::পর্ব -১::

সাফল্য মনের মধ্যে শুরু হয়।

সাফল্য মনের একটি অবস্থা। আপনি যদি সফলতা চান তবে নিজেকে সফল ভাবতে শুরু করুন।

- ডাঃ. জয়েস ব্রাদার

:অধ্যায়-১:

আপনার মনোভাব বিশ্বের আপনার জানালা।

আপনি নিজেকে পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল রাখুন;

যে জানালা দিয়ে আপনাকে বিশ্ব দেখতে হবে।

- জর্জ বার্নার্ড শ

দুপুর ১টা বাজে আর সারার খিদে পেয়েছে। তিনি তার ডেস্কে কয়েক উত্পাদনশীল ঘন্টা রেখেছিলেন এবং কাছাকাছি একটি কফি শপে খেতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কয়েক মিনিট পরে, স্যাম কফি শপে চলে গেল। তিনিও তার মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে ছিলেন। স্যাম সারার থেকে কয়েক হাত দূরে একটি টেবিলে বসল।

একই ওয়েট্রেস সেদিন বিকেলে সারা এবং স্যামকে পরিবেশন করেছিলেন। ওয়েট্রেস অর্ডার নেওয়ার আগে প্রতিটি গ্রাহক প্রায় একই পরিমাণ সময় অপেক্ষা করেছিলেন। তাদের প্রত্যেকেই একই সময়ে তাদের খাবার গ্রহণ করেছিলেন । তাদের প্রত্যেককে ভালভাবে প্রস্তুত, স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল।

সারা হাসতে হাসতে কফি শপে চলে গিয়েছিল, তার পদক্ষেপে একটি বসন্ত এবং বিশ্বের প্রতি খুব ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এটা সবার দেখার জন্য সহজ ছিল। তার শারীরিক ভাষা এবং তার ভঙ্গি তার আশাবাদকে প্রতিফলিত করেছিল। সারা আনন্দদায়ক মধ্যাহ্নভোজ সেরেছে, পরিচারিকার সাথে কিছু আনন্দদায়ক কথোপকথন করেছে এবং আবার কাজ করতে ফিরে গেছে।

অন্যদিকে, স্যাম মুখে তিরস্কার নিয়ে কফিশপে ঢুকেছিল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে সারা সকাল টক আচার চুষছে। তিনি আঁতকে ও টেনশনে ছিলেন। তার শরীরের ভাষা চিৎকার করে বলেছিল "আমার থেকে দূরে থেকো!" ওয়েট্রেস অবিলম্বে তার অর্ডার না নেওয়ায় তিনি বিরক্ত হন। তার খাবার আসতে কতক্ষণ লেগেছিল তা নিয়ে তিনি বিরক্ত ছিলেন। তিনি খাবারের বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন এবং এখনই তার চেক না পেয়ে ক্ষিপ্ত হন।

কেন সারা এবং স্যামের কফি শপে এমন ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছিল? মনে রাখবেন যে প্রত্যেকের সাথে একইভাবে আচরণ করা হয়েছিল। এটি এখানে নেমে আসে: সারা বিশ্বকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দেখে। স্যাম বিশ্বকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে।

মনোভাব একটি সংজ্ঞা-

আপনার মনোভাবকে মানসিক ফিল্টার হিসাবে ভাবুন যার মাধ্যমে আপনি বিশ্বকে অনুভব করেন। কিছু লোক আশাবাদের ফিল্টার (গ্লাসটি অর্ধেক পূর্ণ হওয়া) দিয়ে পৃথিবীকে দেখে আবার কেউ কেউ হতাশাবাদের ফিল্টার (গ্লাসটি অর্ধেক খালি) দিয়ে জীবনকে দেখে। একটি ইতিবাচক মনোভাব এবং একটি নেতিবাচক মনোভাবের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করার জন্য আমি আপনাকে কিছু উদাহরণ দিই।

নেতিবাচক মনোভাবের ব্যক্তিটি মনে করে "আমি পারব না।"

ইতিবাচক মনোভাবের ব্যক্তিটি মনে করে "আমি পারি"

নেতিবাচক ব্যাক্তি সবসময় সমস্যার ব্যাপারে ভাবে।

ইতিবাচক মনোভাবের ব্যাক্তি সবসময় সমাধান খোঁজে।

নেতিবাচক ব্যাক্তি অন্যের খুঁত ধরাতে ব্যাস্ত থাকে কিন্তু ইতিবাচক ব্যাক্তি অন্যের মধ্যে ভালো গুনগুলো খুঁজে বের করে।

নেতিবাচক ব্যাক্তি যা নেই নিজের কাছে তা নিয়েই ভাবে আর ইতিবাচক ব্যাক্তি নিজের কাছে যা আছে তা নিয়েই চিন্তাভাবনা করে।

এখানেই উভয় ব্যাক্তির মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায়।

একটা শিশু যখন প্রথম চলতে শুরু করে ও পড়ে যায় তখন সে হাসে ও পুনরায় চেষ্টা করে এবং সে একসময় সার্থক হয় কারণ সে জানে যে সে কিছু নতুন করার চেষ্টা করছে এবং তার মানসিক দরজা পরিষ্কার হয়ে যায়। যখন আমরা আমাদের মানসিক দরজাটাকে পরিষ্কার করে নেই তখন এই পৃথিবীটাকে নতুনভাবে চিনতে পারি। নিজেদের মনকে পরিষ্কার রাখা এটা আমাদের নিজেদেরই কাজ অন্য কারোর নয়। এটা আমাদের উপর নির্ভর করছে যে আমরা আমাদের মনকে পরিষ্কার রেখে জগৎটাকেও পরিষ্কার দেখবো নাকি নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে জগৎকে বিচার করবো।

:অধ্যায় -২:

আপনি একজন মানব চুম্বক।

আপনি মনে করেন আপনি পারবেন - বা মনে করুন আপনি পারবেন না - আপনি ঠিক!

- হেনরি ফোর্ড

সাফল্যের চাবিকাঠি কি? কেন কিছু লোক সফল হয় যখন অন্যরা ব্যর্থ হয়?

আর্ল নাইটিংগেল, মহান সফল লেখক, সম্প্রচারক এবং স্পিকার, "দ্য স্ট্রেঞ্জেস্ট সিক্রেট" শিরোনামে তার বিখ্যাত রেকর্ড করা বার্তায় এই সমস্যাটিকে সম্বোধন করেছিলেন। এই কর্মসূচিতে তিনি মাত্র ছয়টি শব্দে সাফল্যের চাবিকাঠি চিহ্নিত করেন। অবশ্যই, তিনি এটি আরও বিশদে ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলেন - তবে তাঁর সাফল্যের রহস্যের ভিত্তি মাত্র ছয়টি শব্দ।

আপনি ছয়টি শব্দ জানতে চান, তাই না? আচ্ছা, আমি আপনাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলার আগে, আপনি জেনে অবাক হবেন যে একই ছয়টি শব্দও ব্যর্থতার চাবিকাঠি! আপনি কি সফলতার চাবিকাঠির জন্য প্রস্তুত? এটা এখানে: আমরা যা ভাবি তা হয়ে উঠি অন্ত্রের স্তরে, এটি কি আপনার কাছে অর্থপূর্ণ?

এই বিষয়ে তার গবেষণায় নাইটিংগেল এই সবই খুঁজে পেয়েছেন মহান লেখক, দার্শনিক এবং ধর্মীয় নেতাদের একমত যে আমাদের চিন্তাধারা আমাদের কর্ম নির্ধারণ করে। এখানে

অভিব্যক্তির সবকিছু এই বিষয়ে কিছু মহান চিন্তাবিদদের পর্যবেক্ষণ।

নেপোলিয়ন হিল বলেছিলেন: "মন যা ধারণা করতে পারে এবং বিশ্বাস করুন, মন অর্জন করতে পারে।"

মহান চিন্তা সঙ্গে আপনার মন লালন।

- বেঞ্জামিন ডিজরালি

বাইবেলে চিন্তাভাবনার অনেক উল্লেখ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

"আপনার বিশ্বাস অনুযায়ী

আপনার কাছে।"

"মানুষ যেমন তার হৃদয়ে চিন্তা করে, সেও তাই।"

"যদি আপনি বিশ্বাস করতে পারেন, সবকিছু সম্ভব।"

র‍্যালফ ওয়াল্ডো এমারসন এটিকে এভাবে বলেছেন: "একজন মানুষ যা নিয়ে সারাদিন চিন্তা করে।" রবার্ট কোলিয়ার এই অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছেন: "কিছুই নেই পৃথিবী আপনার থাকতে পারে না - একবার আপনি মানসিকভাবে স্বীকার করেছেন যে আপনি এটি পেতে পারেন।" এবং পরিশেষে, হেনরি ফোর্ডের সুপরিচিত কথা রয়েছে, যিনি বলেছিলেন: "আপনি মনে করেন আপনি পারবেন - বা ভাবুন আপনি পারবেন না - আপনি ঠিক বলেছেন !"

এই নীতিটি কীভাবে কাজ করে আসুন এই ধারণাটি আরও একটু পরীক্ষা করি যে আমরা

যা ভাবি তা যেন হয়ে উঠি । এখানে কিভাবে এটা কাজ করে, আপনি যদি ক্রমাগত একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য সম্পর্কে চিন্তা করেন, তাহলে আপনি সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেবেন। ধরা যাক যে কেউ (যাকে আমরা ফ্রেড বলব) মনে করে সে প্রতি বছর ৩০,০০০ ডলার উপার্জন করতে সক্ষম। মানব চুম্বকের মতো, ফ্রেড সেই কর্মসংস্থানের সুযোগগুলিকে আকর্ষণ করবে যা তাকে সেই দিকে নিয়ে যাবে। যতক্ষণ ফ্রেড সেই চিন্তাকে আঁকড়ে ধরে থাকবে, তিনি প্রতি বছর ৩০,০০০ ডলার উপার্জনের লক্ষ্যে পৌঁছাবেন। এখন, যদি ফ্রেড ভাবতে শুরু করে, "আরে, আমি আমার পরিবারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আরও অর্থ উপার্জন করতে চাই৷ তিনি যদি ভাবেন তার ক্ষমতা আছে ৫০,০০০ ডলার উপার্জন করার তাহলে তিনি তাতেও সফল হবেন কিন্তু যদি নিজের ওপর বিশ্বাস না থাকে তাহলে তিনি ব্যার্থ হবেন।

ইতিবাচক মনোভাব আনার কিছু ধাপ হলো -

১৫-৩০মিনিট প্রত্যেকদিন ভালো কিছু পড়ুন সকালে ও ঘুমোতে যাওয়ার আগে।

প্রতিদিন মোটিভেশনাল কিছু ভিডিও দেখুন এটিকে রোজ পুনরাবৃত্তি করতে হবে তবেই লাভ হবে আর আমরা এইটুকু সময় বের করে নিতেই পারি।

ইতিবাচক মানে এই নয় যে এর পর আর কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবেনা, এর মানে হলো যদি আমরা নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলি তাহলে যেকোনো বাধা পেরিয়ে যেতে পারবো। রাতারাতি চিন্তা করলেই পরের দিন সকালে অর্থবান হওয়া যায়না এর জন্য দরকার হয় যথেষ্ট ইচ্ছা ও পরিশ্রম।

:অধ্যায়-৩:

আপনার সাফল্যের পথ চিত্রীত করুন।

আপনি এটি করার আগে আপনার মনের মধ্যে একটি জিনিস পরিষ্কারভাবে দেখতে হবে।

-অ্যালেক্স মরিসন

আপনি যা হতে চান তা আগে নিজে দেখুন। একটি সাম্প্রতিক টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে, গায়ক সেলিন ডিওনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি তার ক্যারিয়ারের শুরুতে কখনও স্বপ্ন দেখেছিলেন যে কোনও দিন তিনি লক্ষ লক্ষ রেকর্ড বিক্রি করবেন এবং প্রতি সপ্তাহে কয়েক হাজার লোকের সামনে গান গাইবেন। গায়ক উত্তর দিয়েছিলেন যে এর কিছুই তাকে অবাক করেনি, কারণ তিনি পাঁচ বছর বয়স থেকেই পুরো জিনিসটি চিত্রিত করেছিলেন! তিনি বড়াই করেননি, এবং তার প্রতিটি সাফল্য অর্জনের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। অল্প বয়সেই তার ক্ষমতাকে ধারণ করার ক্ষমতা ছিল প্রাণবন্ত, শক্তিশালী ইমেজ... একজন টেনিস পেশাদার তার প্রতিপক্ষকে একটি নিখুঁত সার্ভ দিয়ে তাক করছে... অথবা একজন গলফার বল লম্বা এবং সোজা নিচে চালাচ্ছেন অভিব্যক্তির সবকিছু ফেয়ারওয়ে, অনেক শীর্ষ প্রতিযোগী মানসিকভাবে "বাস্তব" এটি অর্জন করার আগে একটি সফল ফলাফলের কল্পনা করে বিশ্ব ভিজ্যুয়ালাইজেশন, যাইহোক, শুধুমাত্র গায়ক, ক্রীড়াবিদ বা চলচ্চিত্র তারকাদের জন্য সংরক্ষিত কিছু নয়। আসলে, এটি এমন কিছু যা আপনি শৈশব থেকে পরিস্থিতি তৈরি করতে ব্যবহার করেছেন আপনার নিজের জীবন। আমি কি বলতে চাচ্ছি তা আমাকে স্পষ্ট করতে দিন। ভিজ্যুয়ালাইজেশনকে প্রায়ই "মনের চলচ্চিত্র", "অভ্যন্তরীণ ছবি" বা "চিত্র" হিসাবে বর্ণনা করা হয়। আমরা সকলেই আমাদের মনের মধ্যে আমাদের প্রাপ্য সম্পর্কের ধরণ, কর্মক্ষেত্রে আমরা কতটা সাফল্য অর্জন করব, আমাদের নেতৃত্বের ক্ষমতার পরিমাণ, আমরা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করব এবং সঞ্চয় করব, ইত্যাদি সম্পর্কে ছবি সংরক্ষণ করি।

১৯৯০ সালে জেম ক্যারি যিনি একজন বিখ্যাত কমিডিয়ান ছিলেন তিনি নিজের নামে $১০ মিলিয়ন ডলারের চেক লিখেছিলেন এবং ৫ বছরের জন্য পোস্ট ডেটেড করেছিলেন এবং তিনি এটা বিশ্বাস করতেন যে তিনি যদিও ভালো লোকেদের সঙ্গে কাজ করেন তাহলে তিনি এই অর্থ অবশ্যই উপার্জন করতে পারবেন এবং ১৯৯৫ সালে প্রত্যেক মুভির জন্য তিনি $২০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করতে শুরু করেন। এই একই জিনিস আমরা আমাদের জীবনে করলে একই ভাবে সাফল্য পেতে পারি।

পুরোনো ছবি যদি জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায় তাহলে ঠিক আছে কিন্তু যদি তা না হয় তাহলে নতুন চিত্র মনের মধ্যে এনে কাজ করতে হবে।

:অধ্যায়-৪:

একটি প্রতিশ্রুতি দিন এবং আপনি পর্বতগুলি সরাতে পারবেন!

এই শক্তি কি আমি বলতে পারি না; আমি শুধু জানি যে এটি বিদ্যমান এবং এটি তখনই উপলব্ধ হয় যখন একজন মানুষ সেই মানসিক অবস্থায় থাকে যেখানে সে সঠিকভাবে জানে যে সে কী চায় এবং যতক্ষণ না সে এটি খুঁজে পায় ততক্ষণ না ছাড়তে সম্পূর্ণরূপে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

- আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল

আমি প্রতিশ্রুতি এবং অধ্যবসায় মানে কি তা সঠিকভাবে জানতাম না। যাইহোক, মাইক হার্নাকির - "দ্য আলটিমেট সিক্রেট টু গেটিং অ্যাবসোলিউটলি এভরিথিং ইউ ওয়ান্ট" শিরোনামের একটি ছোট পেপারব্যাক বই না পড়া পর্যন্ত আমি এই ধারণাগুলির প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারিনি।

প্রতিশ্রুতি হল দ্য আলটিমেট সিক্রেটের সারাংশ। লেখকের মতে, আপনি যা চান তা পাওয়ার চাবিকাঠি হ'ল আপনার উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য "যা যা লাগে তা করার ইচ্ছা"। এখন, আপনার মন সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে, আমাকে যোগ করতে দিন যে "যাই হোক না কেন" বলতে আমি এমন সমস্ত কাজ বাদ দিই যা বেআইনি, অনৈতিক বা অন্য লোকেদের ক্ষতি করে। তাহলে, এই "ইচ্ছা" বলতে আমি ঠিক কী বুঝি? এটা একটা অভিব্যক্তির সবকিছু মানসিক মনোভাব যা বলে: আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে যদি ৫ টি পদক্ষেপ লাগে, আমি সেই ৫ টি পদক্ষেপ নেব, যদি আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে ৫৫টি ধাপ লাগে, আমি সেই ৫৫টি পদক্ষেপ নেব। যদি আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে ১৫৫টি পদক্ষেপ লাগে, আমি সেই ১৫৫ টি পদক্ষেপ নেব। অবশ্যই শুরুতে আপনি সাধারণত সঠিকভাবে জানেন না যে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে কতগুলি পদক্ষেপের প্রয়োজন হবে। এটা কোন ব্যাপার না, সফল হওয়ার জন্য, যা প্রয়োজন তা হল আপনি জড়িত পদক্ষেপের সংখ্যা নির্বিশেষে যাই হোক না কেন তা করার প্রতিশ্রুতি দিন।

অধ্যবসায় কোথায় ফিট করে? অবিরাম ক্রিয়া প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করে - অর্থাৎ, আপনি এটি অর্জনের জন্য অবিচল থাকার আগে আপনাকে অবশ্যই প্রথম কিছুতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। একবার আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে গেলে, তারপর আপনি নিরলস সংকল্প এবং কর্মের সাথে অনুসরণ করবেন, আপনি পছন্দসই ফলাফল অর্জন প্রতিশ্রুতির "ম্যাজিক"। আপনি যখন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন এবং যা যা লাগে তা করতে ইচ্ছুক হন, আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় লোক এবং পরিস্থিতিকে আকর্ষণ করতে শুরু করেন। উদাহরণস্বরূপ, একবার আপনি নিজেকে একজন সেরা-বিক্রয়কারী লেখক হওয়ার জন্য নিবেদিত করলে, আপনি হঠাৎ একজন সাহিত্যিক এজেন্টের সাথে "বাম্প" করতে পারেন বা এই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি টেলিভিশন প্রোগ্রাম "আবিষ্কার" করতে পারেন। এটা এমন নয় যে এই সম্পদগুলো আগে কখনো ছিল না। এটা ঠিক যে আপনার মন কখনই তাদের খোঁজার দিকে মনোনিবেশ করেনি। একবার আপনি কিছু করার জন্য নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার পরে, আপনি এটি অর্জন করতে কেমন হবে তার একটি মানসিক চিত্র তৈরি করেন। তারপর, আপনার মন অবিলম্বে কাজ করে, চুম্বকের মতো, ঘটনা এবং পরিস্থিতিকে আকর্ষণ করে যা আপনার ছবিকে বাস্তবে আনতে সাহায্য করবে। এটা উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে, এটি একটি রাতারাতি প্রক্রিয়া নয়; আপনাকে অবশ্যই সক্রিয় হতে হবে এবং সুযোগগুলিকে যেমন দেখাবে সেগুলিকে কাজে লাগাতে হবে৷

এখানে উইন্সটোন চারচিল এর মতে "নেভার এভার গিভ আপ " কথাটি খুবই কার্যকরী।

:অধ্যায়-৫:

আপনার সমস্যাকে সুযোগে পরিণত করুন।

প্রতিটি প্রতিকূলতা তার সাথে সমতুল্য বা অধিকতর উপকারের বীজ বহন করে।

- নেপোলিয়ন হিল

কখনো কখনো সমস্যাগুলো জীবনে এই কারণেই আসে যাতে আমরা নতুন সুযোগ খুঁজে পাই। সমস্যা ছাড়া জীবন চলতেই পারেনা।লেখক নিজেই নিজের জীবনের ব্যাপারে এই কথা বলেছেন যে তার জীবনও ঠিক একই গতিতে চলছিলো এবং তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক পাশ করে আইনজীবী হওয়ার পরো যদি নিজের কাজ নিয়ে খুশি থাকতেন তাহলে কখনই কেরিয়ার পরিবর্তন করার কথা ভাবতেন না।আপনি যদি বেশিরভাগ লোকের মতো হন তবে আপনার প্রথম আবেগ অভিযোগ করা। "কেন আমার সাথে এমন হতে হলো? আমি এখন কি করতে যাচ্ছি? আমার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে!"

প্রতিকূলতা কীভাবে আমাদের সাহায্য করে এই মুহুর্তে, আসুন আমরা প্রতিকূলতার মধ্যে সাতটি উপায় পরীক্ষা করি।

১) প্রতিকূলতা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। একবার আপনার একটি জীবন-হুমকিপূর্ণ অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলে, একটি সমতল টায়ার বা একটি ফুটো ছাদ আর এতটা বিরক্তিকর বলে মনে হয় না। আপনি দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষুদ্র বিরক্তির ঊর্ধ্বে উঠতে সক্ষম হন এবং সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারেন

আপনার জীবনের জিনিসে ।

২) প্রতিকূলতা আমাদের কৃতজ্ঞ হতে শেখায়। সমস্যা এবং অসুবিধার মধ্য দিয়ে, বিশেষ করে যেগুলি ক্ষতি বা বঞ্চনার সাথে জড়িত, আপনি আপনার জীবনের অনেক দিকের জন্য গভীর উপলব্ধি গড়ে তোলেন। একটি তুচ্ছ কিন্তু সত্য ঘটনা হল আপনি সাধারণত কিছু প্রশংসা করেন না যতক্ষণ না এটি আপনার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। যখন আপনার কাছে গরম জল নেই, আপনি হঠাৎ গরম জলকে মূল্য দেন। মনে রাখবেন, আমরা সবসময় আমাদের প্রভাবশালী চিন্তাধারার দিকে অগ্রসর হই। অতএব, আপনার যা কিছুর জন্য কৃতজ্ঞ হতে হবে তার উপর মনোনিবেশ করা আপনার জীবনে আরও ভাল জিনিস নিয়ে আসে।

৩) প্রতিকূলতা আমাদের লুকানো সম্ভাবনাকে বের করে আনে। একটি কঠিন অগ্নিপরীক্ষা থেকে বাঁচার পরে বা একটি বাধা অতিক্রম করার পরে, আপনি আবেগগতভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবেন। জীবন আপনাকে পরীক্ষা করেছে এবং আপনি কাজের সমান ছিলেন। তারপরে, যখন পরবর্তী প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে, আপনি এটি পরিচালনা করার জন্য আরও ভালভাবে সজ্জিত। সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জগুলি আমাদের মধ্যে সেরাটি বের করে আনে আমরা এমন ক্ষমতা আবিষ্কার করি যা আমরা কখনই জানতাম না যে আমাদের অধিকার আছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই প্রতিভাগুলি কখনই আবিষ্কার করতে পারতাম না যদি জীবন আমাদের কিছু আড়ষ্ট মাটিতে ভ্রমণ না করত। প্রতিকূলতা আপনাকে আপনার নিজের শক্তি এবং ক্ষমতা প্রকাশ করে এবং আপনাকে বিকাশের জন্য ইশারা দেয়।

৪) প্রতিকূলতা আমাদের পরিবর্তন করতে এবং পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে। তাদের জীবন যতই বিরক্তিকর বা বেদনাদায়ক হয়ে উঠুক না কেন অধিকাংশ মানুষই পুরনো, পরিচিত নিদর্শনগুলোকে আঁকড়ে ধরে থাকে। তাদের সমন্বয় করতে অনুপ্রাণিত করার জন্য প্রায়শই একটি সংকট বা একাধিক অসুবিধা লাগে। সমস্যাগুলি প্রায়শই আপনাকে জানানোর জীবনের উপায় যে আপনাকে অবশ্যই বন্ধ এবং সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

৫) প্রতিকূলতা আমাদের মূল্যবান পাঠ শেখায়। একটি ব্যর্থ ব্যবসায়িক উদ্যোগের উদাহরণ নিন: উদ্যোক্তা এমন কিছু শিখতে পারেন যা তাকে পরবর্তী উদ্যোগে দর্শনীয়ভাবে সফল হতে সক্ষম করে।

৬) প্রতিকূলতা একটি নতুন দরজা খুলে দেয়। একটি সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এবং আপনি আরও সন্তোষজনক সম্পর্কের দিকে যান। আপনি আপনার কাজ হারান এবং একটি ভাল কাজ খুঁজেন, এই উদাহরণগুলিতে, "সমস্যা" মোটেই সমস্যা নয়, বরং ছদ্মবেশে একটি সুযোগ। আপনার জীবনের একটি দরজা বন্ধ করা হয়েছে, তবে আরও ভাল একটি খোলার অপেক্ষায় রয়েছে।

৭) প্রতিকূলতা আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান তৈরি করে। যখন আপনি একটি বাধা অতিক্রম করার জন্য আপনার সমস্ত সাহস এবং সংকল্প একত্রিত করেন, তখন আপনি সক্ষম বোধ করেন এবং আত্মবিশ্বাস অর্জন করেন। আপনার স্ব-মূল্যের একটি বৃহত্তর অনুভূতি আছে এবং আপনি এই ইতিবাচক অনুভূতিগুলি পরবর্তী কার্যকলাপে বহন করেন।

::পর্ব -২::

আপনার শব্দ দেখুন।

প্রায়শই যে কোনও কিছু পুনরাবৃত্তি করুন এবং এটি আপনার হয়ে উঠতে শুরু করবে।

- টম হপকিন্স

:অধ্যায়-৬:

আপনার শব্দ একটি লেজ ব্লেজ।

আপনি ধারাবাহিকভাবে যে শব্দগুলি নির্বাচন করবেন তা আপনার ভাগ্যকে রূপ দেবে।

— অ্যান্টনি রবিন্স

আপনি যে শব্দগুলি প্রতিদিন ব্যবহার করেন সেগুলি সম্পর্কে আপনি গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করার সময় শেষবার কখন ছিল? আপনি কতটা সাবধানে তাদের নির্বাচন করবেন? এখন, আপনি হয়তো ভাবছেন। "জেফ, শব্দ নিয়ে এত ঝগড়া কেন? বড় ব্যাপার কি?" উত্তর সহজ। আপনার কথার অবিশ্বাস্য শক্তি আছে। তারা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত নির্মাণ করতে পারেন, সুযোগ নষ্ট করে বা স্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে আপনার কথা আপনার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে... এবং আপনার বিশ্বাসকে আপনার বাস্তবতা তৈরি করুন। এই প্রক্রিয়াটিকে ডমিনোগুলির একটি সারি হিসাবে ভাবুন যা এইরকম দেখাচ্ছে: চিন্তা, শব্দ,বিশ্বাস, কর্ম,ফলাফল।

এখানে কিভাবে এটা কাজ করে। টমের একটি চিন্তা আছে, যেমন "বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আমি খুব একটা ভালো নই।" এখন, চলুন অভিব্যক্তির সবকিছু মনে রাখবেন যে তার এই চিন্তা একবারই আসে না। তিনি নিয়মিতভাবে তার মনের মাধ্যমে এটি চালাচ্ছেন, সম্ভবত তার জীবনে শত শত বা হাজার বার!

তারপর, টম এই চিন্তাকে সমর্থন করে এমন শব্দ ব্যবহার করা শুরু করে। তিনি তার বন্ধু এবং সহকর্মীদের বলেন, "আমি কখনই বিক্রয়ে খুব ভালো করতে যাচ্ছি না" বা "আমি কেবল বিক্রয় কল করা বা সম্ভাবনার কাছে যাওয়া ঘৃণা করি।" এখানে আবার, টম এই বাক্যাংশগুলো বারবার পুনরাবৃত্তি করে... তার স্ব-কথোপকথনে এবং অন্যদের সাথে তার আলোচনায়।

এটি, ঘুরে, তার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে — আপনি দেখুন, আপনি আপনার জীবনে যা কিছু অর্জন করবেন তা আপনার বিশ্বাস থেকে প্রবাহিত হয়। সুতরাং, আমাদের বিক্রয় উদাহরণে, টম এই বিশ্বাস গড়ে তোলেন যে তিনি বিক্রয়ে সফল হতে যাচ্ছেন না এবং তিনি খুব বেশি অর্থ উপার্জন করবেন না। এটা তার অবচেতন মনে গেঁথে যায়। এবং এটা একটা ভ্রান্ত ও খারাপ ফলাফল দেয়।

আপনি আপনার লক্ষ্যের কথা কার কাছে বলতে চান সেটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করছে। কারণ নেতিবাচক মনোভাবের ব্যাক্তিদের কাছে আপনার লক্ষ্যের কোনো মূল্য নেই কিন্তু ইতিবাচক মনোভাবের লোকেদের কাছে এর মূল্য যথেষ্ট। আপনি একটি ব্যাবসা শুরু করতে চান, এর মূল্য তিনিই বুঝবেন যার এই ব্যাপারে ন্যূনতম অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু নেতিবাচক মনোভাবের ব্যাক্তি শতশত কারণ দেখাবে ব্যবসা না করার।

আমাদের এমন শব্দ ব্যবহার করতে হবে যা আমার লক্ষ্যে পৌঁছনোর রাস্তার দিকে নিয়ে যায়।

অ্যান্টনি রবিন্স তার বিখ্যাত বই "অ্যাওয়েকেন দ্যা জায়েন্ট " বইতে বলেছেন কীভাবে শব্দকে ব্যবহার করতে হয়। শব্দের মাধুর্য বৃদ্ধি ও একটি বাক্যকে সুন্দর শোনায় "আমাকে ধ্বংস করা হয়েছে" এর বদলে "আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে" বা "আমি ঘৃণা করি " এর পরিবর্তে "আমি পছন্দ করি না " বাক্যাংশ ব্যবহার করে।

আমরা আমাদের জীবনের ৪ টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ (সম্পর্ক, আর্থিক সংস্থান, পেশা ও স্বাস্থ্য ) সম্বন্ধে কিভাবে কথা বলি সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্ক :- এখানে বারবার এই শব্দটা ব্যবহার করা বন্ধ করুন যে লোক আমার সরলতার সুযোগ নেয়। তাহলে আপনার চারিপাশে ঠিক এরকম লোকজনই থাকবে।

আর্থিক সংস্থান :- বারবার এটা বলবেন না যে আপনার ওপর অনেক ঋণ আছে। বারবার নেই বললে কখনোই অর্থ এসে যায়না আর যারা এই অর্থ নেই বলে কান্নাকাটির পর্যায়ে যায় সত্যি তারা অর্থ উপার্জন করতে পারেনা।

পেশা :-এক্ষেত্রে কখনোই বলবেননা যে আমি কী করছি? কোথায় যাচ্ছি? কিছুই জানিনা। আপনার শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমেই আপনার ব্যাক্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়।

স্বাস্থ্য :-বারবার নিজের স্বাস্থ্য খারাপ বলে সত্যি কিন্তু অনেক বড়ো রোগ আপনি আপনার জীবনে ডেকে আনতে পারেন, তাই এই ধরণের কথা বলা বা শব্দ ব্যবহার বন্ধ করুন।

:অধ্যায়-৭ :

আপনি কেমন আছেন?

আপনার দিন আপনার মুখের কোণে ঘুরে যায়।

- অজানা

কেউ যখন জিজ্ঞেস করে কেমন আছো/আছেন ? আপনি কি বলেন ?আপনার উত্তর সাধারণত কয়েকটি শব্দের বেশি হয় না। এবং তবুও, সেই সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া আপনার এবং আপনার মনোভাব সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। আসলে, আপনার প্রতিক্রিয়া আক্ষরিক অর্থে আপনার মনোভাবকে রূপ দিতে পারে।

পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে আপনি কেমন আছেন? এর উত্তর একই পাওয়া যায়নি। তিনটি বিভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে এই ব্যাপারটিকে : নেতিবাচক, মাঝারি এবং ইতিবাচক। আসুন এই তিনটি বিভাগ এবং প্রতিটির অধীনে কিছু সাধারণ প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করি।

নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া-

নেতিবাচক উত্তর কেমন আছেন?

"আমি ক্লান্ত" "এটা আমার দিন নয়।" "আল্লাহকে ধন্যবাদ আজ শুক্রবার।" "জিজ্ঞেস করবেন না।"

যখন কেউ "জিজ্ঞাসা করবেন না" দিয়ে উত্তর দেয়, আমি জানি আমি সমস্যায় আছি। সেই ব্যক্তি অনেক অভিযোগ আনতে চলেছে। এবং এইরকম ভাবনা সম্পন্ন মানুষদের সঙ্গে বার্তালাপ না করাই শ্রেয়।

মাঝারিদের প্রতিক্রিয়া-

"ঠিকঠাক আছি ", " খারাপ না ", "চলে যাচ্ছে" ইত্যাদি।

ইতিবাচক ব্যাক্তিদের প্রতিক্রিয়া-

"খুব ভালো ", " অসাধারণ ", "চমৎকার " এই শব্দগুলি ব্যবহার করে এই সকল ব্যাক্তিরা নিজেদের সাথে সাথে অন্যদেরও উৎসাহিত করেন।

অনেক সময় আমরা আমাদের কাছের মানুষ অর্থাৎ পরিবার-পরিজন, বন্ধু এদের মিথ্যে বলতে পারিনা, কিন্তু যদি নিজেদের দুর্বল বলি তাহলে আমরা আরও দুর্বল হয়ে পড়বো। এবং নিজেদেরকে তা না মনে করলে সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করা সহজ হবে। সুতরাং এটা সম্পূর্ণ আমাদের মনোভাবের ওপর নির্ভর করে।

:অধ্যায় -৮:

অভিযোগ বন্ধ কর!

বাচ্চাদের মতো সমস্যাগুলোও বড় হয়ে ওঠে।

- লেডি হল্যান্ড

শিশুদের মতো সর্বদা অভিযোগ করা বন্ধ করুন।আপনি কেমন অনুভব করেন যখন কেউ তার সমস্ত সমস্যা এবং অভিযোগ আপনাকে বলে ? খুব উত্থানশীল এবং উত্সাহী নয়, তাই না? সত্য হল, কেউ অভিযোগকারীর কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে না। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল: আপনি কত ঘন ঘন অভিযোগ করেন? আপনি যদি খুব বেশি অভিযোগ করেন কিনা তা ভাবছেন, তাহলে কেবল আপনার বন্ধু, আত্মীয় বা সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করুন। তারা আপনাকে জানাবে।

অভিযোগ করা আলাদা কিন্তু যদি আপনি অসুস্থ হন তাহলে কারোর কাছে অভিযোগের থেকে ডাক্তারের কাছে যাওয়া শ্রেয়। অনেক মানুষ অনেক রকমের অভিযোগ করে থাকেন যেমন - অনেকেই আবহাওয়া নিয়ে অভিযোগ করেন, কিন্তু এতে কী কোনো লাভ আছে? যেটা আমাদের হাতে নেই সেটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে কোনো লাভ হবেনা।

অভিযোগ আমাদের জীবনে ৩ টি উপায়ে কাজ করে -

১) কেউ নেতিবাচক কথা শুনতে চায়না।

২) অভিযোগ আপনার ব্যথাকে শক্তিশালী করে।

৩) অভিযোগ নিজে থেকে কিছু অর্জন করে না।

::পর্ব-৩::

স্বর্গ তাদের সাহায্য করে যারা কাজ করে।

নিজে থেকে কিছুই হয় না। একবার আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনাকে এটিকে আপনার পথে আসতে হবে।

— বেন স্টেইন

:অধ্যায়-৯:

ইতিবাচক মানুষের সাথে মেলামেশা করুন।

একটি আয়না একজন মানুষের মুখকে প্রতিফলিত করে, কিন্তু সে আসলে কেমন তা তার পছন্দের বন্ধুদের দ্বারা দেখানো হয়।

— জীবন্ত বাইবেল, হিতোপদেশ ২৭

কোনোকিছুই নিজের থেকে হয়না। যখন আমরা বুঝতে পারি কিছু পাওয়ার জন্য কিছু কাজ করতে হয় তখনই আমরা কিছু পেয়ে থাকি । একজন মানুষকে আয়নায় দেখে অর্থাৎ উপর থেকে দেখে কখনোই সঠিক চেনা যায়না কিন্তু তার বন্ধুদের বা কাদের সাথে সে মেলামেশা করে তা লক্ষ্য করলে তার সম্বন্ধে জানা যায়।

হাই স্কুলে, মাইক তার আশেপাশের একদল ছেলের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছেন । মাইকের মতে, এই ছেলেরা সামনের বারান্দায় বসে গাড়ি দেখতে পছন্দ করত। তাদের কোন লক্ষ্য ছিল না এবং কোন স্বপ্নও ছিল না। তারা সবসময় নেতিবাচক ছিল। মাইক যখনই তাদের নতুন কিছু করার পরামর্শ দিয়েছে, তখনই

অন্যরা তাকে নিরুৎসাহিত করেছে।

মাইক যখন কলেজে গিয়েছিলেন, তখনও তিনি নেতিবাচক মানুষদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন । তবে তিনি এমন লোকদের সাথেও দেখা করেছিলেন যারা পজিটিভ/ সক্রিয় ছিলেন .. যারা শিখতে চেয়েছিল ও কোনো জিনিস অর্জন করতে চেয়েছিল। মাইক ইতিবাচক লোকদের সাথে তার সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মাইক নিজের সম্পর্কে অনেক ভাল বোধ করতে শুরু করেছিলেন ও তিনি একটি দুর্দান্ত মনোভাব গড়ে তুলেছিলেন।

বিষাক্ত মানুষ এবং পুষ্টিকর মানুষও রয়েছে

আজকের সাহিত্যে, আমরা বিষাক্ত মানুষ বেশি দেখতে পাই পুষ্টিকর মানুষের থেকে । বিষাক্ত মানুষ হয় যারা সবসময় নেতিবাচক চিন্তা করে।

বিষাক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাদের মৌখিক বিষদ্বারা আমাদের জীবনে দুঃখ ডেকে আনে। বিষাক্ত লোকদের কথা শোনার পর, আপনি নিঃস্ব এবং নিষ্কাশন বোধ করেন। অনুপ্রেরণামূলক বক্তা লেস ব্রাউন এই ব্যক্তিদের "ড্রিম কিলার" হিসাবে উল্লেখ করেছেন। মনোবিজ্ঞানী জ্যাক ক্যানফিল্ড তাদের "এনার্জি ভ্যাম্পায়ার" হিসাবে বর্ণনা করেছেন কারণ তারা আপনার থেকে সমস্ত ইতিবাচক শক্তি চুষে নেয়। বিপরীতে পুষ্টিকর মানুষ- ইতিবাচক এবং সহায়ক, তারা আপনার আত্মাকে উত্তোলন করে এবং তাদের কাছাকাছি গেলে মনে একটি আনন্দ অনুভূত হয়। লেখক সর্বদাই এই ইতিবাচক মনোভাবের ব্যাক্তিদের সংস্পর্শে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।

:অধ্যায়-১০:

আপনার ভয় মোকাবেলা এবং বৃদ্ধি।

আপনি যে কাজটি ভয় পান তা করুন এবং ভয়ের মৃত্যু নিশ্চিত।

-রালফ ওয়াল্ডো এমারসন

আমাদের জীবন সবসময় সহজভাবে চলেনা, আমাদেরকে এমনও অনেক কাজ করতে হয় যা থেকে আমরা অস্বস্তি অনুভব করি। ভয় পেয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের জীবনের স্বাভাবিক কিছু ভয় যেমন-

১)পাবলিক বক্তৃতা এবং উপস্থাপনা প্রদান।

২) না শব্দ শোনা এবং প্রত্যাখ্যানের অনুভূতি ।

৩)চাকরি পরিবর্তন করা বা নতুন ব্যবসা শুরু করা।

৪)পরিচালকদের নেতিবাচক খবর বলা।

৫)ব্যর্থতার ভয়।

৬)ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লোকদের সঙ্গে কথা বলা।

ভয় থেকে আমরা বেঁচে কোথাও যেতে পারবোনা।

মিগউয়েল এর কথায় - যার সম্পদ চলে যায় সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার বন্ধু চলে যায় সে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু যার সাহস চলে যায় তার আর কিছুই থাকেনা। ভয় থাকাটা খারাপ নয় কিন্তু সাহসী লোক এই ভয়কে তার লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথে কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেয়না। ভয়কে জয় করে নিজের কর্ম করে যাওয়া ও জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের কাজ।

:অধ্যায় -১১:

সেখানে যান এবং ব্যর্থ হন।

ব্যর্থতা কেবলমাত্র আরও বুদ্ধিমত্তার সাথে আবার শুরু করার সুযোগ।

- হেনরি ফোর্ড

হেরে যাওয়া হলো আর একটা সুযোগ আমাদের জীবনে নতুন কিছু একটা করার। সফল ব্যাক্তি হেরে যাওয়া থেকে অনেক কিছুই শিখে নেয়। তারা অবশ্য হেরে যাওয়াটাকে উপভোগ করেনা কিন্তু এর থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে যায়। জ্যাক কনফিল্ড ও মার্ক ভিক্টর হানসেন ৩৩ বার প্রত্যাখানের পর একজন প্রকাশককে পেয়েছিলেন যিনি তাদের বইকে প্রকাশ করেছিলেন "চিকেন সুপ্ ফর দা সোল"। বারবার প্রত্যাখানের পরও তারা কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়নি, তারা আগে এগিয়ে যেতে শিখেছিলো। এবং পরবর্তীকালে তারা ১০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মালিক হয়েছিল।

থমাস ওয়াটসন সফলতার একটা ফর্মুলা বলেছিলেন, সেটা হলো নিজের ব্যার্থতার মাত্রাকে দ্বিগুন করে দেওয়া।

: অধ্যায়-১২:

নেটওয়ার্কিং যে ফলাফল পায়।

আপনি জীবনে যা চান তা আপনি পেতে পারেন যদি আপনি অন্য লোকেদের যা চান তা পেতে যথেষ্ট সাহায্য করেন।

— জিগ জিগলার

আমাদের সম্পর্কগুলো যতই মজবুত হবে ততই আমাদের জীবনে অনেক কিছু করার সুযোগ আসবে। সফল হওয়ার জন্য আমরা নিজেরাই সবকিছু করতে পারিনা।

ব্যবসায় নেটওয়ার্কিং এর সুবিধা আছে-

১)নতুন ক্লায়েন্ট তৈরি করে।

২)কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে ।

৩) গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য নতুন লোক খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

৪)মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।

৫)সমস্যা সমাধান করে।

ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে, নেটওয়ার্কিং কি করে-

* আপনার সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করুন।

* আপনাকে পরিচিত হতে সাহায্য করুন।

* আধ্যাত্মিক বৃদ্ধিতে অবদান রাখুন।

এখানে মনোভাব অনেক গুরুত্বপূর্ণ, লোকজনদের সঙ্গে সময় মতো কথা বলুন। প্রতিদিন নতুন লোকজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ খুঁজুন। প্রত্যেকটা মানুষকে গুরুত্ব দিন। যদি কারোর সঙ্গে কখনও দেখা হয় তাহলে পরে একটা ছোট বার্তা দিন। নেটওয়ার্ক তৈরী হতে অনেকটা সময় লাগে কিন্তু ক্রমাগত / ক্রমান্বয়ে শেখা ও নিজেকে উন্নত করা আপনাকে একটা মহান ফলাফল দেবে।

যখন আমরা নিজেদের মনোভাবকে পরিবর্তন করে ইতিবাচক মনোভাবের দিকে যাই তখন আমরা অনেক এনার্জি অনুভব করি। নিজের জীবনকে নিজের আয়ত্তে রাখুন, আপনি নিজের স্বপ্নের থেকেও বেশি পাওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এই মনোভাবই আপনার সাফল্যের চাবিকাঠি। মনোভাব পরিবর্তন আপনার জীবনে অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারে। বাস্তবতা, অতীত, শিক্ষা, অর্থ, পরিস্থিতি, ব্যার্থতা ও সফলতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের অতীতকে পরিবর্তন করতে পারিনা। লোকজন তাদের মতো করে আমাদের সঙ্গে ব্যবহার করবে, আমরা এটাকেও পরিবর্তন করতে পারিনা। শুধুমাত্র একটা জিনিসের ওপরেই কাজ করতে পারি, সেটা হলো আমাদের মনোভাব। জীবন হলো সেটা যা আমাদের সাথে ১০% হয় আর তাতে আমাদের প্রতিক্রিয়া হয় ৯০%। নিজের স্বপ্নকে পূরণ করার সাহস রাখুন। আর এটা কখনোই ভুলবেননা যে মনোভাবই হলো সবকিছু।

::উপসংহার::

আপনার মনোভাব পরিবর্তন করুন

এবং আপনি আপনার জীবন পরিবর্তন করুন।

আপনার পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে, প্রথমে ভিন্নভাবে চিন্তা করা শুরু করুন।

-নর্মান ভিনসেন্ট পিল

আপনি যখন আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন, তখন মহাবিশ্বে স্ফুলিঙ্গ উড়ে যায়। আপনি উজ্জীবিত, আপনি নতুন সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেন। আপনি কর্মে সরে যান, আপনি অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেন। তাই বলি আপনি যখন আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন, আপনি আপনার জীবন পরিবর্তন করেন!

এই বইটির সারসংক্ষেপ বা মূল বিষয়বস্তু পড়ার জন্য আপনাকে সাধুবাদ যানাই

🙏🙏🙏