4:00 AM, July 17, 2023
ডঃ ডেভিড জে. স্কোয়ার্টজ একজন বিশ্ব-বিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ১৯২৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে একজন অধ্যাপক হন এবং পরবর্তীতে তার নিজস্ব পরামর্শদাতা সংস্থা, ক্রিয়েটিভ এডুকেশনাল সার্ভিসেস ইনকর্পোরেটেড সি.ই.এস আই এন সি. প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই বইতে ১৩ টি অধ্যায়ের মাধ্যমে বলতে চেয়েছেন যে - কোনো বড়ো জায়গায় পৌঁছনোর জন্য বড়ো কিছু ভাবতে হয়। ওনার মতে সাফল্য কখনো একজন ব্যাক্তির বুদ্ধিমত্তা, অর্থবান পিতা-মাতা কিংবা ভাগ্য দ্বারা নির্ধারিত হতে পারেনা, নিজের চিন্তা-ভাবনার দ্বারা সাফল্য অর্জন করতে হয়।
অধ্যায়-১:-
::বিশ্বাস করুন আপনি সফল হতে পারেন এবং আপনি হবেন ::
ইতিবাচক জিনিস, সাফল্য মানে ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি- একটি সুন্দর বাড়ি, ছুটি, ভ্রমণ, নতুন জিনিস, আর্থিক নিরাপত্তা, আপনার সন্তানদের সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান। সাফল্য মানে প্রশংসা, নেতৃত্ব, আপনার ব্যবসায়িক এবং সামাজিক জীবনে লোকেদের দ্বারা দেখা হওয়া। সাফল্য মানে স্বাধীনতা-উদ্বেগ, ভয়, হতাশা এবং ব্যর্থতা থেকে মুক্তি। সাফল্য মানে আত্মসম্মান, ক্রমাগত জীবন থেকে আরও প্রকৃত সুখ এবং সন্তুষ্টি খুঁজে পাওয়া হচ্ছে যারা আপনার উপর নির্ভর করে তাদের জন্য আরও কিছু করতে সক্ষম হওয়া । সফলতা মানেই জয়। সফলতা অর্জনই জীবনের লক্ষ্য! প্রতিটি মানুষই সফলতা চায়। সবাই এই জীবনের সেরাটা চায়।
যখন আমরা বিশ্বাস করি যে আমরা এটা করতে পারবো, তখন কীভাবে করবো তার উপায় ঠিক খুঁজে পেয়ে যাই। যদি আমরা বিশ্বাস করি যে আমি অনেক অর্থের মালিক হবো, অনেক বড়ো কিছুকে আয়ত্ত করে ভালো জায়গায় পৌঁছবো, তখন আমরা সেগুলোকে আয়ত্ত করতে পারি তবে যদি আমরা চাই। এগুলোর জন্য বিশ্বাস খুব জরুরি। যদি আপনার মনে হয় যে আপনার আশেপাশে কোনো সফল ব্যাক্তি নেই, তার মানে এই নয় যে আপনিও সফল হবেননা। আর যদি এটা হয় তাহলে এটা আপনার বাহানা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশ্বাস না করা একটি নেতিবাচক দিক। যখন আমাদের মনে বিশ্বাস থাকেনা ও সন্দেহ তৈরী হয় তখন আমাদের মন সেই কারণের দিকে আকর্ষিত হয়। যদি আপনি জীবনে সত্যি সফল হতে না চান তাহলে সন্দেহ থাকাটা স্বাভাবিক আবার যদি আপনি বিশ্বাস রাখেন তাহলে সফল হওয়া থেকে আপনাকে কেউ আটকে রাখতে পারবেনা।
বিশ্বাসের শক্তি অর্জন এবং শক্তিশালী করার জন্য এখানে তিনটি নির্দেশিকা রয়েছে:
১) সাফল্যের কথা ভাবুন, ব্যর্থতাকে ভাববেন না। কর্মক্ষেত্রে, আপনার বাড়িতে, ব্যর্থতার চিন্তার পরিবর্তে সাফল্যের চিন্তাভাবনাকে প্রতিস্থাপন করুন। আপনি যখন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, তখন ভাবুন, "আমি জিতব," নয় "আমি সম্ভবত হেরে যাব।" আপনি যখন অন্য কারো সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তখন ভাবুন, "আমি সেরাদের সমান," নয় "আমি আউটক্লাসড।" যখন সুযোগ উপস্থিত হয়, ভাবুন "আমি এটা করতে পারি"। আপনার চিন্তাভাবনা প্রক্রিয়ার উপর কর্তৃত্বকে "আমি সফল হব" ভাবতে দিন। সাফল্যের কথা চিন্তা করে আপনার মন এমন পরিকল্পনা তৈরি করুন যা সাফল্যের জন্ম দেয়। চিন্তা ব্যর্থতা ঠিক বিপরীত করে। ব্যর্থতার চিন্তাভাবনা মনকে অন্য চিন্তা ভাবনা করতে বাধ্য করে যা ব্যর্থতার জন্ম দেয়।
২) নিজেকে নিয়মিত মনে করিয়ে দিন যে আপনি যা ভাবছেন তার চেয়ে আপনি ভাল। সফল মানুষ সুপারম্যান হয় না। সফলতার জন্য অতিবুদ্ধির প্রয়োজন হয় না। বা সাফল্য সম্পর্কে রহস্যময় কিছু নেই। এবং সাফল্য ভাগ্যের উপর ভিত্তি করে হয়না ।
৩) আপনার সাফল্যের আকার আপনার বিশ্বাসের আকার দ্বারা নির্ধারিত হয়। সামান্য লক্ষ্য চিন্তা করুন এবং সামান্য অর্জন আশা করুন। বড় লক্ষ্য চিন্তা করুন এবং বড় সাফল্য অর্জন করুন। এটাও মনে রাখবেন! বড় ধারনা এবং বড় পরিকল্পনা প্রায়ই সহজ হয়-অবশ্যই বেশি কঠিন নয়-ছোট ধারণা এবং ছোট পরিকল্পনার চেয়ে।
অধ্যায়-২:-
::এক্সকিউসাইটিস, ব্যর্থতা রোগ থেকে নিজেকে নিরাময় করুন::
আপনি হয়তো এটা লক্ষ্য করেছেন যে মানুষ যত কম পরিমানে বাহানা দেয়, ততো তাড়াতাড়ি সাফল্য অর্জন করে। আপনি হয়তো এটাও লক্ষ্য করেছেন যে আপনার কোনো বন্ধু যদি তার পছন্দমতো জায়গায় না পৌঁছায় তাহলে তার কাছে একটা বাহানার লম্বা তালিকা থাকে। আর এইসব মানুষ আপনাকে এইসব কথাই বোঝাবে যে তারা কেনো এই কাজ করেনি? কেনো করতে পারছেনা? ও ভবিষ্যতেও কেনো পারবেনা? আপনিও কিছু ঠিক এইরকমই বাহানা দেন যে আমি আজ করতে পারছিনা, এখন কাজ করার সঠিক সময় নয়, আমি এই কাজের জন্য প্রস্তুত নই, আমার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই, আমার ভাগ্য আমার সঙ্গ দেবেনা ইত্যাদি। লেখক বলেন বেশিরভাগ সফল ব্যাক্তি অনেক কম বাহানা দেয়। গরিব ও অর্থবান ব্যাক্তিদের মধ্যে ঠিক এখানেই পার্থক্য ঘটে যে তারা তাদের জীবনে কতটা বাহানাকে গুরুত্ব দেয়। আর এই বাহানাকে একটি রোগের পর্যায়ে ধরা যেতে পারে। আমাদের উচিৎ কারণ ও তার প্রভাবের আইনকে আয়ত্ত করা। যদি আমরা কারোর ভালো ভাগ্যের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে আমরা সেটার থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করি। একজন সফল ব্যাক্তি হেরে যাওয়া থেকে শিক্ষা নেয়, কিন্তু মধ্যবিত্ত ব্যাক্তিরা তা থেকে শিক্ষা নিতে চায়না। প্রত্যেক ক্রিয়ারই প্রতিক্রিয়া থাকে, আর আমাদের জীবনে যা ঘটে তা আমাদের কর্মের ফলেই ঘটে। এতে ভাগ্য কোনোরকমে কাজ করেনা যে আমরা সফল হবো না অসফল হবো। সফল হতে গেলে সফল ব্যাক্তিদের অনুসরন করতে হবে এবং অসফল হতে চাইলে সেরকম ব্যাক্তিদের লক্ষ্য করতে হবে। অর্থবান হতে গেলে ধনী ব্যাক্তিদের অনুসরণ করতে হবে তবেই সম্ভব হবে আর আমাদের বাহানাকে সরিয়ে বিশ্বাস নিয়ে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
অধ্যায়-৩:-
::আত্মবিশ্বাস তৈরি করুন এবং ভয় ধ্বংস করুন::
অনেক লোক মনে করেন যে তারা কিছুই করতে পারেনা। নিজেকে যতটা ছোটো ভাবে ঠিক ততটাই উপলব্ধি করতে শুরু করে। এইরকম লোকেদের আত্মসম্মানের অনেক ঘাটতি রয়েছে। যদি আপনি কোনো কর্মক্ষেত্রে উঁচু পদে থাকা ব্যাক্তিকে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন যে তিনি তার আত্মবিশ্বাস এর জোরে এই পদটিকে অর্জন করেছেন, তিনি নিজের কথা ভাবেন এবং তার কাছে সফলতা মানেই বিশ্বাস। নেতিবাচক চিন্তাভাবনাকে মন থেকে সরিয়ে ইতিবাচক চিন্তা ও নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে সাফল্যের পথে এগিয়ে গেছেন ও সাফল্য অর্জন করেছেন। যে ব্যাক্তি নিজেকে নিয়ে ভাবেননা, নিজের প্রতি সময় দেননা -তাঁর নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস কখনোই আসবেনা। আর এই আত্মবিশ্বাস থাকলেই যেকোনো ভয় থেকে জয়লাভ সম্ভব হবে।
অধ্যায়-৪:-
::কিভাবে বড় ভাবতে হয়::
আপনার মনে বানানো ছবি দেখে বোঝা যায় যে আপনার ক্রিয়া কেমন হবে। যদি আপনি একদল মানুষকে বলেন যে আপনি হেরে গেছেন তাহলে মানুষ উদাস, হেরে যাওয়া এইসব শব্দ আপনাকে শোনাবে কিন্তু কখনো উৎসাহ দেবেনা বা এটা বলবে না যে পুনরায় চেষ্টা করুন, আপনিই পারবেন। আমাদের মনে শব্দের থেকে বেশি ছবি ঘোরাফেরা করে। আপনি যে শব্দ ব্যবহার করেন ঠিক তার প্রতিচ্ছবি দেখতে পান। তাই ভাবনা চিন্তা করে শব্দ ব্যবহার করবেন। যখন আমরা কোনো পশু-পাখির কথা চিন্তা করি তখন সেই প্রতিচ্ছবি আমাদের মনে প্রতিফলিত হয়। তাহলে কেনো আমরা শব্দ ব্যবহার করার সময় ভাববো? তার কারণ আমরা যদি সমস্যার কথা ভাবি তাহলে আমাদের মনের মধ্যে সমস্যার কথাই চলতে থাকে। যদি কোনো চ্যালেঞ্জ এর কথা ভাবি তাহলে এটা আমাদের মধ্যে এমন ছবির সৃষ্টি করে, যা আনন্দদায়ক হয়। চেষ্টা শব্দটাও এরকমই। যদি কেউ বলে আমি ৫ টার সময় পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করবো তাতে কিন্তু কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত হয়না। বাক্যটা ঠিক এরকম হওয়া দরকার যে আমি ৫ টায় পৌঁছে যাবো। আমাদের নিজেদের অনুভূতি ও মেজাজ ঠিক রাখার জন্য সবসময় ইতিবাচক ভাবতে হবে এবং অন্যদের সঙ্গেও ইতিবাচক কথা বলতে হবে। যেমন - আপনার কাছ থেকে আমি অনেককিছু শিখেছি, আপনার এই কাজটা আমার খুব ভালো লেগেছে, আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে। কারণ আপনি পারেন একজন মানুষকে নেতিবাচক মনোভাব থেকে ইতিবাচক মনোভাবের দিকে নিয়ে যেতে এবং সেই মানুষটি যখনই আপনার কথা ভাববে তখনই ইতিবাচক চিন্তাভাবনা তার মনে ঘোরাফেরা করবে।
অধ্যায়-৫:-
::কিভাবে সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে এবং স্বপ্ন দেখতে হয়::
আপনার সৌন্দর্য্য ও ব্যাক্তিত্ব কথা বলে, এটা সর্বদা মনে রাখবেন। আপনি যদি সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেন, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করেন তাহলে তা আপনার মধ্যে থাকা বুদ্ধি, উন্নতিশীল মনোভাব, বিশ্বাসযোগ্যতাকে ফুটিয়ে তুলবে। যার দ্বারা মানুষ আপনাকে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা করবে। অপরদিকে নেতিবাচক মানুষের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করা যায়না। আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ব্যাক্তিত্ব, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলে দেবে আপনি ব্যাক্তি হিসেবে কিরকম। আপনি যেরকম ভাববেন সেরকমই কাজ করবেন এবং অপরকেও তাই করাবেন। আপনাকে বাইরে থেকে কেমন দেখাচ্ছে এর ওপর নির্ভর করে রয়েছে আপনি কি ভাবছেন।
অধ্যায়-৬:-
::আপনি যা মনে করেন আপনি তাই::
নিজের সাথে কথা বলাটা অত্যন্ত জরুরি। নিজেকে শাস্তি দেওয়াটা উচিত নয়। আপনি কেমনভাবে নিজের সাথে কথা বলছেন? আপনি কি নিজেকে শক্তিশালী তৈরী করছেন? আপনি কি নিজেকে বোকা ভাবছেন? আপনি কি জীবনে বড়ো কিছু আয়ত্ত করতে পারবেন? আপনি কি মহান হতে পারেন? খারাপ বিষয় হলো এটাই যে অনেক লোক নিজের সাথে নেতিবাচক কথাবার্তা বলেন। অবশ্য এটা আমাদের কখনও শেখানো হয়না যে আমরা কীভাবে নিজেদের সঙ্গে কথা বলবো। আর এটা অত্যন্ত জরুরি, আমরা কিছু শব্দ ব্যবহার করছি এটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা সচেতনভাবে নিজেদের সঙ্গে কথোপকথনে সঠিক শব্দ ব্যবহার করি তাহলে তা আমাদের উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
অধ্যায়-৭:-
::আপনার পরিবেশ পরিচালনা করুন: দ্রুত ক্লাসে যান::
নিজের ভাবনার আপগ্রেড(পদন্নতি)ঘটান। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা যেমন ভাবেন ঠিক তেমন ভাবুন। এতে আপনার সাফল্যের পথটা অনেকটাই সহজ হয়েছে যাবে। আপনি নিজেই ভাবুন যে আপনি কি সফল হওয়ার জন্যই ভাবছেন? যখনি আপনি এই কথাটা ভাববেন ঠিক তখনই আপনার ভাবার ক্ষমতাটা আরও বেড়ে যাবে।
অধ্যায়-৮:-
::আপনার মনোভাবকে আপনার মিত্র করুন::
আপনি আগামীদিনগুলোতে বা আগামী ৫/১০ বছরে কি হবেন তা আপনার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করছে। আপনার ভাবনা, লক্ষ্য,মনোভাব এই সবই এবং আপনার ভবিষ্যতও এই পরিবেশের ওপরেই নির্ভর করছে। আপনি কেমন অর্থ উপার্জন করবেন? কেমন খুশি থাকবেন? কতটা সফল হবেন? কোন গাড়িতে চড়বেন? কেমন বাড়িতে থাকবেন? কার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন? কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবেন? আপনি কোন বই পড়বেন? কোথায় ঘুরতে যাবেন? এই সবই আপনার পরিবেশের ওপর নির্ভর করবে। আপনার পরিবেশ কিভাবে তৈরী হয়? আপনি যেমন মানুষের সাথে থাকবেন, সেভাবেই আপনার পরিবেশ তৈরী হয়। বই, ম্যাগাজিন, আর্টিকেল এইসব যারা পড়ে তাদের সাথে নাকি যারা টিভি সিরিজ, ভিডিও এইসব দেখে তাদের সাথে । আপনি কেমন পরিবার, বন্ধু, গ্রূপ, কাজের দলের সাথে থাকেন তাও প্রভাব ফেলে।আপনি যেই বৃত্তের মধ্যে থাকবেন সেই মতোই আপনার স্বাস্থ্য, আয় ও মনোভাব তৈরী হবে। আপনি যদি অর্থবান মানুষের সাথে থাকেন, তাদের মতো কথা বলেন, তাদের মতো মনোভাব রাখেন,তাহলে আপনিও অর্থবান হতে পারেন, আপনি যদি আধ্যাত্মিক মানুষের সাথে থাকেন তাহলে আধ্যাত্মিক হতে পারেন। আবার আপনি যদি অপরাধী/পাপী লোকেদের সাথে থাকেন তাহলে তাদের মতোও হতে পারেন। আপনি যদি ইতিবাচক মানুষের সাথে থাকেন তাহলে আপনার চিন্তাভাবনাও তাদের মতো হবে আর নেতিবাচক পরিবেশে থাকলে আপনার মনোভাবও নেতিবাচকই হবে। তাই পরিবেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমাদের জীবনে। আপনি আপনার বেশিরভাগ সময়টাই সফল, ইতিবাচক, যারা আপনাকে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রনা দেয়, তাদের সাথে কাটান। সফল ব্যাক্তিদের জীবনী পড়ুন। আপনি যা দেখেন, যা করেন সবই আপনার পরিবেশের ওপর নির্ভর করছে।
অধ্যায়-৯:-
::মানুষের প্রতি সঠিক চিন্তা করুন::
যে মানুষ অনেক কথা বলেন আর যে মানুষ সাফল্য অর্জন করেন তারা খুব কমই একই রকমের মানুষ হন। মানুষ নিজের ব্যাপারে বলতে চান। যে তিনি কতটা কঠোর পরিশ্রম করেন, তিনি কতটা মহান, তিনি নিজের কাজের জায়গায় কতটা সফল, তিনি কতটা উদার কারণ মানুষ নিজের সম্পর্কে এইসব কথা বলতে ভালোবাসেন। পরের বার আপনি যখন কারোর সঙ্গে কথোপকথন করবেন তখন অবশ্যই এটা লক্ষ্য করবেন যে আপনি না অপর মানুষ বেশি কথা বলছেন। আর যদি আপনি বেশি কথা বলছেন তাহলে কি নিয়ে কথা বলছেন?নিজের সমস্যা, গুরুত্ব এই সব নিয়ে? যদি আপনি নিজেই বুঝে যান যে আপনি বেশি কথা বলছেন তাহলে তখনই আপনি চুপ করে যান আর অন্যকে বলতে দিন।
অধ্যায়-১০:-
::কর্মের অভ্যাস পান::
সফল ব্যাক্তি সর্বদাই সক্রিয় থাকেন। এদের আমরা সক্রিয়তাবাদী বলি। আর যারা গড়, মাঝারি বা অসফল হন তাদের নিষ্ক্রিয়তাবাদী বলি। সক্রিয়তাবাদী লোকেরা পদক্ষেপ নিতে জানে। নিজের পরিকল্পনাকে অনুসরণ করে কাজ করে। আর অন্যদিকে নিষ্ক্রিয়তাবাদী লোকেরা কোনো পদক্ষেপ নেননা। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ নিষ্ক্রিয়তাবাদী কারণ আমরা পরিস্থিতি বুঝে কাজ করি, সুযোগের অপেক্ষা করি আর এর থেকে প্রমান হয় যে আমাদের কাজ করার কোনো ইচ্ছে থাকেনা। তখন আমাদের মেনে নিতে হয় যে আমরা কখনোই নিজের ১০০ শতাংশ দিয়ে কাজ করতে পারবোনা ও কাজটা সহজও হবেনা। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কোনো না কোনো লক্ষ্য থাকে আর তাকে সাফল্য দিতে হলে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। সঠিক সময় ও সুযোগের জন্য বসে থাকলে চলবেনা। বেশি পরিকল্পনা করা, বেশি ভাবনাচিন্তা করা আমাদেরকে আগে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেনা।
অধ্যায়-১১:-
::কিভাবে পরাজয়কে জয়ে পরিণত করা যায়::
যদি আপনি কোনো কাজ নিয়ে লেগে থাকেন তাহলেই যে আপনি সফল হবেন তা কিন্তু নয়। তবে তাতে যদি আপনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন, যদি নতুন কিছু গবেষণা করেন তাহলে অবশ্যই সফল হবেন। অনেক মানুষই রয়েছেন যারা নিজের লক্ষ্যে স্থির রয়েছেন কিন্তু সফল হচ্ছেন না কারণ তারা নতুন কিছু চেষ্টা করছেননা। এখানে সবথেকে বড়ো উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে যে মহান মানুষের তিনি হলেন - থমাস এডিসন যিনি ১০০০০ বার চেষ্টা করার পর সফল হয়েছিলেন বাল্ব আবিষ্কারে। তিনি কিন্তু তাঁর লক্ষ্যে অবিচল ও অটুট ছিলেন। তিনি নতুন পন্থা অবলম্বন করে এগিয়ে গেছেন, কখনো হার মানেননি তিনি, তিনি বারবার ব্যার্থ হওয়ার পরেও চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এবং তাই তিনি সফলও হয়েছিলেন।
নেপোলিয়ন হিল বলেছেন যদি আমরা প্রথম পরিকল্পনা করি ও ব্যার্থ হয়ে যাই তাহলে দ্বিতীয় পরিকল্পনায় যেতে হবে। যদি তাতেও হেরে যাই তাহলে নতুন পরিকল্পনা করতে হবে আর ততক্ষন করতে হবে যতক্ষণ না তা আমার কাজটাকে সম্পন্ন করে। বেশিরভাগ লোক এই কারণেই হেরে যান কারণ তাদের কাজে নতুনত্ব থাকেনা।
অধ্যায়-১২:-
::আপনার বৃদ্ধিতে সাহায্য করার জন্য লক্ষ্যগুলি ব্যবহার করুন::
লক্ষ্য ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ, যদি কারোর জীবনে লক্ষ্য না থাকে তাহলে সে জীবন একপ্রকার বৃথাও বলা যেতে পারে। লক্ষ্য আর পদক্ষেপ ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। যদি আপনি না যানেন যে আপনি জীবন থেকে কি চান তাহলে কীভাবে সফল হবেন? যদি আপনি না যানেন যে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কি করতে চলেছেন? তাহলে আপনার গন্তব্যস্থল কোথায় তা কিছু করে বুঝবেন? আমাদের জীবনের লক্ষ্য ম্যাজিক এর মতো কাজ করে, যখন আপনি একটা পরিষ্কার লক্ষ্য স্থির করেন তখন এটা আপনাকে এনার্জি দেয় ও সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। আপনি যদি আপনার লক্ষ্যের পথ পরিষ্কার রাখেন তাহলে নিয়মিত সেই পথে চলতে আপনাকে কম বাধার সম্মুখীন হতে হবে কিন্তু যদি তা না হয় তাহলে আপনি ক্রমাগত পথভ্রষ্ট হবেন। তাই লক্ষ্য স্থির রাখা ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।
অধ্যায়-১৩:-
::কিভাবে একজন নেতার মত ভাবতে হয়::
আপনি যার সাথে কাজ করতে চান তাকে প্রভাবিত করুন। উন্নতির ব্যাপারে ভাবুন, বিশ্বাস করুন আর উন্নতির জন্য নিজেকে উন্নত করুন। যখন আপনি একেবারে কেন্দ্রবিন্দু থেকে কাজ করেন তখন আপনি চাইলেই প্রভাবিত করতে পারেন অপর মানুষকে যাতে তারা ঠিক সেইরকমই কথা বলে যেমনটা আপনি চান। এবং আপনি চাইলেই সেই মানুষগুলোও ঠিক আপনার কার্বন কপি হতে পারে।
উপরিউক্ত এই অধ্যায়গুলি মেনে চললে আপনার জীবনের সবকিছুই ম্যাজিক/ জাদুর মতো কাজ করবে।
🙏 ধন্যবাদ🙏
4:00 AM, September 01, 2022