Martin Luther King, Jr  by Roger Bruns

Martin Luther King Jr.

4:00 AM, May 08, 2023

Biography & Autobiography

P. Maiti


Martin Luther King Jr

Roger Bruns


প্রাচীনকাল থেকে ইতিহাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পাশাপাশি পারিবারিক ষড়যন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ, জাতিগত বৈষম্য প্রভৃতির সাক্ষী। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির সাথে প্রথম বিশ্বের দেশগুলিও এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে সামিল। জাতিগত এবং বর্ণগত বৈষম্য হলো প্রথম বিশ্বের দেশগুলির উন্নত এবং আধুনিক মানসিকতার আড়ালে এক ঘূণধরা ক্ষত। কালে কালে বহু মানব পৃথিবীর বুকে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এই প্রবল পরাক্রমশালী বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। নিগ্রো জাতির মুক্তি ও জাগরণের ইতিহাসে যে চারজন মনীষীর অবদান অসামান্য, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি খ্রিস্টীয় বিশ্বাস ও থরোর দর্শন এবং মহাত্মা গান্ধীর জীবনী ও বাণী থেকে অহিংস সক্রিয়তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জন্য নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।


১৯২৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি জর্জিয়ার আটলান্টায় লুথার জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন মার্টিন লুথার কিং সিনিয়র এবং মা ছিলেন আলবার্টা উইলিয়ামস কিং। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার পিতা ছিলেন একজন ধর্মযাজক। এর পাশাপাশি তিনি কৃষ্ণাঙ্গ জাতির উন্নয়ন এবং তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনা, ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশের চেষ্টায় সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন।


বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য লুথারের ঠাকুরদা রেফারেন্ড আলফ্রেড ড্যানিয়েল উইলিয়াম স্থাপন করেছিলেন 'ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন টু দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ কালারড পিপলস' নামে এক সংস্থা। এই পারিবারিক আবহ পরবর্তীকালে মার্টিনকে উৎসাহিত করেছিল নিগ্রোদের হয়ে এই অসম লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে।


পাঁচ বছর বয়সে কিং পাবলিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি বুকার টি. ওয়াশিংটন হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৪৪ সালে ১৫ বছর বয়সে মোরহাউস কলেজ, আটলান্টাতে ভর্তি হন। কলেজে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে সমাজবিদ্যা ও আইন বিষয়েও গভীরভাবে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অত্যন্ত কম বয়সেই তিনি ডক্টরেট অফ ফিলোসফি ডিগ্রি লাভ করেন।


এই সময় তিনি কোরেটা স্কট নামে এক অসাধারণ মহিলাকে বিবাহ করেন। পরবর্তীকালে লুথারের জীবনে স্কট এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মনটোগোমারীতে ব্যাপটিস্ট চার্চে লুথার যাজকের পদ গ্রহণ করেন। ওই বছরই বাসে নিগ্রোদের পেছনের সিটে বসার আইনের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের ফলস্বরূপ আমেরিকার মতো এক প্রথম সারির দেশে নিগ্রোদের প্রতি অমানবিক বৈষম্য সারা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাস ধর্মঘট সফল হওয়ায় লুথার নিগ্রোদের অবিসংবাদিত নেতা রূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তার এই জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে মার্কিন সরকার এক আপস মীমাংসায় আগ্রহী হয়। মনটোগোমারীতে মেয়রের নেতৃত্বে গঠিত হয় 'হোয়াইট সিটিজেন কাউন্সিল'। এই সংগঠনের মাধ্যমে আপোষের চেষ্টা চললেও লুথার এই আলোচনা অর্থহীন বিবেচনা করে আন্দোলন চালাতে থাকেন। বাধ্য হয়ে শ্বেতাঙ্গ সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন এবং তাকে জেল বন্দি করেন । কিন্তু ফলাফল হয় বিপরীত। যে আগুন এতদিন ছাই চাপা হয়ে ধিকি ধিকি জ্বলছিল তা ক্রমে আগ্নেয়গিরির আকার ধারণ করে। তার এই কারাবাস শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের পাশাপাশি সারা বিশ্বে তাকে নিগ্রো জাতির জনক রূপে পরিচিত করে তোলে। সারা বিশ্বের মানুষ মার্কিন সরকারের প্রতি প্রবল ধিক্কার জানান। প্রবল বাধার সম্মুখীন হয়ে বাধ্য হয়ে সরকার তাকে মুক্তি দেয়। কৃষ্ণাঙ্গদের উন্নয়ন ও অধিকার রক্ষার আন্দোলন আরো জোরদার হয়।


ধীরে ধীরে জনমানষে তিনি এক নেতা রূপে পরিচিতি লাভ করতে থাকেন। ১৯৫৭ সালে প্রথমবার রাষ্ট্রপতি হয়ে তিনি খ্রীষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য তহবিল গঠন করেন। ১৯৬২ সালে আলবেনিয়া ও জর্জিয়াতে ব্যারথ অভিযান চালান। রাজনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা। তার মনমুগ্ধকর বক্তৃতা দ্বারা জনমনে তিনি একটি স্থায়ী আসন লাভ করেন।


১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটনে তিনি একটি মার্চ সুসংগঠিত করেন। প্রায় ২ লক্ষ কৃষ্ণাঙ্গ সমবেত হয়েছিলেন তার আহ্বানে। এই মার্চে তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন যা "আই হ্যাভ এ ড্রিম" নামে পরিচিত। এই ভাষণে উঠে এসেছে নিগ্রোদের প্রতি অত্যাচারের কথা, তাদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন সাম্যের, এক শোষণমুক্ত সমাজের যেখানে সব মানুষ সমান। তিনি বলেছেন "আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবো না যতক্ষণ পর্যন্ত নিগ্রোদের গতিশীলতা কেবলমাত্র ছোট বস্তি থেকে বড় বস্তি পর্যন্ত,আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবো না যতক্ষণ পর্যন্ত শুধুমাত্র 'শ্বেতাঙ্গদের জন্য' এই প্রতীক দিয়ে আমাদের শিশুদের আত্মপরিচয়, তাদের আত্মমর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়া হবে। আমি স্বপ্ন দেখি এই জাতি একদিন জেগে উঠবে এবং এর বিশ্বাসের সত্যকে জীবনে কাজে লাগাবে যে, সব মানুষকে সমান করে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি স্বপ্ন দেখি আমার ছোট ছোট চার সন্তান এমন একটি দেশে বাস করবে, যেখানে তাদের গায়ের রং দিয়ে বিচার করা হবে না বরং তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে বিচার করা হবে। তার স্বপ্ন ছিল একই দেশে একই ধর্মাবলম্বী হয়ে কৃষ্ণাঙ্গরা বঞ্চনা থেকে মুক্ত হোক, তারা শ্বেতাঙ্গদের সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হোক।"


আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জাতিগত সমস্যাকে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ পথে পরিচালনার জন্য ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে লুথার কে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সমস্ত টাকা তিনি দান করেন নিগ্রো জাতির উন্নয়নের স্বার্থে। এরপর তিনি নিগ্রোদের সমস্ত ক্ষেত্রে সমতার দাবিতে সমগ্র দেশজুড়ে আরম্ভ করলেন ফ্রীডম মার্চ। এই আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনের রূপ নিতে শুরু করে ক্রমে। এই আন্দোলন ক্রমে শ্বেতাঙ্গ মানুষের সমর্থন আদায় করে। বহু শতাব্দী ধরে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের এই সমতার দাবির লড়াই গোটা বিশ্ব থেকে সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়। চারিদিকে প্রতিবাদ ধ্বনিত হতে থাকে।


১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৩রা এপ্রিল এক সন্ধ্যায় কিং কে মেম্ফিস মেসনিক মন্দির কর্তৃপক্ষ নতুন একটি র‍্যালি করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেখানে সম্মিলিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- "হয়তো আমরা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছি, কিন্তু এই ব্যারিয়ার ভাঙতে আমরা সক্ষম হব। আমি এমন এক পর্বতের চূড়ায় অবস্থান করছি, যেখান থেকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির বাস্তব রূপ দেখতে পাচ্ছি।" পরবর্তী সকাল এক আনন্দের সংবাদ বহন করে। সমস্ত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে অনুমতি পাওয়া যায়। দুপুরের দিকে র‍্যালি শুরুর প্রস্তুতি নিয়ে লুথার লরেন হোটেলের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ান। তিনি এবং জেসি জ্যাকসন নিজেদের মধ্যে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। গতকালই তিনি একটি হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন। তার সহযোদ্ধারা তাকে স্থান পরিবর্তন এর পরামর্শ দেন। কিন্তু অকুতোভয় কিং তাতে সায় দেননি। আলোচনা চলাকালীন হঠাৎ একটি বন্দুকের গুলির শব্দ পাওয়া যায়। জেমস আর্ল রে নামে এক শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থীর আক্রমণে মুখ এবং গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কিং মৃত্যুবরণ করেন।


লুথার কিং এর মৃত্যু সাময়িকভাবে আন্দোলনকে অবরুদ্ধ করলেও যে জাতীয়তার বীজ আমেরিকাবাসীর মননে তিনি বপন করেছিলেন, তা পরবর্তীকালে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের তাদের সমতার দাবি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ফলস্বরূপ বারাক ওবামা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন, যিনি ছিলেন আদতে এক কৃষ্ণাঙ্গ। আজ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গজাতির যে জাগরণ বিশ্বকে বিস্মৃত করে, তার মূলে রয়েছেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ার।


Buy Martin Luther King Jr. from


Share Martin Luther King Jr.


Featured Summaries