4:00 AM, April 15, 2024
আজকের দিনে আমরা যখন ব্যবসা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করি তখন মূলত তিনটি বিষয় ধ্যান রাখি - নাম , পরিচয় , আর অনেক টাকা । "বিফোর ইউ স্টার্ট আপ" বইতে লেখক পঙ্কজ গোয়েল বলছেন যে , এই বিষয়গুলি যেমন ব্যবসা করে অর্জন করা যায়, ঠিক তেমনি ঘর , বাড়ি সব হারিয়ে দেউলিয়াও হয়ে যেতে পারি ।
স্টার্ট আপের ৪টি কারণ:-
১. আমি আমার চাকরিতে বিরক্ত
২. বস ভাল না
৩. আমি আমার জীবনে অ্যাডভেঞ্চার চাই
৪. আমি অন্যের জন্য কাজ করতে চাই না
বিষয় টা কিন্তু মোটেও এরকম না । স্টার্ট আপ শুরুর আগে আপনি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন , যেমন - মানসিক অবসাদ আসতে পারে , মাসিক বিল মেটানো নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন , সোশ্যাল জীবন পুরোপুরি ভাবে হারিয়ে যেতে পারে , আপনি আপনার বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তায় পড়তে পারেন , অথবা আপনি আপনার সম্পূর্ণ টাকা খোয়াতে পারেন । তার মানে এটা না যে আপনি আপনার স্টার্ট আপ কিম্বা ব্যবসা করবেন না । আপনি আপনার ব্যবসা করুন কিন্তু সম্পূর্ণ প্ল্যানিং এর সাথে। যাতে করে রিস্ক কম হবে আর ব্যবসায় উন্নতি হবে । এখন আমরা এই বইটি থেকে কিছু কথা জানব যেটা আপনাকে আপনার ব্যবসায় উন্নতি সাধনে সাহায্য করবে ।
বেশিরভাগ মানুষ এটা জানেনই না যে তিনি ব্যবসা বা স্টার্ট আপ কেনো করছেন । এই বিষয় টি না জানার ফলে তারা পরবর্তীকালে সমস্যার সম্মুখীন হন। ব্যবসা শুধুমাত্র নাম আর সম্পত্তির জন্য না , আমাদের আশেপাশের মানুষের প্রতিদিনের সমস্যার সমাধানের উপায় হিসেবে করা উচিত । যদি আপনি আপনার স্টার্ট আপ কিম্বা ব্যবসায় খুশি না হন তাহলে পরবর্তী কালে গিয়ে আপনি সেটিতে মনোনিবেশ করতে পারবেন না , আপনি বোর ফিল করবেন । তাই আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন যে আপনি স্টার্ট আপ বা ব্যবসাটি কেনো শুরু করতে চান ? শিল্পোদ্যোগকে এত ঝুঁকিপূর্ণ কোন জিনিস বানায়? একটি সার্ভে তে বলা হয়েছে , প্রায় ১৫৫ টি কোম্পানি তাদের স্টার্ট আপেই ফেইল হয়ে যায় এবং সেই কোম্পানি গুলি বন্ধ করতে বাধ্য হয় ।
এখানে লেখক ৫ টি প্রধান সমস্যার কথা বলেছেন যা ব্যবসায় ঝুঁকিপূর্ণ ।
১. আপনার পণ্যে সমস্যা আছে :- অর্থাৎ আপনার পণ্যের দ্বারা মানুষের প্রয়োজন মিটছে না । উদাহণস্বরূপ - সেগওয়ে নামক স্কুটার বাজারে বেশিদিন টেকেনি , কারণ এমনি তে সেটির স্পিড বেশি ছিল কিন্তু রাস্তায় তুলোনামূলক ভাবে কম ।
২. আপনার কম্পিটিশন আপনাকে শেষ করে দিয়েছে :- যার অর্থ আপনার পণ্য বাজারে টিকে থাকতে পারেনি। যেমন - gmail আসার আগে সবাই yahoo ব্যবহার করত। কিন্তু বাজারে যখনই gmail এলো তখন সবাই yahoo ব্যবহার করা বন্ধ করে দিলো । কারণ , gmail এর ইউজার ইন্টারফেস ভালো , সিকিউরিটি আছে , আর yahoo এর চেয়ে বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।
৩. আইনি ভাবে আপনি শেষ :- মানে আপনি আপনার দেশের আইনি নিয়ম মেনে চলেন নি , যার ফলে আপনার ব্যবসা বন্ধ হতে পারে । যেমন - "হোমজয় " একটি অনলাইন প্লাটফর্ম ছিল যারা তার ক্রেতাদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করত । যেমন , ঘর পরিষ্কার এরম আরো অনেক। কিন্তু ওদের যারা কর্মী ছিল তারা না তো আসলেই কর্মী হিসেবে গণ্য হতেন আর না কন্ট্রাক্টর হিসেবে । যার ফলে এই কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় । ব্যবসা চালানোর জন্য লাইসেন্স দরকার হয় যার জন্য দেশের আইন অনুযায়ী কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় ।
৪. আপনার পুঁজি শেষ :- একটি অবস্থা ভাবুন - ধরুন আপনার ব্যবসা শুরু প্রথম ধাপ তৈরি আছে যা খুব ভালো কাজ করছে । আপনি সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি আছেন আপনার টিমের সাথে সেটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। কিন্তু আপনার পণ্যের মান বৃদ্ধি করতে আপনার কাছে কোনো টাকা নেই। তাই মনে রাখবেন অর্থ হলো যেকোনো ব্যবসায় মূলধন ।
৫. আপনার টিম দুর্বল :- যেকোনো স্টার্ট আপের প্রথম প্রয়োজন হলো টিম । যদি আপনার টিম বা দল মজবুত না হয় তাহলে আপনি ব্যবসায় উন্নতি সাধন করতে পারবেন না । কারণ আপনাকে আপনার দলের সাথেই কাজ করতে হবে । ব্যবসা কখনও একা একা হয়না ।
একটা স্টার্ট আপ শুরু করতে অনেক দক্ষতার দরকার হয় , যেমন - কোডিং , মার্কেটিং , সেলস্ আরও অনেক কিছু । এটা নির্ভর করছে স্টার্ট আপ কোন বিষয়ের ওপর । তাই ব্যবসায় এমন মানুষদের নিয়োগ করুন যারা এই বিষয়গুলি তে দক্ষ এবং সমান উদ্যোগের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে আপনার সঙ্গে কাজ করবে ।
বিস্তারিত জানতে গেলে নিম্নলিখিত পয়েন্ট গুলি বুঝতে হবে ।
১. কিভাবে ব্যবসার ধারণা তৈরি করতে হয়? :- বেশিরভাগ মানুষ জানেন ই না কিভাবে ব্যবসার ধরোনা তৈরী করতে হয় । যারা স্টার্ট আপ বা ব্যবসা শুরু করেন তাদের মুখে আপনারা শুনে থাকবেন , আমি আগামীকাল শুরু করব যদি আমার একটি ভাল ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকে। বা একটা বিলিয়ন ডলার বুদ্ধি পেলেই শুরু করে দেব কিংবা ব্যবসার ধারণা তৈরী করবার মতো আমার বুদ্ধি নেই নয়তো যে ধারণা আমি ভাবছি সেটা অন্য কেও করছে । ব্যবসা করা মানে শুধু মাত্র নাম আর অর্থ উপার্জন করা নয় , মানুষের প্রয়োজন মেটানোর পথ বের করা লক্ষ্য হওয়া উচিত । নতুন ব্যবসা এর বুদ্ধি পেতে গেলে নিজের আসে পাশের মানুষদের সাথে মেলামেশা করুন , বন্ধু বান্ধব্ , সহকর্মী প্রত্যেকের সাথে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করুন যে আদতে কোন বিষয়ে তাদের সমস্যা , বা কি তাদের প্রয়োজন ? সেগুলি সমাধান করবার চেষ্টা করুন । ব্যবসায়িক বুদ্ধি একদিনে আসে না , বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতে করতেই আসে । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ফেসবুক শুরু তে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী দের যোগাযোগ স্থাপনের জন্যই তৈরী হয়েছিল । এই প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পর আজ ফেসবুক বিশ্বব্যাপী মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
২. কিভাবে ব্যবসার ধারণা মূল্যায়ন করতে হয়?ব্যাবসায়িক বুদ্ধি তৈরী হলেই হয়না সেটাকে কার্যকরীও করতে হয় । ব্যবসায়িক বুদ্ধি ১০% লাগে আর বাকি ৯০% কার্যকারিতা । আপনার ব্যবসা কার্যকর না হলে বুজবেন কি করে আদতে সেটা কেমন ? কার্যকরিতার আগে কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট হতে হবে -
i > আপনি কি ১০০ জনকে সনাক্ত করে তাদের সেবায় নিযুক্ত হতে পারবেন ?
ii > ব্যবসা শুরুর আগে কি মূলধন যোগাড় করতে পারবেন ?
iii > আপনি কি গ্রাহকদের নিরঝঞ্ঝাট ভাবে সামলাতে পারবেন ?
iv > ব্যবসায়িক বুদ্ধিকে কি কাজে রূপান্তরিত করতে পারবেন ?
v > যে বুদ্ধি ভেবেছেন সেটা কি আপনার জন্য সঠিক ?
এসব ছাড়া আপনাকে কোন কোন বিষয়ের প্রতি ধ্যান দেওয়া উচিত ?
• > গ্রাহকদের :- দিনশেষে এমন ব্যবসা শুরু করা উচিত যা সাধারণ মানুষদের কাজে আসে । বেশিরভাগ মানুষের ব্যবসা শুরুর আগে এটাই ধারণা থাকে যে , একটা পণ্য তৈরি করে সেটাকে ১০০ জন মানুষের কাছে বেচবো তাহলেই অনেক টাকা পয়সা হবে । কিন্তু তাদের যদি এটা জিজ্ঞেস করা হয় যে তারা প্রথম পণ্য কিভাবে বেছবে তাহলে তাদের কাছে কোনো উত্তর থাকে না । আপনি যদি একজনের কাছে বিক্রি করতে পারেন তাহলে ১০০ এর কাছেও সম্ভব । তাই গ্রহকের প্রয়োজন বুঝে ব্যবসা করা উচিত ।
•> নগদ :- নগদ এবং সাশ্রয় দুটোই প্রয়োজন । আপনি আপনার সম্পূর্ণ পুঞ্জি বিনিয়োগ করতে পারেন না । ব্যবসায় লাভ ক্ষতি থাকবেই । যদি লোকসান হয়ও তাহলেও আপনার কাছে কিছু পুঞ্জি থাকবে ।
•> সম্পাদন এবং ক্রিয়াপ্রণালী :- যত ভুল করবেন ,তত শিখবেন । ভুল হওয়া টা স্বাভাবিক কিন্তু তার পরিমান যেন বেশি না হয় । তবেই ক্ষতি কম হয়ে শিখবেন বেশি ।
•> বিক্রয় :- এই বিষয়ে আগেই বলা হয়েছে । পণ্যের গুণমান এবং বিক্রয় প্রণালী ঠিক করে দেয় সেটি কিরকম ব্যবসা করবে ।
•> বুদ্ধি :- আপনি যে ব্যবসায়িক বুদ্ধি ভেবেছেন সেটি কি আদেও গ্রাহকদের প্রয়োজন ? অন্যের ব্যবসার ধারণা ঝেঁপে নিজের ব্যবসা দাঁড়ায় না ।
•> আপনি :- সব থেকে মূল্যবান হলেন আপনি । এই পুরো বিষয় আপনাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করবে । আপনার মানসিক অবস্থার প্রভাবিত হবে ।
৩. আপনার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নির্বাচন করা। :- সহ-প্রতিষ্ঠাতা নির্বাচন করা বিয়ে করবার সমান । কারণ রোজ আপনাদের একসাথে অনেকটা সময় দিতে হবে । একসাথে আলোচনা করতে হবে , মতবিরোধ ও হতে পারে । আপনার সহ-প্রতিষ্ঠাতা যে একমাত্র আপনার বন্ধু কিংবা কাছের কেও হতে হবে তার কোনো মানে নেই । সেই ব্যক্তি টির সাথে আপনার ধ্যান ধারণার মিল থাকতে হবে । তার মধ্যে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই থাকা উচিত - দক্ষতা , সময়জ্ঞান, মানসিকতা আর বিশ্বাস । সহ-প্রতিষ্ঠাতা এর সাথে কি আপনার মতের মিল হচ্ছে ? কিংবা সে কি দীর্ঘ সময় ধরে আপনার সাথে কাজ করতে সক্ষম ? সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি কি তাকে বিশ্বাস করতে পারেন ? একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা থাকার অর্থ হলো নিজের কিছু ভাগ তাকে দেওয়া ।
৪. প্রথম বছরের জন্য পাঁচটি অগ্রাধিকার। :-
•> প্রথমত - সময় , যা নষ্ট করা একদমই উচিত না । এর থেকে মূল্যবান কিছু নেই ।
•> দ্বিতীয়ত - আপনি , নিজে যদি শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ হন তবেই একটি ব্যবসা চালাতে পারবেন ।
•> তৃতীয়ত - মূলধন , যেকোনো ব্যবসা শুরুর পুঞ্জি অবশ্যই দরকার ।
•> চতুর্থত - পন্য , যার ওপর আপনার সম্পূর্ণ ব্যবসা দাঁড়িয়ে আছে ।
•> পঞ্চমত - দল , যাদের ছাড়া আপনার ব্যবসা অচল ।
এগুলি ছাড়াও বাড়তি কিছু বিষয় মেনে চলা দরকার । যেমন -
> প্রথম দিন থেকে শুরু করুন।
> একটি সময়সূচী অনুসরণ করুন।
> আপনার পরের দিন আগের রাতে পরিকল্পনা করুন।
> দৃঢ় সময়সীমা সেট করুন।
> আপনার কোম্পানি থেকে খারাপ আপেল নিক্ষেপ করতে দ্বিধা করবেন না।
> বাড়িতে কাজ এড়িয়ে চলুন।
> আপনার সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বছরের পরিকল্পনা ধার্য করুন।
আমি আশা করি এই সারাংশটি আপনার জন্য উপযোগী হবে এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন যদি আপনি মনে করেন এটি তাদেরও সাহায্য করবে।
4:00 AM, September 01, 2022