপনি ক্লান্ত অনুভব করবেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে সকালে আপনাকে নিজের কাছে ক্লান্ত মনে হবে। Hal Elrod বিছানায় যাওয়ার আগে সচেতন ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবতেন যে, ঘুমের জন্য তিনি যতটা সময় পাচ্ছেন তা যথাযথ এবং শারীরিক শক্তিমান হয়ে সকালে খুব চমৎকার অনুভূতি পাওয়ার জন্য ঘুমের এই ঘন্টাগুলোই যথেষ্ট। এরকম সকালে তিনি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো অনুভূতি নিয়ে ঘুম থেকে উঠতেন।
ঝিমুনি ছাড়াই জেগে ওঠার পাঁচটি ধাপ
Hal Elrod ঘুম থেকে বিনা দ্বিধায় জেগে উঠার যে পদ্ধতি সবার সাথে শেয়ার করেছেন তা না থাকলে হয়তো তিনিও পুরনো অলস মানসিকতায় আটকে থাকতেন–"ভোরে ওঠা আমার কর্ম না",
বলা হয়ে থাকে ভোরে ঘুম থেকে ওঠা কেউ পছন্দ করেন না কিন্তু এর যে সজীব অনুভূতি সেটা সবাই পেতে চান। শরীরচর্চার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক একই রকম। শরীরচর্চা, শুরু করার পরে যে পরিবর্তন আসবে তার সম্পর্কে আমরা সবাই ওয়াকিবহাল। কিন্তু খুব কম মানুষই শরীরচর্চা শুরু করি। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা আপনার ভেতর শক্তির একটি নির্দিষ্ট ধরনের বিচ্ছুরণ ঘটায়।
প্রথম ধাপ: বিছানায় যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিন–
মনে রাখবেন–পূর্ণনিদ্রা থেকে সচেতনতা আসার পর প্রথম যে চিন্তাটা আসে তা হচ্ছে ঘুমোতে যাওয়ার আগে যে চিন্তাটা আমাদের মনে ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ছোটবেলায় ঈদ বা পূজোর আগের রাতে আমরা খুব উত্তেজিত থাকতাম এবং বিছানায় গিয়ে পরিকল্পনা করতে করতে ঘুমাতাম– সকালে উঠে ঠিক কী কী করব। সেই সময় ভোরের কথা মনে করুন- এ্যালার্ম বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পূর্ণ সচেতনতা নিয়ে ঘুম থেকে উঠতাম। ঘুমোতে যাওয়ার আগেই ঘুম থেকে ওঠার জন্য মনকে ইতিবাচক অনুপ্রেরণা দিয়ে রাখতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: ঘড়ি কিংবা ফোন বিছানা থেকে যতখানি দূরে সম্ভব সরিয়ে রাখুন–
যদি এখনো ঘড়ি বিছানা থেকে না সরান তাহলে এক্ষুনি সরিয়ে ফেলুন। এলার্ম বাজার পর সেটা বন্ধ করার জন্য হলেও আপনাকে বিছানা থেকে উঠতে হবে, হেঁটে ঘড়ির কাছে যেতে হবে। এই গতি আপনার শরীরে শক্তির প্রবাহ বাড়াবে; প্রবাহিত শক্তি তন্দ্রা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
তৃতীয় ধাপ: দাঁত মাজুন-
বিছানা ছেড়ে হেঁটে এসে এলাম বন্ধ করলেন। এখন আপনাকে বিছানা আবার ডাকবে। কিন্তু আপনি সেই ডাক না শুনে সোজা ওয়াশরুমে যাবেন। সিঙ্কের সামনে দাঁড়ান; আয়নায় নিজেকে দেখুন; মুখে পানির ঝাপটা দিন; আবার নিজেকে দেখুন। পরিবর্তন লক্ষ্য করে উৎফুল্ল হন। ব্রাশে পেস্ট লাগান এবং দাঁত মাজুন।
চতুর্থ ধাপ: পুরো এক গ্লাস জল খান-
আমরা আমাদের ঘুমের সময়ে শরীরে কোন খাবার ও জল সরবরাহ করিনা। বরং সঞ্চিত শক্তি খরচ করি শরীরের তাপের চাহিদা মেটাতে। সুতরাং খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের শরীরে খাদ্যের বিশেষ করে জলের চাহিদা থাকবে। সকালের অসীম তন্ত্রাচ্ছন্নতা শুধুমাত্র বিশ্রামের অভাবেই হয় না। বরং শরীরের জলের চাহিদা অনেকাংশে দায়ী। সুতরাং দাঁত মাজার পর এক গ্লাস জল পান করুন। এক গ্লাস জল পান করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ঘুমের সময় শরীরের সৃষ্টি হওয়া জলের চাহিদা দূর করা।
পঞ্চম ধাপ :কাপড় পড়ুন অথবা স্নান করুন-
এই ধাপে দুইটা বিষয় আছে। আপনি ইচ্ছেমতো ক্রম নির্ধারণ করতে পারেন।
১. শরীরচর্চার জন্য নির্ধারিত পোশাক করুন এবং সরাসরি মিরাকেল মর্নিং অনুশীলনে ঢুকে পড়ুন।
২. স্নান করে ফেলুন
Hal Elrod ব্যক্তিগতভাবে আগে অনুশীলন করতে পছন্দ করতেন কারণ শরীর চর্চার পর স্নান করাটা আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়।
The Life S.A.V.E.R.S
"জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোর প্রতি লাগাতার মনোনিবেশ ও উন্নতির ফলেই
একটা সাধারন জীবন উদাহরণে পরিণত হয়"
—রবিন শর্মা
আপনি ও আমি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের সবথেকে সমৃদ্ধ সময়ে বাস করছি। এত সুযোগ ও সামর্থ্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা পাননি। এতকিছুর পরেও অধিকাংশ মানুষই তাদের ভেতরের সুপ্ত সামর্থ্যকে ব্যবহার করছেন না।
সম্ভাবনা এবং হতাশার মাঝে একটি বড়-সড় খাল রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই ভুল পাড়ে দাড়িয়ে থাকে। আমরা প্রায়ই নিজেদের নিয়ে হতাশ থাকি। হতাশ থাকি জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত এবং তার ফলে ঘটে যাওয়া পতনের জন্য; হতাশ থাকি প্রেরণার অভাবে। সাফল্যের চূড়ায় উঠতে আমাদের কি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল এটা ভাবতেই আমাদের বেশিরভাগ সময় চলে যায়। আমরা জানি আমাদের কী করা উচিত কিন্তু আমরা সেগুলো করি না। একজন সফল মানুষ গড়ে ওঠে তার একান্ত চিন্তা, আচরণ ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ উপাদানের সমন্বয়ে। এই সমস্ত উপাদান একজন মানুষকে সক্ষমতা দেয়।
Life S.A.V.E.R.S
S মানে নীরবতা
না, S ফর Sleep না। অনেকেই যদিও ভাবেন একটা ঘুম দিয়ে উঠে দেখবেন সাফল্য তার নাগালে।
S.A.V.E.R.S প্যাকেজে S মানে হলো নীরবতা। নীরবতা প্যাকেজের প্রথম উপকরণ এবং সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের কোলাহলপূর্ণ ,প্রচন্ড গতিশীল ও বহুল চর্চিত জীবন থেকে উন্নতির পথে নীরবতা প্রথম পদক্ষেপ। নীরবতা বলতে বোঝানো হয়েছে উদ্দেশ্যপূর্ণ নীরবতা; আক্ষরিক নীরবতা নয়।
একজন সাধারণ মানুষ প্রচন্ড তাড়াহুড়োয় দিন শুরু করে, আপনাকে ঠিক তার উল্টোটা করতে হবে; দিন শুরু করতে হবে নীরবতার সঙ্গে। আপনার দিনটি শুরু হবে শান্ত হয়ে শান্তির সঙ্গে।
একদল মানুষ সকাল শুরু করেন চাপ নিয়ে। তাদের সকাল হয় ব্যস্ততাপূর্ণ ,অগোছালো। আর একদল মানুষ শুরু করেন আলস্য নিয়ে। তন্দ্রাচ্ছন্নতা থাকে এই দলের সকাল।
চাপ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কার্যকরী উপায় নীরবতা। নীরবতা আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা আনে, একইসঙ্গে চিন্তায় আনে পরিচ্ছন্নতা, যা আপনাকে সহায়তা করে লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে।
নীরবতা অভ্যাস করার কিছু উপায়-
:মেডিটেশন
:প্রার্থনা
:রিফ্লেকশন
:গভীর শ্বাসক্রিয়া
:কৃতজ্ঞতা জানানো
এই কাজগুলোর সবগুলোই আপনার শরীরকে শিথিল করবে, মনকে শান্ত করবে।S.A.V.E.R.S প্যাকেজের উপযোগিতা গ্রহণের জন্য আপনাকে তৈরি করবে।
মেডিটেশন:-
মেডিটেশনের মূল কথা হলো নীরবতা পালনের মাধ্যমে আপনার মনকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি আবিষ্ট করে রাখা। গবেষণার পর প্রমাণ হয়েছে মেডিটেশন ওষুধের চেয়ে ভালো। মেডিটেশন হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখে, মস্তিষ্কে সক্ষমতা বাড়ায়, এমনকি ব্যথা ও চাপ দূর করতে সাহায্য করে।
মেডিটেশন অনেক ধরনের আছে, কিন্তু মোটা দাগে মেডিটেশন দুই ধরনের- গাইডেড ও নন গাইডেড। গাইডেড মেডিটেশনে আপনি একজন বক্তার কণ্ঠ শুনবেন। যিনি আপনাকে আপনার চিন্তা, মনোযোগ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন। নন গাইডেড মেডিটেশনে কারো সাহায্যে প্রয়োজন হয় না। আপনি নিজের মতো করে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপ অনুসরণ করবেন।
মিরাকেল মর্নিং এর জন্য মেডিটেশন:
আনুষ্ঠানিক মেডিটেশন শুরু করবার আগে আপনার মনকে প্রস্তুত করুন এবং উদ্দেশ্য নিশ্চিত করুন। এই সময়টাতে আপনার মনকে শান্ত করতে হবে। বিদায় দিতে হবে সেই সব জটিল চিন্তাভাবনা কে যা "বর্তমান" সময়কে অনুভব করতে দিচ্ছে না; আপনাকে ব্যস্ত রাখছে অতীতের ভুল পদক্ষেপের আফসোস এবং ভবিষ্যতের ফলাফলের দুশ্চিন্তায়। চেষ্টা করুন চাপমুক্ত থাকতে, সমস্যাগুলোর কাছ থেকে ছুটি নিন, চেষ্টা করুন বর্তমানে উপস্থিত থাকতে। এই সময়টাকে আপনি উপভোগ করবেন আপনার প্রকৃত সত্তাকে। সেই জ্যোতির্ময় সত্তার দিশা ধরে আপনি পৌঁছাবেন আরো গভীরে, যে গভীরতায় পৌছানোর ভাবনা একজন সাধারণ মানুষ তার সুন্দরতম স্বপ্নেও ভাবেনা। দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই আপনি এখনই শুরু করতে পারেন।
: আরামদায়ক, নিরব জায়গা নির্দিষ্ট করুন বসার জন্য।
: মেরুদন্ড সোজা রেখে আসনের ভঙ্গিতে বসুন। চোখ বন্ধ করেও নিতে পারেন ,খোলাও রাখতে পারেন। খোলা রাখলে দুই হাত সামনে রেখে মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন।
: নিঃশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দিন। ধীরে কিন্তু গভীর শ্বাস নিন। শ্বাস নিন নাক দিয়ে, ছাড়ুন মুখ দিয়ে। খেয়াল রাখুন শ্বাস নেওয়া কিংবা ছাড়ার জন্য পেট ব্যবহার করুন, বুক নয়। নিঃশ্বাস যদি বুকে না গিয়ে পেটে নেন সেটা সর্বাধিক কার্যকরী হয়।
: শ্বাসক্রিয়ায় এবার একটু গতি আনুন। শ্বাস নিন, তিন সেকেন্ড ধরে। সেকেন্ড গুণবেন কীভাবে–ধীরে ধীরে গুনুন, এক হাজার এক, এক হাজার দুই, এক হাজার তিন। তিন সেকেন্ডের জন্য ধরে রাখুন- একই ছড়া। ছাড়ুন তিন সেকেন্ড ধরে– এক হাজার এক, এক হাজার দুই, এক হাজার তিন। অনুভব করুন আপনার চিন্তা, আপনার আবেগ ,ধীরে ধীরে স্থায়ীভাবে আপনার গভীরে স্থায়ী হচ্ছে। মেডিটেশন করার সময় আপনি বাস্তব জগত থেকে সরে আসতে চাচ্ছেন কিন্তু বাস্তবতা আপনাকে ছাড়বে না। আসতে দিন এবং তাদের থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে নিন। মনোযোগ নিবদ্ধ করতে চেষ্টা করুন শ্বাসক্রিয়ায়।
: মনে রাখবেন এই সময়টা হচ্ছে বাস্তবতার চিরন্তন জটিলতা থেকে নিজেকে মুক্তি করার। এই সময় আপনি সব চাপ ,দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলবেন। প্রতি নিঃশ্বাসের সঙ্গে আপনি ভেতরে নিচ্ছেন ইতিবাচকতা ,ভালোবাসা, শান্তি; বের করে দিচ্ছেন সব চাপ আর দুশ্চিন্তা। বর্তমান সময়টাকে উপভোগ করুন; শ্বাস নিন, ছাড়ুন…নিজের অস্তিত্বকে উপভোগ করুন।
: দৈনন্দিন জীবনের দুশ্চিন্তা যদি আপনাকে মেডিটেশনের সময় খুব বেশি বিরক্ত করে আপনি কিছু শব্দ, কিছু বাক্য ব্যবহার করে দেখতে পারেন। শাস নেওয়ার সময় ভাবুন -আমি শান্তি নিচ্ছি, যখন ছাড়ছেন- আমি ভালোবাসা বিতরণ করছি।
মেডিটেশনকে ভাবুন দৈনন্দিন সব ঝামেলা থেকে নেওয়া ছুটি হিসেবে। মেডিটেশন আপনাকে বাস্তব ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে না বরং এই ঝামেলাগুলোকে সামলাতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, নতুন উদ্ভাবনে সক্ষম করবে।
নীরবতার সর্বাঙ্গ সুন্দর উপায় বলতে আসলে কিছু নেই। আপনি প্রার্থনা করতে পারেন, মেডিটেশন করতে পারেন, কৃতজ্ঞতা জানাতে পারেন কিংবা অন্য যে কোন গভীর চিন্তায় মগ্ন হতে পারেন। Hal Elrod- এর জন্যও এটা সহজ ছিল না। অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলির জন্য তিনি কিছুতেই একাগ্র মন সংযোগ করতে পারতেন না। কিন্তু তিনি সেই সমস্যা গুলোর সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন আর সেই জন্যই মেডিটেশন সফল হওয়ার সব অলিগলি তিনি জানেন। কতক্ষণ মেডিটেশন করবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। একটা দিন শুরু করার এটাই সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ সঠিক উপায়।
S. A.V.E.R.S-এর "A"
"A"মানে ইতিবাচক আত্মকথন
"নিজেকে বোঝান, আত্মবিশ্বাস দূর হবে। আপনার বিশ্বাস যখন গভীরে গ্রোথিত হবে, ঘটনা নিজে থেকেই ঘটতে থাকবে।"
–মোহাম্মদ আলী
"আমিই সেরা"মোহাম্মদ আলী এই কথাটা নিজেকে শোনাতেন বারবার এবং তিনি সেরাদের একজনে পরিনত হয়েছিলেন। কাঙ্খিত সাফল্য অর্জনের জন্য আত্মকথন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আপনাকে সাহায্য করবে জীবনের সব চাওয়া পূরণে। আত্মকথন আপনাকে শুধু লক্ষ্য নির্ধারণেই সহায়তা করে না বরং সেই লক্ষ্য পূরণের ধাপও তৈরি করে দেয়।
নিজের সঙ্গে কথোপকথন ব্যাপারটা- পাগলামি নয়। একটু ভেবে দেখুন তো সবাই নিয়মিতভাবে এবং অবিরত নিজেদের সঙ্গে কথোপকথন করে যাচ্ছি না? যখনই আপনার মন মুক্ত তখনই এই কথোপকথন শুরু হয়ে যায়। এই নাটকে অভিনয় করে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা –ভালো অথবা খারাপ। এই ব্যাপারটা একদমই স্বাভাবিক। আপনি নিজেকে নিয়ে কি ভাবছেন সেটা সাফল্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আপনার আত্মকথন হয় আপনার পক্ষে ভূমিকা রাখছে অথবা বিপক্ষে; নির্ভর করে আপনার নিয়ন্ত্রণের ওপর।
আপনি অবশ্যই আপনার অতীতের ভুল ও ভয় এড়িয়ে যাওয়ার পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করেন। আপনি যদি আপনার আত্মকথা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, আপনার ভবিষ্যৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি করে এবং সেগুলো নিয়মিত নিজেকে শোনান (জোর গলায়)। ইতিবাচক আত্মকথন আপনার চিন্তা ভাবনা থেকে ক্ষুদ্র, অসম্পূর্ণ, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করে দেবে।
Matt Recore, ছিলেন Hal Elrod-খুব ভালো সফল বন্ধুদের একজন। ম্যাটের সঙ্গে থাকাকালীন ইতিবাচক আত্মকথনের বিষয়টি তিনি প্রথম জানতে পারেন। Matt শাওরের নিচে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতেন ,"আমি আমার ভাগ্যের নিয়ন্তা, সাফল্য আমার অধিকার, স্বপ্ন পূরণের জন্য যা যা করা দরকার তার সবই আমি করব, নিঃসংকচিত্তে।"
আপনার প্রোগ্রামিং কেমন?
ডিজিটাল এই সময়ে আমরা সবাই জানি প্রোগ্রামিং কি জিনিস। আধুনিক স্মার্ট সব যন্ত্রের প্রত্যেক অংশের যেমন আলাদা আলাদা প্রোগ্রামিং করা আছে, তেমনি আমাদেরও মনের গভীর অবচেতনে চিন্তা, বিশ্বাসের ,কাজের প্রোগ্রামিং করা আছে। আমাদের প্রোগ্রাম নিজে নিজে পরিবর্তিত ,পরিবর্ধিত হতে পারে। এজন্য আমাদের আচরণের, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়। এবং এটা হয়ে থাকে বাইরের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। আমাদের কারো কারো ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং হয় সুখ ও সফলতার জন্য ,অন্যদের ক্ষেত্রে তার বিপরীত এবং এই পৃথিবীতে তারাই সংখ্যাধিক। আপনি যদি নিজে থেকে আপনার কোর প্রোগ্রামে পরিবর্তন না আনেন, তো এইসব প্রতিকূল ভ্যারিয়েবল আপনাকে হতাশার শেষ সীমায় পৌঁছে দেবে ধ্বংসানুমুখ করে তুলবে।
আনন্দের খবর হচ্ছে ,আপনি যেকোনো সময় নিজের প্রোগ্রামিং এ পরিবর্তন আনতে পারেন। অতীতের ভয়, হতাশা, প্রত্যাখ্যানের অপমান ইত্যাদির বিরুদ্ধে আপনি নিজের প্রোগ্রামিং কে আরও বেশি রক্ষণাত্মক করতে পারেন।
নিজেকে প্রোগ্রামিং করতে পারেন আত্মবিশ্বাসী হতে। প্রতিদিনের জীবনে আপনি কী হতে চান, কী অর্জন করতে চান, কীভাবে অর্জন করতে চান, সেগুলো নিজেকে বারবার বলুন। যথেষ্ট পরিমাণ বলার পর ,একটা সময়, আপনার অবচেতন মনে আপনি আপনার লক্ষ্যে বিশ্বাস করতে শুরু করবেন, সেই অনুযায়ী আপনি কাজ করতে শুরু করবেন এবং আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করবেন, আপনার দৈনন্দিন জীবনে আপনার ইতিবাচক আত্মকথন প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলা শুরু করেছে।
আপনার নিজস্ব আত্মকথন তৈরির পাঁচটি সাধারণ ধাপ:-
১. আপনি জীবন থেকে আসলে কী পেতে চান
২. কেন চান
৩. ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করার জন্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন
৪. কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণে আপনি কি কি করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
৫. সফলদের গল্প ও দর্শন মাথায় রাখুন
আত্মকথন সম্পর্কে শেষ কথা:
:- আত্মকথনের প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ ফলদায়ক করার জন্য আপনার আবেগের রাশ ঢিল করতে হবে। কোনো আবেগ ছাড়া, সত্যকে উপলব্ধি না করে একই কথা বারবার বলে গেলে কোনো ফল পাবেন না। আত্মকথনের প্রতিটি শব্দের তাৎপর্য, প্রতিটি শব্দের সত্য আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে।
:-আত্মকথনের সময় যদি কিছু শারীরিক কসরত করতে পারেন ভালো হয়। শারীরিক কসরত ও আত্মকথনের সমন্বয় শরীর-মনের মিলিত শক্তিকে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
:-আপনি যত শিখবেন, লক্ষ্যে অগ্রসর হবেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে যত খাপ খাওয়াতে পারবেন, ততই আপনার আত্মকথন পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। প্রতিদিন আপনি কিছু বাধা অতিক্রম করে যাবেন এবং সেই বাধা অতিক্রমের জন্য যেসব বাক্য আত্মকথনে ছিল, তা প্রয়োজনীয়তা হারাবে ।সুতরাং আপনি সেগুলো বাদ দিয়ে যাবেন।
:-আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত আত্মকথন অনুশীলন করতে হবে।
:-যে বই কিংবা আর্টিকেল আপনার চিন্তায় প্রভাব বিস্তার করে, আপনার ভেতরে ইতিবাচকতা জাগিয়ে তোলে ,তার ওপর ভিত্তি করে আপনি স্বাচ্ছন্দে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে পারেন।
S.A.V.E.R.S এর "V"
V মানে দৃশ্যায়ন কল্পনা
"বাস্তবকে বাস্তবের মত না দেখে বাস্তবকে আপনি যেভাবে চান সেভাবে দেখুন"
—-রবার্ট কলার্
দৃশ্যায়নকে আমরা সৃষ্টিশীল দৃশ্যায়ন কিংবা মানসিক মহড়া ও বলতে পারি। সহজে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়-একটা সম্ভাব্য পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার হাজারটা উপায় থাকতে পারে এবং প্রতিটা উপায়ের ফলাফল একই নাও আসতে পারে। আমরা দৃশ্যায়নের মাধ্যমে কল্পনায় নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের সব সম্ভাব্য উপায় ব্যবহার করব ,ফলাফল আলোচনা করব। অ্যাথলেটদের ভেতর এই পদ্ধতি খুব জনপ্রিয়।
নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরা গলফার Tiger Woods-তিনি তাঁর বিখ্যাত সুইং গুলো ব্যবহার করার আগে হাজারবার কল্পনায় অনুশীলন করে নেন। বিখ্যাত গলফার Jack Nicklaus আরো একধাপ এগিয়ে বলেছেন,"কল্পনায় নিখুঁত অনুশীলন না করে এমনকি আমি বাস্তবে প্র্যাকটিসের জন্য কোন সুয়িং করি না।"
আপনি কী দৃশ্যায়ন করবেন:-
আমরা অধিকাংশই ও অধিকাংশ সময়ই আগের ভুল ও হতাশা গুলোই কল্পনাতে দেখি। সৃষ্টিশীল দৃশ্যায়ন আপনার মনকে ব্যস্ত রাখবে এবং আপনাকে আপনার কাঙ্খিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করবে।
Hal Elrod তিনটি সাধারণ ধাপ অনুসরণ করতেন। আত্মকথন শেষে তিনি খাটে সোজা হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিতেন। পরবর্তী পাঁচ মিনিট খুব সাধারণ একটা দৃশ্য দেখতেন–উনি ওনার কাঙ্ক্ষিত জীবনযাপন করছেন; খুব স্বাচ্ছন্দে ,আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ,মজা নিয়ে দৈনন্দিন কাজ করছেন।
দৃশ্যায়ন আমাদের জীবন উপভোগ করতে সাহায্য করে, চাপমুক্ত থাকতে এবং অলসতা ত্যাগ করে কর্তব্য পালনেও সাহায্য করে।
দৃশ্যায়নের তিনটি ধাপ:-
১. দৃশ্যায়নের জন্য তৈরি হন
২. আপনি ঠিক পরবর্তী চরম চাওয়াটাই কল্পনা করুন
৩. দৃশ্যায়ন করুন আপনি কী হতে চান এবং কেন তা হতে চান
দৃশ্যায়নের ব্যাপারে শেষ কথা:-
সকালের আত্মকথনের সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যায়নের ফলে আপনার অবচেতন মনের প্রোগ্রামিং নিয়ে এক নতুন গতির আবির্ভাব ঘটবে। আপনার কল্পিত, আকাঙ্ক্ষিত জীবন আর বাস্তব জীবনের ভেতর সমন্বয় ঘটাতে শুরু করবে এবং আপনি তা অনুভব করবেন।
দৃশ্যায়ন রোজ করতে হবে। কারণ একদিনই সম্পূর্ণ নিখুঁত দৃশ্যায়ন সম্ভব না। রোজ আপনার কল্পনায় নতুন নতুন বাধা দেবে- সেই বাধা অতিক্রম করার উপায় আপনি বের করে ফেলবেন। আপনি সেগুলো মুখোমুখি হওয়ার সাহস ও প্রস্তুতি নেবেন। এবং এই পুরো ব্যাপারটাই আপনার বাস্তব জীবনে প্রভাব ফেলবে। দৃশ্যায়ন বাস্তব বাধা সম্পর্কে আপনাকে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।
S.A.V.E.R.S এর "E"
E মানে শরীর চর্চা
"আপনি যদি ব্যায়ামের জন্য সময় বের না করতে পারেন, আপনাকে অসুস্থতার জন্য সময় রাখতে হবে।"
—রবিন শর্মা
প্রতি সকালে ব্যায়াম করা আমাদের প্রাত্যহিক অভ্যাস হওয়া উচিত। আপনি যদি কয়েক মিনিটের জন্যও ব্যায়াম করেন–আপনার শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি মনোযোগ বৃদ্ধিতে সক্ষমতা বাড়বে। সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা এত বেশি যে, তা অগ্রাহ্য করা বোকামি। ঘুম থেকে ওঠার পর মানসিক স্বচ্ছতা বাড়ানোর থেকে শুরু করে সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত শক্তি আরোহনে আপনাকে বাড়তি সাহায্য করবে ব্যায়াম।
ব্যায়াম করার পদ্ধতি আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে। আপনি জিমে যেতে পারেন, দৌড়াতে পারেন কিংবা অন্যান্য ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
Hal Elrod ব্যক্তিগতভাবে যোগ ব্যায়াম করতে বেশি পছন্দ করতেন। যোগব্যায়াম আপনার শরীরের জড়তা কাটাতে, শক্তি বৃদ্ধি করতে এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। যোগব্যায়াম কে আপনি এমন কি মেডিটেশন -এর একটা ধরন হিসাবেও ব্যবহার করতে পারেন।
∆ ব্যায়ামের সুফল সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। স্বাভাবিক কথা হচ্ছে -ব্যায়াম না করা কিংবা নিয়মিত না করার পেছনে যুক্তির অভাব হয় না।
মিরাক্কেল মর্নিং এর উপকারিতা এখানেই। প্যাকেজে আপনাকে ব্যায়াম করতে হবে সকালে। যখন আপনার কোন ক্লান্তি থাকবে না, যখন আপনার সময়ের অভাব হবে না। ফলে আপনি অন্তত প্রাথমিক দুটো অজুহাত থেকে মুক্তি পাবেন, যা আপনাকে ব্যায়ামের বিরুদ্ধে আকৃষ্ট করে।
S.A.V.E.R.S-এর "R"
R মানে পড়া
"যিনি পড়েন না তিনি কোনোভাবেই পড়তে না জানার মানুষটা থেকে উৎকৃষ্ট নন।"
—মার্ক টোয়েন
পড়া, Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজের পঞ্চম উপাদান হলেও জীবনের যেকোনো ধরনের পরিবর্তনের জন্য এটাই প্রথম উপাদান। জীবনের সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করার জন্য যে জ্ঞান ও পরিকল্পনা প্রয়োজন তা অর্জন করতে পঠনই সবথেকে কার্যকরী উপায়।
সম্পর্ক উন্নয়ন, আত্ম উন্নয়ন, যোগাযোগ দক্ষতার উন্নয়ন, অধিক উপার্জন-জীবনের যে ক্ষেত্রেই পরিবর্তন চান-আপনার কাছের বইয়ের দোকানে কিংবা লাইব্রেরীতে যান। আপনি কোন না কোন বই পেয়ে যাবেন। Hal Elrod নিজের কিছু প্রিয় বইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন–
∆ Think and Grow Rich - Napoleon Hill
∆ Secrets of the Millionaire Mind- T Harv
Eker
∆ Total Money Makeover- Dave Ramsey
কতটুকু আপনি পড়বেন?
দিনে অন্তত দশ পৃষ্ঠা করে পড়ুন। আপনি যদি ধীর গতির পড়ুয়া হয়ে থাকেন কিংবা একদমই পড়ুয়া না হন, দৈনিক পাঁচ পৃষ্ঠা দিয়ে শুরু করুন। প্রতিদিন দশ পৃষ্ঠা আপনাকে ভেঙে ফেলবে না, আপনাকে গড়ে তুলবে। কত সময় লাগবে? বড়জোর ১০ থেকে ১৫ মিনিট; আপনি ধীর গতির পড়ুয়া হলে সর্বোচ্চ আধ ঘন্টা।
পঠনের ব্যাপারে শেষ কথা:-
:- ফলাফল নিয়ে ভাবুন। দৈনিক পঠন শুরু করার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কেন আপনি এই বইটা পড়বেন, কী শিখতে চাচ্ছেন এখান থেকে, জবাব এবং ফলাফল মনে গেঁথে রাখুন। সবথেকে বড় প্রশ্ন, মিরাকেল মর্নিং এর যে ৩০ দিনের প্রোগ্রাম, সেটা শেষ করে যে জ্ঞান আপনি অর্জন করবেন ,সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে তার দৈনিক জীবন যুদ্ধে ব্যবহার করবেন কি?
:-ভালো বিখ্যাত আত্মনিয়ন্ত্রণের বই গুলো বারবার পড়ুন। একবার পড়ে ই এ ধরনের বইগুলো থেকে পরিপূর্ণ উপলব্ধি পাওয়া মুশকিল। একটা বইয়ের সর্বোচ্চ উপযোগিতা নিশ্চিত করতে তা বারবার পড়া জরুরী। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কৌশল ইত্যাদি নিয়ে বারংবার ভাবা প্রয়োজন। আপনি যত বেশি বিষয়গুলো নিয়ে ভাববেন, তত বেশি সেগুলোর সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন ,তত বেশি বিষয়গুলো আপনার অবচেতন মনে গেঁথে যাবে। নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করুন যতক্ষণ না The Miracle Morning- এর ওপর আপনি পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি বারবার এই বইটি পড়তেই থাকবেন।
S.A.V.E.R.S-এর "S"
S মানে লিখন
Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজের সর্বশেষ অনুশীলন টি হচ্ছে Scribing । মনের কথা লিখে রাখার অনেক ধরন আছে।Hal Elrod ডায়েরি লেখাকে, সব থেকে বেশি পছন্দ করতেন। মিরাকেল মর্নিং প্যাকেজ চলার সময় তিনি রোজ ৫ থেকে ১০ মিনিট লিখতেন। আপনার মনের কথা, কল্পনা, ফ্যান্টাসি যাই বলেন না কেন, সেটা ভৌত কাগজে বাস্তব লেখার অনুভূতি অন্যরকম। এর ফলে আপনি বহুভাবে উপকৃত হবেন। আপনার কল্পনা কখনোই চর্চার অভাবে ফিকে হয়ে যাবে না কারণ সেগুলি লেখা আছে। আপনি যখনই ডাইরির পাতা উল্টাবেন আপনার ভাবনা গুলো ফিরে আসবে।
ডায়েরি লেখা শুরু করবার আগেই Hal এর উপকারিতা সম্পর্কে শুনেছিলেন। তিনি চেষ্টাও করেছিলেন লেখার কিন্তু হয়নি। মিরাকেল মর্নিং শুরু করবার আগে তিনি কোনোভাবেই ডাইরি লিখতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু মিরাকেল মর্নিং এর একদম প্রথম দিন থেকেই তিনি ডায়েরী লেখা শুরু করতে পেরেছিলেন। Miracle morning প্যাকেজের স্বার্থেই ওনাকে দিনের শুরুর একটা নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ রাখতে হয়েছিল। এবং যেহেতু সময়টা নির্ধারিত ছিল সকালে, কাজেই সময়ের অভাব এবং ক্লান্তির অজুহাত দেওয়ার সুযোগ ছিল না। খুব শিগগিরই লেখা ওনার প্রিয় অভ্যাসগুলোর একটাতে পরিণত হয়। এবং এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন।
ডায়েরি লেখার ইতিবাচক ফলের অভাব নেই। বিভিন্ন জায়গায় আপনি হাজারও সুফলের উল্লেখ পাবেন। এখানে Hal Elrod যে সমস্ত সুফলগুলো অর্জন করে ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হয়েছেন সেগুলি উল্লেখ করেছেন-
১. পরিচ্ছন্ন ধারনা
২. ধারণা আত্তীকরণ
৩. ফিরে দেখা
৪. অগ্রগতি সম্পর্কে ধারনা।
ডায়েরী লেখার কার্যকরী উপায়:-
(১) নির্দিষ্ট একটি ফরমেট ব্যবহার করুন-সিদ্ধান্ত নিন। ক্লাসিক কাগজের ডায়েরি ব্যবহার করবেন না ডিজিটাল ডায়েরি? আপনাকে আপনার পছন্দ ও সুবিধা অনুযায়ী একটি পদ্ধতি বাছাই করতে হবে। উভয় পদ্ধতি ও ব্যবহার করতে পারেন।
(২) একটি সুন্দর দেখে ডাইরি নিন যেন ব্যবহার করতে উৎসাহী হন। একটু মজবুত কাঠামো দেখে কিনুন যেন অনেক দিন ব্যবহার করা যায়। এমন ডায়েরি কিনুন যেন দাগ কাটা থাকে, তারিখ দেওয়া থাকে, বছরের প্রতিটা দিনের তথ্য লেখার মত যথেষ্ট জায়গা থাকে। যেসব ডাইরিতে আগে থেকেই তারিখ দেওয়া থাকে সেগুলোতে লেখার জন্য একটা মানসিক চাপ থাকে। যদি কোন কারনে কোন একদিন আপনি লিখতে ভুলে যান, পরেরবার লিখতে বসলে ওই খালি পৃষ্ঠাগুলো আপনাকে যন্ত্রণা দেবে।
(৩) সিদ্ধান্ত নিন কী লিখবেন–কী লিখবেন এই ব্যাপারে আসলে খুব বেশি বলার নেই। যা খুশি তাই লিখুন। কৃতজ্ঞতার কথা লিখতে পারেন; লিখতে পারেন স্বপ্নের কথা; লক্ষ্য আর তা পূরণের পরিকল্পনার ব্যাপারে; পরিবার, প্রতিজ্ঞা, শিক্ষার ব্যাপারেও লিখতে পারেন। মনে রাখবেন, যাই লিখুন সেটা যেন আপনার লক্ষ্যের প্রতি আপনার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে রাখতে সাহায্য করে। এখানে আপনার লক্ষ্য হচ্ছে সাফল্য।
The Life S.A.V.E.R.S
সবার জীবনধারা এক নয়। আপনি আপনার জীবনধারা অনুযায়ী এই প্যাকেজকে সাজিয়ে নিতে পারবেন।
The Miracle Morning-এর ৬০ মিনিটের কর্মসূচি:
The Life S.A.V.E.R.S উপাদান সমূহের ব্যবহার:--
নীরবতা
৫ মিনিট
আত্মকথন
৫ মিনিট
দৃশ্যায়ন
৫ মিনিট
শরীরচর্চা
২০ মিনিট
পঠন
২০ মিনিট
লেখা
৫ মিনিট
মোট সময়
৬০ মিনিট
সহজ হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সবকিছুই কঠিন। যে কোন নতুন অভিজ্ঞতাই অস্বস্তিকর, অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত। The Life S. A.V.E.R.S প্যাকেজ আপনি যত বেশি চর্চা করবেন, ততোই এটা আপনার জন্য সহজ ও স্বাভাবিক হতে থাকবে।
লেখক The Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজ এখনই শুরু করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জীবন বদলে দেওয়া ৩০ দিনের The Miracle Morning প্যাকেজ শুরু করার আগেই আপনি S.AV.E.R.S প্যাকেজের সব বিষয়ে পরিচিত ও অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারেন।
ছয় মিনিটের মিরাকেল:-
The Miracle Morning নিয়ে সবথেকে যে প্রশ্নটা লেখক কে শুনতে হয়েছে তা হলো, কত সময় প্রয়োজন এটার জন্য। সাফল্য পেতে আমাদের সীমিত আত্ম উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে কীভাবে অসীম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় এটাই ছিল ওনার প্রথম দিকের একমাত্র চিন্তার বিষয়। এই সমস্যার খুব উপযোগী সমাধান তিনি পেয়েছেন এবং এটা প্রতিনিয়ত আরও লক্ষ্যভেদী করার প্রচেষ্টাও করে যাচ্ছেন।
The Miracle Morning নিয়ে প্যাকেজ যখন থেকে পেশাগত ভাবে পরিকল্পনা শুরু করেছেন তখন থেকেই ওনার মূল লক্ষ্য ছিল, কীভাবে এই প্যাকেজটির অল্প সময়ের চর্চা থেকে অধিক কার্যকরী ফল বের করা যায়। এই চেষ্টারই ফলস্রুতি ৬ মিনিটের মিরাকেল মর্নিং। এই ৬ মিনিটের প্রক্রিয়াটা সেইসব মানুষের জন্যে, যাদের সময়ের সত্যি খুব টানা পোড়েন এবং জীবন যুদ্ধে পর্যদুস্থ সেই সব মানুষের জন্য, যারা নতুন করে একটি ঝামেলা নিতে ইচ্ছুক নন।
প্রথম মিনিট:
কল্পনা করুন, হাজারো দুশ্চিন্তা, চাপ, ব্যস্ততা ছাড়া দিনের শুরু করছেন, মানসিক প্রশান্তি আর শারীরিক ক্লান্তিহীনতা নিয়ে। আপনার দিনের প্রথম মিনিট টি উপভোগ করুন নীরবতা ,উদ্দেশ্য পূর্ণ নীরবতার সঙ্গে। বসুন; মনকে শান্ত করুন, গভীর শ্বাস নিন ,ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শুধুমাত্র এই শান্ত ,ঝামেলা হীন সুন্দর মিনিটের জন্য পরমশক্তিমান এর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারেন। যাই করুন উদ্দেশ্য থাকবে একটাই, মনকে শান্ত করা ,শরীরকে শিথিল করা, সকল ধরনের চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।
দ্বিতীয় মিনিট:-
এবার আপনি আত্মকথন লিখে রাখা কাগজটা বের করুন। যেটাতে আপনি লিখেছিলেন আপনার সামর্থ্য আর লক্ষ্য সম্পর্কে। আগাগোড়া পড়ুন, জোরে ,স্পষ্ট করে ,নিজেকে শুনিয়ে। আপনি আপনার লক্ষ্যগুলো পড়বেন তখন আপনার ভেতর থেকে ওই লক্ষ্য পূরণের অনুপ্রেরণা আসবে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে। মনোযোগ দিন নিজের প্রতি, নিজের লক্ষ্যের প্রতি। মনোযোগ দিন যে জীবন আপনি চান, যা আপনার প্রাপ্য, অর্জন করা সম্ভব বলে আপনি বিশ্বাস করেন সেই সব অর্জনের পথে চলতে কী কী জিনিস আপনার দরকার এবং তা অর্জন করতে আপনি কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
তৃতীয় মিনিট:-
চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন আপনার ভিসুয়াল বোর্ডটিকে। কল্পনা করুন যখন আপনি কাঙ্খিত সাফল্য লাভ করবেন তখন আপনার আশেপাশের পরিবেশ, লোকজন কেমন হবে; অনুভব করুন কিভাবে আপনি সেই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলবেন। আপনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে-সাফল্যকে দেখা ,সেটা অনুভব করা, সাফল্যের ভেতরে থেকে খুশি অনুভব করা, যে খুশির সময়, পরিবেশ ও মুহূর্ত তৈরি করার জন্য এত চেষ্টা…
চতুর্থ মিনিট:-
এবার একটা মিনিট সময় বের করুন কিছু লেখার জন্য। লিখুন আপনি কৃতজ্ঞ, কেন আপনি গর্বিত এবং ঠিক কী কী পরিবর্তন আপনি নিজের ভেতর আনতে চাচ্ছেন কাঙ্খিত সাফল্য অর্জনের জন্য। এবং এই কাজটা করতে করতেই আপনি মনের কোণে একজন শক্তিশালী ,অনুপ্রাণিত ও আত্মবিশ্বাসী "আপনি" সৃষ্টি করতে পারবেন।
পঞ্চম মিনিট:-
এবার আপনি পড়বেন। পছন্দের আত্ম উন্নয়নমূলক বইটি নিন। ঠিক ১ মিনিট পড়ুন, যতটুকু সম্ভব। কিছু ধারনা পাবেন, যা আরো পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করবে; যা আপনার মন প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করবে; বেঁচে থাকাকে করবে সহজ।
ষষ্ঠ মিনিট:-
সবশেষে উঠে দাঁড়ান। শেষ ষাট সেকেন্ডে আপনার কাজ হবে শরীরের আলসেমি দূর করা। খুব ছোট ও সহজ কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলোর জন্য খুব বেশি সময়, জায়গা কিংবা চেষ্টা লাগেনা। লক্ষ্য টা হচ্ছে হৃদয় গতি সঞ্চার করা, শক্তি বৃদ্ধি করা এবং আপনার সক্ষমতার সর্বোচ্চ অবস্থা নিশ্চিত করা যা আপনাকে মনোযোগ ধরে রাখতে এবং কাজ করতে সাহায্য করবে।
আপনার জীবনধারা ,লক্ষ্য ও স্বপ্নের সঙ্গে মিল রেখে সাজিয়ে নিন আপনার অতি নিজস্ব মিরাকেল মর্নিং:-
The Miracle Morning অসাধারণ। এটা চিন্তায় দিয়েছে স্বচ্ছতা; মনোযোগে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করেছে, জীবনের জন্য নতুন শক্তির সঞ্চার করেছে। এই প্যাকেজের সবথেকে আকর্ষণীয় ব্যাপারটা হচ্ছে যে ,এটা নমনীয়।যে কেউ নিজের লক্ষ্য এবং জীবনধারা হিসেবে এটাকে সাজিয়ে নিতে পারেন। আমাদের সবার সপ্তাহ ১৬৮ ঘণ্টার। দেরি না করে এখনি শুরু করুন আপনার মিরাকেল মর্নিং প্যাকেজ এবং অনুভব করুন জীবনের সেই অনাস্বাদিত স্বাদ। জেগে উঠা থেকে শুরু করে মিরাকেল মর্নিং এর সম্পূর্ণ সময়টা আপনি নিজের মতো করে ব্যবহার করতে পারেন। এই সময় আপনি কী করবেন, কতক্ষণ করবেন ,কোনটা আগে কিংবা পরে করবেন সম্পূর্ণটা নির্ভর করছে আপনার উপর। মূল লক্ষ্য অর্জনের পথে যতখানি করা দরকার, তার সবটুকু করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আপনার রয়েছে।
মিরাকেল মর্নিং এর চর্চা আপনাকে ঠিক সকালেই করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অবশ্যই খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার এবং মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে দিন শুরু করার অনস্বীকার্য উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু আমাদের ভেতর এমন অনেক মানুষও আছেন যারা গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেন কিংবা সারারাত কাজ করেন। এই ধরনের মানুষের লাইফ স্টাইল, সময়ের হিসাব নিশ্চয়ই রাত নয় বা দশটায় বিছানায় যান তাদের থেকে আলাদা হবে। আপনার লাইফ স্টাইল কিংবা সময়ের হিসাব যেমনই হোক না কেন, সমস্যা নেই। আপনাকে শুধু আপনার নির্ধিত সময়ের কিছু আগে (৩০ থেকে ৬০ মিনিট) ঘুম থেকে উঠতে হবে। যেন বাস্তব জীবনের সঙ্গে তাল রেখে কাঙ্খিত সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে নিজেকে প্রস্তুত করতে কিছু সময় নিজের জন্য বরাদ্দ করতে পারেন।
কখন, কেন এবং কী খাবেন (সকালে):-
এখন পর্যন্ত সকালের কার্যক্রম নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, খাবারের ব্যাপারটা ছাড়া। প্রশ্ন করতেই পারেন ,খাওয়ার কথা কখন বলা হবে। শুধু কখন খাব এটাই না ,কী খাবো এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ,যা খাব বলে সিদ্ধান্ত নেব তা কেন খাব এই সম্পর্কেও আলোচনা করা দরকার।
শরীর একটা জটিল যন্ত্র। অন্যান্য যন্ত্রের মত এটা চালু রাখতে প্রচন্ড শক্তির দরকার হয়। শরীরবৃত্তীয় সব কাজের ভেতরে খাবার হজম করতে সবথেকে বেশি শক্তি খরচ হয়। আপনি যত বেশি খাবেন, হজম করার জন্য তত বেশি সময় ,তত বেশি শক্তির দরকার হবে ,আপনি তত অধিক মাত্রায় দুর্বলতা অনুভব করবেন। সুতরাং Life S.A.V.E.R.S অনুশীলন করার পরই আপনি খাবার গ্রহণ করুন। কারণ এই বিশেষ অনুশীলনের জন্য একাগ্র মনোযোগ প্রয়োজন হবে। এজন্য প্রয়োজন যতখানি বেশি সম্ভব রক্তের প্রবাহ মগজে পাঠানোর।
পুষ্টি সবথেকে বেশি থাকে তাজা খাবারের। যেমন তাজা শাক-সবজি কিংবা ফল। এইসব খাবার আপনার কর্ম ক্ষমতা বাড়ায় ,মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে ,শরীর-সবল ও রোগ থেকে মুক্ত রাখে। মিরাকেল মর্নিং প্যাকেজে আপনি একটি সুপার ফুড স্মুদি জুস রাখুন। যার এক গ্লাসেই আপনি পাবেন প্রয়োজনীয় প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটিঅ্যাসিড। এই বিশেষ জুস শুধু শরীরের শক্তি যোগায় না এটি খেতেও ভীষণ সুস্বাদু।
কালক্ষেপণ থেকে উঠে আসুন, সব থেকে কঠিন, সব থেকে খারাপ কাজটা আগে করুন:-
আমাদের স্বভাবগত স্বাভাবিক কালক্ষেপণ ও দ্বিধা দূর করার সবথেকে কার্যকরী, পরীক্ষিত উপায় হচ্ছে সেই কাজটা আগে করা সেটা সবথেকে জরুরী কিন্তু কম উপভোগ্য। সম্ভব হলে সকালে অনুশীলন শেষে সেটাই সবথেকে আগে করুন।
বিখ্যাত আত্ম উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান ট্রেসি তাঁর বেস্ট সেলিং বই " Ear That Frog"-এ সকালে করা উপকারী এমন সব কাজের কথা আলোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন নির্দিষ্ট ধরনের কিছু কাজ সকাল-সকাল করে ফেললে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। তাঁর মূল যুক্তিটা হচ্ছে-সবথেকে কঠিন কাজটা সকালে সবার আগেই করে ফেলুন। দুটো উপকার হবে-
(ক) দিনের সব থেকে কঠিন কাজটা সারা হয়ে গেছে ,কাজেই দিনের বাকি কাজ আপনি চাপমুক্ত থেকে সাবলীলভাবে সম্পাদন করতে পারবেন।
(খ) কঠিন কাজটা আগেই করে ফেলতে পারলে আপনার আত্মবিশ্বাসের পালে অনুকূল হওয়া লাগবে। ফলে সারাদিন সাফল্যের জন্য ইতিবাচক ভাবতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আপনি দ্বিধান্বিত হবেন না।
একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সকালে ঘুম থেকে ওঠা আমাদের মূল লক্ষ্য নয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সুফলের সঙ্গে আত্ম উন্নয়ন মিলিয়ে সারাদিন ইতিবাচক কাজ করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আপনি কি করছেন সেটা মুখ্য না। মুখ্য হচ্ছে, কাঙ্খিত সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং জাগতিক উন্নয়নের সমন্বয় সাধনে যা করা দরকার সেগুলোই করা। মিরাক্কেল মর্নিং উপভোগ করুন।
অসহনীয় থেকে অপ্রতিরোধ্য অভ্যাস গঠনের পরিক্ষিত উপায় যা আপনার জীবনে পরিবর্তন আনবে মাত্র ৩০ দিনে।
"মানুষ সফল হয়ে জন্ম নেয় না। সফল মানুষ সাফল্যের জন্য কাজের কিছু নির্দিষ্ট ধরন ও কিছু অভ্যাস আত্মস্থ করেন, যা অসফল মানুষ করেন না।
সফল মানুষের অনেক কাজের ভেতর কিছু কাজ থাকে যা তাদের পছন্দ নয়; তবুও তারা সেটা শুরু করেন এবং শেষ করেন"
—--ডন মার্কুইস
বলা হয়ে থাকে, কারো জীবনের মানে নির্ভর করে তার অভ্যাসের মানের ওপর। একজন সফল মানুষের সাফল্যের গোপন সূত্র হচ্ছে যে, কাঙ্খিত সাফল্য পেতে নিয়মিত যে কাজগুলো করা দরকার, তারা সেগুলোকে অভ্যাসে পরিণত করেছেন।
অভ্যাসের ওপর সাফল্য নির্ভর করে। আপনি যে ক্ষেত্রে, যে মাত্রায় সাফল্য চান তা অধিক গ্রহণ করতে যেসব অভ্যাসের প্রয়োজন, তা আপনাকে নির্দিষ্ট করতে হবে; ধারণ করতে হবে ও চর্চা করতে হবে। এবং একইসঙ্গে যেসব অভ্যাস ব্যর্থতার জন্য দায়ী, সেগুলো নির্দিষ্ট করে বর্জন করার দায়িত্ব আপনার। অভ্যাস হচ্ছে সেই সব কাজ, যা আপনি সচেতন ভাবে ও অবচেতন মনে নিয়মিত করে যাচ্ছেন।
ঐতিহ্যে অভ্যস্ততা:-
এটা সত্যি ,কোন না কোন অবস্থায় ,কোন না কোন অভ্যাস এর প্রতি আমরা সবাই কম বেশি দায়বদ্ধ। একবার কোনো অভ্যাস গড়ে উঠলে সেটা পরিবর্তন করা কঠিন। পরিবর্তনের জন্য সফল ও পরীক্ষিত কোন কার্যকর কৌশল আমাদের জানা নেই।
নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে আমরা বেশিরভাগ সময়ে ব্যর্থ হই। কারণ আমরা জানিনা, নির্দিষ্ট অভ্যাস টা থেকে কি ফলাফল আমরা পাব এবং কিভাবে তা অর্জন করব।
নতুন একটা অভ্যাস করে তুলতে ঠিক কতটা সময় লাগে?
এটা নির্ভর করে আপনি কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিচ্ছেন কিংবা কোন বইটা পড়ছেন তার ওপর। এই বিষয়ে আশ্বস্ত হবার মতো যে সব তথ্য পাওয়া যায় তা থেকে একটা নিরাপদ সময় বের করা যায়। সেটা হল ,মোটামুটি তিন সপ্তাহ থেকে তিন মাসের মত লাগে একটা নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে কিংবা পুরাতন একটা অভ্যাস পরিত্যাগ করতে।
লেখক ওনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্যদের অভিজ্ঞতা থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন, তা বিশ্লেষণ করে এটা বলেছেন যে, অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য ৩০ দিন যথেষ্ট সময়, যদি আপনি একটি কার্যকরী কৌশল অনুসরণ করেন।
প্রথম ১০ দিন, প্রথম ধাপ-অসহনীয়,
১১ থেকে ২০ তম দিন দ্বিতীয় ধাপ- অস্বস্তিকর
২১ থেকে ৩০ তম দিন–অপ্রতিরোধ্য।
Hal Elrod একজন বন্ধু জন বার্গহফ ওনাকে ম্যারাথনে দৌড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত নিতে বলেন। লেখক প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু পরে জন ও কেটের ম্যারাথনের ব্যাপারে ইতিবাচক কথাবার্তার পর তিনি ভাবতে বসেন। ওনার মনে হয় নিজের সক্ষমতা নিয়ে যে সন্দেহ তা দূর করার সময় এসেছে। জীবনে যদি তিনি সবকিছু করতে পারেন তাহলে তিনি দৌড়াতেও সক্ষম হবেন। বাড়ি থেকে রাস্তায় বের হওয়ার সময়টুকু তিনি নিজেকে উৎসাহ এবং সাহস দিলেন। ফুটপাতে হালকা চালে খানিকটা দৌড়ানোর পর তিনি রাস্তায় নামেন। রাস্তায় নেমেই তুমি হোঁচট খান এবং ব্যথায় গোড়ালি নীল হয়ে যায়। তিনি মনে করলেন জীবনে কোন কিছুই খামোখা ঘটে না। সম্ভবত আজকের দিনে দৌড়ানো উনার পক্ষে উপযুক্ত না তিনি আবার কাল শুরু করবেন এবং তিনি তাই করেছিলেন।
"অসহ্য থেকে অপ্রতিরোধ্য":-
পরের দিন থেকে তিনি অফিসিয়ালি দৌড়াতে শুরু করলেন ম্যারাথনের জন্য। নতুন সিদ্ধান্তের যে উত্তেজনা থাকে তা ওনার ক্ষেত্রে স্থায়ী হয়েছিল মাত্র কয়েক মুহূর্ত। এরপর ওনার অবচেতন মন স্মরণ করিয়ে দিতে থাকে যে উনি দৌড়াতে উপযুক্ত নয়, উনি খুব খারাপ দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন ,ওনার পা ভাঙা ইত্যাদি। কিন্তু সব থেকে বড় কথা তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন।
অত্যন্ত যন্ত্রণা নিয়ে তিনি এক মাইল দৌড়ানো শেষ করেন।
১-১০ তম দিন:-
দৌড় শুরু করার প্রথম ১০ দিন তিনি অত্যন্ত শারীরিক কষ্টে এবং মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেছেন। উনার অবচেতন মন বারবার ওনাকে আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো থামতে বলেছে কিন্তু তিনি শোনেননি।
১১-২০ তম দিন:-
শরীরের কষ্ট আগের থেকে কমে গেলেও দৌড়ানোকে ঠিক পছন্দ করে উঠতে পারেননি। কিন্তু এটাকে তিনি ছেড়েও দিতে চায়নি। দুই সপ্তাহ টানা দৌড়ানোর পর জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি অনুভব করেন, রোজ সকালে দৌড়ানোটা একেবারেই খারাপ কিছু না। এবং ঘুম থেকে উঠে দৌড়ানোটা ওনার প্রাত্যাহিক জীবনের অংশ হয়ে ওঠে।
২১-৩০ তম দিন:-
শেষ দিন গুলো সত্যিই উপভোগ্য ছিল। উনি দৌড়াতে পারবেন না এই বিশ্বাস উধাও হয়ে গেল, সেখানে স্থান নিল ইতিবাচক আত্মকথন। সেই সঙ্গে আত্ম উন্নয়নমূলক গানও ওনার হাঁটার সঙ্গী হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনার পর যা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি, তা বাস্তব হয়ে ওঠে, তিনি দৌড়াতে সক্ষম হন।
৩০ দিন পর যখন সকালে দৌড়ানোতে তিনি সম্পূর্ণ অভ্যস্ত ,ম্যারাথনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত, জনকে ডাকেন সুসংবাদ দেওয়ার জন্য। জন ওনার খুব ভালো বন্ধু। সব শোনার পর তিনি প্রস্তাব দেন ২৬ মাইল ম্যারাথনে দৌড়ানো আর ৫২ মাইলে দৌড়ানো একই কথা। এতে Hal Elrod খুবই উৎসাহ বোধ করেন। এমনকি একজন বন্ধু ও দুইজন সাহসী কোচিং ক্লাইন্টকে রাজি করিয়ে ফেলেন উনার সঙ্গে অংশগ্রহণের জন্য।
প্রস্তুতি নেওয়ার ৬ মাসে তিনি মোট 475 মাইল দৌড়েছিলেন। এর ভেতরে একটানা কুড়ি মাইল করে দৌড়েছেন তিনবার। চারজনই ধীরে ধীরে প্রস্তুত হতে থাকেন আটলান্টিক সিটি ম্যারাথনের জন্য।
ওনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অফিসিয়াল ম্যারাথন শুরু করার আগেই ওনারা ২৬ মাইল দৌড় শেষ করবেন এবং বাকি ২৬ মাইল শেষ করবেন অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে। ওনাদের ভেতর একইসঙ্গে কাজ করছিল উত্তেজনা ,ভয়, আত্মবিশ্বাস ও অবিশ্বাস।
৬ ঘন্টা পাঁচ মিনিট লেগেছিল প্রথম ২৬ মাইল দৌড় শেষ করতে। এই ব্যাপারটাতে অনুশীলন যতটুকু সাহায্য করেছিল ঠিক ততটাই সাহায্য করেছিল ওনাদের পারস্পরিক উৎসাহ, একটা দল হয়ে একসঙ্গে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা। এই সময়টা ছিল চারজনের জন্যেই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়। ছাব্বিশ মাইল দৌড় শেষ করার আত্মতুষ্টি যেমন ছিল তেমনি সামনে আরো ২৬ মাইল ও দৌড়াতে হবে এই ভাবনাও ছিল।
যে উত্তেজনা নিয়ে ছয় ঘন্টা আগে ওনারা দৌড় শুরু করেছিলেন ,তা এখন প্রচন্ড শারীরিক যন্ত্রণা ও হতাশায় পরিণত হয়। টানা ২৬ মাইল দৌড়ানোর পর উনারা নিশ্চিত ছিলেন না যে আরো ২৬ মাইল দৌড়াতে পারবেন কিন্তু ওনারা পেরেছিলেন।
টানা সাড়ে ১৫ ঘন্টার চেষ্টায় ওনারা চারজন একসঙ্গে লক্ষ্য পূরণ করেন। ফিনিস লাইনের ওপারে ছিল স্বাধীনতা….. সেই স্বাধীনতা যা আপনার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
সেই মুহূর্ত থেকে তিনি বিশ্বাস করা শুরু করেন, এই স্বাধীনতা সবাই পেতে পারেন। যদি শুধুমাত্র নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে বিকশিত হওয়ার জন্য একটু চাপ দেন নিজেকে, আপনি আজকে কিংবা অতীতে যা ছিলেন তার থেকে একটু উপরে ওঠার চেষ্টা করেন, এজন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন ,তাহলে আপনিও উপভোগ করতে পারবেন এমন স্বাধীনতা; এটাই আসলে প্রকৃত স্বাধীনতা।
The Miracle Morning প্যাকেজের ৩০ দিনের জীবন পরিবর্তনকারী পরিকল্পনা আপনাকে সাহায্য করবে স্ব-আরোপিত সীমাবদ্ধতা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে। ৩০ দিনের ওপারে আপনি দেখতে পাবেন যে আপনি সেই ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন ,যার সক্ষমতা রয়েছে জীবনে এত দিনের চাওয়া সবকিছু হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার।
৩০ দিনের জীবন পরিবর্তনকারী পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ:-
প্রাপ্তিকে গুরুত্ব দিন–মিরাকেল মর্নিং প্যাকেজে ৩০ দিনের জীবন বদলানো পরিকল্পনায় অংশ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি জীবনের সব ক্ষেত্রে সাফল্যের ভীত গঠন শুরু করেছেন। আগামী ৩০ দিনে আপনি সেই মানুষেই পরিণত হবেন যা নিশ্চিত করবে আপনার সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব, পেশাগত ও আর্থিক সাফল্য। আপনি নিজের সক্ষমতায় বিশ্বাস করা শুরু করবেন।
শুধু নতুন অভ্যাস গড়ে তোলাই নয়, আপনি নিজের মানসিক পরিবর্তনে উন্নয়ন ঘটাবেন। Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজ অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি নীরবতা, আত্মকথা ,দৃশ্যায়ন, পঠন এবং লিখনের বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক ও বিশ্বাসগত সুবিধা ভোগ করবেন।
মনে রাখবেন, জীবনে পরিবর্তন তখনই এবং শুধুমাত্র তখনই আসবে যখন পরিবর্তন ধারণ করার মতো উপযুক্ত আপনি হবেন। আগে নিজেকে যোগ্য করে তুলুন, তারপর যোগ্যতার পুরস্কার নিন। এবং বিশ্বাস করুন আপনি অবশ্যই পারবেন।
The Miracle Morning শুরু করার ধাপসমূহ:-
(১) The Miracle Morning এর ৩০ দিনের জীবন পরিবর্তনকারী কিট সংগ্রহ করুন।
(২) আগামীকাল আপনার প্রথম মিরাকেল মর্নিং এর পরিকল্পনা করুন।
(৩) যে ফাস্ট স্টার্ট কিটটা পেয়েছেন সেটার প্রথম পৃষ্ঠাটা পড়ুন এবং অনুশীলন করুন।
–(৩.১) একজন দায়িত্বশীল সহযোদ্ধা সঙ্গে নিন।
গুরুত্বপূর্ণ: যতদিন সহযোদ্ধা না পাচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত ৩০ দিনের জীবন পরিবর্তনকারী পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া যাবে না ভুলেও এরকম ধারণায় আটকে থাকবেন না। সহযোদ্ধা পান বা না পান আপনি শুরু করুন, পাশাপাশি বন্ধুদের কনভেন্স করতে থাকুন আপনার সঙ্গে অংশ নিতে।
উপসংহার
আজকে আপনার অতীতকে বিসর্জন দিন ভবিষ্যতের জন্য-
বর্তমানের আপনি আপনার অতীতের কর্মফলের প্রতিচ্ছবি। ঠিক তেমনি আপনার ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ রূপে নির্ভর করছে আপনি কী হতে চান সে ব্যাপারে এই মুহূর্তে সিদ্ধান্তের ওপর। এই মুহূর্তটা আপনার। পরবর্তী দিনের সুখ ,স্বাস্থ্য, সম্পদ সাফল্য, ভালোবাসা- যা আপনার প্রাপ্য তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না।
অন্যদেরকে সাহায্য করুন
আপনার যদি মনে হয়, এই বই আপনার জীবনে কোন ইতিবাচক পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে, এই বই পড়ার পর আপনি যদি নিজেকে অতীতের থেকে সমৃদ্ধ মানুষ মনে করেন-আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষের জন্য কিছু করুন।
( এই লেখাটি Hal Elrod -এর "The Miracle Morning" বইটির সারাংশ। আপনি চাইলে পুরো বইটি পড়তে পারেন।)
সমাপ্ত
4:00 AM, September 01, 2022