MINDSET FOR SUCCESS

CAROL S. DWECK

::মানসিকতা ::

লেখিকা যখন তরুণী গবেষক ছিলেন, তখন তিনি গবেষণা করতেন- কিভাবে একজন ব্যাক্তি তার পরাজয়কে মেনে নেয় বা সেই পরিস্থিতিতে কীভাবে কাটিয়ে ওঠে। তিনি একটা স্কুলের বাচ্চাদের কিছু ধাঁধা দিয়েছিলেন, প্রথমটা খুব সহজ বলেই মনে হয় কিন্তু দ্বিতীয় টা এতটাও নয়। কিন্তু তিনি অবাক হলেন যেটা দেখে তা হলো বাচ্চারা এটাকে একটা উপহার হিসেবে নিচ্ছে। তিনি এতে খুব খুশি হয়েছিলেন কারণ তারা যে কিছু শিখতে পারছিলো বা নতুন কিছু শিখছিলো সেটা তারা বুঝতে পারছিলো। মানুষের মনের ভাবনাচিন্তার নানান দিক থাকে। তারা আলাদা আলাদা ভাবে ও কাজ করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন কিছু মানুষ বেশি বুদ্ধিমান ও কিছু মানুষ কম ? তাদের মধ্যে কি এমন শক্তি বেশি আছে। আমাদের মধ্যে কিছু লোকেদের ছোটো থেকে এটাই শোনানো হয়েছে যে কিভাবে আমাদের বন্ধুদের আই কিউ লেবেল বা বুদ্ধি বেশি আর তার সাথে এটাও যে চালাক হও বোকা নয় , কেউ আনন্দে থাকা ও শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেয়নি। আমাদের বোকা দেখাবে নাহয় চালাক।

দ্বিতীয় হলো বৃদ্ধির মানসিকতা -আপনার নিজস্ব যে ক্ষমতা রয়েছে তাকে ব্যবহার করুন। কেউ জন্ম থেকে সবকিছু শিখে আসেনা। নিজের চেষ্টা, ক্ষমতা দিয়ে আয়ত্ত করতে হয়। আপনি অন্যকে কেন দেখাতে যাবেন যে আপনি কত শক্তিশালী? সেই সময় বাঁচিয়ে আপনি অন্য অনেককিছু করতে পারবেন।

অন্যের দেখানো পথে কেন হাঁটবেন? যখন আপনি নিজেই নিজের পথ তৈরী করতে পারবেন। অন্যের প্ররোচনায় প্ররোচিত না হয়ে নিজের মতো করে পথ চলুন।

এখানে মানসিকতা সম্পর্কে চিন্তা করার কিছু উপায় রয়েছে:

• আপনার পরিচিত এমন কাউকে নিয়ে ভাবুন যে স্থির মানসিকতায় নিমজ্জিত। কীভাবে তারা সর্বদা নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করে এবং কীভাবে তারা ভুল বা ভুল করার বিষয়ে অতিসংবেদনশীল তা নিয়ে চিন্তা করে।আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন কেন তারা এইভাবে ছিল? (আপনি কি এইভাবে?) এখন আপনি কেন বুঝতে শুরু করতে পারেন।

• এমন একজনের কথা চিন্তা করুন যাকে আপনি জানেন যিনি বৃদ্ধির মানসিকতায় দক্ষ - এমন একজন যিনি বোঝেন যে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী গড়ে তোলা যেতে পারে। নিজেদের প্রসারিত করার উপায় সম্পর্কে চিন্তা করুন। আপনি নিজেকে পরিবর্তন করতে বা প্রসারিত করতে চান এমন কিছু উপায় কী কী?

• ঠিক আছে, এখন কল্পনা করুন আপনি একটি নতুন ভাষা শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং আপনি একটি ক্লাসের জন্য সাইন আপ করেছেন। কোর্সের কয়েক সেশনের মধ্যে, প্রশিক্ষক আপনাকে রুমের সামনে ডাকেন এবং একের পর এক আপনার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়তে শুরু করেন।

:: মানসিকতার ভেতরে ::

যখন লেখিকা ছোটো ছিলেন তখন নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতেন। ভাবতেন যে তার সঙ্গী লম্বা, সুদর্শন ও খুব সফল একজন ব্যাক্তি হবে এবং নিজেরো সুন্দর একটা ভবিষ্যত হবে তবে তা খুব কঠোর নয়, তিনি যখন বড়ো হলেন দেখলেন যে তার প্রেমিক খুব ভালো মানুষ যেমনটা তিনি ভেবেছিলেন। কিন্ত কিছু কমতি তিনি লক্ষ্য করলেন তার প্রেমিকের মধ্যে তবুও তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন কেননা তিনি তার মানসিকতার পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন কিছু স্টুডেন্ট নিজের মানসিকতা পরিবর্তন করতে চায় আবার কিছুজন চায়না। তিনি এখান থেকেই ঠিক করেছিলেন যে তিনি কী চান ? শিখতে নাকি অন্যকে নিজের ক্ষমতা বোঝাতে? একটি শিশু কিন্তু কারুর পরোয়া/ তোয়াক্কা করেনা । সে চলতে থাকে,পড়ে যায়, পুনরায় আবার চলতে থাকে। এখান থেকে একটি বড়ো শিক্ষনিও বিষয় রয়েছে যে আমরা কী এখান থেকে শিক্ষা নেবো? আপনি সফলতা না চ্যালেঞ্জ নেবেন এটা আপনার ওপর নির্ভর করছে। স্থায়ী মানসিকতা র মানুষেরা সম্পর্কের মধ্যে সফলতা চেয়েছেন কিন্ত বৃদ্ধি মানসিকতার মানুষেরা এমন কাউকে পাশে চান যারা তাদের সফল হতে সাহায্য করবে, নতুন জিনিস শিখতে সহায়তা করবে। আমরা ছোটবেলায় খরগোশ ও কচ্ছপের গল্প পড়েছি। এখানে নিজের দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য কচ্ছপ জিতে গিয়েছিলো। কিন্ত আমরা সবাই খরগোশ হতে চাই- আরামপ্রিয়, অলসতায় পূর্ণ, চালাক। এখানে কিছু প্রশ্ন উঠে আসে -

১)যদি একবার আপনি আপনার দক্ষতাকে প্রমান করেন তাহলে বারবার কী তার দরকার আছে??

উঃ - অবশ্যই দরকার আছে ।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় একজন রাজপুত্র রাক্ষসকে মেরে তার স্বপ্নের কন্যাকে বিবাহ করেন। কিন্তু তাতেই কী সব শেষ? আর কী রাক্ষস আসবেনা? নিজেকে উন্নত করা অত্যন্ত জরুরি কারণ কালকের কৌশল আজ কাজ নাও করতে পারে।

২) মানসিকতা কী সদাসময়ের ( পার্মানেন্ট )জন্য হয় নাকি তাকে পরিবর্তন করতে হয়?

উঃ - অবশ্যই পরিবর্তন করতে হয় কারণ মানুষ চেষ্টা করলে সবই পারে, কঠোর পরিশ্রম সকলকেই করতে হয় তবেই সফলতা আসে।

৩) আপনি কী স্থায়ী ও বৃদ্ধি এই দুই মানসিকতার মানুষ হতে পারেন একসঙ্গে?

উঃ - আমার মতে হতে পারে কারণ পরিস্থিতি অনুসারে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে।

৪) আমরা কী বলতে পারি যে মানুষ ফেল হয় নিজের প্রচেষ্টাকে নিয়ে বিশ্বাস এর জন্য?

উঃ - না, এটা সত্যি যে প্রচেষ্টা দরকার হয় যেকোনো কাজের জন্য। কেউ এটা ছাড়া সফল হয়না। কিন্তু এটাই শুধু একটা কোয়ালিটি নয় তার সম্পদ, সুযোগ - সুবিধাও তার কাছে অন্যভাবে থাকতে পারে।

• মানুষ সকলেই শেখার ভালবাসা নিয়ে জন্মায়, কিন্তু স্থির মানসিকতা এটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে। এমন একটি সময়ের কথা ভাবুন যে আপনি কিছু উপভোগ করছেন - একটি ক্রসওয়ার্ড পাজল করছেন, একটি খেলা খেলছেন, একটি নতুন নাচ শিখছেন৷ তারপর এটা কঠিন হয়ে ওঠে এবং আপনি চেয়েছিলেন।হয়তো আপনি হঠাৎ ক্লান্ত, মাথা ঘোরা, বিরক্ত বা ক্ষুধার্ত বোধ করেছেন। পরের বার এটি ঘটবে, নিজেকে বোকা বানাবেন না। এটা স্থির মানসিকতা। নিজেকে বৃদ্ধির মানসিকতায় রাখুন। আপনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং শেখার সাথে সাথে আপনার মস্তিষ্ক নতুন সংযোগ তৈরি করছে তা চিত্রিত করুন।

• এটি এমন একটি বিশ্ব তৈরি করতে প্রলুব্ধ করে যেখানে আমরা নিখুঁত। (আহ, আমি গ্রেড স্কুল থেকে সেই অনুভূতি মনে করি)। আমরা অংশীদার বাছাই করতে পারি, বন্ধু তৈরি করতে পারি, এমন লোকদের নিয়োগ করতে পারি যারা আমাদের নির্দোষ বোধ করে। কিন্তু এটি সম্পর্কে চিন্তা করুন- আপনি কি কখনও বড় হতে চান? পরের বার আপনি নিজেকে উপাসকদের সাথে ঘিরে রাখতে প্রলুব্ধ হন, গির্জায় যান। আপনার বাকি জীবনে, গঠনমূলক সমালোচনার সন্ধান করুন।

• আপনার অতীতে এমন কিছু আছে যা আপনি মনে করেন যে আপনাকে পরিমাপ করেছে?

একটি পরীক্ষার স্কোর? একটি অসৎ বা নির্মম কর্ম? চাকরি থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে? যে জিনিস ফোকাস।এটির সাথে যাওয়া সমস্ত আবেগ অনুভব করুন। এখন এটিকে বৃদ্ধি-মানসিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে রাখুন। এতে আপনার ভূমিকার দিকে সৎভাবে দেখুন, কিন্তু বুঝুন যে এটি আপনার বুদ্ধিমত্তা ব্যক্তিত্বকে সংজ্ঞায়িত করে না। পরিবর্তে, জিজ্ঞাসা করুন: আমি (বা আমি) সেই অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখেছি? আমি কিভাবে এটি বৃদ্ধির জন্য একটি ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করতে পারি? পরিবর্তে এটি আপনার সাথে বহন করুন।

• আপনি যখন বিষণ্ণ বোধ করেন তখন আপনি কীভাবে আচরণ করেন? আপনি কি আপনার জীবনের জিনিসগুলিতে কঠোর পরিশ্রম করেন বা আপনি সেগুলি ছেড়ে দেন? পরবর্তী সময় আপনি কম বোধ, নিজেকে একটি বৃদ্ধি মানসিকতা রাখুন - শেখার, চ্যালেঞ্জ, বাধা মোকাবেলা সম্পর্কে চিন্তা করুন। প্রচেষ্টাকে একটি ইতিবাচক, গঠনমূলক শক্তি হিসাবে ভাবুন, একটি বড় টেনে নিয়ে নয়। চেষ্টা করুন।

• এমন কিছু কি আছে যা আপনি সবসময় করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভয় পেয়েছিলেন যে আপনি ভালো ছিলেন না? এটি করার জন্য একটি পরিকল্পনা করুন।

:: ক্ষমতা এবং কৃতিত্ব সম্পর্কে সত্যতা ::

থমাস এডিসন এর কথা কল্পনা করলেই বোঝা যায় যে সকলেই ভাবতেন তিনি একাই সবকিছু সামলাতেন, কিন্তু এটা তো কল্পনা। আসলে তেনাকে সাহায্য করতেন অনেক গণ্যমান্য বিজ্ঞানী ও ব্যাক্তিবর্গ। পৌরাণিক কথা অনুযায়ী বা কথিত আছে যে জ্ঞানী মানুষ একাই থাকেন। কিন্ত চার্লস ডারউইন এর সাথে তেনার একটা বড়ো টিম ছিলো। মোজার্ট ১০বছর কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। তবেই তিনি এমন কিছু কাজ করেছিলেন যার দ্বারা তিনি গর্বিত অনুভব করতে পারেন। যদি এনারা এনাদের দক্ষতার উপর নির্ভর করে থেকে যেতেন তাহলে মহান মানুষ হিসেবে আজও এনাদের আমরা চিনতাম না ও আজ তেঁনারা যেখানে আছেন সেখানে থাকতেন না।

লেখিকা কিছু স্টুডেন্টদের লক্ষ্য করেছিলেন যারা জুনিয়র হাই স্কুল এ পঠনরত ছিলো। এইসময়টা অনেকটাই কঠিন বাচ্চাদের পক্ষে। নম্বর, শিক্ষক / শিক্ষিকামন্ডলীর আচরণ অনেক কিছুই তাদের উপর প্রভাব ফেলে। স্থায়ী মানসিকতার শিশু পরাজয় কে স্বীকার করতে না পেরে উদাসীনতা, দ্বন্দে ভোগে। কিন্তু গ্রোথ মানসিকতার শিশুরা সেই পরাজয় থেকে শিক্ষা নেয় ও জীবনে এগিয়ে চলে। বলা যায় যে সবাই সমান হয়না কিন্ত সঠিক মানসিকতা রেখে চলার চেষ্টা সকলেরই করা উচিত।

ড্রয়িং এর ক্ষেত্রে দেখা যায় হয়তো মানুষ ভালো আঁকে আর নাহলে পারেনা। লেখিকাও এটা মানতেন। এরপর তিনি এডওয়ার্ড নামের একজন বয়স্ক অঙ্কন শিক্ষক এর সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি পেঁচার ছবি সবাইকেই আঁকতে দিতেন, লেখিকাকেও তাই দিয়েছিলেন। এর পর তিনি কিছু ছবি দেখালেন। লেখিকা অবাক হলেন এটা দেখে যে আগের থেকে পরের ছবিগুলি অনেকাংশে ভালো। এরপর এডওয়ার্ড এর আসল কারণ বললেন যে এই ছবিগুলির মধ্যে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি, এটাই হলো দেখার কৌশল। অঙ্কনের প্রান্ত, স্থান, আলো, ছায়া - এইগুলোই হলো আসল। অঙ্কন কৌশল শেখার জন্য প্রত্যেকটা উপাদান কে ভালোভাবে শিখতে হয় এবং তারপরে সেগুলিকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে স্থাপন করা হয় যা দিয়ে এটি শেখা যেতে পারে। অনেক মানুষ প্রশিক্ষণ ছাড়াই অনেক কাজ করেন কিন্ত সঠিক প্রশিক্ষণের ফলে যেকোনো কাজই খুব সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা যায়।

লেখিকা যখন ছোটো ছিলেন তখন গণিত এ খুবই ভালো ছিলেন কিন্তু কোনো এক শিক্ষক এর কথায় ( ছেলেদের থেকে মেয়েরা গণিত এ ভালো পারফর্ম করতে পারেনা ) ও কিছু ঋণাত্মক ভাবনা চিন্তার কারণে সেই লেবেল কম হতে শুরু করেছিল।। মনোবিদরাও এই কথা বলেন যে ঋণাত্মক চিন্তা ভাবনা একটা মানুষের অনেকটাই ক্ষতি করে দিতে পারে।

•আপনার নায়ক সম্পর্কে চিন্তা করুন। আপনি কি এই ব্যক্তিকে অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কেউ বলে মনে করেন যিনি অল্প প্রচেষ্টায় অর্জন করেছেন? এখন সত্য জানতে যান। তাদের কৃতিত্বের মধ্যে যে অসামান্য প্রচেষ্টা হয়েছিল তা খুঁজে বের করুন- এবং তাদের আরও প্রশংসা করুন।

• চিন্তা করুন যে অন্য লোকেরা আপনাকে ছাড়িয়ে গেছে এবং আপনি ধরে নিয়েছেন যে তারা আরও স্মার্ট বা আরও প্রতিভাবান। এখন ধারণাটি বিবেচনা করুন যে তারা কেবল আরও ভাল কৌশল ব্যবহার করেছে, নিজেদেরকে আরও শিখিয়েছে, কঠোর অনুশীলন করেছে এবং বাধাগুলির মধ্য দিয়ে তাদের পথ কাজ করেছে। আপনি এটি করতে পারেন, খুব, যদি আপনি চান।

• এমন কোন পরিস্থিতি আছে যেখানে আপনি বোকা হয়ে যান- যেখানে আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তা বিচ্ছিন্ন করেন? পরের বার যখন আপনি এই পরিস্থিতিগুলির মধ্যে একটির মধ্যে থাকবেন, নিজেকে একটি বৃদ্ধির মানসিকতার মধ্যে নিয়ে যান- শেখার এবং উন্নতির বিষয়ে চিন্তা করুন, বিচার নয় - এবং এটিকে ফিরিয়ে আনুন।

•আপনি কি আপনার বাচ্চাদের লেবেল দেন? এই একজন শিল্পী এবং সেই একজন বিজ্ঞানী। পরের বার, মনে রাখবেন যে আপনি তাদের সাহায্য করছেন না- যদিও আপনি তাদের প্রশংসা করছেন। আমাদের অধ্যয়ন মনে রাখবেন যেখানে বাচ্চাদের দক্ষতার প্রশংসা করা তাদের আইকিউ স্কোর কমিয়ে দেয়। তাদের প্রশংসা করার জন্য একটি বৃদ্ধি-মানসিকতার উপায় খুঁজুন।

• আমাদের সমাজের অর্ধেকেরও বেশি একটি নেতিবাচক স্টিরিওটাইপড গোষ্ঠীর অন্তর্গত। প্রথমে আপনার কাছে সমস্ত মহিলা রয়েছে এবং তারপরে আপনার কাছে অন্যান্য সমস্ত দল রয়েছে যাদের কিছু বা অন্য বিষয়ে ভাল হওয়ার কথা নয়। তাদের বৃদ্ধির মানসিকতার উপহার দিন। এমন একটি পরিবেশ তৈরি করুন যা আপনার জীবনে প্রাপ্তবয়স্কদের এবং শিশুদের বৃদ্ধির মানসিকতা শেখায়, বিশেষ করে যারা নেতিবাচক স্টেরিওটাইপের লক্ষ্য। এমনকি যখন নেতিবাচক লেবেল বরাবর আসে, তারা তাদের শেখার দায়িত্বে থাকবে।

::খেলাধুলা - একজন চ্যাম্পিয়ন এর মানসিকতা ::

খেলাতে সবাই মনে করে প্রতিভা হলো উপহার এমনকি বিশেষজ্ঞ ও কোচও। বেস বল প্লেয়ার 'বিলি ' যার প্রতিভাকে সবাই স্বাভাবিক বা যাকে আমরা বলি 'গড গিফটেড' বলতেন ও ভবিষ্যতের ষ্টার ভাবতেন । তিনি ভাবতেন তার যে প্রতিভা রয়েছে তাতেই তিনি উন্নতি করবেন , তাতে কোনো পরিশ্রমের প্রয়োজন হবেনা, আর এইভাবেই তিনি তার কেরিয়ারকে শেষ করে দিচ্ছিলেন কিন্ত অপরদিকেই ছিলেন 'লেনি ' যে ছিলো বিলির একদম বিপরীত। কোচ বিলি এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে তার মানসিকতা তাকে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে, তিনি তার টিমকে এবার সঠিক শিক্ষা দিয়ে সঠিক পথ দেখালেন। তিনি ২০০২ এ অক্লান্ড এথেলেটিক্স এর জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন ও তার টিম ১টা সিজিনে ১০৩ টা ম্যাচ জিতেছিলেন। উচ্চতা বা শারীরিক কোনো অক্ষমতা কখনোই প্রভাব ফেলেনা কোনোকিছুর ওপর - মাগসি বগাস উচ্চতা - ৫.৩" NBA তে বাস্কেট বল খেলেছিলেন, পেটে গ্রে যার একটা হাত ছিলনা তিনি বেস বল খেলেছিলেন, গ্ল্যান ক্যানিংগম যার একটা পা জ্বলে যাওয়া ও ক্ষত হওয়া সত্ত্বেও মহান রানার হয়েছিলেন। এরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। সফলতা ও ব্যার্থতা কী? বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে শেখা ও আগের থেকে শিক্ষা নেওয়াই হলো সফলতা। সফল ক্রীড়াবিদরা বলেন শুধুমাত্র জেতাতে আসল আনন্দ হয়না, হারার থেকে শিক্ষা নিয়ে সফল হওয়াতে আনন্দ। নিজের সফলতার পেছনে নিজেরই সবথেকে বড়ো ভূমিকা থাকে। মাইকেল জর্ডন এর দক্ষতা তার বয়সের সাথে কিছু কম হয়নি, তিনি নিজের চেষ্টায়, পরিশ্রমে সফল হয়েছেন।

আপনি কখনও যদি নিজের দায়িত্ব নিজে না নেন তাহলে কখনোই সফল হতে পারবেননা। এটা মানসিকতার উপর নির্ভর করে।

• এমন কোন খেলা আছে যা আপনি সবসময় ধরে নেন যে আপনি খারাপ? ঠিক আছে, হয়তো আপনি আছেন, কিন্তু তারপর হয়তো আপনি নন। আপনি অনেক প্রচেষ্টা না করা পর্যন্ত এটি এমন কিছু নয় যা আপনি জানতে পারবেন। বিশ্বের সেরা ক্রীড়াবিদদের কেউ কেউ এতটা উত্তপ্ত হতে শুরু করেননি। আপনার যদি খেলাধুলার প্রতি অনুরাগ থাকে তবে চেষ্টা করুন এবং দেখুন।

• কখনও কখনও ব্যতিক্রমীভাবে দান করা একটি অভিশাপ। এই ক্রীড়াবিদরা একটি স্থির মানসিকতায় থাকতে পারে এবং প্রতিকূলতার সাথে ভালভাবে মোকাবেলা করতে পারে না। এমন কোন খেলা আছে যা আপনার কাছে সহজে এসেছিল যতক্ষণ না আপনি দেয়ালে আঘাত করেন? বৃদ্ধির মানসিকতার চেষ্টা করুন এবং আবার এটির জন্য যান।

• "চরিত্র" ক্রীড়া জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, এবং এটি একটি বৃদ্ধির মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসে। কঠিন স্পোর্টস ম্যাচগুলিতে গভীরভাবে পৌঁছানোর জন্য আপনার প্রয়োজনীয় সময়গুলি সম্পর্কে চিন্তা করুন। এই অধ্যায় থেকে গ্রোথ - মাইন্ডসেট চ্যাম্পিয়নদের সম্পর্কে চিন্তা করুন এবং তারা কীভাবে এটি করে। আপনি পরের বার কি করতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য যে আপনি চিমটে বৃদ্ধির মানসিকতায় আছেন?

• বৃদ্ধির মানসিকতার সাথে ক্রীড়াবিদরা শেখার এবং উন্নতিতে সাফল্য খুঁজে পায়, শুধু জেতা নয়। আপনি যত বেশি এটি করতে পারবেন, তত বেশি ফলপ্রসূ হবে আপনার জন্য- এবং যারা আপনার সাথে খেলবে তাদের জন্য।

:: ব্যবসা - মানসিকতা ও নেতৃত্ব::

২০০১ সালে একটা কোম্পানি এনরোন প্রতিভাশালী স্টুডেন্ট দের নিয়োগ করা নিয়ে খ্যাত ছিলো।কিন্তু ধীরে ধীরে সেই অভিযাত্য কমতে থাকলো। এখানে স্থায়ী মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের বসবাস বেশী হয়ে পড়েছিল।কেউ ভাবতে পারেনি কোম্পানির একদিন খারাপ অবস্থা হবে। এনরোন মনে করতো সফলতা পাওয়ার জন্য প্রতিভাশালী হতে হয়, আর গতানুগতিক মানসিকতা নিয়েই চলছিলো এইজন্য নতুন কিছু করতে পারেনি। আসল নেতা হলো সেই যে নিজেকে প্রমান করেনা বরংচ যা ভালোবাসে বা যে কাজ ভালোবাসে তাই করে। অনেক বড়ো বড়ো ব্যাবসায়ী এই একটা কারণে নিজেদের উন্নতি ও অবনতি ঘটান, স্থায়ী মানসিকতার মানুষ যেখানেই কাজ করে সেখানেই তারা ভাবে নিজেদের প্রমান করা, নিজেদের সফলতা ও হেরে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত হওয়া। কিন্তু গ্রোথ মানসিকতার মানুষ ঠিক উল্টোটাই হন তারা কষ্টের মধ্যে দিয়েই সফলতা আনেন ও তাকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং হেরে গেলেও তাকে মেনে নিয়ে পুনরায় শুরু করেন।

• আপনি কি একটি স্থির মানসিকতা বা বৃদ্ধি মানসিকতার কর্মক্ষেত্রে আছেন? আপনি কি মনে করেন যে লোকেরা কেবল আপনাকে বিচার করছে বা তারা আপনাকে বিকাশে সহায়তা করছে? হয়তো আপনি এটিকে আরও বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে পারেন - নিজের থেকে শুরু করে মানসিকতার জায়গা। আপনি নিজের জন্য আরও শেখার অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারেন এমন উপায় আছে কি?

• আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে অন্যদের প্রতি কিভাবে আচরণ করেন? আপনি কি একজন স্থির মানসিকতার বস, আপনার কর্মীদের মঙ্গলের চেয়ে আপনার ক্ষমতার উপর বেশি মনোযোগী? আপনি কি কখনও অন্যদের অবমাননা করে আপনার অবস্থা পুনরায় নিশ্চিত করেন? আপনি কি কখনও উচ্চ-কর্মক্ষমতা সম্পন্ন কর্মচারীদের আটকানোর চেষ্টা করেন কারণ তারা আপনাকে হুমকি দেয়?

আপনার কর্মীদের কাজের বিকাশে সহায়তা করার উপায়গুলি বিবেচনা করুন: শিক্ষানবিশ? কর্মশালা? কোচিং সেশন? আপনি কীভাবে আপনার কর্মীদের আপনার সহযোগী হিসাবে, একটি দল হিসাবে দেখা এবং আচরণ শুরু করতে পারেন সে সম্পর্কে চিন্তা করুন। কৌশলগুলির একটি তালিকা তৈরি করুন এবং তাদের চেষ্টা করুন। এমনকি যদি আপনি ইতিমধ্যে নিজেকে একটি বৃদ্ধি - মানসিকতার বস হিসাবে মনে করেন তবে এটি করুন। সু-স্থাপিত সমর্থন এবং বৃদ্ধি-প্রোমোট ফিডব্যাক কখনই আঘাত করে না।

• আপনি যদি একটি কোম্পানি চালান, তাহলে এটিকে মানসিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুন। কীভাবে অভিজাততাকে মূলোৎপাটন করা যায় এবং আত্ম-পরীক্ষা, উন্মুক্ত যোগাযোগ এবং দলবদ্ধতার সংস্কৃতি তৈরি করা যায় সে সম্পর্কে গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করুন। গারস্টনারের চমৎকার বইটি পড়ুন "কে বলেছে হাতি নাচতে পারে না?" এটি কীভাবে করা হয় তা দেখতে।

•আপনার কর্মক্ষেত্র কি গ্রুপথিঙ্ক প্রচারের জন্য সেট আপ করা হয়েছে? যদি তাই হয়, পুরো সিদ্ধান্ত-প্রক্রিয়াই সমস্যায় পড়ে। বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি এবং গঠনমূলক সমালোচনা করার উপায় তৈরি করুন। শয়তানের উকিল খেলতে লোকেদের বরাদ্দ করুন, বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করুন যাতে আপনি আপনার অবস্থানের গর্তগুলি দেখতে পারেন। ইস্যুটির বিভিন্ন পক্ষের তর্ক করে এমন বিতর্কে লোকেদের নিয়ে যান। একটি বেনামী পরামর্শ বাক্স আছে যা কর্মচারীদের অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে অবদান রাখতে হবে। মনে রাখবেন, মানুষ একই সময়ে স্বাধীন চিন্তাবিদ এবং দলের খেলোয়াড় হতে পারে। তাদের উভয় ভূমিকা পূরণ করতে সাহায্য করুন।

:: সম্পর্ক - প্রেমে মানসিকতা ( বা না ) ::

একটা সম্পর্ক কখনোই স্বচ্ছন্দ বা মসৃন ভাবে চলতে পারেনা, তাতে অনেক বাঁধা -বিপত্তি থাকেই । আর মানুষ ভাবে সম্পর্ক সুন্দর ভাবেই চলতে থাকবে ও সেই মনোভাব নিয়েই সে এগিয়ে গিয়েও পরবর্তীকালে কোনো সম্পর্কে টিকে থাকতে পারেনা। লেখিকা কিছু স্থায়ী মানসিকতার মানুষকে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিল। তাদের মতামত ছিলো যে তারা তাদের প্রাক্তন বা প্রাক্তনীদের উপর বদলা নিতে চায় ও সম্পর্কে অনেক কষ্ট, দুঃখ সহ্য করেছে কিন্তু গ্রোথ মানসিকতার মানুষেরা বলেছেন যে তারাও কষ্ট পান। কিন্ত সেটার থেকে তারা শিক্ষা নেন ও নিজেদের প্রাক্তন ও প্রাক্তনীদের ক্ষমা করে দেন ও আগে এগিয়ে যান। একটা সম্পর্কের তিনটে দিক হলো আপনি, আপনার সঙ্গী ও আপনাদের সম্পর্ক। স্থায়ী মানসিকতার মানুষের ভাবনা যে - সম্পর্কে কোনো কাজ করতে হবেনা তা এমনি এমনিই ঠিক হয়ে যাবে, এবং এই মানসিকতার লোক প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে পারেননা, তারা নিজের পার্টনার কে দোষারোপ করেন, নিজের পার্টনার এর সঙ্গে কম্পিটিশন এও নেমে যান, নিজেকে ভালো প্রমান করার ইত্যাদি কাজে নিযুক্ত হয়ে যান কিন্তু যখন সম্পর্কে ফাটল ধরে তখন একে অপরকে দোষারোপ করেন কিন্তু গ্রোথ মানসিকতার মানুষ পুরো উল্টোটাই হন। তারা যানেন কীভাবে একটা সম্পর্ককে ধরে রাখতে হয়, একে অপরকে দোষারোপ না করে কীভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয়। তবে স্থায়ী মানসিকতার মানুষ যখন তার সম্পর্ককে ও বিপরীতের মানুষটিকে ভালোভাবে দেখে তখন বুঝতে পারে কোথাও হয়তো দোষ তারি ছিলো। এরকম ভাবেই একটা শিশুও বুঝতে পারে তার বাবা-মা এর অনেক চেষ্টার পরেও যদিনা সে উন্নতি করতে পারে তাহলে সেটা তারি ত্রুটি।

একটা সম্পর্কে দুজন মানুষ বিপরীতই হয়, তাই তাদের একটু সময় লাগে একে অপরকে মেনে নিতে, এটা যদি না করতে পারে তখনি সম্পর্কে ফাটল ধরে।

•প্রত্যাখ্যানের পরে, আপনি কি বিচারক, তিক্ত এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ বোধ করেন? অথবা আপনি কি আঘাত বোধ করেন, কিন্তু ক্ষমা করার, শেখার এবং এগিয়ে যাওয়ার আশাবাদী? আপনার কাছে সবচেয়ে খারাপ প্রত্যাখ্যানের কথা ভাবুন। সমস্ত অনুভূতির সাথে যোগাযোগ করুন এবং দেখুন আপনি এটিকে বৃদ্ধির মানসিকতা থেকে দেখতে পারেন কিনা। আপনি এটা থেকে কি শিখলেন? আপনি আপনার জীবনে কি চান এবং কি চান না সে সম্পর্কে এটি কি আপনাকে কিছু শিখিয়েছে? এটি কি আপনাকে কিছু ইতিবাচক জিনিস শিখিয়েছে যা পরবর্তী সম্পর্কের ক্ষেত্রে কার্যকর ছিল? আপনি কি সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পারেন এবং তাদের মঙ্গল কামনা করতে পারেন? আপনি কি তিক্ততা ছেড়ে দিতে পারেন?

• আপনার আদর্শ প্রেমের সম্পর্কের ছবি। এটা কি নিখুঁত সামঞ্জস্য জড়িত - কোন মতবিরোধ নেই, কোন আপস, কোন কঠোর পরিশ্রম? অনুগ্রহ করে আবার চিন্তা করুন। প্রতিটি সম্পর্কে, সমস্যা দেখা দেয়। তাদের একটি বৃদ্ধির মানসিকতা থেকে দেখার চেষ্টা করুন: সমস্যাগুলি বৃহত্তর বোঝাপড়া এবং ঘনিষ্ঠতা বিকাশের একটি বাহন হতে পারে। আপনার সঙ্গীকে তার পার্থক্যগুলি প্রকাশ করার অনুমতি দিন, মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং তাদের সাথে ধৈর্যশীল এবং যত্নশীল পদ্ধতিতে আলোচনা করুন।

• আপনি কি আমার মতো দোষী? আপনার সঙ্গীর উপর সবকিছু পিন করা সম্পর্কের জন্য ভাল নয়। আপনার নিজের মরিস তৈরি করুন এবং পরিবর্তে তাকে দোষ দিন। আরও ভাল, নিজেকে দোষারোপ করার প্রয়োজন থেকে নিরাময়ের দিকে কাজ করুন। সব সময় দোষ এবং দোষ সম্পর্কে চিন্তার বাইরে যান। ভাবুন আমিও সেটা করার চেষ্টা করছি।

• তুমি কি লজ্জা অনুভব করছো? তারপর আপনি সত্যিই বৃদ্ধি মানসিকতা প্রয়োজন।এমনকি যদি এটি আপনার লজ্জা নিরাময় না করে, এটি আপনার সামাজিক মিথস্ক্রিয়াকে বার্তা পাঠানো থেকে এটিকে রাখতে সাহায্য করবে। পরের বার যখন আপনি একটি সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে প্রবেশ করছেন, তখন এই বিষয়গুলি সম্পর্কে চিন্তা করুন: সামাজিক দক্ষতাগুলি কীভাবে আপনি উন্নতি করতে পারেন এবং কীভাবে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া শেখার এবং উপভোগের জন্য, বিচার নয়। এই অনুশীলন করতে থাকুন।

:: পিতামাতা, শিক্ষক এবং প্রশিক্ষক - মানসিকতা কোথায় আসে?::

একজন পিতামাতা কখনোই চাননা যে তার সন্তান বেপথে যাক কিন্ত তাদের কাজকর্মের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে যেমন কোনো কোনো পিতামাতা তাদের সন্তানদের বলেন যে তাদের বুদ্ধি সীমিত ও তাদের বন্ধুদের বুদ্ধি বেশী আবার অপরদিকে কিছু পিতামাতা তাদের সন্তানদের বুদ্ধির প্রশংসা করেন। উভয় কার্যই হানিকর হতে পারে।

যদি আমরা এই কিছু কথা সন্তানদের বলি -

* তোমরা খুব তাড়াতাড়ি শিখে গেছো।

* তুমি অনেক বুদ্ধিমান / বুদ্ধিমতী।

* এতো কম পড়ার পরো ভালো করেছো।

* তুমিই খুব স্মার্ট।

এইসব বলা ভালো কিন্তু এরও ক্ষতিকর দিক তো রয়েছে। কারণ তারা এটাও ভাবতে পারে তারা যদি সফল হতে না পারে সবাই তাহলে সবাই হাসবে, সবাই কী বলবে?

তাই তাদের অনুপ্রেরণা দিন যে তোমার মধ্যে ক্ষমতা আছে ভালো করার, চেষ্টা করো অবশ্যই সফল হবে, না পারলে পুনরায় চেষ্টা করো।

অনেকসময় দেখা যায় যে পিতামাতা ও সন্তানের ইচ্ছে আলাদা হয় তখনই আসল সমস্যা দাঁড়িয়ে যায়। এবং সন্তান যদি তার নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের পেশা বেছে নেয় সেখানেও তার আত্মঘাতী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। তাই প্রত্যেক অভিভাবক কেই যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত।

অনেক শিক্ষক ভাবেন যে তাঁরা তাদের পড়ানোর গুণমান কে কমিয়ে দিলে ছাত্রদের পক্ষে ভালো হবে কিন্ত তা হয়না, এর ফলে শুধু ছাত্র তৈরী হয় এবং একজন ভালো শিক্ষকের কর্তব্য গ্রোথ মানসিকতার ছাত্র তৈরী করা ও স্থায়ী মানসিকতার ছাত্রদের সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

পিতামাতা থেকে সন্তানের প্রতিটি শব্দ এবং কাজ একটি বার্তা পাঠায়। আগামীকাল, আপনি আপনার বাচ্চাদের যা বলছেন তা শুনুন এবং আপনি যে বার্তাটি পাঠাচ্ছেন তাতে সুর করুন। তারা কি বার্তা যা বলে: আপনার স্থায়ী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং আমি তাদের বিচার করছি? অথবা সেগুলি কি বার্তা যা বলে যে আপনি একজন উন্নয়নশীল ব্যক্তি এবং আমি আপনার উন্নয়নে আগ্রহী?

• আপনি কীভাবে প্রশংসা ব্যবহার করেন? মনে রাখবেন যে বাচ্চাদের বুদ্ধিমত্তা বা প্রতিভার প্রশংসা করা, প্রলুব্ধ করার মতো, একটি স্থির মানসিকতার বার্তা পাঠায়। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস এবং অনুপ্রেরণাকে আরও ভঙ্গুর করে তোলে। পরিবর্তে, তারা যে প্রক্রিয়াগুলি ব্যবহার করেছে তার উপর ফোকাস করার চেষ্টা করুন- তাদের কৌশল, প্রচেষ্টা বা পছন্দ। আপনার সন্তানদের সাথে আপনার মিথস্ক্রিয়ায় প্রশংসা প্রক্রিয়াটি কাজ করার অনুশীলন করুন।

• আপনার সন্তান যখন গন্ডগোল করে তখন নিজের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। মনে রাখবেন গঠনমূলক সমালোচনা হল প্রতিক্রিয়া,যা শিশুকে বুঝতে সাহায্য করে কিভাবে কিছু ঠিক করতে হয়। আপনি আপনার বাচ্চাদের যে গঠনমূলক সমালোচনা (এবং প্রক্রিয়ার প্রশংসা) দিয়েছেন তা লিখুন।

• বাবা-মায়েরা প্রায়শই লক্ষ্য নির্ধারণ করে যেগুলির দিকে তাদের সন্তানরা কাজ করতে পারে। মনে রাখবেন যে সহজাত প্রতিভা থাকা একটি লক্ষ্য নয়। দক্ষতা এবং জ্ঞান প্রসারিত হয়। আপনার সন্তানদের জন্য আপনি যে লক্ষ্যগুলি সেট করেছেন সেদিকে সতর্ক মনোযোগ দিন।

• আপনি যদি একজন শিক্ষক হন, তবে মনে রাখবেন যে মান কমানো ছাত্রদের আত্মসম্মান বাড়ায় না। কিন্তু ছাত্রদের কাছে পৌঁছানোর উপায় না দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড বাড়ানো হয় না। বৃদ্ধির মানসিকতা আপনাকে উচ্চ মান নির্ধারণ করার এবং শিক্ষার্থীদের তাদের কাছে পৌঁছানোর একটি উপায় দেয়। একটি বৃদ্ধি কাঠামোতে বিষয়গুলি উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন এবং শিক্ষার্থীদের প্রক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দেওয়ার চেষ্টা করুন। আমি মনে করি আপনি যা ঘটবে তা পছন্দ করবেন।

• আপনি কি আপনার ধীরগতির ছাত্রদের এমন বাচ্চাদের মত মনে করেন যারা কখনই ভালভাবে শিখতে পারবে না? তারা কি নিজেদেরকে স্থায়ীভাবে বোবা মনে করে? পরিবর্তে, তারা কী বোঝে না এবং তাদের কী শেখার কৌশল নেই তা বের করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন যে মহান শিক্ষকরা প্রতিভা এবং বুদ্ধি বৃদ্ধিতে বিশ্বাস করেন এবং শেখার প্রক্রিয়া দ্বারা মুগ্ধ হন।

•আপনি কি একজন স্থির মানসিকতার কোচ? আপনি কি আপনার রেকর্ড এবং আপনার খ্যাতি সম্পর্কে প্রথম এবং সর্বাগ্রে মনে করেন? আপনি কি ভুলের প্রতি অসহিষ্ণু? আপনি কি বিচারের মাধ্যমে আপনার খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেন? যে কি আপনার ক্রীড়াবিদ অধিষ্ঠিত হতে পারে।

বৃদ্ধির মানসিকতার চেষ্টা করুন। ভুলমুক্ত গেমের জন্য জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে, সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি এবং সম্পূর্ণ প্রচেষ্টার জন্য জিজ্ঞাসা করুন। খেলোয়াড়দের বিচার না করে, তাদের সম্মান দিন এবং তাদের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় কোচিং দিন।

• পিতামাতা, শিক্ষক এবং প্রশিক্ষক হিসাবে, আমাদের লক্ষ্য জনগণের সম্ভাবনার বিকাশ। গ্রোথ মানসিকতার সমস্ত পাঠ ব্যবহার করা যাক এবং আমরা যা করতে পারি- এটি করতে।

:: মানসিকতার পরিবর্তন ::

লেখিকা যখন তার গ্রেডে ছিল, তার পরিবার একটি নতুন শহরে চলে আসে। সেখানকার শিক্ষার্থী ও পরিবেশ লেখিকার কাছে অপরিচিত ছিল। শিক্ষক এসে চিঠি লিখতে বললেন। সব স্টুডেন্টরা লিখলেও লেখিকা লিখতে পারেননি, তখন তার মনে হয়েছিল যে শিক্ষিকাকে জিজ্ঞেস করে নেওয়াটা তাঁর উচিত ছিলো।

স্হায়ী মানসিকতার লোক কোনো কাজ যদি ভালো হয় তাকে পজিটিভ ও কোনো খারাপ হলে তাকে নেগেটিভ ভাবেই নেয়। কিন্তু গ্রোথ মানসিকতার লোক কখনোই কাউকে বিচার করেননা বরংচ তাঁরা শিক্ষা নেন ও নিজের দক্ষতার উন্নতি ঘটান।

অনেকেই বুঝতে পারেননা কীভাবে তাদের মস্তিস্ককে ব্যবহার করবেন।

আবার অনেকেই ভাবেন জগতটাকে পরিবর্তন করা দরকার, নাকি নিজেকে পরিবর্তন করা।

অনেক সময় আমাদের মনে হয় এই কাজটা আমার জন্য উপযুক্ত নয়, এর থেকেও ভালো কাজ আমি পেতে পারতাম, এর ফলে কাজের জায়গার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা হয়, তা প্রোমোশন হোক বা যেকোনো কাজ করা। নিজের মানসিকতাকে আগে সঠিক ভাবে পরিচালিত করুন ও সিদ্ধান্ত নিন, এর দ্বারা সঠিক নির্ণয় সম্ভব।

মানসিকতার পরিবর্তন করুন ও জীবনে এগিয়ে যান।

🙏ধন্যবাদ🙏