4:00 AM, February 06, 2023
AS A MAN THINKETH
JAMES ALLEN
জেমস অ্যালেন একজন ব্রিটিশ ফিলোজোফার রাইটার ছিলেন। জিনি নিজের অনুপ্রেরণীয় বই ও কবিতার জন্য বিখ্যাত।১৯০৩ সালে এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ও এই বইতে তিনি খেয়াল/ ভাবনার শক্তির কথা বলেছেন ও তাকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখিয়েছেন।
:: ভাবনা ও চরিত্র ::
একজন মানুষ মনে মনে যা ভাবেন তাই ঘটে। যেমন একটা গাছ বীজ ছাড়া হতে পারেনা তেমনই একজন মানুষের প্রত্যেকটা কাজই তার ভাবনা বা মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। কাজটা হলো তার ভাবনার ফুল আর সুখ দুঃখ হলো তার ফল। আমাদের মনই আমাদের গড়ে তোলে। আমরা যেমন ভাবি ঠিক তেমনই হই। যদি কেউ খারাপ ভাবনা চিন্তা করে তাহলে সেই মানসিকতার লোকজনই তার পেছনে আসে এবং যদি ভালো চিন্তাভাবনা করে তাহলে আনন্দ ছায়ার মতো পেছনে পেছনে চলে। মানুষ নিয়মের দ্বারা চালিত হয় ধোকা বা ছল চাতুরীর দ্বারা নয় এবং তার প্রভাব তার মনের মধ্যেও পড়ে। মানুষ নিজেই গড়ে ওঠে আবার নিজেই ভেঙে যায়। নিজেই এমন হাতিয়ার ব্যবহার করে যার দ্বারা ভেঙে চূর্ণ হয়ে যায় আবার সেই হাতিয়ারেরই ভালো ও সঠিক ব্যবহারের দ্বারা সুখের প্রাসাদ গড়ে তোলে। নিজের মনের গভীরে গিয়ে তাকে ভাবতে হবে যে সে কী চায়। ভালো ভাবনার দ্বারা নিজেকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া ও খারাপ খেয়ালের দ্বারা শয়তানে পরিণত হওয়া এটা মানুষই তৈরী করে। শক্তিশালী, ভালোবাসা, ভাবনাচিন্তার মালিক মানুষ নিজেই। তার কাছে প্রত্যেক অবস্থার চাবি থাকে এর দ্বারা সে যা চায় তাই হতে পারে। নিজের ভাবনা মানুষ আসলে নিজেই গড়ে তোলে।
:: পরিস্থিতির ওপর চিন্তার প্রভাব ::
একটা মানুষের মস্তিস্ক একটা বাগানের মতো হয় যাকে ভালোভাবে খোঁড়া যায় বা তাকে আরও নোংরা করা যায়। যদি তাতে সঠিক বীজ না দেওয়া হয় তাহলে অনেক অপ্রয়োজনীয় বীজের জন্ম নেবে। একটা মালি যেমন নিজের বাগানকে সঠিক ফুল ও ফল দিয়ে ভরিয়ে রাখে তেমনই মানুষও পারে নিজের মস্তিস্ক থেকে খারাপ ভাবনাগুলোকে বের করে ভালো ভাবনাগুলোকে স্থান দিতে। এভাবে আজ নয় কাল মানুষ বুঝেই যাবে যে সে তার জীবনের মালিক। একজন মানুষ নিজে তার নিজের পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করতে পারে এবং যখন সে বুঝতে পারে যে বাহ্যিক দিক থেকে নয় আভ্যন্তরীন দিক থেকেই সে পারে নিজেকে বদলাতে এবং সে নিজেই নিজের মালিক তখন সে সবকিছু প্রতিকুলতাকে কাটিয়ে উঠতে পারে। সেই মানুষই লম্বা সময় ধরে "সেল্ফ- কন্ট্রোল " এর অভ্যাস করেছে যে জানে যে পরিস্থিতি ভাবনা থেকেই তৈরী হয় এবং পরীক্ষা করেও দেখা গেছে যে তাদের পরিস্থিতি মানসিক ভাবনার দ্বারা কেমনভাবে পাল্টেছে। ভালো খেয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায় এবং খারাপ খেয়ালে খারাপ ফল পাওয়া যায় আর মানুষ এই ফসলের দ্বারা খুশি আর দুঃখ উভয়ই শিখে। কোনো মানুষ পরিস্থিতির অত্যাচারে নয়, নিজের মানসিকতার কারণে নিজেকে কারাগারে বন্দি করে। কোনো মানুষ হঠাৎ করে আসা কোনো চাপের কারণে খারাপ কাজ করেনা বরঞ্চ ধীরে ধীরে শান্ত মস্তিষ্কের দ্বারা সে খারাপ কাজের দিকে এগিয়ে যায়। পরিস্থিতি মানুষকে তৈরী করে না, সে নিজের মনের সঙ্গে মেলায়। যে মানুষ পরিস্থিতিকে পেছনে ফেলতে জানে সেই জীবনে এগিয়ে যায়। যার ইচ্ছে থাকে যে প্রচুর অর্থের মালিক হবে তাকে অনেক ত্যাগ করতে হয়। একটা গরিব মানুষ নিজে থেকে আরও গরিবত্বকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে আবার কোনো লোভ লালসায় পরিপূর্ণ ধনীলোক নিজের কঠিন থেকে কঠিনতর অসুখ অবস্থার মধ্যেও নিজের লালসাকে ত্যাগ করেনা তার জীবনেও এই অসুখ বিপর্যয় ডেকে আনে। অনেক সময় দেখা যায় একজন অসৎ ব্যাক্তি একজন সৎ ব্যাক্তির থেকেও উপরে উঠে যাচ্ছে এবং সৎ ব্যাক্তিকে এমন অনেক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় যার দ্বারা অনেকেই ভাবেন দুনিয়াতে সৎ মানুষের কদর কম। কিন্ত এটা সঠিক নয় কারণ সেই সৎ ব্যাক্তিটার মধ্যে এমন কিছু খারাপ গুন আছে যা আমাদের চোখে পড়েনা এবং অসৎ ব্যাক্তির ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা। তবে পরিস্থিতি কখনোই এক থাকেনা। যে ভালো কাজ করে সে ভালো ফলই পায় আর যে খারাপ করে সে খারাপ ফল পায়। পরিস্থিতিকে দায়ী না করে নিজের ভাবনাকে বদলান।
:: স্বাস্থ্য ও শরীরের ওপর চিন্তার প্রভাব ::
শরীর হলো মনের চাকর। খারাপ খেয়ালের দ্বারা মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আবার ভালো খেয়ালের দ্বারা নিজেকে অনেক খুশি ও স্বাস্থ্যবান মনে করে। ভয় এর ভাবনা মানুষকে একটা গুলির মতোই দ্রুত শেষ করে দেয়। অশুভ খেয়াল স্নায়ুতন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়। মানুষ যতক্ষণ খারাপ ভাবনা চিন্তা করবে তত তাদের রক্ত অশুদ্ধ হবে। একথা স্পষ্ট যে মন থেকেই স্পষ্ট জীবনের শুরু হয় আর অস্পষ্ট মন ও ভাবনা থেকে অস্পষ্টভাবে জীবন চলতে থাকে। যে নিজের ভাবনার পরিবর্তন করবেনা তার সময়ের পরিবর্তন করে কোনো লাভ হবেনা ভাবনা শুভ করলে অশুভ খাবারের থেকেও দূরে থাকা যায়। নিজের ভালো চাইলে বা শরীরের ভালো চাইলে আগে নিজের মনকে ঠিক রাখতে হবে। শরীরকে ভালো রাখার সবথেকে বড়ো ওষুধ হলো মন থেকে হাসি খুশি থাকা।
:: চিন্তা ও উদ্দেশ্য ::
যদি ভাবনা আপনার লক্ষ্যের সাথে জুড়ে না থাকে অর্থাৎ আলাদা হয় তাহলে কিছুই আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। যার জীবণে কোনো লক্ষ্য থাকেনা সে খুব তাড়াতাড়ি চিন্তা, ভয় এর মধ্যে পড়ে যায় যা অনেক ক্ষতি করে ও জীবনে দুঃখ, অলসতা ডেকে আনে। মানুষকে নিজের জীবনের একটা লক্ষ্য রাখতেই হবে এবং তাকেই মনের মধ্যে একদম কেন্দ্র বিন্দু করে নিতে হবে। নিজের মনকে লোভ-লালসা মুক্ত রাখতে হবে এবং একদম লক্ষ্যে মনস্থির করতে হবে। যদি কেউ বারবার হেরে যায় তবুও তার চরিত্রের শক্তিই তার সফলতার একমাত্র কারণ হবে এবং এটা ভবিষ্যতে জেতার জন্য একটা স্টার্টিং পয়েন্ট হয়ে যায়। যেমনভাবে একজন কম শক্তিসম্পন্ন মানুষ বারবার ব্যায়াম ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়ে ওঠে তেমনই কম শক্তি ভাবাপন্ন মানুষও নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। যেসব মানুষ পরাজয়কে সফলতা হিসেবে মানে তাদের দলে যোগ দেওয়া যায় যদি নিজের মানসিকতার পরিবর্তন করা যায় তো। সামনে, পেছনে বা পাশে না দেখে ভয়কে চিরতরে সরিয়ে দিতে হবে এবং নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং তা মানসিক ভাবে নিশ্চিত করে নিতে হবে। ভয় আর সন্দেহ আপনার পরিশ্রমকে খারাপ করে দেয়, এই ভয় আর সন্দেহ কখনোই কিছুই আয়ত্ত করতে পারেনি আর পারবেওনা। এটাই জ্ঞানের সবথেকে বড়ো শত্রু, যে সন্দেহকে কাটাতে পারবে সে ভয়কেও কাটিয়ে উঠতে পারবে।
:: কৃতিত্বের চিন্তাধারা ::
যা মানুষ পায় তার জীবনে ও যা না পায় তা তার নিজের মানসিক চিন্তার ফল। একটা মানুষের শক্তি, শক্তিহীনতা, দুর্বলতা এগুলো তার নিজস্ব অন্য কারোর নয় এবং এগুলো নিজেই বদলাতে পারে নাকি অন্য কেউ। তার সুখ দুঃখ সব নিজের থেকেই বেরোয়, যে যেমন ভাবে সে তেমনই এবং যেমন ভাববে ঠিক তেমনই হবে একজন শক্তিশালী মানুষ ততক্ষন পর্যন্ত একজন কম শক্তিশালী মানুষের সাহায্য করতে পারবেনা যতক্ষণ না সে চায় এবং কম শক্তিশালী মানুষটিকেও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে ও সেইরকম শক্তিশালী হওয়া দরকার যেটা সে অন্যের মধ্যে দেখে। যে লোভ লালসা থেকে বেরিয়ে নিজের দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠেছে সেই উপরে উঠতে পেরেছে। যেমন ভাবনা ভাববেন ও যতটুকু ভাবনা ভাববেন সেখানেই তা সীমিত থাকবে। এই জগৎ লোভ লালসায় পূর্ণ মানুষের সঙ্গ দেয়না বরংচ তার বিপরীতমুখী মানুষদের সঙ্গ দেয়। অনেক মানুষ সফল হওয়ার পরও আবার হেরে যায় বা ব্যার্থতার দিকে এগিয়ে যায়। যেটা অল্প দরকার সেটা অল্প আর বড়ো কিছু পেতে গেলে তার বলিদানও বড়ো দিতে হবে।
::দৃষ্টিভঙ্গি এবং আদর্শ ::
যে স্বপ্ন দেখে সেই জগতের রক্ষক। মানুষ স্বপ্ন দেখা ভুলতে পারেনা ও তার আদর্শকে মরতে ও অস্পষ্ট হতে দেবেনা। সে সেই সত্যিটা জানে যা সে একদিন দেখবে এবং জানবে। সংগীতকার, চিত্রকার, কবি, ঋষি এইসব জগতের পরের জগৎ স্বর্গের নির্মাতা। জগৎ সুন্দর কারণ এইসব মানুষ জগতে আছেন। এরা ছাড়া মানুষের পরিশ্রম টাই বেকার হয়ে যেত, যে জগতের এই সৌন্দর্যকে মনের মধ্যে ধরে রাখে ও উপভোগ করে।
কলম্বাস একদিন একটা আলাদা জগৎই লালিত করেছিলেন এবং তাকে খুঁজেও পেয়েছিলেন ।
বুদ্ধ একদিন আভ্যন্তরীন সৌন্দর্য ও শান্তির দৃষ্টি রেখেছিলেন এবং তিনি সেটা প্রাপ্তও করছিলেন।
নিজের দেখার নজর ও আদর্শকে বদলান, সেই সৌন্দর্য আপনার মনের মধ্যে আছে। যে গান আপনার মনে ঘুরতে থাকে তাকে অনুভব করুন। যে ভাবতে চায়না
কোনো কিছু থেকে অজানার ভাব করে সেই ভাগ্যের ব্যাপারে কথা বলে। একটা মানুষকে বড়োলোক হতে দেখে ভাবতে থাকে যে সে কতো বড়ো। কাউকে বৌদ্ধিক হতে দেখে ভাবে সে কতটা কৃতজ্ঞ। এইসব মানুষ একটা সফলতার পেছনের কষ্টকে, পরিশ্রমকে দেখেনা, শুধুমাত্র সফলতাকেই দেখে ও নিজের মনের মতো করে ভাবনা চিন্তা করে। মনের কষ্ট ও অন্ধকারকে দেখেনা খুশি ও আলোকেই দেখে ও তাদের ভাগ্য বলে। যেমন নজর ও ভাবনা মনের মধ্যে রাখবেন তার দ্বারাই আপনার জীবন গঠিত হবে এবং আপনিও সেইরকম হবেন।
::নির্মলতা ::
মনের শান্তি জ্ঞানের সুন্দর রত্নের মধ্যে এক। এটা আত্মসংযম এর জন্য লম্বা এবং শান্ত পরিশ্রমের ফল এর থাকা স্পষ্ট অনুভবকে দেখায়। একজন শান্ত ব্যাক্তি যানেন নিজেকে কীভাবে সামলাতে হয় ও অপরের অনুরূপ কীভাবে করতে হয়। এক ব্যাক্তি যত শান্ত হবে তার সফলতা ততই বড়ো হবে। কেউ যদি নিজের আত্মসংযমকে বাড়ায় তাহলে সে সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে। মজবুত ও শান্ত মস্তিষ্কের মানুষকে সকলেই ভালোবাসে। এইসব মানুষ একটা মরুভুমিতে গাছের ছাওয়ার মতো হয় এবং বড়ো তুফান, ঝড় ঝাপটায় একটা বড়ো পাথরের মতো হয়। আপনি যেখানে থাকুন ও যে অবস্থাতেই থাকুন এটা জেনে নিন যে জীবনের সমুদ্রে সুখের দ্বীপ হাসছে ও নিজের আদর্শের কিনারায় আপনার অপেক্ষা করছে।
🙏ধন্যবাদ 🙏
4:00 AM, September 01, 2022