5:23 AM, September 20, 2022
Biography & Autobiography, Self Help, Non-Fiction
1940 খিস্টাব্দে হলোকস্ট এর সময় ভিক্টর ফ্রাঙ্কল কনসেনট্রেশন ক্যাম্প এ একজন কয়েদির মতো কাটিয়েছিলেন এবং ওনার মা, বাবা, ভাই ও স্ত্রী কে মেরে ফেলা হয়েছিল | ওনাকে বাকি কয়েদিদের সঙ্গে খুবই বাজে অবস্থায় রাখা হত, ঠিকমতো খাওয়ার দেওয়া হত না এবং ওনার চারপাশে শুধু ছিলো মৃত্যুভয় | কখনো মানুষ খাওয়ার অভাবে মারা যেত আবার অনেকসময় বিষাক্ত গ্যাসের কারণে মারা যেত কিন্ত যেখানে বেশিরভাগ কয়েদি কিছুদিনের মধ্যে তাদের সাহস হারিয়ে তাদের জীবনের আশা ও জীবনের মানে হারিয়ে ফেলতো সেখানেই ভিক্টর এর ক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্ত ছিলো অর্থপূর্ণ কারণ তিনি একজন নিউরোলোজিস্ট ও সাইক্রিয়েটিস ছিলেন | যার জন্য প্রত্যেকটি দিনই ছিলো তার কাছে নতুন, তিনি প্রত্যেকটি মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতেন ও তাদের আচরণ দেখতেন | তিনি তাঁর বইয়ে বলেছেন যে ওনার মতো যেসব মানুষ এতো কষ্ট ও ভোগান্তির মধ্যেও নিজের জীবনের আশা ও জীবনের মানে হারাচ্ছিলেন না তাদের জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এমন ছিলো যে সেই অবস্থাকে তিনি চ্যালেঞ্জ এর মতো নিয়েছিলেন যাকে তিনি কাটিয়ে উঠতে চেয়েছিলেন | কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে প্রত্যেকটি পরিস্থিতি কয়েদিদের পক্ষে ছিলো খুব দুঃখজনক | প্রত্যেকটি মানুষের থেকে তাদের স্বপ্ন ও মনের জোর ছিনিয়ে নেওয়া হতো আর যেটা তাদের মধ্যে বেঁচে থাকতো সেটা হলো প্রত্যেকটা মানুষের যে এই অবস্থায় কী করে বা কী করতে পারে তা বেছে নেওয়ার ক্ষমতা | এই স্বাধীনতার কথা ইনসেন্ট স্টোয়িকস এবং ইভেন মডার্ন একজিস্টান্সিল ফিলোজোফার ও বলেছেন এবং একজিস্টান্সিলের মুখ্য বিষয় হলো বাঁচার মানে হলো কঠোর পরিশ্রম করে চলা আর এই পীড়ার মধ্যেও একঠায় দাঁড়িয়ে থাকার মানে হলো নিজের কষ্টের মানে খোঁজা | যদি জীবনের কোনো উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আমাদের মরণে ও সহ্য করার কোনো না কোনো উদ্দেশ্য তো রয়েছেই কিন্ত কোনো এক ব্যাক্তি আর এক ব্যাক্তিকে বলতে পারবেনা যে এই উদ্দেশ্য টা কী কারণ প্রত্যেকটা মানুষের উদ্দেশ্য আলাদা এবং তাদের কাজ হলো নিজের জীবনের উদ্দেশ্য কে খোঁজা এবং এর সঙ্গে সমন্নিত দায়িত্বকে পালন করা | তিনি বলেছেন যে এটা কোনো ব্যাপার নয় যে আমরা জীবনের থেকে কী আশা রাখি বরঞ্চ জীবন আমাদের থেকে কী আশা করে এটা হলো আসল প্রশ্ন | নিজেকে নিজে নিজের জীবনের মানে কী এটা জিজ্ঞেস করার বদলে নিজের পরিস্থিতিকে এমনভাবে দেখো যে জীবন প্রতি মিনিট ও প্রতি ঘন্টায় জিজ্ঞেস করছে যে আপনি এই পৃথিবীতে কী অবদান রাখতে চাচ্ছেন | ফ্রাঙ্কেল এর মতে বাঁচার আসল মানে হলো জীবনের সমস্যায় সঠিক জবাব খোঁজার দায়িত্ব নেওয়া ও এই জবাব খোঁজার রাস্তায় বাঁধা গুলোকে পার করা অর্থাৎ নিজের জীবনের ভার বহন করা | কোনো জিনিসের জন্য দায়িত্বশীল হওয়া খুব জরুরি | ফ্রাঙ্কেল জার্মানি ফিলোজোফার নীচা কে বলেছেন --
" He who has a why to live, Can bear with almost anyhow"
অর্থাৎ যে মানুষের জীবনে কোনো মানে ও দায়িত্ব আছে সে জীবনের প্রত্যেক মুশকিলকে সহ্য করতে পারে | তিনি তাঁর কাজের সূত্রেও দেখেছেন যে মানুষের জীবনে তার কোনো মানে ছিলোনা তার যে কোনো কাজের প্রতি অনীহা আসতো, রাগ হতো ও মানসিক রোগে ভুগতো | ওনার বন্ধু ফ্রাঙ্কেল ও বলেছেন যে 'অর্থ' বা 'মানে' হলো এক আরামদায়ক জীবন, সফলতা ও টাকার সঙ্গে সংযোগ নয় কেননা যখন আমাদের জীবনএকটু সহজ হয়ে যায় এবং আমরা জীবন্ত থাকার জন্য লড়াই করিনা তখন মাথায় একটাই প্রশ্ন আসে আমরা কেন বেঁচে আছি? এখনকার যুগে বেশিরভাগ লোকেরই একই ঘটনা |তাদের কাছে কোনো কারণ নেই বেঁচে থাকার | জীবনের এই খালি অবস্থাকে ভিক্টর নাম দিয়েছেন "এক্সিস্টেনশিয়াল ভ্যাকুম " আর যেসব লোক এর স্বীকার হয় ওনাদের মধ্যে তিনটি মূল লক্ষণ লক্ষ করা যায় - 1) বিষণ্ণতা
2)রাগ
3)আসক্তি
মানুষজনের মধ্যে পর্যবেক্ষণ করে ফ্রাঙ্কেল একটা নতুন থেরাপির জন্ম দিয়েছিলেন যার নাম লোগোথেরাপি, যার সাহিত্যিক মানে হলো "মিনিং থেরাপি " || এর দ্বারা মানুষ তার জীবনের মানে খুঁজে পায় | ফ্রাঙ্কেল এর মতে আমরা তিনরকম ভাবে আমাদের জীবনের মানেকে খুঁজে পাই |
প্রথমত : কোনো কাজ করা ও তার লক্ষে পৌঁছানো কারণ যার জীবনে কোনো লক্ষ্য নেই সে পুরো জীবনটাকেই নষ্ট করে ফেলে | প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা ক্ষমতা আছে নতুন কিছু সৃষ্টি করার সেটা তখনি বাইরে আসে যখন সে একটা লক্ষ্য স্থির করে আর আমরা যদি কাজের মধ্যে না থাকি তাহলে আমাদের মধ্যে বিষন্নতা ভাবের সৃষ্টি হয় কারণ আমরা মানুষকে তার কাজের দ্বারাই চিনতে পারি ও মনে রাখি তাই তিনি বলেন নিজের আবেগকে জীবনের উদ্দেশ্য বানানো আর যদি কোনো লক্ষ্য স্থির করতে না পারো তাহলে বাইরের জগতে বেরিয়ে নিজের জ্ঞানকে পরিপূর্ণ করো এবং নতুন দক্ষতার বিকাশ করো এবং যখন নিজের মনে হবে যে সেই কাজের জন্য নিজেকে তৈরী করেছেন যার জন্য এই পৃথিবীতে এসেছিলেন তখন জীবনকে অর্থপূর্ন মনে হবে ||
দ্বিতীয়ত : ভালো সম্পর্ক তৈরী করা | ফ্রাঙ্কেলের মতে ভালোবাসা ও সম্পর্কের বিবরণ অন্যদের থেকে একটু আলাদা | তাঁর মতে ভালোবাসা মানে শুধু ভালোবাসার অনুভূতি নয়, ভালোবাসা মানে হলো অপরের সম্ভাবনা কে চিনতে পারা আর তাদের সর্বোচ্চ সম্ভাব্যতে পৌঁছতে সাহায্য করা যেমন নিজের সন্তানের জন্য সুযোগ বানানো, নিজের ছোটো ভাই বোনের জন্য জীবন সম্বন্ধে বলা, বন্ধুদের খারাপ সময়ে সহায়তা করা আর নিজের দলের ছোটদের রক্ষা করা যাতে তারা এই পৃথিবীতে ভালোভাবে বাঁচার জন্য সাহস জুটাতে পারে এটা হলো ভালোবাসা | যদি একজন অপরজনের উচ্চতাকে ওপরে না ওঠান তাহলে হয়তো তা ভালোবাসা নয় শুধুমাত্র পরিবর্তন কিন্তু ভালো ও সত্যিকারের সম্পর্ক আমাদের জীবনের গুন ও প্রমোদ বাড়ায়, এটাই একমাত্র উপায় যা অন্য মানুষের গভীরতাকে বুঝতে সাহায্য করে | কোনো মানুষ অপর মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত হয় না যদিনা তাকে সে ভালোবাসে | প্রত্যেকটা সম্পর্কের লক্ষ্য এটাই হওয়া উচিত অর্থাৎ যদি আপনার জীবনে কোনো মানে না থাকে তাহলে এমন মানুষকে খুঁজুন যার জীবনকে আপনি কিছুটা ভালো বানাতে পারবেন ||
তৃতীয়ত : নিজের পীড়াকে বাহাদুরের সাথে সহ্য কর আর তাঁর দায়িত্ব নাও | ফ্রাঙ্কেল নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন যে কীভাবে এতো ভোগান্তির সময়ে উনি ওখান থেকে বেরোনোর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সাইকোলজি তে বক্তৃতা দেওয়ার ভাবনা ভেবেছিলেন যার ফলে সব দুঃখ একটা মানেতে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো প্রত্যেকটা মুহূর্ত খুব সচেতন ভাবে বিজ্ঞান সম্মতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এইভাবেবলেছেন অন্যদের মনোস্তত্ব এর সঙ্গে সঙ্গে নিজের কষ্টকে কাটিয়ে উঠেছিলেন | এইজন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়ে বলেছেন যে যখনই আপনি বাজে অনুভব করছেন বা মুশকিলে ফেঁসে আছেন তখন ওই একটাই কথা ভাবুন কীভাবে এই কষ্টকে মূল্যবান বানানো যায় যদিও প্রায় সব গল্পতেই, বইয়েও কষ্টকে একটা রূপান্তরের প্রতিকরূপে দেখান হয় অর্থাৎ গল্পের একটা বিন্দুতে একটা চরিত্র কিছুটা কষ্ট করে এবং তার রাস্তায় আসা বাঁধাকে পার করে যার দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে ওই চরিত্রের অটল কী আর সে কোন মনকে অনুসরণ করে | কষ্ট বা পীড়াই আমাদের গভীরভাবে মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে | ফ্রাঙ্কেলও বলছেন যে আমরা আমাদের হতাশ আর সমস্যার কষ্টকে কখনো এড়াতে পারিনা কিন্তু কষ্ট একটা পছন্দ যা এই জিনিসের উপর নির্ভর করে আছে যে আপনি নিজের অস্তিত্ব আর ব্যথাকে আপনার থেকে বেশি খুশি মানুষর সঙ্গে তুলনা করে নিজের ভাগ্যকে দোষ দেবেন অথবা সেই লোকেদের জীবনকে দেখবেন যাদের অভিজ্ঞতা আপনাদের থেকেও বেকার আর নিজেকে খুশি মনে করো | দুনিয়ার প্রত্যেকটা কোনাতে থাকা মানুষ নিজের ভাগ্যের এই দোটানা অনুভব করেন তো সেটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প হোক বা আপনার জীবন | কষ্টতেও মানে খোঁজা যায় শুধুমাত্র শর্ত এটা হলো যে আপনি হাল ছেড়ে দেওয়ার বা অভিযোগ করার বদলে নিজের মধ্যে সেই আলো খুঁজুন যা এই অন্ধকারকে হারিয়ে দিতে পারে ||
4:00 AM, September 01, 2022